Site icon Technical Bangla

ইন্টারনেট কি ? ইন্টারনেট কিভাবে কাজ করে ?

বর্তমানে ইন্টারনেট যোগাযোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং দক্ষ মাধ্যম, যা অনেক বেশী জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে । ইন্টারনেট সারা পৃথিবীর মানুষের দৈনন্দিন জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে । এই ইন্টারনেটের মাধ্যমে, বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ একে অপরের সাথে তথ্য, চিন্তাভাবনা, ছবি, অডিও, ভিডিও ক্লিপ ইত্যাদি শেয়ার করছে । আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সাথে ইন্টারনেট কি ? ইন্টারনেট কিভাবে কাজ করে ? ইন্টারনেটের ইতিহাস ইত্যাদি বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব ।

ইন্টারনেট কি – ইন্টারনেট কাকে বলে

ইন্টারনেট হল কোটি কোটি কম্পিউটার এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইসের একটি বিশ্বব্যাপী নেটওয়ার্ক ।  ইন্টারনেটের মাধ্যমে, বিশ্বের যে কোনো স্থানে থাকা তথ্য অ্যাক্সেস করা, বিশ্বের যে কোন প্রান্তে থাকা যে কোন ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করা এবং আরও অনেক কিছু করা সম্ভব ।

ইন্টারনেটের পূর্ণরূপ হল ইন্টার-নেটওয়ার্কিং অর্থাৎ ইন্টারনেট কথাটি দুটি আলাদা শব্দ দ্বারা গঠিত । যেখানে ইন্টার মানে হল পারস্পরিক বা আন্তঃসংযুক্ত এবং নেট মানে নেটওয়ার্ক । অর্থাৎ ইন্টারনেট শব্দের অর্থ হল আন্তঃসংযুক্ত নেটওয়ার্ক । ইন্টারনেট হল এমন অনেক নেটওয়ার্কের একটি নেটওয়ার্ক, যা পুরো পৃথিবীর সমস্ত কম্পিউটারগুলিকে একে অপরের সাথে সংযুক্ত করে ৷ ইন্টারনেট, যাকে সংক্ষিপ্ত ভাবে নেট বলা হয় । সংক্ষেপে, ইন্টারনেট হল নেটওয়ার্কের একটি নেটওয়ার্ক, যা বিশ্বব্যাপী মানুষ এবং কম্পিউটারকে সংযুক্ত করে ।

ইন্টারনেটের পূর্ণ রূপ কি- ইন্টারনেটের ফুল ফর্ম কি

ইন্টারনেটের ফুল ফর্ম হল ইন্টারকানেক্টেড নেটওয়ার্ক । যা মূলত বিশ্বব্যাপী সকল ওয়েব সার্ভারের সমন্বয়ে গঠিত একটি খুব বড় নেটওয়ার্ক । তাই একে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব নামেও ডাকা হয় । এই নেটওয়ার্কের মধ্যে সারা বিশ্বের অনেক বেসরকারী এবং সরকারী সংস্থা, স্কুল ও কলেজ, গবেষণা কেন্দ্র, হাসপাতাল এবং সারা বিশ্বের অনেক ধরনের সার্ভার রয়েছে ।

ইন্টারনেট এর জনক কে – ইন্টারনেট কে আবিষ্কার করেন

ইন্টারনেট এর জনক বা আবিস্কারক বলা হয় ভিনটন গ্রে কার্ফ (Vinton Gray Cerf) কে । তিনি টিসিপি/আইপি প্রোটকলের সহ-উদ্ভাবক ছিলেন । ডারপা (DARPA) তে কর্মরত অবস্থায় তিনি এ কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেন । এছাড়াও তিনি এমসিআই মেইল নামে একটি ইমেইল প্ল্যাটফর্ম তৈরী করেছিলেন ।

