• No products in the cart.

গ্রামীণফোন ও স্কিটো সিমের পার্থক্য কি? কোনটিতে বেশি সুবিধা?

বাংলাদেশের সবথেকে বড় মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোন। জিপির অধিকাংশ গ্রাহক ভালো নেটওয়ার্কের জন্য গ্রামীণফোনকে তাদের মূল অপারেটর হিসেবে ব্যবহার করে। তবে গ্রামীণফোন নিয়ে বেশিরভাগ ব্যবহারকারীর সবচেয়ে বড় অভিযোগ হলো এর খরচ অন্যান্য অপারেটর হতে বেশি।

যদিও মাঝে মধ্যেই গ্রামীণফোন ব্যবহারকারীদের বিভিন্ন অফার দিয়ে থাকে, তবুও তা অন্যান্য অপারেটরের তুলনায় কিছুটা কম বলা চলে। আর একারণেই তরুণ ও শিক্ষার্থীদের কাছে গ্রামীণফোন কম আকর্ষণীয়। তরুণরা কম দামে ভালো ইন্টারনেট এবং কলিং সেবা চান। আর তরুণদের জন্যই গ্রামীণফোন ২০১৭ সালে বাজারে এনেছিলো স্কিটো নামে নতুন একটি সিম। ২০২২/২০২৩ সালে এসে এই সিম কেমন কাজ করছে এবং এর সুবিধাগুলো নিয়েই আমরা জানবো।

স্কিটো সিম কি? Skitto কি?

সোজা কথায় স্কিটো হচ্ছে গ্রামীণফোনেরই একটি সাব-ব্র্যান্ড। অর্থাৎ স্কিটো সিম গ্রামীণফোনের হলেও এর সুযোগ সুবিধা সাধারন গ্রামীণফোনের সিম হতে আলাদা। স্কিটো সিম মূলত ডিজিটাল সিম হিসেবে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য তৈরি করা। প্রথাগত জিপি সিমের বদলে এই সিমের ম্যানেজমেন্ট সহজ করা হয়েছে।

পুরো সিমের সকল কাজ অ্যাপ দ্বারা করে ফেলা যায়। এছাড়া ট্যারিফ বা খরচের দিক থেকেও সাধারন গ্রামীণফোন সিম হতে এটি অনেকটাই সাশ্রয়ী। তাই তরুণদের কাছে এই সিম জনপ্রিয়। স্কিটো সিম মূলত ইন্টারনেট ব্যবহারের দিকে বেশি নজর দেয়। তাই এতে খুব ভালো ডাটা অফার থাকে সবসময়। এছাড়া কলিংয়ের ক্ষেত্রে এই সিমে সাধারন একটি ট্যারিফ থাকে সকল নাম্বারে কথা বলার জন্যই।

কাদের জন্য স্কিটো সিম?

মূলত তরুন বা নতুন প্রজন্ম যারা টেকনোলজির সাথে খুব ভালো খাপ খাইয়ে নিতে পারে তাদের জন্যই এই সিম বাজারে এনেছিলো গ্রামীণফোন। এই সিমের সকল সার্ভিস স্কিটো নামে অ্যাপের মাধ্যমেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। পুরনো ইউএসএসডি কোডের মাধ্যমে এই সিমে কোনো ম্যানেজমেন্ট বাধ্যবাধকতা নেই। কোডের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রন করা কঠিন ও ঝামেলাপূর্ণ। এতে অধিক সময় প্রয়োজন হয় এবং এতো কোড মনে রাখাও কষ্টকর। তাই সকল কিছু এর অ্যাপের মাধ্যমেই নিয়ন্ত্রন করা যায় এই সিমে। আর তাই আপনি যদি ব্যাসিক ফিচার ফোন ব্যবহার করেন তবে এই সিম নিয়ন্ত্রনে আপনাকে সমস্যায় পড়তে হবে। যাদের স্মার্টফোন আছে তাদের জন্যই মূলত এই সিম।

সিমে ইন্টারনেট ডাটার দাম কম হওয়ায় এটি সাশ্রয়ী ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের জন্য। আর তাই শিক্ষার্থীদের জন্য এটি খুব ভালো একটি পছন্দ হতে পারে। তবে যারা টেকনোলজি বা ডিজিটাল অ্যাপে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না তাদের জন্য এই সিম নয়। অনেকেই আছেন যাদের কাছে ডিজিটাল ম্যানেজমেন্ট ঝামেলাযুক্ত মনে হয়। তাদের জন্য স্কিটো সিম খুব একটা কাজে দেবে না।

গ্রামীণফোন ও স্কিটো সিমের পার্থক্য কি?

