• No products in the cart.

ড্রোন কী এবং এটি কীভাবে কাজ করে ?

ড্রোন শব্দটির সাথে আমরা প্রায় সবাই পরিচিত । আপনাদের মধ্যে অনেকেই বাস্তবে ড্রোন উড়তে দেখেছেন, আবার অনেকেই টিভিতে দেখেছেন । কিন্তু আপনি কি জানেন, ড্রোন কী এবং এটি কীভাবে কাজ করে ? আপনি যদি এই বিষয়ে না জেনে থাকেন, অথবা ড্রোন সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনাদের উপকারে আসতে পারে । আজকের আর্টিকেলে আমরা ড্রোন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করব । আর বর্তমানে আধুনিক ড্রোনের দাম বিডিস্টল.কম থেকে জেনে নিতে পারবেন ।

ড্রোন হল এক ধরনের উড়ন্ত রোবট, যা মানুষের দ্বারা দূর থেকে নিয়ন্ত্রন করা হয় । ড্রোন তৈরি করার মেইন উদ্দেশ্য হলো মানুষের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ কাজগুলোকে সহজ করা । বর্তমান সময়ে ড্রোন অনেক কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে । আপনি যদি ড্রোনের প্রযুক্তি এবং কাজের পদ্ধতি সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে চান তাহলে আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ুন । তাহলে আর দেরি না করে ড্রোন এবং ড্রোন প্রযুক্তি সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক ।

ড্রোন কি – ড্রোন কাকে বলে

ড্রোন শব্দের অনেক অর্থ রয়েছে, তবে ড্রোন শব্দটি পুরানো ইংরেজি শব্দ ড্রান থেকে উদ্ভূত, যার অর্থ হল পুরুষ মৌমাছি । ড্রোনগুলি, UAVs ( আনম্যানড এরিয়াল ভেহিকেলস ) বা RPAS ( রিমোটলি পাইলটেড এরিয়াল সিস্টেম ) নামেও পরিচিত । এককথায় বলতে গেলে, মনুষ্যবিহীন বিমানকে ড্রোন বলা হয় ।

ড্রোনগুলি আনুষ্ঠানিকভাবে আনম্যানড এরিয়াল ভেহিকেল (ইউএভি) বা মনুষ্যবিহীন এরিয়াল সিস্টেম (ইউএএস) নামে পরিচিত । ড্রোনগুলি উড়ন্ত রোবট যা দূরবর্তী কোন জায়গা থেকে কন্ট্রোল করা হয় বা সফটওয়্যার কন্ট্রোল ফ্লাইট প্ল্যানের মাধ্যমে অটোমেটিকভাবে উড়ে যায় । এই ড্রোঙ্গুলো এমবেডেড সিস্টেম, যা সেন্সর এবং জিপিএসের সাহায্যে কাজ করে ।

আমাদের মত সাধারণ মানুষের কাছে এগুলো হল ড্রোন । আর সেনাবাহিনী বা সামরিক ব্যক্তিদের কাছে, এগুলো হল UAV ( মনুষ্যবিহীন এরিয়াল ভেহিকল ) বা RPAS ( রিমোটলি পাইলটেড এরিয়াল সিস্টেম )।

ড্রোন বেশিরভাগ সময় সামরিক কাজে ব্যবহৃত হয় । কারণ এগুলো মানুষবিহীন হওয়ার কারণে যুদ্ধে পাইলটের জীবনের কোনো ঝুঁকি থাকে না । তবে বর্তমানে ড্রোনগুলি বেসামরিক বিভিন্ন কাজেও ব্যবহার করা হচ্ছে । যেমন দুর্গম জায়গায় আটকে পড়া ব্যক্তিদের অনুসন্ধান এবং উদ্ধারের কাজে, ট্র্যাফিক এবং আবহাওয়া পর্যবেক্ষণের জন্য, ফটোগ্রাফি, যে কোন মূল্যবান বস্তু বা স্থান পর্যবেক্ষণের জন্য, অগ্নিনির্বাপণের জন্য । বর্তমানে কৃষিকাজের সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন কাজ এবং হোম ডেলিভারি করার ক্ষেত্রেও ড্রোন ব্যবহার করার চেষ্টা করা হচ্ছে ।

কত ধরনের ড্রোন আছে – ড্রোনের প্রকারভেদ – ড্রোন কত প্রকার

আকার এবং ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে ড্রোনকে বিভিন্ন শ্রেণীতে ভাগ করা যায় –

আকারের উপর ভিত্তি করে ড্রোনের ধরন:

আকার অনুযায়ী ড্রোনকে ৪ ভাগে ভাগ করা যায় –

  • খুব ছোট ড্রোন (ন্যানো ড্রোন): – এই ড্রোনগুলি সাধারণত খুব ছোট আকারের হয় এবং খুব ছোট জায়গায় ফিট করার জন্য এই ড্রোনগুলো ডিজাইন করা হয় । এগুলি দেখতে অনেকটা পোকামাকড়ের মতো ছোট হয় এবং দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে মাত্র কয়েক সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয় । এই ড্রোনগুলি সাধারণত গুপ্তচরবৃত্তির জন্য ব্যবহার করা হয় ।
  • ছোট ড্রোন: – এই ড্রোনগুলিও আকারে ছোট, তবে এগুলি ন্যানো ড্রোনের থেকে কিছুটা বড় আকারের হয় । সাধারনত, এই ড্রোনগুলোকে হাত দিয়ে তুলে বাতাসে নিক্ষেপ করা যায় এবং তারপর এগুলো নিজে থেকেই চলে । এই ড্রোনগুলো দৈর্ঘ্যে দুই মিটারের বেশি হয় না ।
  • মাঝারি ড্রোন: – এই ড্রোনগুলো ছোট ড্রোনের তুলনায় অনেকটা বড়, তবে ছোট বিমানের তুলনায় কিছুটা ছোট । এই ধরনের ড্রোনের ওজন ২০০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে ।
  • বড় ড্রোন: – বড় ড্রোনগুলি সাধারণত মাঝারি এবং ছোট বিমানের আকারের হয়ে থাকে । এই ধরনের ড্রোন সাধারণত সামরিক কাজে ব্যবহার করা হয় । এগুলো সামরিক বাহিনী দ্বারা যুদ্ধের এলাকায় উচ্চ-স্তরের নজরদারি পরিচালনা করতে এবং অনেক সময় মিসাইল নিক্ষেপের ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হয় । এই ড্রোনগুলিতে সামরিক বাহিনীর শক্তিশালী ক্যামেরা লাগানো থাকে, যা আকাশের অনেক উঁচুতে থেকেও কাঙ্খিত বস্তু বা জায়গার নিখুঁত ছবি তুলতে পারে ।

