ভারসাম্যহীন এবং অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস অনেক ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে । যদি সময়মতো এটি নিয়ন্ত্রণ করা না হয়, তাহলে পরবর্তীতে সাধারণ সমস্যাগুলি অনেক বেশী গুরুতর হয়ে উঠতে পারে । অ্যাসিডিটিও তেমনই এক রূপ । অম্লতা বা অ্যাসিডিটির সমস্যা নেই এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন । এই কারণেই বিডিটেকটিউনারের আজকের এই আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সাথে অ্যাসিডিটির কারণ, লক্ষণ এবং ঘরোয়া প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত বলব। তবে এটাও মনে রাখা দরকার যে, আর্টিকেলে উল্লেখিত ব্যবস্থাগুলো অ্যাসিডিটির সমস্যা কিছুটা কমাতে পারলেও, গুরুতর পরিস্থিতিতে পাকস্থলীর অ্যাসিডের চিকিৎসা নির্ভর করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শের ওপর ।
অ্যাসিডিটি বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার সবচেয়ে বড় ওষুধ হলো এটিকে প্রতিরোধ করা । ভিন্ন ভিন্ন মানুষের ক্ষেত্রে অ্যাসিডিটির সমস্যা ভিন্ন ভিন্ন কারণে হয়ে থাকে । যেমন, কিছু মানুষের ক্ষেত্রে টানা না খেয়ে থাকলে, কারও ক্ষেত্রে ভাজাপোড়া খেলে আবার অনেকের ক্ষেত্রে অনেকক্ষণ রোদে থাকলে, কারও কারও ক্ষেত্রে সেটা নির্দিষ্ট কোনো খাবারও হতে পারে । তাই আপনার ক্ষেত্রে যে কারনে অ্যাসিডিটির সমস্যা হচ্ছে, সেটা এড়িয়ে চলাই উত্তম । তবে আপনি যদি অ্যাসিডিটির সমস্যায় পড়েই যান, তাহলে আজকের আর্টিকেলে উল্লেখিত ঘরোয়া প্রতিকার গুলোর মাধ্যমে অ্যাসিডিটির থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি পেতে পারেন ।
অ্যাসিডিটি কি – অম্লতা কি – গ্যাস্ট্রিক কি
চিকিৎসকদের ভাষায় অ্যাসিডিটি, গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ (GERD) নামে পরিচিত । পেটে অ্যাসিডিটির সমস্যা হল এমন একটি অবস্থা যেখানে আমাদের পাকস্থলীর ঝিল্লির স্তর বিঘ্নিত হয় এবং সেখান থেকে অ্যাসিড নিঃসৃত হয় । এই নিঃসৃত অ্যাসিড যখন পাকস্থলীর দেয়ালের সংস্পর্শে আসে, তখন এটি ব্যথা এবং অস্বস্তিকর পরিস্থিতির জন্ম দেয় । এই অবস্থাকে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বলা হয়ে থাকে । হার্ভার্ড হেলথ পাবলিশিং- এর পক্ষ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, পাচনতন্ত্রে থাকা ব্যাকটেরিয়া, খাবার ভেঙ্গে গ্যাস তৈরি হয় । অন্ত্রের গ্যাস সাধারণত হাইড্রোজেন এবং মিথেন নিয়ে গঠিত ।
