আপনি যখন কোন ওয়েবসাইটে লগইন করেন অথবা অনলাইনে কোন ফর্ম পূরণ করে জমা দেন, তখন আপনাকে বিভিন্ন ধরনের ক্যাপচা পূরণ করতে বলা হয় । আর এই ক্যাপচা সঠিকভাবে পূরণ না করলে আপনি সেই ওয়েবসাইটে লগইন বা ফর্ম সাবমিট করতে পারবেন না । কিন্তু আপনি কি জানেন কেন এটা করা হয়? আজকের এই আর্টিকেলে আমরা আপনাদের বলব ক্যাপচা কি ? এটা কিভাবে কাজ করে এবং কেন এটি ব্যবহার করা হয়? এছাড়াও ক্যাপচা কোড কখন এবং কিভাবে প্রথম শুরু হয়েছিল?
ক্যাপচা কি – ক্যাপচা কাকে বলে – Captcha কি
ক্যাপচা বা CAPTCHA এর পূর্ণরূপ হল Completely Automated Public Turing Test To Tell Computers and Humans Apart । ক্যাপচা হল একটি অটোমেটিক পরীক্ষা, যা কম্পিউটার এবং মানুষকে আলাদা করে অর্থাৎ যা মানুষ এবং কম্পিউটারের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে । এটি আসলে একটি অটোমেটিক টিউরিং টেস্ট , যা হিউম্যান এবং বটের মধ্যে পার্থক্য করে এবং স্প্যাম প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে ।
আপনি যখন কোন ওয়েবসাইটে রেজিস্টার করেন, তখন আপনাকে একটি ক্যাপচা কোড পূরণ করতে বলা হয় । আপনি মানুষ কি না তা নিশ্চিত করতেই এই ক্যাপচা পূরণ করতে বলা হয় । কারণ একটি রোবটের মাধ্যমে ফর্ম পূরণ করে জমা দেওয়ার কাজ করানো সম্ভব । কিন্তু রোবট শুধু সেই কাজটিই করতে পারে, যা এতে প্রোগ্রাম করা হয় । অর্থাৎ রোবটের মাধ্যমে ক্যাপচা কোড পূরণ করানো সম্ভব না । কারণ ক্যাপচা কোড কন্টিনিউয়াস এবং র্যান্ডমলি পরিবর্তন হতে থাকে । সেজন্য পরবর্তী কোড কি হবে তা কোনভাবেই অনুমান করা সম্ভব নয় ।
যখন কোন ব্যবহারকারী ক্যাপচা কোড সঠিকভাবে পূরণ করে এবং সাবমিট করে, তখন সেই ইউজার একজন মানুষ হিসেবে প্রমাণিত হয় এবং তার রিকোয়েস্ট গ্রহন করা হয় । কিন্তু কোন ব্যবহারকারী যদি ক্যাপচা কোড সঠিকভাবে পূরণ করতে সক্ষম না হয় তাহলে তাকে বট মনে করে সেখানেই আটকে দেয়া হয় । এভাবে ক্যাপচার মাধ্যমে স্প্যাম প্রতিরোধ করা হয় ।
ক্যাপচা কোড সাধারণত আঁকাবাঁকা এবং অস্পষ্ট চিত্র আকারে দেখা যায় । যেখানে কিছু সংখ্যা বা অক্ষর আঁকাবাঁকা ভাবে লেখা থাকে । এবং সেই অক্ষর বা সংখ্যা গুলোকে সেই ফিল্ডের নিচে বা পাশে থাকা ফাঁকা ঘরে লিখতে হয় । আবার কিছু কিছু ক্যাপচা প্রশ্ন হিসাবে প্রদর্শিত হয় । অর্থাৎ ৫+৪=? নাকি ৮-২=? এমনভাবে উপস্থিত হয় । কিন্তু ক্যাপচা যে ধরনেরই হোক না কেন, সবার কাজই হচ্ছে স্প্যাম প্রোটেক্ট করা । এছাড়াও আরও অনেক প্রকারের ক্যাপচা কোড রয়েছে । ক্যাপচার প্রকারভেদ সম্পর্কে আমরা আর্টিকেলের পরবর্তী অংশে বিস্তারিত জানাব ।