এরিয়াল প্ল্যাটফর্মের উপর ভিত্তি করে ড্রোনের প্রকারভেদ

এরিয়াল প্ল্যাটফর্মের উপর ভিত্তি করে ড্রোনকে ৪ ভাগে ভাগ করা যায়

  • মাল্টি রোটার ড্রোন:  মাল্টি রোটার ড্রোনগুলি সাধারণত খুব স্থিতিশীল হয় এবং এগুলো দীর্ঘ সময় ধরে বাতাসে একটি স্থিতিশীল অবস্থান বজায় রাখতে সক্ষম । এগুলি একাধিক মোটর দিয়ে ডিজাইন করা হয়, যা এই ধরনের ড্রোনকে বাতাসে স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করে । এই ধরনের ড্রোন সাধারণত নজরদারি এবং ফটোগ্রাফির জন্য ইউজ করা হয় । মাল্টি রোটার ড্রোন হল, সবচেয়ে সাধারণ ধরনের ড্রোন যা সাধারণত শখের কারণে ব্যবহার করা হয় । যেমন এরিয়াল ফটোগ্রাফি, এরিয়াল ভিডিও মনিটরিং ইত্যাদি । রোটারের সংখ্যার উপর ভিত্তি করে, মাল্টি-রোটার ড্রোনগুলিকে আরও কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে । এগুলি হল ট্রাইকপ্টার ( ৩ রোটর ) ড্রোন, কোয়াডকপ্টার ( ৪ রোটর ) ড্রোন, হেক্সাকপ্টার ( ৬ রোটর ) ড্রোন এবং অক্টোকপ্টার ( ৮ রোটর ) ড্রোন । এর মধ্যে কোয়াডকপ্টার ড্রোন সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বেশী ব্যবহৃত ড্রোন ।
  • ফিক্সড উইং: – ফিক্সড উইং ড্রোনগুলিকে সাধারণত বিমানের মতো করে ডিজাইন করা হয় । যার ফলে এই ধরনের ড্রোন বাতাসে কোন স্থিতিশীল অবস্থান বজায় রাখতে পারে না । এই ধরনের ড্রোন তাদের জন্য মনোনীত ফ্লাইট পথে সামনের দিকে চলতে থাকে। বেশিরভাগ ফিক্সড উইং ড্রোনের কয়েক ঘন্টার মত গড় ফ্লাইট টাইম থাকে । গ্যাস ইঞ্জিন চালিত ড্রোন ১৫ ঘন্টা বা তার কিছু বেশি সময় ধরে আকাশে উড়তে পারে ।
  • একক রোটার: – একক রোটার ড্রোনগুলি হেলিকপ্টারের মতো করে ডিজাইন করা হয় । একটি একক রোটর ড্রোন নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ড্রোনের লেজে একটি রোটার লাগানো হয় । একক রোটর ড্রোন, মাল্টি রোটার ড্রোনের তুলনায় অনেক বেশি দক্ষ । একক রোটার ড্রোনগুলি, তাদের বিভিন্ন ক্ষমতার কারণে মাল্টি রোটর ড্রোনের থেকে ভাল বলে বিবেচিত হয় । এই ধরনের একটি রৈখিক পথ ধরে উড়তে পারে, এগুলো মাল্টি-রোটার ড্রোনের থেকে অনেক বেশী উঁচুতে উড়তে পারে এবং সেই সাথে যে কোন স্তানে স্থির হয়েও থাকতে পারে ।
  • ফিক্সড উইং হাইব্রিড VTOL – VTOL এর পূর্ণ অর্থ হল ” ভার্টিক্যাল টেক-অফ এবং ল্যান্ডিং “৷ এই ধরনের ড্রোনগুলো হল ড্রোনের হাইব্রিড ভার্শন । অর্থাৎ এই ধরনের ড্রোনে, ফিক্সড উইং ভার্শনের সুবিধা (যেমন লং ফ্লাইট টাইম) এবং রোটার ভিত্তিক ড্রোনের সুবিধাগুলি (হাওয়ারিং – বাতাসে স্থিতিশীলতা) একত্রিত করা হয় । এই ধারণাটি ১৯৬০ সালের দিকে পরীক্ষা করার চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু তা সফল হয়নি । তবে পরবর্তীতে, নতুন প্রজন্মের সেন্সর (গাইরোস এবং অ্যাক্সিলোমিটার) আবির্ভাবের সাথে সাথে, এই ধারণাটি পুনরিজ্জিবিত হয় এবং সফল হয় । আরও সহজ ভাষায় বললে, হাইব্রিড VTOL হল, অটোমেশান এবং ম্যানুয়াল গ্লাইডিং এর সমন্বয়ে খেলা । এক্ষেত্রে, ড্রোনকে মাটি উপরে তুলতে, একটি উল্লম্ব লিফট ইউজ করা হয় । গাইরোস এবং অ্যাক্সিলোমিটারগুলি ড্রোনকে বাতাসে স্থিতিশীল রাখতে একটি অটোমেটিক মোডে কাজ করে । সেই সাথে, রিমোট ভিত্তিক ম্যানুয়াল কন্ট্রোল ড্রোনটিকে যে কোন রুটে গাইড করতে ইউজ করা হয় ।

ক্ষমতার উপর ভিত্তি করে ড্রোনের প্রকারভেদ

ক্ষমতার উপর ভিত্তি করে ড্রোনের প্রকারভেদ নিচে দেওয়া হল –

  • কোয়াডকপ্টার:  Quadcopters ড্রোনগুলো, একটি বর্গাকার প্যাটার্নে তৈরী করা হয় এবং এতে চারটি রোটার থাকে । এই ধরনের ড্রোনগুলো বাজারের সবচেয়ে সাধারণ ধরনের ড্রোন । এই ড্রোনগুলি মূলত বিনোদনমূলক বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয় । তবে অনেকেই পেশাদার এবং অফিসিয়াল কাজেও এই ধরনের ড্রোন ব্যবহার করে ।
  • জিপিএস ড্রোন:  এই ড্রোনগুলি জিপিএসের মাধ্যমে স্যাটেলাইটের সাথে কানেক্ট থাকে, যা এই ড্রোনগুলোর ফ্লাইটপথ নির্ধারণ করতে সহায়তা করে । এর ফলে এগুলো খুব সহজেই এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে পারে এবং যদি কোন কারণে এগুলো নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তাহলে GPS এর সাহায্যে তা পুনরায় এর মালিকের কাছে ফিরে যেতে পারে ।
  • RTF ড্রোন: – এই ধরনের ড্রোন, রেডি-টু-ফ্লাই ড্রোন নামে পরিচিত । এগুলো অনেকটা প্লাগ-এন-প্লে টাইপের ড্রোন । আপনি এটি কেনার সাথে সাথে, এই ড্রোন উড়ার জন্য প্রস্তুত ।
  • ট্রিক ড্রোন: – ছোট, দ্রুত এবং চলাচলযোগ্য, এই ড্রোনগুলি সাধারণত বাচ্চাদের খেলনা হিসাবে ইউজ করা হয় । এগুলো বাতাসে ব্যারেল রোল, ফ্লিপ এবং আরও কিছু আকর্ষণীয় কার্যকলাপ প্রদর্শন করতে পারে । এগুলি ওজনে একদম হালকা হয়, কারণ এই ধরনের ড্রোন কোন অতিরিক্ত জিনিসপত্র বহন করে না ।
  • ডেলিভারি ড্রোন:  এই ধরনের ড্রোন, পণ্য সরবরাহকারী বা ডেলিভারী কোম্পানিগুলির কাছে খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠছে । ডেলিভারি ড্রোনের নীচে একটি নোঙ্গর বা ঝুড়ির মত লাগানো থাকে ।
  • ফটোগ্রাফি ড্রোন: – এই ধরনের ড্রোনে একটি সিঙ্গেল ক্যামেরা বা ভিডিও ক্যামেরা থাকে । এই ক্যামেরাগুলি সাধারণত এইচডি মানের হয়, যা অনেক উচ্চতা থেকেও পরিষ্কার এবং নিখুঁত ছবি তুলতে পারে । এই ড্রোনগুলি, বিশেষ করে এর সাথে থাকা ক্যামেরাগুলি, প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে সৃষ্ট ক্ষতি সহ্য করার জন্য তৈরি করা হয় ।
  • রেসিং ড্রোন:  রেসিং ড্রোনগুলি প্রতি ঘন্টায় প্রায় ৭০ মাইল পর্যন্ত গতিতে ছুটতে পারে । এই ধরনের ড্রোন, বিভিন্ন প্রতিযোগিতা এবং চ্যাম্পিয়নশিপে ইউজ করা হয় ।