২০০৫ সালে পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, অ্যাসিডিটির সমস্যা এশিয়ার দেশগুলির মানুষের মধ্যে প্রায় ৫ শতাংশ এবং পশ্চিমা দেশের মানুষের মধ্যে ১০ থেকে ২০ শতাংশ হতে পারে । নিম্নতর খাদ্যনালীর স্ফিঙ্কটার (গলা ও পাকস্থলীর মধ্যে সংযোগকারী এক ধরনের নল) দুর্বল হয়ে যাওয়ার কারণে এই সমস্যা হয় এবং এর ফলে পাকস্থলীতে উপস্থিত অ্যাসিড উপরের দিকে উঠে আসে । এর ফলে অ্যাসিডিটির সমস্যা হতে পারে । অনেক গবেষণায় দেখা গেছে যে, কিছু অভ্যাস যেমন- বেশী মশলাযুক্ত খাবার খাওয়া, বেশি পরিমাণে চকলেট খাওয়া, ধূমপান, অ্যালকোহল সেবন, সঠিক সময়ে খাবার না খাওয়া, রাতে খাবার পরে শুয়ে পরা বা বসে থাকা জীবনযাপন অ্যাসিডিটির সমস্যা বাড়ায় । যার ফলে পেটে ব্যথা, বুক জ্বালাপোড়া এবং শরীরের উপরের অংশে অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে ( তথ্যসূত্র )।
অ্যাসিডিটির লক্ষণ – গ্যাসের লক্ষণগুলো কি কি
গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ বা অ্যাসিডিটি এর একটি কমন উপসর্গ হল বুক এবং পেটের মধ্যে জ্বালাপোড়া এবং ব্যথা হওয়া । এছাড়াও অম্লতার অনেক ধরনের উপসর্গ দেখা যায়, সেগুলো নিচে দেওয়া হল –
- অম্লতা
- পেটে ব্যাথা
- পেট ফাঁপা বা পেট ভর্তি আছে এমন অনুভূতি হওয়া
- পেটের আকার বেড়ে যাওয়া বা পেট শক্ত হয়ে যাওয়া
- বুকে ব্যাথা অনুভব হওয়া
- মলত্যাগে সমস্যা
- স্তনের হাড়ে (বুকের মাঝখানে অবস্থিত লম্বা সমতল হাড়) খাবার আটকে থাকার অনুভূতি ।
- খাওয়ার পর বমি বমি ভাব ।
- বুকে বা পেটের উপরের অংশে জ্বলন্ত ব্যথা ।
- খাবার গিলতে সমস্যা হওয়া ।
- কাশি বা শ্বাসকষ্ট
- অনেক সময় গ্যাসের কারণে গলা ব্যাথা হতে পারে ।
- গিলে ফেলা খাবার পুনরায় মুখে ফেরত আসা ।
অ্যাসিডিটির কারণ – পেটে গ্যাস হওয়ার কারণ
পাকস্থলীর গ্যাসট্রিক গ্ল্যান্ডে অতিরিক্ত পরিমাণে অ্যাসিড নিঃসরণের ফলে সাধারণত অ্যাসিডিটি বা গ্যাসের সমস্যা হয় । পেটে গ্যাস তৈরি হওয়ার পেছনে অনেক ধরনের কারণ থাকতে পারে । তবে গ্যাস হওয়ার পেছনে আমাদের অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন এবং খারাপ খাদ্যাভ্যাস অনেকাংশে দায়ী । পেটে গ্যাস তৈরির সমস্যা বর্তমান সময়ে খুবই সাধারণ বিষয় হয়ে উঠেছে, যার কারণে শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সের মানুষ এই সমস্যায় পড়ছেন । অল্প বয়স থেকেই যদি পেটে গ্যাস তৈরি হতে থাকে, তাহলে তা পরবর্তীতে অনেক বড় সমস্যার তৈরির করতে পারে । তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক, পেটে গ্যাস তৈরির প্রধান কারণগুলো কী কী?
