• No products in the cart.

নতুন প্রজন্মের স্পেস স্যুট প্রদর্শন করলো নাসা

মহাকাশে যাতায়াত বা চাঁদে হাঁটবার জন্য স্পেস স্যুট একটি অত্যাবশ্যকীয় জিনিস। স্পেস স্যুট মহাশূন্যেও নভোচারীদের টিকে থাকতে সহায়তা করতে পারে। আর তাই প্রতিনিয়তই স্পেস স্যুটকে আরও উন্নত করতে কাজ করে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। নাসা ২০২৫ সালের দিকে চাঁদে আবারও মহাকাশচারী পাঠানোর পরিকল্পনা করছে। বিখ্যাত অ্যাপোলো ১৭ মিশনের পর এবারই প্রথম নাসার মহাকাশচারীরা আবারও চাঁদে হাঁটবেন।

আর সেই লক্ষ্যেই নতুন উন্নত ও আধুনিক স্পেস স্যুট তৈরি করতে উঠেপড়ে লেগেছে নাসা। সম্প্রতি নাসার প্রচেষ্টায় তৈরি এই নতুন প্রজন্মের স্পেস স্যুট সকলের সামনে উন্মোচন করেছে তারা। এই স্পেস স্যুটের প্রথম প্রটোটাইপ বা পরীক্ষামূলক সংস্করন গত ১৫ মার্চ নাসার স্পেস সেন্টার হিউসটনে প্রদর্শন করা হয়েছে। নাসা অ্যাক্সিওম নামক একটি প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তিতে এই স্পেস স্যুট তৈরি করেছে। ২০২২ সালের জুন মাসে নাসা অ্যাক্সিওম স্পেসের সঙ্গে এই স্পেস স্যুট তৈরির ব্যাপারে চুক্তি করেছিল।

প্রায় ৫০ বছর আগে চাঁদে হাঁটার মতো প্রথম স্পেস স্যুট তৈরি করা হয়েছিলো। এরপর এটিই হতে যাচ্ছে চাঁদে হাঁটার মতো দ্বিতীয় স্পেস স্যুট। ৫০ বছর আগের স্পেস স্যুট হতে এই নতুন প্রজন্মের স্পেস স্যুট পুরোপুরি আলাদা। এর ডিজাইন ও প্রযুক্তিতে এসেছে অনেক পরিবর্তন। আধুনিক ডিজাইন ছাড়াও এখানে পরবর্তী প্রজন্মের আধুনিক সব প্রযুক্তি যুক্ত করা হয়েছে যাতে মহাকাশচারীরা আরও বেশি আরাম, সুবিধা ও নিরাপত্তা পান।

নতুন জেনারেশনের স্পেস স্যুটের নাম দেয়া হয়েছে এএক্সইএমইউ বা অ্যাক্সিওম এক্সট্রাভেহিকুলার মোবিলিটি ইউনিট। মূলত নাসা চাঁদের দক্ষিন দিকে দুজন মহাকাশচারীকে পাঠানোর পরিকল্পনা করছে এই দশকের শেষে। নাসার নতুন এই চন্দ্রাভিজানের নাম দেয়া হয়েছে আরটেমিস। চাঁদের দক্ষিন পাশের আবহাওয়া প্রচন্ড রকমের গরম। এই স্যুটকে তাই এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে উক্ত গরমে তা টিকে থাকতে পারে।

অ্যাক্সিওম এই নতুন প্রজন্মের স্পেস স্যুট দ্বারা শুধু চাঁদ নয় বরং ভবিষ্যতে মঙ্গল গ্রহেও যাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। সেই লক্ষ্যে তারা এই স্যুটের আরও উন্নতি করতে চায়। নাসার পূর্বের স্পেস স্যুট প্রযুক্তি হতে ধারণা নিয়েই আরও নতুন সব প্রযুক্তির সংযুক্ত করেছে অ্যাক্সিওম। মহাকাশচারীরা যেন এই স্পেস স্যুট পরে আরও সক্রিয়ভাবে কাজ করতে পারেন এবং নিরাপদ থাকতে পারেন সেটিই নিশ্চিত করতে চায় অ্যাক্সিওম। নতুন এই স্যুট এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যেন তা যুক্তরাষ্ট্রের ৯০ ভাগ মানুষের শরীরেই মানিয়ে যায়। অর্থাৎ নারী বা পুরুষ উভয়ের শরীরেই এই স্পেস স্যুট মানানসই হবে। নাসা আরটেমিস ৩ মিশনে ইতিহাসের প্রথম নারীকে চাঁদে পাঠাতে চায়। আর এজন্য সেভাবেই তৈরি করা হচ্ছে এই স্পেস স্যুট।

অ্যাক্সিওমের ইঞ্জিনিয়ার জিম স্টেইন স্পেস স্যুটের প্রথম প্রোটোটাইপ পরে মঞ্চে এর সুবিধাগুলো প্রদর্শন করেছেন। সেখানে তাকে স্যুটটি পরে একটি লাঠি হাতে নিয়ে হাঁটতে দেখা যায়। এই লাঠিটি চাঁদের মাটিতে ভারসাম্য বজায় রাখতে ও তা পরীক্ষা করে দেখতে ব্যবহার করা হবে।