ক্যাপচা কেন প্রয়োজন
যখন প্রথম ইন্টারনেট শুরু হয়েছিল, তখন ক্যাপচা বলে কিছু ছিল না । অর্থাৎ ইউজার মানুষ নাকি বট তা জানার কোনো পদ্ধতি ছিল না । যার ফলে প্রতিনিয়ত স্প্যাম বাড়তে থাকে এবং সেই সাথে ফেক অ্যাকাউন্ট, ফেক কমেন্ট এবং ফেক ভিজিটরদের সংখ্যা বাড়তে থাকে । এমন অবস্থায় এগুলোকে প্রতিরোধ করার জন্য, একটি ফিল্টারের প্রয়োজন অনুভূত হয় । যা মানুষ এবং মেশিন বা বটের মধ্যে পার্থক্য করতে পারবে এবং স্প্যাম প্রোটেক্ট করতে পারবে । এই ধারণা থেকেই ক্যাপচার জন্ম হয়েছে ।
পরবর্তীতে ২ টি আলাদা আলাদা টিম এই ধারণা নিয়ে কাজ শুরু করে । এবং ১৯৯৭ সালে ক্যাপচা (সংস্করণ 1.0) এর প্রথম সংস্করণ চালু করা হয় । এটি একটি কম্পিউটার দ্বারা পরিচালিত টেস্ট ছিল , যা স্ক্রিনে একটি বিকৃত ছবি প্রদর্শন করে । এবং সেই চিত্রে একটি কোড রয়েছে (শব্দ বা সংখ্যার আকারে), যা ইউজারকে তার পাশে থাকা ফাঁকা বক্সে প্রবেশ করতে হয়েছিল । কিন্তু তখনও ক্যাপচা শব্দটি ব্যবহার করা হয়নি ।
ক্যাপচা কে আবিষ্কার করেন ?
এখন আপনাদের মনে প্রশ্ন আসতে পারে, কে ক্যাপচা আবিষ্কার করেন? ক্যাপচা কে আবিস্কার করেন এই বিষয়টি নিয়ে ভিন্ন মত রয়েছে । কারণ দুটি আলাদা টিম একই সময়ে একে অপরের সাথে সমান্তরালভাবে কাজ করে ক্যাপচা আবিষ্কার করেছে এবং উভয়েই এটি তাদের নিজস্ব আবিষ্কার বলে দাবি করেছেন । তাই কে প্রকৃত উদ্ভাবক, তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিতর্ক চলছিল । তবে শেষ পর্যন্ত তা মিটে যায় ।
দুটি টিমের মধ্যে প্রথম টিমের সদস্য ছিল মার্ক ডি. লিলিব্রিজ, মার্টিন আবাদি, কৃষ্ণ ভারত এবং আন্দ্রেই ব্রোডার । এবং ২য় গ্রুপে ছিলেন লুইস ভন আহন, ম্যানুয়েল ব্লুম, নিকোলাস জে. হপার এবং জন ল্যাংফোর্ড । ২য় গ্রুপের সদস্যরা ১৯৯৭ সালে পেটেন্টের জন্য আবেদন করেছিলেন । আর অন্যদিকে প্রথম দল ১৯৯৮ সালে আবেদন করেছিল । সেই কারণে লুইস ভন আহনের গ্রুপকে পেটেন্ট আবেদনের অগ্রাধিকারের উপর ভিত্তি করে আবিষ্কারক হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছিল । অবশ্য এর বাইরেও আরও একটি কারণ ছিল ।
প্রথম গ্রুপটি তাদের পেটেন্ট আবেদনে ক্যাপচা শব্দটি উল্লেখ করেনি । ক্যাপচা শব্দটি ২০০৩ সালে লুইস ভন আহন, ম্যানুয়েল ব্লাম, নিকোলাস জে. হপার এবং জন ল্যাংফোর্ডের টিম দ্বারা তৈরি করা হয়েছিল । এ কারণে ‘ক্যাপচা’-এর উদ্ভাবক হিসেবে লুইস ভন আহনের টিম কে মনে করা হয় । এছাড়াও লুইস ভন আহন পরবর্তীতে reCAPTCHA আবিষ্কার করেছিলেন । চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক ক্যাপচা কিভাবে কাজ করে?
ক্যাপচা কিভাবে কাজ করে?