- অতরিক্ত মশলাদার খাবার খাওয়া ।
- পানি কম পান করলে ।
- অনেকক্ষণ খালি পেটে থাকলে গ্যাসের সমস্যা হতে পারে ।
- খাবার ঠিকমত চিবিয়ে না খেলে ।
- ঘুম ঠিক মত না হলেও গ্যাসের সমস্যা হতে পারে ।
- খাবার খাওয়ার সাথে সাথে পানি খেলে গ্যাস হতে পারে ।
- অতিরিক্ত ওজন, স্থূলতা বা গর্ভবতী হলে পাকস্থলীর উপর চাপ বৃদ্ধি পায় এবং এর ফলে খাদ্যনালীতে অ্যাসিড প্রবাহিত হতে পারে ।
- অনেক সময় ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণেও গ্যাসের সমস্যা তৈরি হতে পারে । বিশেষ করে ব্যাথার ওষুধ, হাঁপানির ওষুধ, উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ, অ্যালার্জির ওষুধ, ঘুমের ওষুধ এবং অ্যান্টি-ডিপ্রেশন ওষুধ এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ।
- অতিরিক্ত ধূমপানের কারণেও অ্যাসিডিটির সমস্যা হতে পারে।
- হাইটাল হার্নিয়ার কারণেও অ্যাসিডিটির সমস্যা হতে পারে ।
- অতিরিক্ত দুঃশ্চিন্তা করলেও গ্যাসের সমস্যা হতে পারে ।
গ্যাসের সমস্যা দূর করার ঘরোয়া উপায়
অ্যাসিডিটির সমস্যা দ্রুত নিরাময় করার জন্য, মানুষ প্রায়শই প্রাথমিক চিকিৎসা হিসাবে বিভিন্ন ধরনের ঘরোয়া প্রতিকারকে বেছে নেয়, তবে কিছু মানুষ এই জাতীয় ঘরোয়া প্রতিকার সম্পর্কে জানেন না । আজকের আর্টিকেলে আমরা কিছু সহজ এবং কার্যকর ঘরোয়া প্রতিকার সম্পর্কে বলব যেগুলো আপনাদের অ্যাসিডিটির সমস্যা দূর করতে সহায়ক ভুমিকা পালন করতে পারে, তবে সমস্যা গুরুতর হলে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন ।
বেকিং সোডা – ১ গ্লাস পানিতে ১ চা চামচ বেকিং সোডা ভালোভাবে মিশিয়ে নিন । এরপর পানি এবং সোডার মিশ্রণটি পান করুন ।বেকিং সোডা সোডিয়াম বাইকার্বোনেট নামেও পরিচিত । এতে অ্যান্টাসিড অর্থাৎ অ্যাসিডিটি উপশমকারী বৈশিষ্ট্য রয়েছে । বেকিং সোডার এই বৈশিষ্ট্য পেটে অ্যাসিডের সমস্যায় কার্যকরী ভুমিকা পালন করতে পারে । উপরন্তু, সোডিয়াম বাইকার্বোনেট অম্বল এবং বদহজম উপশম করার জন্য ঘরোয়া প্রতিকার হিসাবে কার্যকর বলে মনে করা হয় । এই ভিত্তিতে, বলা যায় যে বেকিং সোডা গ্যাসের সমস্যা দূর করতে ভাল কাজ করে ।
অ্যালোভেরা – একটি অ্যালোভেরা কেটে নিয়ে তা থেকে পাল্প বের করে নিন । এরপরে সেই পাল্পের সাথে পানি মিশিয়ে জুস তৈরি করুন । অ্যাসিডিটির তাত্ক্ষণিক চিকিৎসা হিসেবে প্রতিদিন এক কাপ করে অ্যালোভেরার জুস পান করুন । অ্যালোভেরার উপকারিতা সম্পর্কে আমরা প্রায় সবাই জানি । অন্যান্য উপকারিতার পাশাপাশি, এটিকে অ্যাসিডিটির সমস্যায় ঘরোয়া প্রতিকার হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে । অ্যালোভেরার ওপর করা NCBI (ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশন) এর এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, অ্যালোভেরা জেলের মধ্যে গ্যাস্ট্রোপ্রোটেকটিভ বৈশিষ্ট্য রয়েছে । এই কারণে, অ্যালোভেরা জেল অ্যাসিড এবং গ্যাস্ট্রিক আলসারের মত সমস্যা কমাতে সাহায্য করতে পারে ।
