• No products in the cart.

ব্যাংক স্টেটমেন্ট কী? এটা কী কাজে লাগে? যেভাবে পাবেন

যারা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করেন বা যারা নিয়মিত লেনদেন করেন তাদের কাছে স্টেটমেন্ট কথাটি খুবই পরিচিত লাগবে। অনেকেই হয়তো শুনে থাকলেও এটি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা নেই। ব্যাংক স্টেটমেন্ট ব্যাংকিংয়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি জিনিস। তাই এটি নিয়ে প্রত্যেকেরই পরিষ্কার ধারণা থাকা জরুরি। আজকে এই পোস্টে আমরা কথা বলবো ব্যাংক স্টেটমেন্ট নিয়ে।

ব্যাংক স্টেটমেন্ট কী?

প্রথমেই জানা দরকার ব্যাংক স্টেটমেন্ট আসলে কী। সোজা কথায় ব্যাংক স্টেটমেন্ট একটি অফিসিয়াল ডকুমেন্ট যা আপনার ব্যাংক আপনার অনুরোধে বা নিজেদের নীতিমালা অনুযায়ী তৈরি করে থাকে এবং আপনার কাছে পৌঁছে দেয়। এই ডকুমেন্টে থাকে আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বিভিন্ন তথ্য এবং লেনদেনের বিবরণ।

লেনদেনের বিবরণের ক্ষেত্রে আপনি যতোদিনের চাইবেন ততোদিন পর্যন্ত দেয়া হবে। তবে সাধারণত ব্যাংক নিজ থেকেই প্রতি মাসের স্টেটমেন্ট দিয়ে থাকে। ব্যাংক স্টেটমেন্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ নথি যা আপনার একান্তই ব্যক্তিগত। তাই ব্যাংক স্টেটমেন্ট সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখা খুবই প্রয়োজনীয়।

ব্যাংক স্টেটমেন্টে সাধারণত যেসব তথ্য থাকবে সেগুলো হলঃ

  • আপনার পূর্ণ নাম ও ঠিকানা
  • আপনার ব্যাংক হিসাব বা অ্যাকাউন্টের নাম্বার এবং ধরণ
  • আপনার বর্তমান ব্যাংক ব্যালেন্স
  • যে সময় সীমার মধ্যে স্টেটমেন্ট দেয়া হবে সেই সময়ের প্রথম দিনে কতো ব্যালেন্স ছিলো এবং শেষে কতো হলো সেটি।
  • নির্দিষ্ট সময় সীমার মধ্যে আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টের লেনদেনের পূর্ণ বিবরণ। কোথায় কত টাকা কীভাবে খরচ করেছেন কিংবা জমা করেছেন সেটির তালিকা।
  • নির্দিষ্ট সময় সীমার মধ্যে অ্যাকাউন্টে কত টাকা জমা হয়েছে এবং কত টাকা খরচ হয়েছে তার একটি মোট হিসাব।

সোজা কথায় এটি আপনার অ্যাকাউন্টের জন্য ব্যাংকের নিজস্ব রেকর্ড। সুতরাং ব্যাংক এই তথ্যের সত্যতার নিশ্চয়তা দিচ্ছে।

ব্যাংক স্টেটমেন্ট কী কাজে লাগে?

ব্যাংক স্টেটমেন্ট বিভিন্ন কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে। ব্যাংক স্টেটমেন্ট চেক করার মাধ্যমে আপনি আপনার অর্থের খরচের ব্যাপারটির দিকে নজরদারি করতে পারেন। ব্যাংক সঠিক হিসাব রেখেছে কিনা সেটি আপনার নিজস্ব হিসাবের সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে পারেন। কোনো সমস্যা চোখে পড়লে সেটি ব্যাংকে জানিয়ে সমাধান করতেও পারেন। ব্যবসায়ীদের জন্য স্টেটমেন্ট অত্যন্ত জরুরি। অনেকেই ব্যবসার হিসাব ঠিক রাখতে স্টেটমেন্ট নেন।

অনেক প্রতিষ্ঠান ব্যাংক স্টেটমেন্টের মাধ্যমে আপনার পরিচয়, ঠিকানা ইত্যাদি সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারে। এছাড়া কোনো লেনদেন বা ব্যাংক ব্যালেন্স প্রমাণের ক্ষেত্রে স্টেটমেন্ট গুরুত্বপূর্ণ নথি হিসেবে কাজ করে। ব্যাংক স্টেটমেন্ট প্রদানের মাধ্যমে ব্যাংক তালিকাকৃত লেনদেনের সকল দায়ভার নিয়ে থাকে এবং সেটির প্রমাণ রাখে। সুতরাং এটি গুরত্বপূর্ণ একটি নথি এবং অনেক কার্যকর ও গুরুত্বপূর্ণ একটি জিনিস।

ব্যাংক স্টেটমেন্ট কীভাবে পাবেন ও পেতে কেমন খরচ হয়?