ক্যাপচা সাধারণত ২ ভাগে বিভক্ত । প্রথম অংশটি হল তথ্য অংশ, যেখানে টেক্সট, চিত্র, ধাঁধা, সমস্যা, বিজ্ঞাপন ইত্যাদি থাকে । আর ২য় অংশ হল একটি ফাঁকা বক্স । যার মধ্যে উপরে থাকা তথ্য লিখতে হয় । অর্থাৎ এখানে তথ্য অংশে থাকা ডেটা বিশ্লেষণ করে লিখতে হয় । এই দুটি অংশ পরস্পরের সাথে সংযুক্ত । সেজন্য ইউজার যে তথ্যই প্রবেশ করান না কেন, তা তথ্য অংশের সঙ্গে মিলিয়ে তারপর যাচাই করা হয় ।
আরও সহজ ভাষায় বললে, যখন ব্যবহারকারী ক্যাপচা পূরণ করে সাবমিট করে তখন ইউজারের সাবমিট করা তথ্যের সাথে তথ্য অংশের মিল রয়েছে কি না, তা যাচাই করা হয় । তথ্য যদি মিলে যায় অর্থাৎ ইউজারের দেয়া তথ্য যদি সঠিক হয় তাহলে ব্যবহারকারীর অনুরোধ প্রসেস করা হয় । অন্যথায় তাকে পুনরায় ক্যাপচা পূরন করতে বলা হয় । এইভাবে, ক্যাপচা ব্যবহারকারী যাচাইকরণের মাধ্যমে স্প্যাম ডিটেক্ট এবং প্রোটেক্ট করে ।
ক্যাপচায় ব্যবহৃত টেক্সটগুলি বিকৃত (আঁকাবাঁকা) এবং অস্পষ্ট অবস্থায় থাকে । কিন্তু একজন মানুষের পক্ষে বেশীরভাগ ক্ষেত্রে সেগুলো পড়া সম্ভব । তবে বট বা মেশিনের মাধ্যমে এগুলোকে রিড করা কঠিন । লেখাগুলো আকাবাকা থাকার কারণে বট এগুলোকে পড়তে পারে না । তবে বর্তমানে AI বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে তা অনেকাংশে সম্ভব হয়েছে । সেই কারণে ক্যাপচাতেও নতুনত্ব আসছে । reCAPTCHA এবং VAPTCHA (WAPTCHA) হল এর ফলাফল ।
ক্যাপচা কত প্রকার – ক্যাপচার প্রকারভেদ
যখন ক্যাপচা প্রথম চালু করা হয়েছিল, তখন শুধুমাত্র টেক্সট ভিত্তিক ক্যাপচা উপলব্ধ ছিল । কিন্তু সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে ক্যাপচায় ঘন ঘন পরিবর্তন হয়েছে এবং বিভিন্ন ধরনের ক্যাপচা কোডের উদ্ভব হয়েছে । এবং এই চক্র ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে । এই কারণেই আজ আমরা বিভিন্ন টাইপের ক্যাপচা কোড দেখতে পাই । আসুন আমরা কিছু জনপ্রিয় ক্যাপচা কোড সম্পর্কে জেনে নেই
টেক্সট ক্যাপচা – এটি ক্যাপচা এর সবচেয়ে পুড়োনো এবং সবচেয়ে সাধারণ টাইপ । এতে ইউজারকে বর্ণমালা এবং সংখ্যার সমন্বয়ে তৈরি একটি আঁকাবাঁকা বা ওভারল্যাপ করা কোড দেখানো হয় । এবং ইউজারকে সেই কোডটিতে কি লেখা আছে তা বুঝে পাশের ফাঁকা বক্সে লিখতে হয় । লেখাগুলো আঁকাবাঁকা বা ওভারল্যাপ হওয়ার কারণে এগুলো বুঝতে একটু সমস্যা হয় । এছাড়াও অক্ষর গুলো অনেক সময় বড় এবং ছোট হাতের হয়ে থাকে । তাই ক্যাপচা পূরণ করার সময় এই বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে । কারণ ক্যাপচা ভুল অক্ষর গ্রহণ করে না অর্থাৎ বড় হাতের অক্ষরের পরিবর্তে ছোট হাতের অক্ষর লিখলে ক্যাপচা ভেরিফাই হবে না । সেজন্য যে ফরম্যাটে লেখা থাকবে আপনাকে সেই ফরম্যাটেই লিখতে হবে ।