ড্রোন তৈরির ইতিহাস

ড্রোনকে, মানব যুগের সবচেয়ে সফল উদ্ভাবনগুলোর মধ্যে অন্যতম বলে মনে করা হয় । যার মাধ্যমে খুব সহজে, দ্রুত গতিতে এবং কোন ধরনের জীবনের ঝুঁকি ছাড়াই অনেক কঠিন কাজ করা যায় । ড্রোন প্রথম কে আবিস্কার করেছে, এই নিয়ে অনেক মতভেদ রয়েছে । একটি রিপোর্ট অনুসারে, ১৮৪৯ সালে অস্ট্রিয়া বিস্ফোরক দিয়ে ভরা পাইলটবিহীন বেলুনের মাধ্যমে প্রতিবেশী ভেনিস আক্রমণ করেছিল ।

পার্সি স্পেরি, ১৯০৭ সালে একটি রেডিও-নিয়ন্ত্রিত ঘুড়ি বিমান উড়িয়েছিলেন ।

আর এই থেকেই মানুষ ড্রোনের মত কিছু তৈরি করার অনুপ্রেরণা পায় । তবে অনেকেই বিশ্বাস করেন যে, ১৯১৫ সালে মহান বিজ্ঞানী নিকোলা টেসলা প্রথম ড্রোন আবিষ্কার করেন । যা ছিল একটি চালকবিহীন স্বয়ংক্রিয় ফাইটার প্লেন । এই প্লেনটিকে, দূরবর্তী শত্রু এলাকায় আক্রমণ করার জন্য ব্যবহার করা যেত । টেসলার তৈরী এই বিমানটিকেই, বর্তমান আধুনিক ড্রোনের ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয় ।

ড্রোন বা মনুষ্যবিহীন বিমান তৈরির প্রচেষ্টা, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে ব্যাপকভাবে শুরু হয় । ইউনাইটেড স্টেটস আর্মি, ১৯১৮ সালে এরিয়াল টর্পেডো তৈরি করা শুরু করে এবং ‘কেটারিং ব্যাগ’ নামে এই ডিভাইসের কিছু পরীক্ষাও করা হয়েছিল । কিন্তু এই প্রযুক্তির সম্পূর্ণ বিকাশের আগেই, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়ে যায় । যদিও মনুষ্যবিহীন যন্ত্র তৈরির প্রচেস্টা তখনও অব্যাহত ছিল ।

১৯৩৫ সালে, ব্রিটেনের রয়্যাল এয়ার ফোর্স, ‘দ্য কুইন বি‘ নামে একটি রেডিও তরঙ্গ চালিত এবং নির্দেশিত পাইলটবিহীন বিমানের ডিজাইন তৈরি করেছিল । আর এখানেই ড্রোন শব্দটি সর্বপ্রথম ব্যবহার করা হয়েছিল ।

পরবর্তীতে জার্মানির পিনুমুন আর্মি রিসার্চ সেন্টার, ১৯৪২ সালে “বি-১ ফ্লাইং বক্স” টেস্ট করে । একই সময়ে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীও লক্ষ্যবস্তু ও প্রশিক্ষণের জন্য ড্রোন ব্যবহার করা শুরু করে ।

১৯৪৬ সালের ৬ আগস্ট, পি-৭০ ফ্লাইং পোটেস্ট নামে একটি মার্কিন ড্রোন, মুরোক আর্মি এয়ার বেস থেকে উড্ডয়ন করে ।পরবর্তীতে ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময়, ইউএস আর্মি বিপুল সংখ্যক চালকবিহীন বিমান মোতায়েন করেছিল এবং সেগুলোকে লিফলেট ড্রপ এবং গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য ব্যবহার করেছিল ।

১৯৮৬ সালে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েল একত্রে RQ2 পাইওনিয়ার ড্রোন তৈরি করে । এই RQ2 পাইওনিয়ার ড্রোন ইউএস এয়ার ফোর্স, নৌবাহিনী এবং মেরিন দ্বারা একতরফা ভাবে ব্যবহার করা হয়েছিল ।

১৯৯১ সালে উপসাগরীয় যুদ্ধের সময়, কিছু ইরাকি বাহিনী একটি পাইওনিয়ার ইউএভির (UAVs) কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল !

জেনারেল অ্যাটমিক্স কর্পোরেশন, ১৯৯৬ সালে MQ1 – প্রিডেটর ড্রোন তৈরি করে ।

২০০২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে, ড্রোনকে প্রথমবারের মতো কোন মানুষকে লক্ষ্য করার জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল । ২০০২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ, আফগানিস্তানের পাটকিয়া প্রদেশে, ওসামা বিন লাদেনকে লক্ষ্য করার জন্য একটি ড্রোন ইউজ করে । যদিও ওসামা বিন লাদেন সেখানে ছিলেন না । এ সময় ইরান ও ইসরায়েলেও সামরিক ও স্পাই ড্রোন তৈরি করা হয় ।

২০০৬ সালে ফেডারেল এভিয়েশন অথরিটি প্রথমবারের মতো ইউএস সিভিলিয়ান এয়ারস্পেসে ড্রোন উড়ানোর অনুমতি দেয় । যার ফলে সাধারণ জনগণ ড্রোন উড়ানোর ক্ষমতা লাভ করে ।

২০০৯ সালে, ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) নতুন আইন প্রণয়ন করে । যেখানে অন্য মানুষের গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তা রক্ষার জন্য নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই ড্রোন ওড়ানোকে বেআইনি বলে ঘোষণা করা হয় । যা ড্রোনের বাণিজ্যিকীকরণের ক্ষেত্রে একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায় ।

ফ্রান্সের ড্রোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান প্যারট, ২০১০ সালে প্যারট এআর ড্রোন বাজারে নিয়ে আসে । এই ড্রোনটিকে স্মার্টফোনের মাধ্যমে কন্ট্রোল করা যেত । প্যারট এআর ড্রোনটি মূলত একটি ছোট কোয়াডকপ্টার ছিল । যা স্মার্টফোনের একটি অ্যাপের সাহায্যে নিয়ন্ত্রণ বা পরিচালনা করা যেত ।

মার্কেটপ্লেসে অন্যতম সেরা ড্রোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান DJI, ২০১৬ সালে স্মার্ট কম্পিউটার ভিশন এবং মেশিন লার্নিং প্রযুক্তি সম্পন্ন ড্রোন বাজারে নিয়ে আসে । এই ড্রোন, বাধা এড়ানো এবং জিপিএস সিগন্যাল অনুসরণ করার পাশাপাশি মানুষ, প্রাণী বা বস্তুকে ট্র্যাক করতে পারত ।

ড্রোন কোথায় ব্যবহার করা হয় – ড্রোনের ব্যবহার

আজ, যখন আমরা বাণিজ্যিক ড্রোন অ্যাপ্লিকেশনগুলির দিকে নজর দিই, তখন আমরা ড্রোনের অল্প কয়েকটি ব্যবহার দেখতে পাই । তবে বর্তমানে ড্রোনের ব্যবহার আরও ব্যাপক হয়ে উঠছে ।

  • সামরিক অভিযান বা অপারেশন
  • পেশাদার ফটোগ্রাফি / ভিডিওগ্রাফি
  • ভূমি জরিপ
  • বিল্ডিং এবং কাঠামোগত পরিদর্শন
  • বন ব্যবস্থাপনা ও পর্যবেক্ষণ
  • জরুরী সেবা
  • কৃষি উন্নয়ন এবং অটোমেশন
  • আইন প্রয়োগকারী
  • মালামাল সরবরাহ
  • সাংবাদিকতা এবং চলচ্চিত্র নির্মাণ
  • ভবন এবং নির্মাণ সাইট জরিপ
  • অনুসন্ধান ও উদ্ধার

কিভাবে একটি ড্রোন উড়ে ?

