প্রযুক্তি বা টেকনোলজি এই আধুনিক সময়ে এসে বেশ পরিচিত ও সাধারণ এক শব্দ হয়ে উঠেছে। বিজ্ঞানের উন্নতির সাথে সাথে প্রযুক্তির উন্নতি হচ্ছে আর বাড়ছে তার ব্যবহার। তবে প্রযুক্তি বা টেকনোলজি বলতে আসলে কী বোঝায়? ডিজিটাল কিছুই কী শুধু প্রযুক্তি? নাকি প্রযুক্তির সংজ্ঞা আরও ব্যাপক? প্রযুক্তি সম্পর্কে এমন বিভিন্ন প্রশ্ন আসাটাই কৌতূহলী যে কারো জন্য স্বাভাবিক। কেননা প্রযুক্তি নিয়ে আমাদের অনেকের ধারণাই পরিষ্কার নয়।
আজকের এই পোস্টের বিষয় এই প্রযুক্তি নিয়েই। প্রযুক্তি বা টেকনোলজি কাকে বলে এবং প্রযুক্তি সম্পর্কিত বেশ কিছু সাধারণ প্রশ্ন নিয়েই থাকবে আজকের পোস্টের আলোচনা। তাই প্রযুক্তি সম্পর্কে সঠিক ধারণা পেতে পুরো পোস্টটি পড়ে নিতে পারেন।
প্রযুক্তি বা টেকনোলজি কাকে বলে?
প্রযুক্তি বা টেকনোলজিকে অনেক সময় ছোট করে অনেকে টেক বলে থাকেন। তবে প্রযুক্তি আসলে কী? প্রযুক্তির সংজ্ঞা শুধুমাত্র কম্পিউটার, মোবাইল, সফটওয়্যার বা ডিজিটাল কিছুর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। প্রযুক্তির সংজ্ঞা আরও ব্যাপক। মানুষ সভ্যতার শুরু থেকেই বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করে আসছে।
সোজা কথায় প্রযুক্তি বা টেকনোলজি বলতে বোঝায় মানুষ বিজ্ঞানকে ব্যবহার করে তার জীবনকে সহজ করার জন্য বা কোন সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে যা ব্যবহার করে- সেটাই প্রযুক্তি। প্রযুক্তি হতে পারে কোন টুল বা কোন যন্ত্র। মানুষ বৈজ্ঞানিক ও ব্যবহারিক জ্ঞান থেকেই প্রযুক্তি বা টেকনোলজি তৈরি করে থাকে। প্রযুক্তি যে কোন টুল বা যন্ত্র যা ধরা ছোঁয়া যাবে এমন হতে হবে সেরকম নয়। বরং ধরা-ছোঁওয়ার বাইরের কিছুও প্রযুক্তি হয়ে উঠতে পারে। যেমনঃ সফটওয়্যার বা অ্যাপ। টেকনোলজি মানুষের দৈনন্দিন জীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। প্রযুক্তির উন্নতিতে পুরো সভ্যতা বদলে গেছে এমন অনেক ইতিহাস রয়েছে।
মানব সভ্যতার ইতিহাসে প্রথম প্রযুক্তি বলা যায় পাথরের বিভিন্ন টুলকে। মানুষ প্রথম পাথর কেটে হাতিয়ার তৈরি করতে শেখে শিকার ও নিরাপত্তার জন্য। শিকারের মতো অত্যাবশ্যক জিনিসকে সহজ করে দিয়েছিল পাথরের হাতিয়ার। তাই এটি ছিল তখনকার সময়ের সেরা প্রযুক্তি। এরপর মানুষ আগুনকে নিয়ন্ত্রণ করতে শিখল বিভিন্ন পন্থায়। সবকিছুই প্রযুক্তির অবদানে। চাকা ছিল মানুষের আবিস্কার করা অন্যতম এক সেরা প্রযুক্তি যা পুরো সভ্যতাকেই বদলে দিয়েছিল
আধুনিক সময়ের দিকে তাকালে কলম এক গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি যা তথ্য সংরক্ষণকে সহজ করে দিয়েছে ব্যাপকভাবে। এই প্রযুক্তির আরও উন্নতি ঘটে প্রিন্টিং প্রেসের আবিষ্কারে। এরপর আসে টাইপরাইটার এবং সবশেষে কম্পিউটার। সুতরাং প্রযুক্তির এভাবে ধীরে ধীরে উন্নতি ঘটতে থাকে নতুন প্রযুক্তির আগমনে।
বর্তমান যুগে একদম নতুন সব প্রযুক্তি হচ্ছে আমাদের মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ ইত্যাদি বিভিন্ন স্মার্ট ডিভাইসগুলো। আধুনিক যুগে আমরা ধীরে ধীরে ডিজিটালাইজড হচ্ছি। তাই এই ডিজিটাল যুগের প্রযুক্তি হচ্ছে আমাদের দৈনন্দিন ব্যবহার করা বিভিন্ন ডিভাইসগুলো। সেই সাথে এসব ডিভাইসে থাকা সফটওয়্যার ও অ্যাপও প্রযুক্তি। কেননা এসব সফটওয়্যার ও অ্যাপ আরও উন্নত সব সুবিধা দেয়ার মাধ্যমে আমাদের জীবনকে সহজ করছে প্রতিনিয়ত।
আপনার কেন আধুনিকতম প্রযুক্তি ব্যবহার করা উচিত
আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করার মাধ্যমে আপনি আপনার জীবনকে আরও সহজ করে তুলতে পারেন। জটিল অনেক কাজকেই সহজে করে ফেলা সম্ভব আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে। যেমন স্মার্টফোনের যুগে এসে ইমেইল, ইন্টারনেট, মেসেজিং অনেকটাই অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। এখন আপনি ফিচার ফোন বা বাটন ফোন ব্যবহার করলে এসব সেবা ব্যবহার করতে পারবেন না। ফলে কর্মক্ষেত্রে বা চলার পথে নানারকম সীমাবদ্ধতায় পড়তে হতে পারে আপনাকে।
আবার ধরুন আপনি এই যুগে এসে ২০ বছর আগের কোন কম্পিউটার ব্যবহার করলে বেশিরভাগ কাজই করতে পারবেন না। কেননা আধুনিক সফটওয়্যার, অপারেটিং সিস্টেম কিছুই কাজ করবে না সে কম্পিউটারে। ফলে বাস্তবে আসলে এই কম্পিউটার কোন কাজের নয়। তাই আপনাকে অন্তত আধুনিক সফটওয়্যার সাপোর্ট করে এমন পিসি নিতে হবে।
অনেক প্রতিষ্ঠান অন্য সবার থেকে এগিয়ে থাকতে ও দ্রুত কাজ করতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে জোর দিয়ে থাকে। তাই একদম আধুনিক প্রযুক্তি না হলেও দৈনন্দিন জীবনের স্বাভাবিক কাজগুলো করা যায় এমন প্রযুক্তি ব্যবহার করা উচিত।
আধুনিকতম প্রযুক্তির কিছু সমস্যা
আধুনিকতম প্রযুক্তি চাইলেই ব্যবহার করা সম্ভব হয় না বেশিরভাগ মানুষের পক্ষেই। কেননা বর্তমানে প্রযুক্তি প্রতিদিন উন্নত হচ্ছে কিছুটা হলেও। আধুনিক যে কোন প্রযুক্তির জায়গা আরও আধুনিকতর ও বেশি সুবিধাসম্পন্ন প্রযুক্তি দখল করে নেয়। আর একদম আধুনিক সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায় এমন কিছু ব্যবহার করতে গেলে খরচ বাড়তে থাকে। তাই একদম আধুনিক কিছু বেশি মানুষের পক্ষে ব্যবহার সম্ভব হয় না।
আধুনিক প্রযুক্তির খরচ বেশি বলে তা সবার কাছে পৌঁছাতে সময় দরকার হয়। ধীরে ধীরে তার দাম ও খরচ কমতে থাকে। তখন সাধারণ মানুষের কাছেও সেই প্রযুক্তি পৌঁছে যায়। তবে ততদিনে আরও আধুনিক কিছু চলে আসে। এভাবেই প্রযুক্তি ক্রমাগত পরিবর্তন হয়।
কখন আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার শুরু করা উচিত
আধুনিক ও নতুন যে কোন কিছুর সঙ্গেই মানিয়ে নিতে মানুষের সময় প্রয়োজন হয়। অনেক সময় নতুন প্রযুক্তির বিভিন্ন সমস্যা ব্যবহারের পর বুঝতে পারা যায়। তাই একদম নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা উচিত। নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার ধীরে ধীরে বাড়লে এবং সে সম্পর্কে মানুষের মনোভাব জেনে তবেই তা ব্যবহার করা উচিত। তাই নতুন প্রযুক্তি চলে এলেই সেটি ক্রয় করে ব্যবহার করা ঠিক নয়। এতে খরচ যেমন বেশি হয় তেমনি বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখিন হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
আশা করা যায় প্রযুক্তি নিয়ে আপনার ধারণা পরিষ্কার হয়ে যাবে পুরো পোস্টটি পড়ে থাকলে। প্রযুক্তি মানুষের জীবনকে সহজ করে। তবে প্রযুক্তির ভুল ব্যবহার নানা রকমের নতুন সমস্যারও সৃষ্টি করে। তাই কোন প্রযুক্তি কিছু না জেনেই ব্যবহার করা উচিত নয়। সেটি সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিয়ে তবেই তা ব্যবহার করা উচিত। প্রযুক্তি আপনার জীবনে সমস্যার বদলে সুবিধা নিয়ে এলে তবেই তাকে উপকারী প্রযুক্তি বলা যায়। কেননা প্রযুক্তির মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে মানুষের জীবনকে সহজ করা ব্যবহারিক বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের মাধ্যমে।
0 responses on "টেকনোলজি কি? প্রযুক্তি মানে জানুন"