ইন্টারনেটের প্রকারভেদ – ইন্টারনেট কত প্রকার

ইন্টারনেটের মালিক কে

ইন্টারনেট এমন জিনিস নয় যে, এটিতে নির্দিষ্ট কারো অধিকার আছে । আসলে এই প্রযুক্তির বিকাশ হয়েছে বছরের পর বছর ধরে । ইন্টারনেট আবিষ্কারের পেছনে অনেকের অবদান রয়েছে । তাই ইন্টারনেটের কোন নির্দিষ্ট মালিক নেই বা নেই কোন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা । ইন্টারনেট মূলত ইন্টারনেট সোসাইটি দ্বারা পরিচালিত হয় । এই ইন্টারনেট সোসাইটি হল একটি স্বেচ্ছাসেবী সদস্য সংগঠন । এর প্রধান উদ্দেশ্য হল ইন্টারনেট প্রযুক্তির মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী যোগাযোগের বিকাশ ঘটানো । এই সমিতি স্বেচ্ছাসেবকদের একটি কাউন্সিল নির্বাচন করে, যাকে বলা হয় ইন্টারনেট আর্কিটেকচার বোর্ড । এই ইন্টারনেট আর্কিটেকচার বোর্ড ইন্টারনেটের প্রযুক্তি ব্যবস্থাপনা এবং পরিচালনার কাজ করে ।

ইন্টারনেট তথ্য ব্যবস্থা কার্যত কোনো ব্যক্তি বা কোম্পানির নিয়ন্ত্রণের বাইরে । ইন্টারনেটে অনেক প্রতিষ্ঠান, স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন সেবা প্রদানকারীকে সামান্য মালিকানা হিসেবে মনে করা যেতে পারে । তবে কেউ ইন্টারনেটের মালিক নয় । কিছু ইন্টারন্যাশনাল সংস্থা ইন্টারনেটের কাজ দেখাশোনা এবং তাদের আন্তর্জাতিক মান নির্ধারণের কাজ পরিচালনা করে ।
এরকম কয়েকটি প্রধান আন্তর্জাতিক সংস্থা হল –

ইন্টারনেটের ইতিহাস – ইন্টারনেট আবিষ্কারের ইতিহাস

ইন্টারনেটের ইতিহাস ১৯৫০ এর দশকে কম্পিউটারের বিকাশের সাথে সাথেই শুরু হয়েছিল । ১৯৬০ থেকে ১৯৮০ এর দশক ইন্টারনেটের বিকাশের সময় হিসাবে মনে করা হয় । ১৯৫৭ সালের কোল্ড ওয়্যারের সময় আমেরিকা যোগাযোগের জন্য নতুন প্রযুক্তির প্রয়োজন অনুভব করেছিল । আর এই কারনেই প্রতিষ্ঠিত হয় অ্যাডভান্সড রিসার্চ প্রজেক্ট এজেন্সি, যার প্রধান কাজ ছিল এমন এক ধরনের প্রযুক্তি তৈরি করা যার মাধ্যমে কয়েকটি কম্পিউটারকে একসাথে সংযুক্ত করা যায় এবং সেগুলোর মধ্যে ডেটা আদান প্রদান করা যায় । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগ এবং নিরাপত্তা সংস্থাগুলি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে এই ARPANET প্রকল্পে একসঙ্গে কাজ করেছিল ।

আরপানেটের (ARPANET) মূল লক্ষ্য ছিল প্রতিরক্ষা বিভাগের সাথে কর্মরত বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের এবং অন্যান্য শহরে বসবাসকারী তাদের অংশীদারদের মধ্যে তথ্য শেয়ার করার ব্যবস্থা করা । প্রথম বার্তাটি ইউসিএলএ থেকে স্ট্যানফোর্ড-এ পাঠানো হয়েছিল এবং এর কিছুক্ষণ পরেই অন্য দুটি বিশ্ববিদ্যালয়, সান্তা বারবারা এবং ইউটাহ বিশ্ববিদ্যালয়ও আরপানেটের সিস্টেমের সাথে সংযুক্ত হয়েছিল ।

এবং ১৯৭১ সালের মধ্যে, প্রায় ৩০ টি বিশ্ববিদ্যালয় আরপানেটের সিস্টেমে যোগদান করেছিল । ১৯৭৪ সালে ইথারনেট প্রথম আবিষ্কৃত হয়েছিল, যা অনেক নেটওয়ার্কের জন্য একটি প্রোটোকল ছিল । সেই সময়ে ইন্টারনেট শুধুমাত্র কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ, প্রকৌশলী এবং বিজ্ঞানীরা ইউজ করতেন । পরবর্তীতে ইমেইল, এফটিপি ও টেলনেট সেবা চালু হওয়ার পর সাধারণ মানুষের জন্য ইন্টারনেট উন্মুক্ত হয় ।

