ফিঙ্গারপ্রিন্ট আধুনিক যুগের বায়োমেট্রিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বেশ জনপ্রিয় একটি উপায়। প্রতিটি মানুষের আঙ্গুলের ছাপ আলাদা হয় বলে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সরের মাধ্যমে অনেকটাই নিরাপদ করা যায় বর্তমান যুগের ডিজিটাল ডিভাইসগুলোকে। আমাদের ব্যক্তিগত সকল তথ্য, ছবি, ভিডিও ইত্যাদি আমাদের বিভিন্ন ডিভাইসে সংরক্ষণ করা থাকে। তাই ব্যক্তিগত ডিভাইসে নিরাপত্তা ঠিক রাখা অতি জরুরি। আর এই কাজটির ক্ষেত্রেই ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর হয়ে উঠেছে নির্ভরযোগ্য ও বহুল ব্যবহৃত নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
বিশেষ করে আমাদের প্রত্যেকের স্মার্টফোনগুলো আমাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে। তাই নিজেদের ব্যক্তিগত সকল তথ্যের নিরাপত্তায় আজকাল বেশিরভাগ স্মার্টফোনেই ফিঙ্গারপ্রিন্ট লকের ব্যবস্থা থাকে। ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর ব্যবহার করে স্মার্টফোন সহজেই ব্যবহারকারীর হাতের ছাপ সনাক্ত করতে পারে। পরবর্তীতে এই হাতের ছাপ ছাড়া স্মার্টফোনে প্রবেশ করা সম্ভব হয় না। বর্তমানে অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনে এই পদ্ধতির নিরাপত্তা সবথেকে জনপ্রিয়। আজকের পোস্ট থেকে জেনে নিতে পারবেন স্মার্টফোনে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর ব্যবহার করে কীভাবে সহজেই ফোনকে লক করা বা লক খুলে ফেলা যায়।
স্মার্টফোনে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর ও ধরণ
বর্তমানে বাজারে প্রধানত দুটি অপারেটিং সিস্টেমের স্মার্টফোন পাওয়া যায়; অ্যাপলের আইওএস চালিত আইফোন এবং গুগলের অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন। স্মার্টফোন ব্যবহারকারী অধিকাংশ মানুষ অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহার করে থাকেন। তবে স্মার্টফোনে ফিঙ্গারপ্রিন্ট ব্যবহার জনপ্রিয় করেছিলো অ্যাপল তাদের আইফোনের মাধ্যমে।
কিন্তু অ্যাপল বর্তমানে ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিরাপত্তা তাদের নতুন ফোনগুলোতে আর ব্যবহার করছে না। অ্যাপল বর্তমানে ফেস আইডি ফিচার ব্যবহার করছে। অ্যাপলের ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থার নাম ছিলো টাচ আইডি। আইফোনের হোম বাটনের মধ্যেই ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সরটি লুকানো থাকতো। সর্বশেষ আইফোন ৮ সিরিজে অ্যাপল টাচ আইডি ব্যবহার করেছিলো। তবে বর্তমানে অ্যাপলের বাজেট এসই সিরিজে এখনও এই টাচ আইডি পাওয়া যায়।
অ্যান্ড্রয়েড ফোনগুলো ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সরের ব্যবহার কিছুটা পরে শুরু করলেও বর্তমানে এই নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নতি হচ্ছে তাদের মাধ্যমেই। বর্তমানে কম বাজেটের ফোন থেকে শুরু করে ফ্ল্যাগশিপ অ্যান্ড্রয়েড ফোনেও ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তবে বিভিন্ন ফোনে আলাদা আলাদা ধরণের ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর দেখা যায়। মূলত অ্যান্ড্রয়েড ফোনে তিন ধরণের ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর ব্যবহৃত হয়ে থাকে: ক্যাপাসিটিভ, অপটিক্যাল এবং আল্ট্রাসনিক। ক্যাপাসিটিভ ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর হচ্ছে সবথেকে পুরনো প্রযুক্তির ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর। এটি অ্যান্ড্রয়েড ফোনের পিছনে বা পাশে বিভিন্নভাবে দেয়া থাকে। মূলত ইলেকট্রিক ভোল্টেজ ব্যবহার করে আঙ্গুলের ছাপ বুঝে নেয় এই ধরণের সেন্সর। কম দামী ও বাজেট ফোনগুলোতে এই সেন্সর ব্যবহার করা হয়ে থাকে সাধারণত।
অপটিক্যাল ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর বর্তমানে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে অ্যামোলেড স্ক্রিনের ফোনগুলোর ডিসপ্লের নিচে ব্যবহার করার মাধ্যমে। এর ফলে ডিসপ্লেতে টাচ করেই ফোন আনলক করে ফেলা যায়। সাধারণত মধ্যম বাজেট ও ফ্ল্যাগশিপ ফোনে এই ধরণের ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর ব্যবহার করা হয়। হাতে আলো ফেলে তার মাধ্যমে এই সেন্সর আঙ্গুলের ছাপ সনাক্ত করতে পারে। আল্ট্রাসনিক ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর সবথেকে আধুনিক, নিরাপদ ও দ্রুত নির্ভুলভাবে কাজ করে। ফ্ল্যাগশিপ গ্রেডের ফোনগুলোতে এটি ব্যবহৃত হয়। আল্ট্রাসোনিক ওয়েভ ব্যবহার করে এটি কাজ করে। এটিও অ্যামোলেড স্ক্রিনের নিচে ব্যবহার করা হয়। অর্থাৎ অপটিক্যাল ও আল্ট্রাসোনিক সেন্সর আন্ডার ডিসপ্লে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর হিসেবে কাজ করে। আরও জানতে পারেন আইফোন এর ফেইস আইডি সম্পর্কে অজানা কিছু তথ্য।
স্মার্টফোনে কীভাবে সেটআপ করবেন ফিঙ্গারপ্রিন্ট লক
আইফোন
যেহেতু নতুন আইফোনগুলোতে ফিঙ্গারপ্রিন্ট লক নেই তাই পুরাতন আইফোনে কীভাবে টাচ আইডি সেটআপ করা যায় তার নির্দেশনা দেয়া হলো। প্রথমবার আইফোন সেটআপ করবার সময়েই আপনাকে টাচ আইডি সেটআপ করতে বলা হয়। তখন ফোনের ডিসপ্লের নির্দেশনা দেখে সহজেই সেটআপ করা যায়। তবে যদি আপনি তখন সেটআপ না করে থাকেন তবে:
- আইফোনের Settings > Touch ID & Passcode এই পেজে চলে যান।
- আপনার পাসকোড প্রবেশ করান। (পাসকোড সেটআপ না করলে আগেই সেটআপ করে নিতে হবে।)
- Add a Fingerprint অপশনে ট্যাপ করুন।
- এবার আপনি যে আঙ্গুলের জন্য টাচ আইডি সেটআপ করতে চান সেই আঙ্গুল দিয়ে বারবার সেন্সরে চাপ দিতে নির্দেশনা দেয়া হবে। নির্দেশনা অনুসরণ করে টাচ আইডি সেটআপ করে নিন।
টাচ আইডি সেটআপ হয়ে গেলে প্রতিবার আইফোন আনলক করবার সময় হোম বাটনে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সরে সেটআপ করা আঙ্গুলটি রাখলেই সঙ্গে সঙ্গে ফোন আনলক হয়ে যাবে। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে পেমেন্ট করবার সময়ও এই টাচ আইডি কাজ করবে।
অ্যান্ড্রয়েড
মূলত প্রতিটি ব্র্যান্ডের অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনে আলাদা আলাদা জায়গায় ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেটআপের অপশন থাকে। আমরা গুগলের মূল অ্যান্ড্রয়েডে যেখানে সেটআপ করা যাবে সেটি নিয়েই আলোচনা করবো। ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেটআপ করতে হলে আগে পিন, পাসওয়ার্ড বা প্যাটার্ন সেট করে নিতে হবে প্রাইমারি নিরাপত্তার উপায় হিসেবে।