আদা – প্রথমে একটি পাত্রে ২ কাপ পরিমাণ পানি নিন । এরপ অল্প আঁচে সেই পানি গরম করুন । এরপর এতে ২ টুকরো আদা মেশান । তারপর ৫ থেকে ১০ মিনিটের মত ফুটিয়ে নিন । এসিডিটির তাৎক্ষণিক চিকিৎসা হিসেবে দিনে অন্তত একবার এই মিশ্রণ পান করুন । অ্যাসিডিটির ঘরোয়া প্রতিকার হিসেবে আদার ব্যবহার অনেক আগে থেকেই চলে আসছে । NCBI-এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে, আদায় অনেক ঔষধি গুনের পাশাপাশি এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং গ্যাস্ট্রোপ্রোটেকটিভ বৈশিষ্ট্যও রয়েছে । এই বৈশিষ্ট্যগুলি কোষ্ঠকাঠিন্য, গ্যাস্ট্রিক আলসার, বদহজম, পেট ফাঁপা, বমি বমি ভাব এবং বমি এর মতো অনেক ধরণের সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে অত্যন্ত কার্যকরী । এছাড়াও, অন্য একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, আদার একটি প্রদাহ মডুলেটর (প্রদাহ হ্রাস) প্রভাব রয়েছে, যা ক্ষতিগ্রস্থ পেটের টিস্যু মেরামত করতে এবং অ্যাসিডিটির লক্ষণগুলি কমাতে সাহায্য করতে পারে । এর উপর ভিত্তি করে বলা যায় যে, আদা অ্যাসিডিটির সমস্যা কমাতে এবং এর প্রভাব দূর করতে উপকারী ভুমিকা পালন করতে পারে ।
ঠান্ডা দুধ – প্রথমে ১ গ্লাস দুধ ভাল করে জাল দিন এবং পরে ঠান্ডা হলে সেটিকে পান করুন । পেটের অ্যাসিডিটির সমস্যার ঘরোয়া প্রতিকার হিসেবে নিয়মিত ১ গ্লাস করে ঠান্ডা দুধ খাওয়া যেতে পারে । NCBI সাইটে প্রকাশিত গবেষণা অনুসারে, দুধের মধ্যে অ্যান্টাসিড বৈশিস্ট্য রয়েছে । আর যদি ঠান্ডা দুধ পান করা হয় তাহলে এই প্রভাব আরও বেশি দেখা যায়, যা বদহজম, পেট ফুলে যাওয়া এবং অ্যাসিডিটি এবং পেট সম্পর্কিত অন্যান্য বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে কার্যকর হতে পারে । এর ভিত্তিতে বলা যায় যে, ঠাণ্ডা দুধ অ্যাসিডিটির সমস্যা কমাতে সক্ষম ।
মৌরি – ১ চামচ মৌরি পানিতে দিয়ে ৫ -৭ মিনিট ফুটিয়ে নিন । এরপর পানি থেকে মৌরি ছেঁকে নিয়ে মিশ্রণটি চায়ের মতো করে পান করুন ।এ ছাড়াও অ্যাসিডিটির ঘরোয়া প্রতিকার হিসেবে মৌরির গুঁড়া খাবারের সাথে খেতে পারেন । মৌরি হল Apiaceae পরিবারের অন্তর্গত এক ধরনের ভেষজ, যা দীর্ঘদিন ধরে ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করা হচ্ছে । NCBI-তে প্রকাশিত একটি গবেষণায় বলা হয়েছে যে, মৌরি খেলে ক্ষুধা কমানো যায় । এর ক্ষুধা-নিয়ন্ত্রক প্রভাবের কারণে মৌরি ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে ( তথ্যসূত্র )। আর আমরা জানি অতিরিক্ত ওজন অ্যাসিডিটির কারণ হতে পারে । তাই বলা যায় যে মৌরি খাওয়া অ্যাসিডিটির ঝুঁকি কমাতে সহায়ক হতে পারে ।