এটি ড্রোন কীভাবে উড়ে তা জানতে হলে, আপনাকে এর পিছনের সরল পদার্থবিদ্যা বুঝতে হবে ।

রোটরের দিকনির্দেশ  ড্রোন হল একটি কোয়াডকপ্টার যার মধ্যে ৪ টি রোটর থাকে এবং এই রোটরগুলি আলাদা আলাদা মোটরের সাথে সংযুক্ত থাকে, যা তাদের বিভিন্ন গতিতে ঘোরানোর সুযোগ দেয় । এর মধ্যে , ১ এবং ৩ নং রোটর ঘড়ির কাঁটার দিকে ঘোর , আর অন্য দুটি রোটর ২ এবং ৪, ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে ঘোরে ( নিচের ডায়াগ্রামে দেখানো হয়েছে )।

 

এই দুটি বিপরীত দিকে ঘূর্ণন, ড্রোনের ভারসাম্য বজায় রাখে এবং ড্রোনকে স্থিতিশীল রাখে । কারণ সবগুলো রোটর যদি একই দিকে ঘুরতে শুরু করে, তাহলে একটি নেট টর্ক তৈরি হবে, যার ফলে পুরো ড্রোনটিই ঘুরতে শুরু করবে ।

যখন সবগুলো রোটর একসাথে উচ্চ গতিতে ঘুরতে থাকে, তখন সেগুলো বাতাসকে নিচের দিকে ঠেলে দেয় এবং বাতাস ড্রোনকে উপরের দিকে ঠেলে দেয় (নিউটনের গতির তৃতীয় সূত্র অনুসারে) । রোটরের গতি বাড়ানো হলে ড্রোন উপরের দিকে উঠতে শুরু করে এবং গতি কমে গেলে ড্রোন নিচের দিকে নামতে শুরু করে ।

ড্রোন ঘূর্ণন – আপনি যদি ড্রোনটিকে যে কোন দিকে ঘোরাতে চান, তাহলে আপনাকে যে কোন দুটি রোটরের গতি বাড়াতে হবে ।উদাহরণস্বরূপ ১ এবং ৩ নং রোটরের গতি, ২ এবং ৪ নং রোটরগুলোর চেয়ে কম রাখা হলে, ড্রোনের উচ্চতায় কোন পরিবর্তন হবে না, তবে কৌণিক ভরবেগ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে, ড্রোনটি ঘড়ির কাঁটার দিকে চলতে শুরু করবে । একইভাবে, আপনি যদি ড্রোনটিকে ঘড়ির কাঁটার উল্টো দিকে ঘোরাতে চান, তাহলে এটিকে উল্টাতে হবে । অর্থাৎ, তখন  ২ এবং ৪ নং রোটরের গতি, ১ এবং ৩ নং রোটরগুলোর চেয়ে কম রাখতে হবে ।

ফরোয়ার্ড এবং ব্যাকওয়ার্ড – আপনি যদি ড্রোনটিকে সামনে বা পিছনের দিকে নিয়ে যেতে চান, তাহলে আপনাকে একদিকের দুটি রোটরের গতি বাড়াতে হবে এবং অন্যদিকের দুটি রোটরের গতি কমাতে হবে ।

উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি ড্রোনটিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চান, তাহলে ১ এবং ৪ নং রোটরের গতি বাড়াতে হবে, অন্যদিকে ২ এবং ৩ নং রোটরের গতি কমাতে হবে । এর ফলে ১ এবং ৪ নং রোটর আরও লিফট তৈরি করবে, যার ফলে ড্রোনটি সামান্য কাত হবে এবং থ্রাস্ট তৈরি করে বাঁকানো দিকে চলতে শুরু করবে । একই প্রসেস ফলো করে, আপনি ড্রোনটিকে পিছনের দিকে বা পাশের দিকে মুভ করাতে পারবেন ।

রিমোট কন্ট্রোল – ড্রোনের সাথে লাগানো রোটরগুলির গতি, রিমোটের জয়স্টিকের সাহায্যে নিয়ন্ত্রণ করা হয় । এটি ব্যাটারি থেকে মোটর পর্যন্ত ভোল্টেজ কম বা বৃদ্ধি করে, যার ফলে রোটরগুলির গতি কম বা বেশী হয় । মোটর যখন বেশি ভোল্টেজ পায় তখন রোটরের গতি বৃদ্ধি পায় । একইভাবে যখন মোটর কম ভোল্টেজ পায়, তখন রোটরের গতি কমে যায় ।

এছাড়াও, ড্রোনে সাধারণত  লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়, যা ব্যাটারিগুলিকে ভাল রাখার জন্য অপরিহার্য । কারণ ব্যটারী যত ভাল থাকবে, ড্রোনকে তত বেশী সময় ফ্লাই করানো যাবে । বর্তমান সময়ের বেশিরভাগ ড্রোনে ইন্টারনাল জিপিএস সিস্টেম থাকে, যার কারণে ড্রোন বুঝতে পারে যে, সেটি এখন কোথায় আছে । যদি কোনো কারণে আপনার রিমোট-কন্ট্রোল থেকে আপনার ড্রোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, তাহলে ড্রোনটি অটোমেটিক সেই জায়গায় ফিরে আসবে, যেখান থেকে ড্রোনটি টেক অফ করেছিল ।

ড্রোন কিভাবে কাজ করে ?

জয়স্টিক এবং জিপিএস সিস্টেমের কারণে , ড্রোন ওড়ানো এবং ভিডিও গেম খেলার অভিজ্ঞতা অনেকটা একই রকম । এই ইউজারফ্রেন্ডলী ইন্টারফেস তৈরী করার জন্য, একটি অ্যাক্সিলোমিটার, একটি জাইরোস্কোপ এবং অন্যান্য কিছু জটিল টেকনোলোজি ব্যবহার করা হয়, যাতে ড্রোনের ফ্লাইট যতটা সম্ভব মসৃণ এবং সাবলীল করা যায় ।

এমন অবস্থায় আপনাদের মনে প্রশ্ন আসতে পারে যে, কিভাবে এই মেকানিক্যাল ফিচার কাজ করে বা একটি ড্রোন কিভাবে কাজ করে ? সহজ ভাষায় এই প্রশ্নের উত্তর হল, কিছুটা বেতার টেকনোলোজি এবং প্রচুর পদার্থবিদ্যা । তাহলে চলুন, ড্রোন উড়ার কৌশল সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক ।

সংযোগ বা কানেক্টিভিটি – ড্রোন দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য স্মার্টফোন এবং ট্যাবলেট ব্যবহার করা হয় । আর এই ড্রোন, ওয়্যারলেসের মাধ্যমে স্মার্টফোন বা ট্যাবলেটের সাথে কানেক্ট থাকে । এই ওয়্যারলেস কানেক্টিভিটির সাহায্যেই ড্রোনের পাইলট, পাখির চোখের মতো ড্রোন এবং এর চারপাশের এলাকার ওপর নজর রাখতে পারে । কিছু অ্যাপের সাহায্যে ড্রোনের উড্ডয়নের পথও সেট করে দেয়া যায়, যার ফলে এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে পূর্ব পরিকল্পিত পথে উড়ে যায় । এ জন্য প্রয়োজন হয় জিপিএসের ।ওয়্যারলেস কানেক্টিভিটির দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল, রিয়েল-টাইম ব্যাটারি চার্জ ট্র্যাকিং । কারণ ওজন কমানোর জন্য ড্রোনগুলিতে ছোট ব্যাটারি ইউজ করা হয় ।