বিশ্বের ইন্টারনেটের ইতিহাস বহু বছরের পুড়োনো । ১৯৬০-এর দশকে APRANET প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সাথে সাথে ইন্টারনেটের প্রথম কার্যকরী প্রোটোটাইপ আবিষ্কৃত হয় । APRANET বিভিন্ন কম্পিউটারকে একটি একক নেটওয়ার্কে সংযুক্ত এবং এগুলোর মধ্যে যোগাযোগ করার জন্য প্যাকেট সুইচিং ব্যবহার করত ।

১৯৬৯ সালে, নোড থেকে নোডে প্রথম বার্তা হয়েছিল, যাতে একটি কম্পিউটার অন্য কম্পিউটারের সাথে যোগাযোগ করতে পারে । কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হল মেসেজটি ছোট হওয়া সত্ত্বেও পুরো বার্তাটি যাওয়ার আগেই সিস্টেম ক্রাশ করে । এর পরে ইন্টারনেট বিকাশের প্রযুক্তি ধীরে ধীরে উন্নত হতে থাকে এবং ১৯৭০ এর দশকে বিজ্ঞানী রবার্ট কান এবং ভিনটন সার্ফ TCP/IP প্রটোকোল তৈরি করেন । এটি একটি কমিউনিকেশন মডেল, যা বিভিন্ন নেটওয়ার্কের মধ্যে ডেটা কীভাবে প্রেরণ করা হয় তার জন্য মান নির্ধারণ করে । ১৯৮৩ সালে Tcp/ip প্রটোকল Arpanet দ্বারা গৃহীত হয়েছিল এবং গবেষকরা নেটওয়ার্কের নেটওয়ার্কগুলি একত্রিত করতে শুরু করেছিলেন। আর সেখান থেকেই আজকের আধুনিক ইন্টারনেটের গবেষণা শুরু হয়েছিল ।

১৯৮৯ সালে সর্বপ্রথম ইন্টারনেট সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করা হয়, তখন থেকেই এটি অন্যান্য বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা শুরু হয় এবং এর পরিধিও ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায় । ১৯৯০ সালে টিম বার্নার লি WWW (ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব) উদ্ভাবন করেন, যা ইন্টারনেটের জগতে একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে ।

ইন্টারনেট কিভাবে কাজ করে

আপনাদের অনেকের মনেই প্রশ্ন আসতে পারে যে, ইন্টারনেট কিভাবে কাজ করে ? তাহলে চলুন এই প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক –

ইন্টারনেটের মাধ্যমে মূলত ডেটা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তর করা হয় । “প্যাকেট স্যুইচিং” নামক একটি সিস্টেমের মাধ্যমে ডেটা ইন্টারনেটে স্থানান্তরিত হয় । প্যাকেট স্যুইচিং সিস্টেমে ডাটা কে পৃথক পৃথক টুকরোতে ভাগ করে ডেটা সেন্ড করা হয়, এই প্রতিটি পৃথক টুকরোর সাথে, ডাটাকে যে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়েছে সেই গন্তব্যের ট্যাগ লাগানো থাকে । একবার সমস্ত পৃথক টুকরো কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছে গেলে, সেগুলিকে আবার পুনরায় একত্রিত করে ইমেইল, ওয়েবপেজ বা ডকুমেন্ট তৈরি করা হয় । যা আপনি আপনার ডিভাইসের স্ক্রিনে দেখতে পান । প্যাকেট সুইচিং সিস্টেম অনেক মানুষকে একসাথে ইন্টারনেট ব্যবহার করার সুযোগ দেয় । যদি প্যাকেট স্যুইচিং সিস্টেম ব্যবহার না করা হয় এবং ডেটা গুলোকে টুকরো টুকরো না হয়ে পাঠানো হয়, তাহলে প্রতিবার কেউ একটি সম্পূর্ণ ডাটা পাঠালে নেটওয়ার্কের একটি সম্পূর্ণ অংশ বল্ক হয়ে যাবে এবং সেই ডেটা কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে না পৌঁছা পর্যন্ত অন্য কোন ডেটা ট্রান্সফার হবে না ।

