বর্তমান প্রযুক্তির দুনিয়ায় টাইপিং একটি গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা হয়ে উঠেছে। কম্পিউটারে ভালো গতিতে টাইপ করতে পারলে আপনি অনেক সময় বাঁচাতে পারবেন। এক গবেষণায় দেখা গেছে টাইপিংয়ের গতি বাড়ানোর মাধ্যমে বছরে অন্তত ২১ দিন সময় বাঁচানো সম্ভব!
তবে টাইপিংয়ে গতি বাড়ানো খুব সহজ কোনো ব্যাপার নয়। অনেকেই আমরা খুব দ্রুত গতিতে কাউকে টাইপ করতে দেখলে সেভাবে টাইপ করতে পারার স্বপ্ন দেখি। কিন্তু কেউই শুরুতেই এভাবে টাইপ করতে পারে না। বারবার অনুশীলন করার মাধ্যমেই শুধুমাত্র গতি বাড়ানো সম্ভব।
কম্পিউটারে টাইপিংয়ের ক্ষেত্রে আপনাকে বেশ কিছু বিষয় ঠিক করে নিতে হয়। একটা নির্দিষ্ট উপায়ে টাইপিং না করলে গতি বাড়ানো কঠিন হয়ে যায়। তাই টাইপিংয়ের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকা জরুরি। আজকে এই পোস্টে আমরা আলোচনা করবো কম্পিউটারে টাইপ করার সময় যেসব বিষয়ে সতর্ক থাকবেন সেগুলো নিয়ে।
১. টাইপিংয়ের জন্য সঠিক জায়গা
কম্পিউটারে ভালোভাবে টাইপিং করতে চাইলে প্রথমেই যেটা প্রয়োজন তা হলো সঠিক একটা জায়গা। লম্বা সময় ধরে আপনাকে টাইপিং করতে হতে পারে। তাই আরামদায়ক একটি জায়গা দরকার। টাইপিং করতে অবশ্যই টেবিল ব্যবহার করুন। আশেপাশের পরিবেশ পরিষ্কার এবং নীরব হলে টাইপিং করে আরাম পাবেন। আপনার ল্যাপটপকে কোলের উপর নিয়ে টাইপিং করলে ঝামেলা মনে হবে এবং টাইপিং ধীর হয়ে যাবে। তাই সঠিক একটি জায়গা নির্বাচন করা জরুরি।
২. আসন ঠিক রাখা
কম্পিউটারে টাইপিংয়ের ক্ষেত্রে আসন ঠিক রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। যখন টাইপ করবেন তখন সোজা হয়ে না বসলে আপনার টাইপিং গতি কমে যেতে পারে। টেবিল হতে একটি আরামদায়ক অবস্থায় বসার ব্যবস্থা করতে হবে যাতে কিবোর্ডের কাছে আপনার হাত খুব সহজে পৌঁছায়। টেবিলে যথেষ্ট জায়গা রাখা প্রয়োজন যাতে আপনার হাত ঝুলে না থাকে। এতে করে হাত ব্যাথা হয়ে যেতে পারে সহজেই। তাই এসব দিকে দৃষ্টি রেখে বসা উচিত।
৩. কীবোর্ড লেআউট ভালোভাবে মনে রাখা
কম্পিউটার টাইপিং করতে যে লেআউট ব্যবহার করা হয় তার নাম QWERTY লেআউট। কীবোর্ডে সাধারণ ইংরেজি অক্ষর ক্রমে সাজানো থাকে না। তাই যারা টাইপিংয়ে একদম নতুন তাদের জন্য এই বিষয়ে সতর্ক থাকা জরুরি। নাহলে কী খুঁজে পেতে সমস্যা হবে। কোন কী কোন অক্ষরকে ধারণ করছে এটার সাথে ধীরে ধীরে পরিচিত হয়ে উঠুন। কীবোর্ডের দিকে না তাকিয়েই আপনাকে এগুলো মনে রাখতে হবে দ্রুত টাইপিং করতে চাইলে।
৪. সঠিক পদ্ধতিতে টাইপ করা
আপনি দৈনন্দিন কাজের জন্য টাইপ করলে যেকোনো ভাবেই টাইপ করতে পারেন। তবে চাকরি বা প্রফেশনাল জীবনের জন্য টাইপিং দরকার হলে নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে টাইপিং শেখা দরকার। ইন্টারনেটে এ বিষয়ে অনেক গাইড পেয়ে যাবেন। ফ্রিতে বিভিন্ন সফটওয়্যার আছে যা আপনাকে সঠিক পদ্ধতিতে টাইপ করা শেখাতে পারে। আঙ্গুলের অবস্থান ঠিক রেখে নির্দিষ্ট আঙ্গুল দিয়ে নির্দিষ্ট কী চাপ দিতে চেষ্টা করুন। এতে করে আস্তে আস্তে আপনার আঙ্গুলগুলো টাইপিং করতে অভ্যস্ত হয়ে যাবে। দ্রুত এবং নির্ভুল হবে আপনার টাইপিং। টাইপ অনুশীলন এবং স্পিড টেস্টের জন্য https://www.keybr.com/typing-test সাইট হতে পারে একটি অসাধারণ টুল।