রোটরস – ড্রোনকে উপরের দিকে ওড়ানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে রোটর । রোটর, যা মোটরের সাথে সংযুক্ত থাকে এবং এটি একটি প্রপেলার নিয়ে গঠিত । ড্রোনের পাইলট যখন, জয়েস্টিক বা স্মার্টফোনের সাহায্যে রোটরগুলির গতি বৃদ্ধি করে, তখন রোটরগুলি বায়ুর মধ্যে একটি নিম্নমুখী বল ক্রিয়েট করে, যা ড্রোনের উপর কাজ করে এবং ড্রোনটিকে উপরের দিকে উঠায় । রোটরগুলির গতি কমালে, ড্রোনটি আবার নীচের দিকে নামতে শুরু করে । যখন রোটরগুলির দ্বারা উৎপন্ন নিম্নমুখী শক্তি বা বল ড্রোনের মহাকর্ষীয় টান বা ওজনের সমান হয়, তখন ড্রোনটি বাতাসের মাঝখানে এক জায়গায় স্থির থাকে ।

অ্যাক্সিলোমিটার এবং অল্টিমিটার  অ্যাক্সিলোমিটারড্রোনকে এর গতি এবং দিক সম্পর্কে অবহিত করে এবং অল্টিমিটার, ড্রোনের উচ্চতা সম্পর্কিত তথ্য দেয় । এছাড়াও, এই বৈশিষ্ট্যগুলি ড্রোনটিকে ধীরে এবং নিরাপদে মাটিতে অবতরণ করতে সহায়তা করে । এছাড়াও ড্রোনকে বায়ু শূন্যতায় আটকে যেতে এবং অপ্রত্যাশিত ভাবে নীচে নামতে বাধা দেয় ।

ক্যামেরা – কিছু ড্রোনের ইন্টারনাল ক্যামেরা রয়েছে, যা এর পাইলটকে ড্রোনটি কোথায় উড়ছে তা দেখার সুযোগ দেয় । সেই সাথে ড্রোনের ওপর লাগানো ক্যামেরার সাহায্যে, মানুষের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ জায়গাগুলোতে খুব সহজেই পৌঁছানো যায় । সেই কারণে প্রতিকূল পরিবেশে অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযানে ড্রোন বেশি ব্যবহৃত হয় ।

ড্রোন তৈরিতে ব্যবহৃত ইঞ্জিনিয়ারিং উপকরণগুলি অত্যন্ত জটিল কম্পোজিট । এগুলো ফ্লাইটের সময় উৎপন্ন কম্পন শোষণ করে এবং আওয়াজ কমায় । সেই সাথে এই উপকরণগুলি বেশ হালকা ।

কিভাবে একটি ড্রোন তৈরি হয় ?

একটি ড্রোন তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণগুলি নিচে দেওয়া হল –

চ্যাসিস – চ্যাসিস হল ড্রোনের প্রধান কাঠামো, যার সাথে ড্রোনের সমস্ত যন্ত্রাংশ লাগানো থাকে । এই চ্যাসিস তৈরি করার সময়, ড্রোনের ক্ষমতা এবং ড্রোন কি পরিমাণ ওজন (ক্যামেরা বা কিছু জিনিস বহন করার জন্য) বহন করবে তা মাথায় রাখা হয় । কারণ ওজন তোলার ক্ষমতার উপর ভিত্তি করে ড্রোনের প্রোপেলার ও মোটরের আকার নির্ধারণ করা হয় ।

প্রোপেলার – একটি ড্রোন বা কোয়াডকপ্টার কি পরিমাণ লোড বহন করতে পারবে, তা নির্ভর করে প্রোপেলারের উপর । এছাড়াও, এই প্রোপেলার, ড্রোনের উপরে ওঠার ক্ষমতা এবং চারপাশে চলার গতিকে প্রভাবিত করে ।

প্রোপেলার যত বেশী লম্বা হবে, তত বেশি পরিমাণে লিফট তৈরি হবে । কিন্তু এতে গতি বাড়াতে বা কমাতে বেশি সময়ের প্রয়োজন হয় ।

অন্যদিকে, ছোট আকারের প্রপেলারের গতি সহজেই বেড়ে যায় । এছাড়াও এগুলো আরো বেশি manouvrable হয় । তবে লম্বা প্রোপেলারের সমান শক্তি পেতে এগুলোর অনেক বেশী ঘূর্ণন গতির প্রয়োজন হয় । এর ফলে মোটরের উপর অনেক বেশী চাপ পরে এবং মোটরের আয়ু কমে যায় ।

মোটর – প্রতিটি প্রপেলার একটি মোটরের সাথে সংযুক্ত থাকে । এই মোটরগুলোর রেটিং ‘Kv’ বা কিলোভোল্ট ইউনিটে পরিমাপ করা হয় । মোটর যত বেশী গতিতে ঘুরবে, তত বেশী লিফট তৈরি হবে । তবে মোটর দ্রুত ঘোরানোর জন্য ভাল মানের ব্যাটারির প্রয়োজন ।

ইলেকট্রনিক স্পিড কন্ট্রোলার (ESC) – সঠিক স্পিন বা ঘূর্ণন গতি এবং দিকনির্দেশনা প্রদান করার জন্য, এটি ড্রোনের প্রতিটি মোটরে নিয়ন্ত্রিত কারেন্ট সাপ্লাই করে ।

রেডিও রিসিভার – রেডিও রিসিভারের কাজ হল, পাইলটের কাছ থেকে প্রেরিত যে কোন ধরনের সিগন্যাল বা কমান্ড রিসিভ করা ।

ফ্লাইট কন্ট্রোলার – ফ্লাইট কন্ট্রোলার হল এক ধরণের অনবোর্ড কম্পিউটার, যা পাইলটের থেকে প্রেরিত কমান্ডগুলোকে ব্যাখ্যা করে এবং তারপরে প্রাপ্ত ইনপুটগুলোকে ESC-তে পাঠায় । যার মাধ্যমে ড্রোন বা কোয়াডকপ্টার নিয়ন্ত্রণ করা হয় ।

ব্যাটারি – বর্তমান সময়ের বেশিভাগ ড্রোনেই লিথিয়াম পলিমার ব্যাটারি ব্যবহার করা হয় । এই লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারীতে ফ্লাইট টাইম বেশী পাওয়া যায় এবং রিচার্জও খুব তাড়াতাড়ি হয় ।

ক্যামেরা – ক্যামেরা, সাধারণত ড্রোনের নিচের অংশে মাউন্ট করা হয় । এটি নেভিগেশনে সাহায্য করে এবং এরিয়াল ফটোগ্রাফি ও মনিটরিং এর জন্য ব্যবহার করা হয় ।

উপরে উল্লেখিত জিনিসগুলো একটি ড্রোনের জন্য অপরিহার্য । তবে বর্তমানে, ড্রোনের বিভিন্ন কাজের ক্ষমতা এবং দক্ষতা বাড়ানোর জন্য কিছু অতিরিক্ত সেন্সর ব্যবহার করা হয়, যেমন জাইরোস্কোপ, অ্যাক্সিলোমিটার, জিপিএস, ব্যারোমিটার ইত্যাদি ।