অনেক মানুষ ইন্টারনেট ইউজ করার অর্থ হল অনেক বেশি ডেটা জেনারেট করা এবং সেই সাথে অনেক বেশী ডাটা বিনিময় করা । অনেক বেশী মানুষের মধ্যে প্রয়োজনীয় ডেটা আদান প্রদান সহজ করার জন্য সার্ভার ব্যবহার করা হয় ।

ইন্টারনেট হল ফিজিক্যাল ক্যাবল বা তারের একটি ওয়ার্ল্ডওয়াইড নেটওয়ার্ক । যার মধ্যে তামার টেলিফোন ক্যাবল, টিভি ক্যাবল এবং ফাইবার অপটিক ক্যাবল অন্তর্ভুক্ত । এমনকি Wi-Fi এবং 3G/4G এর মতো ওয়্যারলেস কানেকশনগুলোও ইন্টারনেট অ্যাক্সেস করার জন্য এই ফিজিক্যাল ক্যাবলের উপর নির্ভর করে ।

আপনি যখন কোন ওয়েবসাইট ব্রাউজ করার জন্য আপনার কম্পিউটারের ব্রাউজারে হিট করেন, তখন আপনার কম্পিউটার সেই ওয়েবসাইটের সার্ভারে এই ক্যাবলের মাধ্যমে একটি রিকোয়েস্ট পাঠায় । সার্ভার হল যেখানে ওয়েবসাইটগুলির তথ্য সংরক্ষণ করা থাকে এবং এটি অনেকটা আপনার কম্পিউটারের হার্ডড্রাইভ অর্থাৎ হার্ডডিস্কের মতো কাজ করে ৷ রিকোয়েস্ট আসার পরে, সার্ভার ওয়েবসাইটটি চেক করে এবং সঠিক ডেটা আপনার কম্পিউটারে ফেরত পাঠায় । আর এই সমস্ত বিষয়টি মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ঘটে ।

কারা ইন্টারনেট প্রদান করে

আমরা যদি ইন্টারনেট প্রদানের কথা বলি তাহলে এটা অত্যন্ত জটিল একটি বিষয় । ইন্টারনেট, কে বা কারা নিয়ন্ত্রণ করে তা কেউ জানে না, তবে ইন্টারনেট সব দেশের সরকার দ্বারা পরিচালিত এবং নিয়ন্ত্রিত হয় ।  তবে ইন্টারনেটকে সহজলভ্য করার পেছনে বিশ্বের বড় বড় টেক কোম্পানিগুলোর হাত রয়েছে, যা তাদের ডাটাবেসের সাথে কানেক্টেড ।

বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে বললে, গুগলের কাছে সবচেয়ে বেশি ডেটা রয়েছে এবং সেই ডেটা ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিশ্বের সমস্ত দেশে প্রেরণ করা হয় ।

এভাবে দেখলে, ইন্টারনেট একেবারে বিনামূল্যের একটি জিনিস, তবে একে ডিস্ট্রিবিউট করার জন্য যে সরঞ্জামগুলির প্রয়োজন হয় তা অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং এর রক্ষণাবেক্ষণের খরচও অনেক বেশি । এই কারণেই যখনই একজন ব্যক্তি তার অপারেটরের কাছ থেকে ইন্টারনেট সংযোগ নেন, তখন তাকে অর্থ প্রদান করতে হয় ।

ইন্টারনেট দেশের কিছু বড় বড় কোম্পানি দ্বারা সরবরাহ করা হয় এবং তারা সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে দেশের বড় বড় কিছু ডেটাবেসের সাথে কানেক্ট করে । এরপরে, এই কোম্পানিগুলো ইন্টারনেট ডেটা বিভিন্ন প্যাকেজ আকারে দেশের অন্যান্য ছোট-বড় টেলিকম অপারেটরদের কাছে বিক্রি করে । তারপর টেলিকম অপারেটরেরা সেই ডেটা তার গ্রাহকদের কাছে বিভিন্ন প্যাকেজ আকারে বিক্রি করে । এভাবেই ইন্টারনেট আমাদের কাছে পৌঁছায় ।