এছাড়া স্যুটের সঙ্গে হেলমেটের দুই পাশেই উজ্জ্বল দুটি হেডলাইট ব্যবহার করতে দেখা যায়। স্যুটের সাথে একটি হাই ডেফিনিশনের উন্নত প্রযুক্তির ক্যামেরা ও ব্যাকপ্যাকও রয়েছে। এই ব্যাকপ্যাকে রয়েছে মহাকাশচারীদের লাইফ সাপোর্ট সিস্টেম। এছাড়া মঞ্চে স্যুট পড়ে হাঁটু গেড়ে বসতেও দেখা যায় তাকে। এছাড়া নিচু হয়ে মেঝে থেকে কিছু তোলা ও অন্যান্য বিভিন্ন রকম নড়াচড়া থেকে বুঝে নেয়া যায় যে এই স্পেস স্যুট পড়ে সহজেই মহাকাশচারীরা সকল প্রয়োজনীয় কাজ করতে পারবেন।

এই স্যুটের পূর্ণ মালিকানা অ্যাক্সিওম স্পেসের কাছেই থাকবে। তবে তারা নাসার সঙ্গে বিশেষ চুক্তিতে তাদেরকে এই স্পেস স্যুট সরবরাহ করবে। তবে অ্যাক্সিওম ভবিষ্যতে চাইলে এই স্পেস স্যুট আলাদাভাবে বিক্রি করতে পারবে। ফলে ভবিষ্যতে যে কোন মহাকাশচারী এই স্যুট ব্যবহার করতে পারবেন।

স্পেস স্যুটের প্রোটোটাইপ গাঢ় ধূসর রংয়ের হলেও আসল স্পেস স্যুটে তা সাদা রংয়ের হবে বলে জানিয়েছে অ্যাক্সিওম। সাদা রং হলে তা আরও বেশি নিরাপদ ও ঠাণ্ডা দিতে পারবে মহাকাশচারীদের যা চাঁদের মতো কঠিন আবহাওয়ায় দরকার হবে। এই অনুষ্ঠানে দেখানো ধূসর রংয়ের স্যুটে আলাদা একটি কাভার ব্যবহার করা হয়েছে যা আসল স্পেস মিশনে থাকবে না। এটি মূলত পরীক্ষা ও প্রশিক্ষণের জন্যই ব্যবহার করা হয়েছে, এই কাভারের ফলে ভিতরের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবে। এছাড়া এর মাধ্যমে স্যুটের অভ্যন্তরে ব্যবহার করা আধুনিক প্রযুক্তিগুলোকেও লুকিয়ে রাখতে চেয়েছে অ্যাক্সিওম। কেননা তাদের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কলিন্স অ্যারোস্পেসও এমন স্যুট তৈরি নিয়ে কাজ করছে।

এই নতুন প্রযুক্তির স্পেস স্যুট দীর্ঘদিন যাবত তৈরির পরিকল্পনা ছিল নাসার। কেননা বর্তমানে ব্যবহৃত নাসার স্পেস স্যুট প্রযুক্তির নকশা ৪০ বছর আগের। নাসা এই স্পেস স্যুট শুধু চাঁদে ব্যবহারের জন্যই নয় বরং তাদের সকল মহাকাশচারী যারা ইন্টারন্যাশনাল স্পেস ষ্টেশনে (আইএসএস) নিয়মিত ভ্রমণ করে থাকেন তাদের জন্যও তৈরি করতে চাইছে। মূলত এই স্পেস স্যুটের মূল পরীক্ষা নাসা প্রথমে আইএসএসের নভোচারীদের মাধ্যমেই করতে চাইছে। সেখানে সফল হলেই তারা আরটেমিস ৩ মিশনে এটি ব্যবহার করবে। অ্যাক্সিওম জানিয়েছে চাঁদ ও অন্যান্য ক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য এই স্পেস স্যুটের ডিজাইন প্রায় একই রকম হবে। তবে বুট আর গ্লাভসে পার্থক্য থাকবে।

এই নতুন স্পেস স্যুটের ডিজাইনের ক্ষেত্রে অন্যতম বড় একটি ব্যাপার হল যে এই স্যুটের আস্তরন আরও অনেক জটিল। অনেক স্তরে এটি নকশা করা হয়েছে যা স্যুটের প্রতিরোধী ক্ষমতা বাড়িয়েছে। উচ্চ তাপমাত্রায় যাতে এই স্যুট নষ্ট না হয় তাই এমনভাবে এই স্যুটের আস্তরন তৈরি করা হয়েছে যাতে বেশিরভাগ তাপ এটি বিকীর্ণ করে দিতে পারে। তবে বুটের ক্ষেত্রে আলাদা প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে যা বুটকে খুব বেশি গরম বা ঠাণ্ডা হতে দেয় না।

এই স্যুট একজন মহাকাশচারীকে ৮ ঘণ্টা পর্যন্ত সাপোর্ট দিতে পারবে। এর আগে তৈরি বিভিন্ন স্যুট ৬ ঘণ্টা পর্যন্ত একটানা ব্যবহার করা যেত। স্যুটের সঙ্গে মহাকাশচারীদের ডায়াপার পরতে হবে বলে জানিয়েছে নাসা।

নতুন প্রযুক্তির এই স্যুট মহাকাশ যাত্রাকে আরও সহজ করবে। চাঁদ ও মহাকাশে নতুন সব আবিষ্কারের ক্ষেত্রে এই স্যুট বড় ভূমিকা রাখতে পারবে বলে আশাবাদী অ্যাক্সিওম ও নাসা। নাসার ভবিষ্যৎ আরটেমিস মিশনের পুরোটাই পরিচালিত হবে এই নতুন স্যুট দিয়ে। তাই নতুন এই স্পেস স্যুটের উন্নতিতে চেষ্টার কমতি রাখছে না নাসা।

 

0 responses on "নতুন প্রজন্মের স্পেস স্যুট প্রদর্শন করলো নাসা"

Leave a Reply

top
Technical Bangla ©  All rights reserved.