উন্নত ইউএভি প্রযুক্তি

আমরা আপনাদের আগেই বলেছি যে, ড্রোনগুলি আনম্যানড এরিয়াল ভেহিকেলস (ইউএভি) বা মনুষ্যবিহীন বিমান ব্যবস্থা (ইউএএস) নামেও পরিচিত । এগুলোর মধ্যে এমন কিছু উন্নত টেকনোলোজি ব্যবহার করা হয়েছে, যা সম্পর্কে খুব কম মানুষই জানে ।

রাডার পজিশনিং এবং হোম রিটার্ন প্রযুক্তি

নতুন প্রজন্মের ড্রোনগুলি, দ্বৈত গ্লোবাল নেভিগেশন স্যাটেলাইট সিস্টেম (GNSS) , যেমন GPS এবং GLONASS  দিয়ে সজ্জিত ।

ড্রোনগুলো GNSS এবং নন-স্যাটেলাইট মোডে ফ্লাই করতে পারে । কিন্তু কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ, যেমন – 3D মানচিত্র তৈরি করা , ল্যান্ডস্কেপ বা ভুমি জরিপ করা, অনুসন্ধান এবং উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করার জন্য একটি নির্ভুল ড্রোন নেভিগেশন সিস্টেম প্রয়োজন ।

ড্রোন চালু হওয়ার সাথে সাথে এটি প্রথমে GNSS স্যাটেলাইট সার্চ করে এবং সেটিকে সনাক্ত করে । GNSS সিস্টেম, স্যাটেলাইট কনস্টেলেশন টেকনোলোজি ইউজ করে । সাধারণত স্যাটেলাইট নক্ষত্রমণ্ডল হল উপগ্রহের একটি গ্রুপ, যা নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে কভারেজ দেওয়ার জন্য একসাথে কাজ করে এবং একে অপরের সাথে সঠিক সময়ে ওভারল্যাপ করে । কভারেজ বলতে সেই সময়কালকেই বোঝানো হয়, যেখানে লোকাল হরাইজনের উপরে একটি উপগ্রহ দৃশ্যমান হয় ।

চলুন জেনে নিই কিভাবে এই প্রযুক্তি কাজ করে

এই প্রযুক্তি, ড্রোনের পাইলটের হাতে থাকা রিমোট কন্ট্রোলার বা স্মার্টফোনের ডিসপ্লেতে নিম্নলিখিত সংকেতগুলি প্রদর্শন করে –

  • সংকেতের মাধ্যমে বোঝায় যে, ড্রোন জিএনএসএস উপগ্রহ ডিটেক্ট করেছে এবং ড্রোনটি এখন উড়ার জন্য প্রস্তুত ।
  • পাইলটের কাছে ড্রোনের বর্তমান অবস্থান দেখায় ।
  • ‘ হোম রিটার্ন‘ সিকিউরিটি ফিচারের জন্য হোম পয়েন্ট রেকর্ড করে ।

ড্রোন দ্বারা ব্যবহৃত হোম রিটার্ন প্রযুক্তি 

বর্তমান সময়ের ড্রোনগুলিতে ৩ ধরনের রিটার্ন টু হোম টেকনোলোজি ব্যবহার করা হয়, যা নিচে দেওয়া হল –

  • রিমোট কন্ট্রোলার বা স্মার্টফোনের অ্যাপে থাকা হোম রিটার্ন বোতামে চাপ দিলে ড্রোন পাইলটের কাছে ফিরে আসা শুরু করে । এই বাটনে চাপ দেওয়ার পর ড্রোন স্বয়ংক্রিয়ভাবে পাইলটের কাছে ফিরে আসে ।
  • যখন ব্যাটারি লেভেল কমে যেতে থাকে, তখন ড্রোন স্বয়ংক্রিয়ভাবে হোম পয়েন্টে ফিরে আসে ।
  • যদি কোনো কারণে ড্রোন এবং রিমোট কন্ট্রোলারের মধ্যে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, তাহলে UAV স্বয়ংক্রিয়ভাবে হোম পয়েন্টে ফিরে আসে ।

বাধা সনাক্তকরণ এবং সংঘর্ষ এড়ানো প্রযুক্তি

বর্তমান সময়ের হাই কোয়ালিটির ড্রোনগুলিতে সংঘর্ষ এড়ানো সিস্টেম (Collision Avoidance System) ইনস্টল করা হয় । এই প্রযুক্তি সম্বলিত ড্রোন, তাদের চারপাশের এলাকা স্ক্যান করতে Obstacle detection sensor বা বাধা সনাক্তকরণ সেন্সর ইউজ করে । এই ক্ষেত্রে সফটওয়্যার অ্যালগরিদম এবং SLAM টেকনোলোজি, 3D মানচিত্রের মধ্যে ছবি তৈরি করে । এর ফলে ড্রোন তার সামনে থাকা বাধাকে অনুভব করতে পারে এবং দুর্ঘটনা এড়াতে এটিকে এড়িয়ে যায় । বাধাগুলো সনাক্ত করতে এবং এড়াতে নিম্নলিখিত সেন্সরগুলি ব্যবহার করা হয় –

  • ভিশন সেন্সর
  • আল্ট্রাসনিক সেন্সর
  • ইনফ্রারেড
  • লিডার
  • (ToF) টাইম অফ ফ্লাইট
  • মনোকুলার ভিশন

উপরে উল্লেখিত সেন্সরগুলি ব্যবহার করে, ড্রোন তার সামনে থাকা যে কোন ধরনের বাধাকে সহজেই সনাক্ত করতে পারে এবং সেগুলোর থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারে ।

কিভাবে ড্রোন তার পথের সব ধরনের বাধা এড়িয়ে, বাড়ি ফেরার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করে ।

  • যখনই ড্রোন তার সামনে কোন বাধা অনুভব করে, তখনই এটি নিজেকে স্লো করে দেয় ।
  • এর পরে এটি এক জায়গায় স্থির হয়ে যায় এবং ঘোরাঘুরি করা শুরু করে (হোভার) । তারপর ধীরে ধীরে উপরের দিকে উঠে যায় । এটা ততক্ষন পর্যন্ত উপরে উঠে, যতক্ষণ না এর মনে হয়, সামনে আর কোনো বাধা নেই ।
  • এরপর পুনরায় রিটার্ন টু হোম প্রক্রিয়া শুরু হয় এবং এভাবেই ড্রোন অটোমেটিকভাবে পাইলটের কাছে ফিরে আসে ।

জাইরোস্কোপ স্ট্যাবিলাইজেশন, আইএমইউ এবং ফ্লাইট কন্ট্রোলার

জাইরোস্কোপ স্ট্যাবিলাইজেশন টেকনোলোজির কারণে, ড্রোন মসৃণ ভাবে উড়তে পারে । এই জাইরোস্কোপ, ড্রোনের বিরুদ্ধে চলমান ফোর্সের উপর তাত্ক্ষণিকভাবে কাজ করে এবং ড্রোনটিকে স্ট্যাবল রাখতে সাহায্য করে । এছাড়াও জাইরোস্কোপ, সেন্ট্রাল ফ্লাইট কন্ট্রোলারকে গুরুত্বপূর্ণ ন্যাভিগেশনাল তথ্য সাপ্লাই করে ।