গ্রামীণফোন ও স্কিটো সিমের মধ্যে নেটওয়ার্ক ছাড়া সকল বিষয়েই অনেক পার্থক্য আছে। গ্রামীণফোন বিভিন্ন রকম ব্যবহারকারীর জন্য বিভিন্নরকম প্যাকেজ ও প্ল্যান রেখেছে। তবে স্কিটো শুধুমাত্র তরুণদের জন্যই প্ল্যান রাখে যা তাদের চাওয়া-পাওয়াকে গুরুত্ব দেয়। গ্রামীণফোন ও স্কিটো সিমের মধ্যে পার্থক্যগুলোই এখানে আলোচনা করবোঃ

  • প্রথমত কলরেটের পার্থক্য নিয়ে কথা বলা যাক। প্যাকেজভেদে গ্রামীণফোন বিভিন্ন ধরনের কলরেট দেয়। প্যাকেজভেদে পালস রেটও আলাদা। তবে স্কিটো সিমে এতো ঝামেলা না রেখে সবার জন্য একই কলরেট দেয়া হয়েছে। এখানে কোন এফএনএফ নাম্বার বা এই ধরণের সুবিধা নেই। সকলের জন্যই স্কিটো সিমে ৯০ পয়সা/মিনিট কলরেট ভ্যাট ও অন্যান্য চার্জ ছাড়া। এছাড়াও সবার জন্যই আছে ১ সেকেন্ড পালস। তবে এই কলরেট গ্রামীণফোনে বিভিন্ন রকম। এফএনএফ নাম্বারের জন্য আছে আলাদা কলরেট ও পালস সিস্টেম। তাই যারা সহজ জিনিস পছন্দ করেন তাদের জন্য স্কিটো কথা বলতে সেরা।
  • স্কিটো সিমের আরেকটি সুবিধা হচ্ছে এতে বিভিন্ন শর্তের আড়ালে কলরেট বা অফারগুলো বাঁধা থাকে না। গ্রামীণফোনে প্রতিটি অফারের পিছনেই বিভিন্ন শর্ত দেখতে পাবেন। তাই স্কিটো এর সোজা হিসাবের জন্য অনেকেরই পছন্দ হতে পারে। এখানে লুকানো কোন চার্জও নেই।
  • স্কিটো সিমের সবথেকে বড় সুবিধা এর ইন্টারনেট অফারগুলো। স্বল্প মুল্যে বেশ ভালো অফারের ইন্টারনেট ডাটা পেতে পারেন এই সিমে। কিন্তু গ্রামীণফোনে ইন্টারনেট ডাটার ক্ষেত্রে খুব বেশি অফার পাবেন না। তাই কম খরচে ডাটা পেতে স্কিটো সেরা।
  • স্কিটো সিমের নিয়ন্ত্রন সম্পূর্ণ অ্যাপের মাধ্যমে করতে হয়। অ্যাপ হতেই আপনার মোবাইল ও ইন্টারনেট ব্যালেন্সসহ সবরকমের ব্যালেন্স চেক করে নিতে হয়। গ্রামীণফোনের মতো আলাদা ইউএসএসডি কোডের দরকার নেই। গ্রামীণফোনের নিজস্ব অ্যাপ থাকলেও স্কিটো অ্যাপটি দেখতে সুন্দর ও ব্যবহার করতেও সহজ।
  • রিচার্জের ব্যাপারটিতেও স্কিটো সিম গ্রামীণফোন হতে আলাদা। এই সিমে রিচার্জ করতে হলে স্কিটোর নিজস্ব নাম বা পদ্ধতি ব্যবহার করে রিচার্জ করতে হয়।

স্কিটো সিমের সুবিধা কি?

স্কিটো সিমের সবথেকে বড় সুবিধা এটি ব্যবহার সহজ এবং সাশ্রয়ী। স্কিটো সিমের আরেকটি সুবিধা হলো এটি গ্রামীণফোনের নিজস্ব নেটওয়ার্ক ব্যবহার করেই সেবা দেয়। তাই সবথেকে বিস্তৃত ও শক্তিশালী নেটওয়ার্ক হতেই আপনি কম মুল্যে সেবা পেয়ে যাচ্ছেন। স্কিটো সিমের ইন্টারনেট ডাটার মূল্য বেশ কম। গ্রামীণফোনের হাই স্পিড ৪জি ইন্টারনেট সেবা গ্রামীণফোনের সিম হতে কম মুল্যে পেয়ে যাবেন স্কিটোর মাধ্যমে।

আর এক অ্যাপের মধ্যেই সকল সেবা থাকায় স্কিটো সিমে সবকিছু এক স্থানেই পেয়ে যাবেন। এর আরেকটি সুবিধা এতে জটিল করা হয়নি কিছু। কলরেট বা এসএমএস সবকিছুতেই একটি মূল্য রাখা হয়েছে। ফলে আপনাকে বেশি ভাবতে হবে না খরচ নিয়ে, দ্রুত সব হিসাব করে ফেলতে পারবেন। অ্যাপটিও বেশ সুন্দর আর সহজ হওয়ায় ব্যবহারকারীদের কাছে ভালো লাগবে।