জিরা – প্রথমে ১ গ্লাস পানিতে ১ চা চামচ জিরা দিন এবং এটিকে ৫ -৭ মিনিট ফুটিয়ে নিন । এরপর মিশ্রণ থেকে থেকে জিরা ছেঁকে নিন । এবার ফিল্টার করা পানি হালকা ঠাণ্ডা করে কুসুম গরম অবস্থায় পান করুন । এছাড়াও অ্যাসিডিটির স্থায়ী চিকিৎসার জন্য প্রতিদিনের রান্নায় কাঁচা জিরা বা জিরার গুড়া ব্যবহার করতে পারেন । অ্যাসিডিটির সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে জিরা কার্যকরী । একটি গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, জিরা কোলেস্টেরল কমাতে, ট্রাইগ্লিসারাইড এবং এলডিএল (লো ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন) এর মাত্রা কমিয়ে স্থূলতা উপশম করতে সাহায্য করতে পারে । একই সাথে, স্থূলতাকেও অ্যাসিডিটির একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে মনে করা হয় । তাই বলা যেতে পারে যে, জিরা অ্যাসিডিটির জন্য একটি ঘরোয়া প্রতিকার হিসাবে কার্যকরী ভুমিকা পালন করতে পারে ।
ত্রিফলা – ত্রিফলা পেটের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করার পাশাপাশি গ্যাসের সমস্যা সমাধানে খুবই কার্যকরী । প্রথমে আধা চামচ ত্রিফলা গুঁড়ো ১ গ্লাস পানিতে ৫ থেকে ১০ মিনিট ভাল করে ফুটিয়ে রাতে ঘুমানোর আগে পান করুন । এইভাবে নিয়মিত ত্রিফলা পান করলে গ্যাসের সমস্যা থেকে অনেকটাই ভাল থাকবেন ।
দই বা ঘোল- আপনি আপনার খাদ্য তালিকায় দই বা ঘোল রাখতে পারেন । এগুলো পাকস্থলী ঠান্ডা রাখে এবং এতে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়া, পাকস্থলীতে অ্যাসিড তৈরি হতে বাধা দেয় । শুধু তাই নয়, নিয়মিত দই খেলে হজম প্রক্রিয়াও মজবুত হয় এবং সেই সাথে এটি অ্যাসিডিটি থেকে মুক্তি দিয়ে শরীরকে সুস্থ রাখে ।
কলা – নিয়মিত কলা খান । কলায় প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম থাকে, যা পেটের আস্তরণে শ্লেষ্মা তৈরি করে এবং সেই সাথে পিএইচ স্তরকেও কমিয়ে দেয় । এছাড়াও কলায় প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে, যার কারণে পেট অনেকক্ষণ ভরা থাকে এবং তাড়াতাড়ি ক্ষুধাও লাগে না । এইভাবে, কলা আপনার শরীরের ওজন কমানোর পাশাপাশি অ্যাসিডিটি কমাতে সাহায্য করতে পারে ।
অ্যাসিডিটির চিকিৎসা – গ্যাস্ট্রিকের চিকিৎসা
অ্যাসিডিটির ঘরোয়া প্রতিকারগুলো নিঃসন্দেহে আপনার সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করতে পারে, তবে সমস্যা গুরুতর হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে অ্যাসিডিটির চিকিৎসা করাতে হবে । অ্যাসিডিটির লক্ষণগুলির তীব্রতার উপর ভিত্তি করে, ডাক্তার আপনার লাইফস্টাইলে পরিবর্তন, ওষুধ এবং অস্ত্রোপচারের সুপারিশ করতে পারেন । নিচে আমরা এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করছি –
লাইফস্টাইল পরিবর্তন : আপনার প্রতিদিনের রুটিনে কিছু পরিবর্তন, আপনার অ্যাসিডিটির লক্ষণগুলিকে কমাতে পারে, যা নিম্নরূপ:
- স্থূলতা কমানো অর্থাৎ ওজন কমান । আপনি নিয়মিত সুষম খাদ্য গ্রহন এবং নিয়মিত ব্যায়াম করে আপনার স্থূলতা কমাতে পারেন ।
- আরামদায়ক এবং ঢিলাঢালা পোশাক পরুন, যাতে পেটে চাপ কম পড়ে । পাকস্থলীতে চাপের কারণে এসিড উপরের দিকে উঠে আসতে পারে ।
- খাওয়ার পর কমপক্ষে ২ ঘন্টা সোজা থাকার চেষ্টা করুন। অর্থাৎ খাওয়ার পরপরই ঘুমানো বা বিছানায় শুয়ে পড়লে অ্যাসিড বাড়তে পারে ।