তবে অ্যান্ড্রয়েডেও আইফোনের মতোই প্রথমবার ফোন সেটআপ করবার সময়েই ফিঙ্গারপ্রিন্ট আনলক অপশন সেট করতে বলা হয়। তখন এটি নির্দেশনা অনুযায়ী সেটআপ না করে থাকলে নিচের নির্দেশনা দেখে নিতে পারেন:
- ফোনের সেটিংস পেজ হতে Security & Lockscreen অপশনে ট্যাপ করুন।
- এখান থেকে Face & Fingerprint Unlock অপশনে ট্যাপ করুন।
- আপনাকে প্রাইমারি নিরাপত্তা ব্যবস্থার পিন, পাসওয়ার্ড বা প্যাটার্ন প্রবেশ করাতে হবে।
- এরপর দুটি অপশন দেখতে পাবেন। এখান থেকে Fingerprint অপশনটি সিলেক্ট করুন।
- Add Fingerprint অপশনে ট্যাপ করে নতুন ফিঙ্গারপ্রিন্ট অ্যাড করতে হবে। যে আঙ্গুলের ছাপ ফিঙ্গারপ্রিন্ট হিসেবে ব্যবহার করতে চান তা ডিসপ্লের নির্দেশনা অনুযায়ী ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সরের উপর বারবার রাখুন। সেটআপ হয়ে গেলে Fingerprint Added মেসেজ দেখতে পাবেন।
এবার সহজেই আপনি এই আঙ্গুল দিয়ে অ্যান্ড্রয়েড ফোনের লক খুলতে পারবেন প্রতিবার। তবে মনে রাখতে হবে ফোন রিস্টার্ট করলে প্রথমবার ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে আনলক করা যাবে না। প্রথমবার আপনার প্রাইমারি নিরাপত্তা হিসেবে সেটআপ করা পিন, পাসওয়ার্ড বা প্যাটার্ন দিয়েই ফোন আনলক করতে হবে। পরবর্তীতে যে কোনো সময় আবারও ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে ফোন আনলক করতে পারবেন দ্রুত। প্রতিবার ফোন বন্ধ করে চালু করবার সময় এটি করতে হবে। আপনার জন্য আরওঃ আইফোনে ফেস আইডি কিভাবে চালায় জানুন।
বোনাস টিপ: ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর অনেক সময়ই আঙ্গুলের ছাপ ধরতে পারে না বিভিন্ন কারণে। ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর যেন আরো দ্রুত ও নির্ভুলভাবে কাজ করে সে জন্য আপনি একই আঙ্গুলের ছাপ বারবার Add Fingerprint অপশনের মাধ্যমে সেট করতে পারেন। অ্যান্ড্রয়েড ফোনে সাধারণত ৫ টি আঙ্গুলের ছাপ একসঙ্গে সেট করা যায়। কাজেই মূল যে আঙ্গুল দিয়ে আপনি আনলক করে থাকেন সেই আঙ্গুলের ছাপ কয়েকবার সেট করতে পারেন। এতে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর ওই আঙ্গুলের জন্য আরো দ্রুত ও নির্ভুলভাবে কাজ করবে।
এভাবে সহজেই ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর ব্যবহার করে আপনার স্মার্টফোনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেন। এই ব্যবস্থায় দ্রুত ফোন আনলক করা যায়। তবে হাত ভেজা বা ময়লা থাকলে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর ভালোভাবে কাজ করে না। কাজেই এই ব্যাপারে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। আপনার স্মার্টফোনে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর আছে কিনা সে ব্যাপারেও নিশ্চিত হয়ে নিন। ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সরের প্রযুক্তি ও অবস্থান নিশ্চিত হয়ে তবেই এটি সেটআপ করুন। সাধারণ ফেস আনলক থেকে ফিঙ্গারপ্রিন্ট আনলক নিরাপদ। তাই এটি ব্যবহার করলে ফোনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও উন্নত হয়।
0 responses on "স্মার্টফোনে ফিঙ্গারপ্রিন্ট লক ব্যবহারের নিয়ম জেনে নিন"