IMU-এর ফুল ফর্ম হল ” Inertial Measurement Unit ” । এটি এক বা একাধিক অ্যাক্সিলোমিটারের সাহায্যে ত্বরণের বর্তমান হার পরিমাপ করে । IMU ঘূর্ণনগত বৈশিষ্ট্য যেমন পিচ, রোল ইত্যাদির পরিবর্তন সনাক্ত করে । কিছু কিছু আইএমইউতে একটি ম্যাগনেটোমিটারও ইনস্টল করা হয় । যা এটিকে ওরিয়েন্টেশন ড্রিফটের বিরুদ্ধে ক্যালিব্রেশন করতে সহায়তা করে ।

জাইরোস্কোপ হল IMU এর একটি অংশ এবং IMU হল ড্রোন ফ্লাইট কন্ট্রোলারের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ । আর ফ্লাইট কন্ট্রোলার হল ড্রোনের সেন্ট্রাল ব্রেন ।

রিয়েল-টাইম টেলিমেট্রি ফ্লাইট প্যারামিটার

প্রায় সব ধরনের ড্রোনের মধ্যে একটি গ্রাউন্ড স্টেশন কন্ট্রোলার (GSC) থাকে বা একটি স্মার্টফোন অ্যাপ থাকে, যা পাইলটকে ড্রোন ওড়াতে এবং রিয়্যাল টাইম ফ্লাইট টেলিমেট্রি ট্র্যাক করার সুযোগ দেয় । রিমোট কন্ট্রোলারে প্রদর্শিত টেলিমেট্রি ডেটার মধ্যে রয়েছে ড্রোনের রেঞ্জ, গতি, উচ্চতা, GNSS শক্তি, ব্যাটারির চার্জ এবং সতর্কতা ।

অনেক ড্রোনে এফপিভি (ফার্স্ট পারসন ভিউ) নামে একটি গ্রাউন্ড কন্ট্রোলার ইউজ করা হয় , যা ড্রোন থেকে কন্ট্রোলারে বা মোবাইল ডিভাইসে ভিডিও সেন্ড করে ।

জিপিএস রেডি টু ফ্লাই মোড ড্রোন প্রযুক্তি

যখন কম্পাস ক্যালিব্রেট করা হয়, তখন এটি স্যাটেলাইট সার্চ করা শুরু করে । এটি ৬ টির বেশি স্যাটেলাইট ডিটেক্ট করার পরে ড্রোনটিকে রেডি টু ফ্লাই মোডে উড়তে দেয় ।

নো ফ্লাই জোন ড্রোন প্রযুক্তি

ফ্লাইট সিকিউরিটি বাড়াতে এবং সীমাবদ্ধ এলাকায় দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য, বর্তমান সময়ের ড্রোনগুলোতে “নো ফ্লাই জোন” ফিচার অন্তর্ভুক্ত করা হয় ।

নো ফ্লাই জোন, FAA ( ফেডারেল এভিয়েশন অথরিটি ) দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এবং শ্রেণীবদ্ধ করা হয় । ড্রোনের ফার্মওয়্যার আপডেট করার মাধ্যমে, ড্রোনের নো ফ্লাই জোন ড্রোন প্রযুক্তি পরিবর্তন বা আপডেট করা হয় ।

অভ্যন্তরীণ কম্পাস এবং ফেইলসেফ ফাংশন

 

এই ফাংশনটি, ড্রোন এবং রিমোট কন্ট্রোল সিস্টেমকে ফ্লাইটের বর্তমান এবং সঠিক অবস্থান সম্পর্কে অবহিত করে । এর মধ্যে একটি হোম পয়েন্ট সেট করে দেয়া যেতে পারে । যখন ড্রোনটির সংযোগ রিমোট কন্ট্রোল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, তখন ড্রোনটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে এই হোম পয়েন্টে ফিরে যায় । আর এই ফাংশনটি ” ফেল-সেফ ফাংশন ” নামেও পরিচিত ।

ফার্মওয়্যার এবং ফ্লাইট অ্যাসিস্ট্যান্ট পোর্ট

ফ্লাইট কন্ট্রোল সিস্টেম, একটি মাইক্রো-ইউএসবি ক্যাবলের সাহায্যে পিসি অ্যাসিস্ট্যান্টের সাথে যোগাযোগ করে । সেই সাথে ড্রোনের কনফিগারেশন এবং ফার্মওয়্যার আপডেট করার অনুমতি দেয় ।

সহজ সংজ্ঞায়, ড্রোন হল এক ধরনের উড়ন্ত কম্পিউটার । যার সাথে বিভিন্ন ধরনের সেন্সর এবং ক্যামেরা লাগানো থাকে ।কম্পিউটারের মতো, ড্রোনেরও সফটওয়্যার ফার্মওয়্যার রয়েছে । ড্রোন নির্মাতারা, ড্রোনের রিমোট কন্ট্রোল ইউনিট বা সফটওয়্যারে নতুন নতুন ফিচার যুক্ত করতে এবং বাগগুলি ঠিক করতে নিয়মিত ফার্মওয়্যার আপগ্রেড পাবলিশ করে ।

LED ফ্লাইট ইন্ডিকেটর

এই LED ফ্লাইট ইন্ডিকেটরগুলো ড্রোনের সামনে এবং পিছনে পাওয়া যায় । ড্রোনের এলইডিগুলো সাধারণত লাল, সবুজ এবং হলুদ রঙের হয় ।

ড্রোনের নাক বোঝানোর জন্য সামনের LED ইন্ডিকেটরগুলো জ্বলতে থাকে । আর পিছনের এলইডিগুলি ড্রোনের বিভিন্ন অবস্থা নির্দেশ করে যেমন – পাওয়ার অন, ফার্মওয়্যার আপগ্রেড গ্রহণ এবং ফ্লাই মোড ইত্যাদি । সমস্ত ড্রোন একটি ইউজার ম্যানুয়াল থাকে, আর এই ইউজার ম্যানুয়ালে সব ধরনের LED এর অর্থ ব্যাখ্যা করা থাকে ।

হাই পারফরমেন্স ক্যামেরা

আপডেট ড্রোনগুলিতে হাই রেজুলেশনের ক্যামেরা রয়েছে, যা হাই কোয়ালিটির ছবি তুলতে এবং ভিডিও শ্যুট করতে সক্ষম ।এসব ক্যামেরার সাহায্যে 4k রেজুলেশনের ভিডিও পর্যন্ত শ্যুট করা যায় । এই ধরনের ক্যামেরা বেশির ভাগ সময় এরিয়াল ফটোগ্রাফি বা সিনেমার দৃশ্য শুট করার জন্য ব্যবহার করা হয় ।

Gimbals এবং কাত নিয়ন্ত্রণ

 

Gimbal প্রযুক্তি ড্রোন ফটোগ্রাফির জন্য যুগান্তকারী আবিষ্কার । ড্রোন থেকে হাই রেজুলেশনের ছবি, ফিল্ম বা 3D ইমেজার  ক্যাপচার করতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । এটি উড়ন্ত অবস্থায় ক্যামেরাটিকে যে কোন দিকে ঘোরানোর সুযোগ দেয় ।সেই সাথে, গিম্বল ক্যামেরার ভাইব্রেশনও কমিয়ে দেয়, যার ফলে ক্লিয়ার ছবি পাওয়া যায় । আজকাল প্রায় সব নতুন ড্রোনেই Gimbals এবং ক্যামেরা ইন্সটল করা হয় ।

ড্রনের অ্যাপ্লিকেশন কি ?