ইন্টারনেট কিভাবে তৈরি হয়

ইন্টারনেটের উন্নয়ন

আমরা যদি গত কয়েক বছরের দিকে তাকাই, তাহলে আমরা দেখতে পাব যে, আমাদের জীবনযাত্রার ধরণ পূর্বের তুলনায় অনেকটাই বদলে গেছে । আগে মানুষ তাদের অবসর সময়ে কাটানোর জন্য অনেক ধরনের কাজ করত । কিন্তু বর্তমান সময়ে বেশীরভাগ মানুষ তাদের অবসর সময় শুধু ইন্টারনেটেই কাটায় । এ থেকেই বোঝা যায় যে ইন্টারনেটের জগতে কি পরিমাণ উন্নয়ন হয়েছে । বর্তমানে ইন্টারনেট আমাদের জীবনের একটি অংশ হয়ে গেছে ।

একইভাবে যদি আমরা ইন্টারনেটের শুরু থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত যাত্রার দিকে তাকাই, তাহলে GPRS ডেটা থেকে আজ পর্যন্ত আমরা 4G ডেটার উচ্চ গতিতে এসে পৌঁছেছি ।

মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ, ১৯৬৯ সালে তার “অ্যাডভান্স রিসার্চ প্রজেক্টস এজেন্সি” এর সহায়তায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু কম্পিউটারকে নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত করে ইন্টারনেট আরপানেট চালু করে । এর মেইন উদ্দেশ্য ছিল যুদ্ধের সময় যোগাযোগের সমস্ত সরঞ্জাম নষ্ট হয়ে গেলেও যেন তার সাহায্যে যোগাযোগ করা যায় ।

ইন্টারনেটের ইতিবাচক প্রভাব – ইন্টারনেটের সুবিধা

সমাজ, প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তির উপর ইন্টারনেটের ইতিবাচক প্রভাবগুলি সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হল –

ইন্টারনেটের নেতিবাচক প্রভাব – ইন্টারনেটের অসুবিধা

সমাজ, প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তির উপর ইন্টারনেটের নেতিবাচক প্রভাবগুলি সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হল –

ইন্টারনেট টুলস

ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব – ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব হল এমন একটি নেটওয়ার্কের নেটওয়ার্ক, যা সারা পৃথিবীর কোটি কোটি ডিভাইসকে কানেক্ট করে । এটি পারস্পরিকভাবে সংযুক্ত কম্পিউটার নেটওয়ার্কগুলির একটি সিস্টেম যা সারা বিশ্বের কোটি কোটি ডিভাইসগুলিকে সংযুক্ত করতে ইন্টারনেট প্রোটোকল স্যুট (TCP/IP) ইউজ করে । এটি ১৯৮৯ সালে টিম বার্নার্স-লি দ্বারা উদ্ভাবিত হয়েছিল । ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব হল তথ্য বা উপাত্তের একটি নেটওয়ার্ক । যা সারা পৃথিবীতে বিস্তৃত এবং যেকোনো ইন্টারনেট ইউজার এই ডাটাবেস থেকে তার প্রয়োজন অনুযায়ী তথ্য পেতে পারে ।

ই-মেইল – ইমেইল হল যোগাযোগের একটি ডিজিটাল মাধ্যম বা রূপ । যা এক ডিভাইস ( ফোন, কম্পিউটার ইত্যাদি ) থেকে অন্য ডিভাইসে বার্তা, ছবি, অডিও বা অন্যান্য ডিজিটাল ফাইল পাঠাতে ব্যবহৃত হয় । “ইমেইল” ১৯৭০ এর দশকে রে টমলিনসন দ্বারা তৈরি করা হয়েছিল । যিনি এই প্রযুক্তির বিকাশ ঘটিয়েছিলেন এবং প্রথম ইমেল ইউজ করেছিলেন । পার্সোনাল এবং ব্যবসায়িক যে কোন তথ্য বিনিময়ের জন্য এটি একটি জনপ্রিয় মাধ্যম । এটি যোগাযোগকে অনেক বেশী সুবিধাজনক করে তুলেছে । সেই সাথে হ্যাকাররা এই ইমেইল ব্যবহার করে হ্যাকিং করার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরণের ভাইরাস এবং ম্যালাওয়্যার ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিয়ে সাধারণ মানুষের অনেক ক্ষতি করছে ।