বর্তমানে ব্যাংকগুলো সাধারণত দুই ধরণের স্টেটমেন্ট দিয়ে থাকে। একটি হচ্ছে কাগজে তৈরি করা স্টেটমেন্ট এবং অন্যটি ই-স্টেটমেন্ট।

কাগজে তৈরি স্টেটমেন্ট সাধারণত আপনার ব্যাংকে গিয়ে ফর্ম পূরণ করে আবেদন করার মাধ্যমে পাওয়া যায়। সেখানে আপনি চাইলে ১ মাস বা তার বেশি দিনের স্টেটমেন্ট চাইতে পারেন। তবে বেশিরভাগ ব্যাংক এই স্টেটমেন্ট নেবার জন্য চার্জ করে থাকে। এই চার্জ ব্যাংকভেদে ভিন্ন ভিন্ন। তবে অনেক ব্যাংক মাসে একটি কাগজের স্টেটমেন্ট আপনাকে ফ্রিতেও দিতে পারে। আপনার অ্যাকাউন্টের ধরণ আর ব্যাংকভেদে এটি আলাদা। তাই এই ব্যাপারে সঠিক ধারণা পেতে আপনার ব্যাংকের শাখায় যোগাযোগ করতে পারেন।

ই-স্টেটমেন্ট বা ইলেকট্রনিক স্টেটমেন্ট একটি ডিজিটাল স্টেটমেন্ট। সাধারণত সব ব্যাংক এই স্টেটমেন্ট বিনামূল্যে দিয়ে থাকে প্রতি মাসের শুরুতে। আপনার ব্যাংকের যদি ইন্টারনেট ব্যাংকিং চালু থাকে তবে নিজ ইমেইলে প্রতি মাসের শুরুতে এই স্টেটমেন্ট ব্যাংক নিজ হতেই পাঠিয়ে দেয়। একটি পাসওয়ার্ড প্রোটেক্টেড পিডিএফ ফাইলের মাধ্যমে সাধারণত স্টেটমেন্ট পাঠানো হয়। পাসওয়ার্ড সাধারণত আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নাম্বার বা অন্য কিছু হতে পারে।

আপনি ডিজিটাল ব্যাংক স্টেটমেন্ট পাচ্ছেন কিনা তা জেনে নিতে সংশ্লিষ্ট ইমেইল দেখে নিন। পিডিএফ ফাইলটি প্রিন্ট করে নিলেই সেটি সাধারণ কাগজের স্টেটমেন্ট হিসেবেই কাজ করে। এছাড়া ব্যাংকের অ্যাপের মাধ্যমেও ই-স্টেটমেন্ট ডাউনলোড করা যায়। ই-স্টেটমেন্টের সবথেকে বড় সুবিধা এটি বিনামূল্যে পাওয়া যায় এবং ব্যাংকে যাবার প্রয়োজন হয় না। তাই যদি ইন্টারনেট ব্যাংকিং ও ই-স্টেটমেন্ট চালু না থাকে তবে ব্যাংকে গিয়ে এটি দ্রুত চালু করে নিতে পারেন।

লেনদেনের ইতিহাস ও স্টেটমেন্টের পার্থক্য

অনেক ক্ষেত্রেই চাইলে আপনি লেনদেনের ইতিহাস আপনার ব্যাংকের অ্যাপ বা ওয়েবসাইট হতে দেখে নিতে পারেন। তবে স্টেটমেন্টের সাথে এই লেনদেনের ইতিহাসে কিছুটা পার্থক্য আছে। সাধারণত অ্যাপ বা ওয়েবসাইটে লেনদেনের ইতিহাস একটি নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত দেখা যায়। অর্থাৎ ৫০ টি বা ১০০ টি এরকম সীমা পর্যন্ত ইতিহাস থাকতে পারে। তবে স্টেটমেন্টের ব্যাপারটি তেমন নয়। আপনি এক মাসের স্টেটমেন্ট নিলে সেখানে ১ মাসে ঘটে যাওয়া আপনার অ্যাকাউন্টে সকল রকমের কার্যকলাপের বিবরণ থাকবে। অর্থাৎ এখানে আইটেম অনুযায়ী কোনো সীমা নেই।

১ মাসের মধ্যে হাজারের বেশি লেনদেন হলে সেটির তালিকাই আপনার স্টেটমেন্টে থাকবে। লেনদেনের ইতিহাসে অনেক কার্যকলাপের বিবরণ নাও থাকতে পারে, কিন্তু স্টেটমেন্টে সবকিছু তারিখ ও সময় সহ একদম নিখুঁতভাবে পেয়ে যাবেন। প্রতিটি অ্যাকাউন্টের জন্যই আইন অনুযায়ী ব্যাংক এই তথ্য রাখতে বাধ্য থাকে। বিভিন্ন আইনি জটিলতায় এসব তথ্য কাজে লাগতে পারে। তাই লেনদেনের ইতিহাস ও স্টেটমেন্টকে এক ভাবা ঠিক নয়।

তাহলে স্টেটমেন্টের গুরুত্ব আশা করি বুঝতে পারছেন। ব্যাংকিংয়ে সতর্ক থাকতে এবং নিজের খরচের অভ্যাস বুঝে নিতে স্টেটমেন্ট খুব কাজের একটি জিনিস। তাই নিজের হিসাব ঠিক রাখতে স্টেটমেন্ট সংগ্রহ করে রাখতে পারেন। সাধারণত ৩ মাসের অধিক পুরনো স্টেটমেন্ট কম দরকারী। তবে সেটিও বিভিন্ন কারণে দরকার হতে পারে। তবে ব্যাংক যেহেতু এই তথ্য সবসময় রেখে দেয় তাই জরুরি প্রয়োজনে ব্যাংক হতে সেটি যে কোনো সময় সংগ্রহ করতে পারবেন।

 

0 responses on "ব্যাংক স্টেটমেন্ট কী? এটা কী কাজে লাগে? যেভাবে পাবেন"

Leave a Message

Your email address will not be published. Required fields are marked *

top
Technical Bangla ©  All rights reserved.