সামরিক নজরদারির জন্য – ড্রোনগুলি প্রথমে শুধুমাত্র সামরিক কাজে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছিল । ১৯৪০-এর দশকে ব্রিটিশ এবং ইউএস সামরিক বাহিনী, গোয়েন্দাগিরি করার জন্য ড্রোন ইউজ করেছিল । বর্তমান সময়ের ড্রোনগুলো, আগের ড্রোনগুলোর তুলনায় অনেক বেশি উন্নত ৷ সামরিক বাহিনীতে এগুলি যুদ্ধের সময় শত্রু পক্ষের পারফেক্ট অবস্থান সহ, বিভিন্ন ধরনের তথ্য কালেক্ট করতে ব্যবহৃত হয় । এছাড়াও বর্তমানে ড্রোনের সাহায্যে শত্রুপক্ষের সীমানায় ঢুকে মিসাইলও ছোড়া হচ্ছে । এমতাবস্থায় পাইলটের জীবনের কোনো ধরনের ঝুঁকি থাকে না এবং খুব সহজেই গুপ্তচরবৃত্তি ও পাহারাদারি করা যায় ।

লাইভ ইভেন্টের সময় – গত কয়েক বছর ধরে, লাইভ ইভেন্টগুলি ক্যাপচার করতে ক্যামেরা সহ ড্রোন ব্যবহার করা হচ্ছে । রাজনীতিবিদদের বক্তৃতা, মিছিল, কনসার্ট এবং খেলাধুলার লাইভ রেকর্ডিংয়ের জন্য ড্রোন ব্যবহার করা হচ্ছে । ড্রোন মানুষদের কাছে এমন দৃশ্য প্রদর্শন করতে পারে, যা অন্য কোনো প্রযুক্তির মাধ্যমে সম্ভব নয় ।

 

 

বিপজ্জনক এলাকা জরিপ – ড্রোন আবিষ্কার হওয়ার সাথে সাথে, মানুষের জন্য বিপজ্জনক এলাকাগুলো অন্বেষণ করা অনেক বেশী সহজ হয়ে গেছে । উদাহরণস্বরূপ, ভূতত্ত্ববিদরা পৃথিবীর ইউনিক এবং বিপজ্জনক জায়গায় পৌঁছে সহজেই তাদের কাজ সম্পন্ন করতে পারে ।

হোম ডেলিভারি পরিষেবার জন্য – বর্তমান সময়ে অনেক বড় বড় কোম্পানি, তাদের গ্রাহকদের কাছে পণ্য সরবরাহ করতে ড্রোন ব্যবহার করছে । হোম ডেলিভারী সার্ভিসের জন্য ব্যবহৃত ড্রোনগুলো, অনেক বেশি ওজন বহন করতে সক্ষম । উদাহরণস্বরূপ, অনেক দেশে ফাস্ট ফুড ( যেমন- পিজ্জা ) হোম ডেলিভারির জন্য ড্রোন ব্যবহার করা হয় ।

আইন প্রয়োগের জন্য – এটি হল ড্রোনের একটি সর্বোত্তম ব্যবহার । লুকানো অপরাধী বা সন্ত্রাসীকে খুঁজে বের করতে পুলিশ ড্রোন ব্যবহার করে । এছাড়াও, রেসকিউ অপারেশন পরিকল্পনা করার জন্য ড্রোন গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে । এছাড়া প্রয়োজনে ড্রোনের সাহায্যে যে কোন অপরাধীকে গুলি করতে পারে পুলিশ ।

বন্যপ্রাণী নিরীক্ষণ – বন্যপ্রাণী নিধন বন্ধ করতেএবং সেগুলোকে সুরক্ষা প্রদান করার জন্য, এদের উপর নজর রাখা অত্যন্ত জরুরী । এই বন্যপ্রানী নিরিক্ষন বা মনিটরিং করার জন্য বর্তমানে ড্রোন ব্যবহার করা হচ্ছে ।

ট্র্যাফিক নিরীক্ষণ করতে – ড্রোনের গতি এবং বিশাল এলাকা কভার করার ক্ষমতার কারণে, এটি ট্র্যাফিক পর্যবেক্ষণ করার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে । এগুলি ট্রাফিক গাইডলাইন, ট্রাফিক কার্যকলাপ বিশ্লেষণ, পৃথক যানবাহন সনাক্তকরণ, ট্র্যাকিং এবং লাইসেন্স প্লেট পড়া ইত্যাদির জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে । এই ধরনের ড্রোনগুলোনে এইচডি ও থার্মাল ক্যামেরা ইউজ করা হয়, যাতে করে দিনরাতে যে কোন সময় নজরদারি করা যায় ।

ড্রোন ওড়ানোর সময় কী কী সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে ?

ড্রোন ওড়ানোর সময় কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরী –

1. যদি আপনার ড্রোন লিথিয়াম-পাওয়ার ব্যাটারির মাধ্যমে চলে, তাহলে এটি ঠান্ডা পরিবেশে কম ব্যবহার করুন ৷ কারণ প্রচন্ড ঠান্ডা, লিথিয়াম ব্যাটারির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং ব্যাটারি খুব দ্রুত ডিসচার্জ হয়ে যায় ।

2. অন্যদিকে, তাপমাত্রা বেশি থাকলেও, বেশিক্ষণ ড্রোন ফ্লাই করানো উচিত নয় । কারণ, গরম পরিবেশে লিফট তৈরি করতে মোটরকে বেশি কাজ করতে হয়, যার ফলে ব্যাটারি তাড়াতাড়ি ডিসচার্জ হয়ে যায় । ব্যবহার করার পরে, ব্যাটারিটি প্রথমে ঠান্ডা হতে দিন এবং তারপরে পুনরায় চার্জ করুন ।

3. বাতাসের গতি বেশি হলে ড্রোন উড়াবেন না । কারণ, এমন অবস্থায় ড্রোনকে যে কোন জায়গায় স্থিতিশীল করতে অনেক বেশী শক্তির প্রয়োজন হবে এবং সেই সাথে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনাও বাড়বে । তাই ড্রোনকে সব সময় নরমাল পরিবেশে উড়ানোর চেষ্টা করুন ।

 

4. বৃষ্টির সময় বা অতিরিক্ত আর্দ্র আবহাওয়ায় ড্রোন উড়ানো থেকে বিরত থাকুন । কারণ ভিজে গেলে ড্রোনের ফ্লাইং টাইম কমে যায় ।

5. আপনার ড্রোনে যদি গার্ড থাকে, তাহলে প্রথম অবস্থায় ড্রোন ফ্লাই করার সময় অবশ্যই এগুলো ব্যবহার করুন । কারণ দুর্ঘটনার সময় এগুলো ড্রোনকে ক্ষতি হওয়া থেকে রক্ষা করে । কিন্তু একই সাথে এগুলো ড্রোনের ওজন বাড়িয়ে দেয় । সুতরাং আপনি যখন ড্রোন ফ্লাই করতে অভিজ্ঞ হবেন, তখন ড্রোন থেকে গার্ড সরিয়ে ইউজ করবেন ।

 

শেষ কথা

 

ড্রোন হল বিজ্ঞানের এক আশীর্বাদ । ড্রোন প্রযুক্তি প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ধাপ অতিক্রম করছে এবং এটি আমাদের জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক ভূমিকা পালন করছে । তবে একই সাথে এটি নিশ্চিত করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে, এটি শুধুমাত্র মানবজাতির কল্যাণের জন্য ব্যবহার করা হবে । আজকের আর্টিকেলে আমরা, ড্রোন কী এবং এটি কীভাবে কাজ করে? ইত্যাদি বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি । আর্টিকেলটি নিয়ে যে কোন ধরনের প্রশ্ন বা মন্তব্য থাকলে কমেন্ট সেকশনে জানান । ধন্যবাদ

0 responses on "ড্রোন কী এবং এটি কীভাবে কাজ করে ?"

Leave a Reply

© Technial Bangla. All rights reserved. 2025