টেলনেট – টেলনেট হল এমন একটি প্রোটোকল যা মানুষকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে দূরবর্তী কোন কম্পিউটার নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম করে । এটি প্রথম অবস্থায় ইউনিক্স-এর মতো অপারেটিং সিস্টেম যেমন লিনাক্স বা ফ্রিবিএসডি এর মত অপারেটিং সিস্টেমে চালিত প্রোগ্রামগুলিকে কানেক্ট ও পরিচালনা করতে ব্যবহৃত হত । টেলনেট মূলত রিমোট টার্মিনাল কন্ট্রোলের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে, তবে এটি রিমোট টার্মিনাল ডিসপ্লে ফাংশনকেও সাপোর্ট করে ।

ফাইল ট্রান্সফার প্রোটোকল – FTP হল একটি নেটওয়ার্ক প্রোটোকল, যা কম্পিউটারের মধ্যে ফাইল আদান প্রদান করতে ব্যবহৃত হয় । এটি মূলত ইন্টারনেটে ওয়েব হোস্টিং এবং লম্বা দূরত্বে ফাইল আদান প্রদানের জন্য ব্যবহৃত হয় । FTP টিসিপি প্রটোকল ব্যবহার করে । সার্ভারগুলি বিশ্বের যে কোনও জায়গায় অবস্থিত হতে পারে এবং সেই সার্ভারে থাকা ডাটা বিশ্বের যে কোন জায়গা থেকে অ্যাক্সেস করা যেতে পারে ।

ইন্টারনেট রিলে চ্যাট (IRC) – ইন্টারনেট রিলে চ্যাট হল এমন একটি প্রোটোকল যা মানুষকে সার্ভারের মাধ্যমে একে অপরের সাথে চ্যাট করার সুযোগ দেয় । ১৯৮৮ সালে জার্কো ওকারিন প্রথম এটি তৈরি করেন এবং তারপর থেকে প্রতিনিয়ত এটি আপডেট করা হয়েছে । IRC চ্যাট রুম, আলোচনা ফোরাম বা চ্যাট চ্যানেল নামেও পরিচিত । এই চ্যাটরুম সাধারণত একটি নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে ইউজ হয় ।

HTTP – এইচটিটিপির ফুল ফর্ম হল হাইপারটেক্সট ট্রান্সটার প্রোটোকল । এই প্রোটোকলটি মূলত ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবে উপস্থিত ডাটাবেসের ভিত্তি । যখনই আমরা ব্রাউজারে কোনও ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার জন্য সেই ওয়েবসাইটের নাম লিখি, তখনই http: // অটোমেটিক সেই ওয়েবসাইটের নামের সামনে এড হয়ে যায় । এর অর্থ হল যে, ইউজার ওয়েবে একটি ফাইল খুঁজছে, যা HTML ভাষায় ওয়েবে রয়েছে । এইচটিটিপিকে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের আচরণবিধি হিসাবেও মনে করা হয় ।

URL – ইউআরএল এর ফুল ফর্ম হল ইউনিফর্ম রিসোর্স লোকেটার । এটি মূলত একটি ওয়েবসাইটের পুরো নাম অর্থাৎ ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবে সেই ওয়েবসাইটের সম্পূর্ণ ঠিকানা ।

সার্চ ইঞ্জিন  অনেক সময় এমন হয় যে, ব্যবহারকারীর যে বিষয়ের জন্য ডেটা বা তথ্য প্রয়োজন, সে বিষয়ের জন্য কোন ওয়েবসাইটটি ভাল হবে তা তিনি জানেন না । এমন পরিস্থিতিতে, সার্চ ইঞ্জিন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের জন্য খুব সহায়ক ভুমিকা পালন করে । মূলত, সার্চ ইঞ্জিনে ওয়েবসাইটের পুরো নাম টাইপ করার প্রয়োজন হয় না, ব্যবহারকারী যে বিষয় সম্পর্কে জানতে চান, শুধুমাত্র সেই বিষয়ের কয়েকটি কীওয়ার্ড লিখে সার্চ করলেই, সার্চ ইঞ্জিন তার কাঙ্ক্ষিত বিষয়ের রেজাল্ট ইউজারের সামনে উপস্থাপন করে । উদাহরণস্বরূপ, ব্যবহারকারী যদি ডার্ক ওয়েব সম্পর্কে ডেটা বা তথ্য জানতে বা সংগ্রহ করতে চায়, তাহলে তিনি সার্চ ইঞ্জিনে গিয়ে ডার্ক ওয়েব বা ডার্ক নেট কি বা Dark Web লিখে সার্চ করতে পারেন । সার্চ ইঞ্জিন খুব দ্রুত এই শব্দগুলির উপর ভিত্তি করে ওয়েবসাইটের একটি তালিকা প্রদান করবে, এর মধ্যে থেকে ব্যবহারকারী তার প্রয়োজন অনুযায়ী ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে তার কাঙ্ক্ষিত তথ্য কালেক্ট করবে । বর্তমানে জনপ্রিয় কিছু সার্চ ইঞ্জিন হল গুগল, ইয়াহু, বিং ইত্যাদি ।