৫. ক্যাপস লক ও নাম্বার লকের দিকে খেয়াল রাখা
ক্যাপস লক ও নাম্বার লক দুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কী। অনেক সময় পাসওয়ার্ড টাইপ করতে গিয়ে আমরা ক্যাপস লক কী অন করে রাখি যার ফলে বড় হাতের অক্ষর টাইপ হয়ে যায় এবং পাসওয়ার্ড ভুল হয়ে যায়। তাই সবসময় ক্যাপস লক কীয়ের দিকে খেয়াল রাখা দরকার যখনই কিছু টাইপ করতে যাবেন। একইভাবে নাম্বার লকের দিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
৬. কীবোর্ডের যত্ন নেয়া
টাইপ করতে গিয়ে কীবোর্ডের কীগুলোর মাঝে ফাঁকা স্থানে যাতে ধূলাবালি ও ময়লা না জমে সেজন্য সবসময় পরিষ্কার রাখা জরুরি। ময়লা জমে গেলে বিভিন্ন কী সঠিকভাবে কাজ নাও করতে পারে। সাধারণত যেটুকু চাপ দিলে একটি কী কাজ করে সেটার সঙ্গে আপনি অভ্যস্ত হয়ে যান।
তাই যদি কীয়ের নিচে ময়লা জমে জোরে চাপ দিলেও সঠিকভাবে অক্ষরের ইনপুট না নিতে পারে তাহলে আপনাকে টাইপিং করতে বেশ সমস্যা পোহাতে হবে। ভুল টাইপ অনেক বেশি হয়ে যাবে। একইভাবে তরল খাবার পাশে নিয়ে না বসাই ভালো। চা, কফি ইত্যাদি কীবোর্ডের মধ্যে প্রবেশ করে কীবোর্ড শর্ট সার্কিট করে দিতে পারে। তখন একা একাই কীবোর্ডে ইনপুট নেয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৭. টাইপ করার সময় হাতের দিকে না তাকানো
টাইপ করবার সময় নিজ হাতের দিকে না তাকানোর অভ্যাস করা উচিত। হাতের দিকে তাকালে কোনো ভুল হলে সেটা ধরা কঠিন হয়ে যায়। সেই সাথে আপনার টাইপিং গতির উন্নতিও বাধাগ্রস্ত হয়। সবসময় না দেখে টাইপ করার চেষ্টা করুন এবং কী লিখছেন তা স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে খেয়াল রাখুন। এতে প্রথম কিছুদিন গতি কমে গেলেও ধীরে ধীরে সে গতি বাড়তে থাকবে।
৮. হাতে ব্যাথা অনুভব করলে কীবোর্ডের পজিশন ঠিক করা
অনেক সময় দীর্ঘক্ষণ টাইপ করতে থাকলে হাতে ব্যাথা হতে পারে। একে ইংরেজিতে কার্পাল টানেল সিনড্রোম বলা হয়। একই কাজ বারবার করার ফলে নির্দিষ্ট অঙ্গে এই ব্যাথা হতে পারে। এভাবে ব্যাথা অনুভব করলে কীবোর্ডের জায়গা পরিবর্তন জরুরি। এছাড়া আসন ঠিক করা, টেবিল হতে চেয়ারের দুরত্ব এসব জিনিস একটু ঠিক করে নেয়া প্রয়োজন। এসব দিকে সতর্ক থাকলে ধীরে ধীরে এই ব্যাথা কমে আসবে। টাইপিং করতেও আরাম পাবেন।
কম্পিউটারে টাইপিং করতে গতি এবং আরাম পেতে অনুশীলনের বিকল্প নেই। আপনার নিজের জন্য আরামদায়ক পজিশনে টাইপ করা জরুরি। সবার আলাদা ধরন থাকতে পারে নিজের আরামের ব্যাপারে। তাই অন্যকে অনুসরণ না করে নিজের আরামের জায়গাটি খুঁজে বের করাই গুরুত্বপূর্ণ।
0 responses on "কম্পিউটারে টাইপ করার সময় যেসব বিষয় খেয়াল রাখা উচিত"