- অ্যাসিডিটি থেকে স্থায়ীভাবে নিরাময় পাওয়ার জন্য, যতদূর সম্ভব ধূমপান এড়িয়ে চলুন ।
ওষুধ : অ্যাসিডিটির জন্য অনেক ধরনের ওষুধ আছে, যেগুলো অ্যাসিডিটির সমস্যা কমাতে কার্যকরী, তবে এই ওষুধগুলো শুধুমাত্র চিকিৎসকের পরামর্শেই খেতে হবে । এর মধ্যে কয়েকটি ওষুধের নাম হল – অ্যান্টাসিড, অ্যান্টাসিড প্লাস, লোসেকটিল, ইসোরাল, প্যান্টোনিক্স ইত্যাদি । তবে উপরে উল্লেখিত যে কোন ওষুধ গ্রহন করার আগে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ নেবেন ।
সার্জারি : কিছু গুরুতর পরিস্থিতিতে, ডাক্তার সার্জারি করার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন । যদি আপনার প্রতিদিনের রুটিন পরিবর্তন করে এবং ওষুধ সেবন করেও কোন নিরাময় না পাওয়া যায় তাহলে ফান্ডোপ্লিকেশন নামে একটি সার্জারি করা হয় । তবে এই অস্ত্রোপচার সম্পর্কে ডাক্তার আপনাদের আরও ভালোভাবে বলতে পারবেন ।
অ্যাসিডিটি প্রতিরোধ – অ্যাসিডিটি প্রতিরোধের টিপস
আপনার লাইফস্টাইলে কিছু বিশেষ টিপস যোগ করে অ্যাসিডিটির সমস্যা অনেকাংশে কমাতে পারেন । এসিডিটি প্রতিরোধ করতে এই বিষয়গুলো মেনে চলতে পারেন –
- গ্যাস অ্যাসিডিটির লক্ষণগুলি এড়াতে, খাবার এবং পানীয়ের দিকে নজর দিন, যেমন: – চর্বিযুক্ত এবং অতিরিক্ত মশলাদার খাবার এবং অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় এড়িয়ে চলুন ।
- অতিরিক্ত খাবার খাওয়া পরিহার করা উচিত ।
- রাতের খাবার খাওয়ার কমপক্ষে 2 ঘন্টা পরে ঘুমাতে যান ।
- আপনার যদি ওজন বেশী হয় তবে আপনার ওজন কমানোর চেষ্টা করা করুন ।
- ধূমপানের আসক্তি ত্যাগ করলে এই সমস্যা অনেকটা দূর হয়ে যাবে ।
- লাইফস্টাইলে অল্প কিছু পরিবর্তন আপনার অ্যাসিডিটির উপসর্গ কমাতে পারে । যে কোন মানুষের তার জীবনধারাকে আদর্শ ও নিয়মতান্ত্রিক করে তোলা উচিত এবং প্রতিদিন কিছুটা সময় হলেও ব্যায়াম করা উচিত । এই ধরনের রুটিন ফলো করলে অনেক ধরনের রোগকে এড়ানো সম্ভব ।
- ধূমপান, মদ্যপান, দুধ চা, দুধ কফি এবং অ্যাসপিরিনের মতো জিনিস এড়িয়ে চলুন । অযথা স্ট্রেস থেকে নিজেকে দূরে রাখার চেষ্টা করুন ।
শেষ কথা
আজকের এই আর্টিকেলটি থেকে আপনারা নিশ্চই বুঝতে পেড়েছেন যে, অ্যাসিডিটির সমস্যা সাধারনত অনিয়ন্ত্রিত জীবনধারা এবং খারাপ খাদ্যাভ্যাসের কারণে হয়ে থাকে । এমন অবস্থায়, সময়মতো প্রতিরোধ করা গেলে অ্যাসিডিটির মারাত্মক পরিণতি এড়ানো সম্ভব । সেই সঙ্গে অ্যাসিডিটির কিছু ঘরোয়া প্রতিকার সম্পর্কেও এই আর্টিকেলে বলা হয়েছে, যা ব্যবহার করে এই সমস্যা থেকে অনেকটা মুক্তি পাওয়া সম্ভব । এছাড়াও সমস্যা যদি বেশী গুরুতর হয় তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যাসিডিটির চিকিৎসা গ্রহন করুন । আশা করি অ্যাসিডিটির ঘরোয়া প্রতিকার সম্পর্কিত এই আর্টিকেলটি থেকে আপনারা অনেক কিছু জানতে পেড়েছেন ।
0 responses on "অ্যাসিডিটির কারণ, লক্ষণ এবং ঘরোয়া প্রতিকার"