ওয়েব ব্রাউজার – ওয়েব ব্রাউজার হল এক ধরনের সফটওয়্যার প্রোগ্রাম, যার সাহায্যে ইউজার ইন্টারনেট ব্রাউজ করে অর্থাৎ ইন্টারনেটে তথ্য, ডেটা সার্চ করে এবং বিভিন্ন ওয়েবসাইট ব্রাউজ করে । বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় কিছু ওয়েব ব্রাউজার হল গুগল ক্রোম ব্রাউজার, মজিলা ফায়ারফক্স, ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার, অ্যাপল সাফারি ইত্যাদি ।

ইন্টারনেট এবং ওয়েবের মধ্যে পার্থক্য কি ?

ইন্টারনেট হল আন্তঃসংযুক্ত কম্পিউটার নেটওয়ার্কগুলির একটি ওয়ার্ল্ডওয়াইড সিস্টেম । যা সারা পৃথিবীর কোটি কোটি ব্যবহারকারীদের পরিষেবা দেওয়ার জন্য স্ট্যান্ডার্ড ইন্টারনেট প্রোটোকল স্যুট (TCP/IP) ইউজ করে ।

অন্যদিকে ওয়েব হল আন্তঃসংযুক্ত কম্পিউটারগুলির একটি সুবিশাল নেটওয়ার্ক । যা সারা বিশ্বের কোটি কোটি ব্যবহারকারীদের সেবা দিতে হাইপারটেক্সট ট্রান্সফার প্রোটোকল (HTTP) ইউজ করে।

ইন্টারনেটের কোনো কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ নেই এবং এর কোনো ভৌত অবকাঠামো নেই, তাই একে “ক্লাউড” বলা হয় । অন্যদিকে ওয়েবের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ এবং ভৌত অবকাঠামো রয়েছে, তাই এটি ইন্টারনেট কানেকশনের মাধ্যমে যে কোনো জায়গা থেকে অ্যাক্সেস করা যেতে পারে ।

ইন্টারনেটের ব্যবহার

বিশ্বে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা

২০২১ সালের তথ্য অনুযায়ী বিশ্বে একটিভ  ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৪.৬৬ বিলিয়ন, যা পৃথিবীর জনসংখ্যার প্রায় ৫৯.৫ শতাংশ । এর মধ্যে ৪.৩২ বিলিয়ন মানুষ মোবাইলের সাহায্যে ইন্টারনেট ইউজ করে থাকেন ।

ইন্টারনেট ব্যবহারে শীর্ষ দেশসমুহ

বিশ্বে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর দিক থেকে শীর্ষে আছে চীন । এরপরে ইন্টারনেট ব্যবহারে দ্বিতীয় অবস্থানেই রয়েছে ভারত । ভারতের পরে সবচেয়ে বেশি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে । ইন্টারনেট ব্যবহারে শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান নবম ।

শেষ কথা

আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সাথে ইন্টারনেট কি, ইন্টারনেট কে আবিষ্কার করেন, ইন্টারনেটের জনক কে, ইন্টারনেট কি কি কাজে লাগে, ইন্টারনেট কত প্রকার ও কি কি, ইন্টারনেটের ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক ইত্যাদি বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি । আর্টিকেলটি নিয়ে যে কোন ধরনের প্রশ্ন বা মন্তব্য থাকলে কমেন্ট সেকশনে জানান । ধন্যবাদ

Exit mobile version