স্কিটো অ্যাপ

স্কিটো সিমের সবথেকে বড় ফিচার এর অ্যাপ সুবিধা। খুব ভালো কিছু সুবিধা নিয়ে এই অ্যাপটি তৈরি করা হয়েছে যা গুগল প্লেস্টোর হতে বা অ্যাপল অ্যাপ স্টোর থেকে ইন্সটল করতে পারবেন। এই অ্যাপ হতেই সিমের প্রয়োজনীয় সকল কাজ করতে পারবেন। দেখতে পারবেন সকল রকমের ব্যালেন্স, সিম ব্যবহারের হিস্টোরি। করতে পারবেন রিলোড, ভোলটিই সেবা সরাসরি অ্যাপ হতেই চালু করতে পারবেন। এছাড়া ব্যালেন্স এবং ডাটা ট্রান্সফারের মতো সুবিধাও আছে অ্যাপে।

অ্যাপের মধ্যেই সকল ধরণের ডাটা প্যাকের অফার ও নিয়মিত ডাটা প্যাক পেয়ে যাবেন এবং এখান থেকেই একটিভ করে নিতে পারবেন। বিভিন্ন সার্ভিস ব্যবহারের উপর স্কিটোর নিজস্ব কিছু রিওয়ারডিং সিস্টেমও রয়েছে। এছাড়া অ্যাপ হতেই মিস কল অ্যালার্ট, পে অ্যাজ ইউ গো চালু বা বন্ধ করা, ইমারজেন্সি লোন নেয়া ইত্যাদি বিভিন্ন জরুরী ফিচার অ্যাপের মধ্যেই আছে। সিম চুরি হয়ে গেলে অ্যাপ থেকে সিমটি ব্লকও করে দিতে পারবেন। অ্যাপটি দেখতে বেশ সুন্দর এবং সব কাজ দ্রুত ও সহজভাবে করা যায়। অন্য সকল সিম হতে স্কিটো সিমকে আলাদা করেছে এই ডিজিটাল ম্যানেজমেন্ট অ্যাপ।

স্কিটো সিমে রিচার্জ ও কাস্টমার সার্ভিস যেভাবে পাবেন

স্কিটো সিমের রিচার্জ ব্যবস্থা গ্রামীণফোন সিম হতে আলাদা। গ্রামীণফোন সিম হিসেবে স্কিটো সিমে রিচার্জ করলে তা আসবে না। ফ্লেক্সিলোড দোকানে গিয়ে আপনাকে আলাদা করে জানাতে হবে যে আপনার সিমটি স্কিটো সিম যেহেতু গ্রামীণফোনের সঙ্গে নাম্বার সিরিজ একই হওয়ায় না বললে এটি বুঝে নেয়া সম্ভব নয়। এছাড়া বিকাশ বা নগদের মতো মোবাইল ওয়ালেটে স্কিটো সিমে রিচার্জের জন্য আলাদা অপশন পেয়ে যাবেন। আপনি চাইলে অ্যাপ হতেও নিজের ব্যাঙ্ক বা কার্ড হতে রিচার্জ করতে পারবেন। অন্য কোন বন্ধুর স্কিটো নাম্বারে অ্যাপ হতে রিচার্জ করে দেবার সুবিধাও আছে এই সিমে।

স্কিটো সিমের সকল ধরণের সমস্যা ও সিম সম্পর্কিত সকল বিষয় গ্রামীণফোন নিজেই সমাধান করে। তাই যে কোন জিপি কাস্টমার কেয়ার বা সার্ভিস পয়েন্ট হতে আপনি এই সিমের জন্য সকল কাজ করতে পারবেন। সিম রিপ্লেস বা সিমের মালিকানা পরিবর্তন বা এই ধরণের কাজগুলো গ্রামীণফোন নিজেই করে থাকে। এছাড়া নতুন সিম কিনতে চাইলেও গ্রামীণফোনের কাস্টোমার কেয়ারে যোগাযোগ করতে পারেন। এছাড়া স্কিটো সিমের অ্যাপের মধ্যেও কাস্টোমার সাপোর্ট নিতে বিভিন্ন পদ্ধতি দেয়া আছে।

সব দিক থেকে বিবেচনা করলে স্কিটো সিম হতে সেরা সুবিধা পেতে পারেন তরুন প্রজন্মের ব্যবহারকারীরা। স্কিটো সিমটি পুরোপুরি নতুন ধরণের সিম বলে এটি বয়স্কদের জন্য কিছুটা ঝামেলাপূর্ণ মনে হতে পারে। তবে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা এই সিম ব্যবহার করে বাড়তি সুবিধা পাবেন।

 

0 responses on "গ্রামীণফোন ও স্কিটো সিমের পার্থক্য কি? কোনটিতে বেশি সুবিধা?"

Leave a Message

Your email address will not be published. Required fields are marked *

top
Technical Bangla ©  All rights reserved.