অডিও ক্যাপচা – এটি মূলত একটি অডিও ভিত্তিক ক্যাপচা । অর্থাৎ এখানে কথা বলে ইউজারকে কোড বলা হয় এবং ইউজার সেই অডিও শুনে সেখানে বলা কোডটি টাইপ করতে হয় । তবে অডিও ক্যাপচা বেশ গোলমালের । তাই অডিও ক্যাপচায় প্রতিটি শব্দ খুব মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে । সেই সাথে উচ্চারণের দিকেও মনোযোগ দিতে হবে । কারণ অনেক সময় অস্পষ্ট উচ্চারণের কারণে উচ্চারিত শব্দ সঠিকভাবে বোঝা যায় না । আবার অনেক সময় ব্যাকগ্রাউন্ড নয়েজের কারণে এটি সঠিকভাবে শোনাও যায় না । তাই অডিও ভিত্তিক ক্যাপচাগুলি খুব সাবধানতার সাথে সমাধান করতে হয় ।
ছবি ক্যাপচা – এই ধরনের ক্যাপচার ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীকে কিছু ছবি দেখানো হয় । এবং সেই ছবি থেকে কোন নির্দিষ্ট একটি বস্তুর ছবি সম্বলিত ছবিগুলোকে নির্বাচন করতে বলা হয় । এর জন্য, ব্যবহারকারীকে 3×3 মাপের মোট ৯টি ছবি দেখানো হয় এবং সেগুলোর মধ্য থেকে সঠিক ছবি (সাধারণত 3টি ছবি) নির্বাচন করতে বলা হয় ।
ফটো ক্যাপচা সাধারণত দুই ধরনের হয় । একটিতে ইমেজ স্থির থাকে এবং অন্যটি পরিবর্তনশীল। অর্থাৎ ব্যবহারকারী ট্যাপ করার সাথে সাথে ইমেজ চেঞ্জ হতে থাকে । অর্থাৎ যে ছবিতে ক্লিক করা হয় সেটি চেঞ্জ হয়ে নতুন চিত্র প্রদর্শিত হয় । সেজন্য ব্যবহারকারীকে উল্লেখ করে দেওয়া বস্তুর সবগুলো ছবি প্রদর্শিত না হওয়া পর্যন্ত ট্যাপ চালিয়ে যেতে হবে । এই ছবিগুলি সাধারণত পাহাড়, নদী, সেতু, গাড়ি, সাইকেল, মোটরসাইকেল, সিঁড়ি, রোড ক্রসিং ইত্যাদি নির্দেশ করে । আর এসবের উপর ভিত্তি করে ছবি নির্বাচন করা হয় । যেমন বলা হয়ে থাকে যে, দৃশ্যমান ছবিগুলির মধ্যে কোন ছবিগুলোতে সাইকেল রয়েছে । এবং ইউজারকে তখন ছবিগুলোর মধ্যে থেকে যে ছবি গুলোতে সাইকেল রয়েছে সেগুলো নির্বাচন করতে হবে ।
যুক্তি বা প্রশ্ন ভিত্তিক ক্যাপচা – এই ধরনের ক্যাপচার ক্ষেত্রে যৌক্তিক প্রশ্ন করা হয় এবং ব্যবহারকারীকে সেগুলোর উত্তর দিতে বলা হয় । যেমন ৫ + ৮ =? বা ২০ – ৫ =? । তবে সমাধান করা বেশ সহজ ।
5. 3D ক্যাপচ কোড
3D ক্যাপচা কোড – এই ধরনের ক্যাপচায় ব্যবহারকারীকে একটি 3D চিত্র দেখানো হয় । যেটিতে বর্ণ এবং সংখ্যা আকারে একটি কোড লেখা থাকে । এই কোডটি ইউজারকে বুঝতে হবে এবং পাশের ফাঁকা ঘরে লিখতে হবে । কিন্তু এই কোড গুলো পড়া সহজ নয় । কারণ লেখাগুলো বেশ বিরক্তিকর ও বিভ্রান্তিকর । তবে খুব ভালো করে লক্ষ্য করলে বুঝতে পারবেন যে আসলে কি লেখা আছে?
স্লাইডার ক্যাপচা – এই ধরনের ক্যাপচাগুলো সলভ করা খুব সহজ । এতে ব্যবহারকারীকে একটি আকৃতি দেওয়া হয় এবং এটিকে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় স্লাইড করতে বলা হয় । কারণ ডেস্টিনেশন সেই আকৃতির অবস্থান থেকে দূরে থাকে । এজন্য এটিকে সঠিক জায়গায় স্লাইড করে এই ধরনের ক্যাপচা সলভ করতে হয় । ব্যবহারকারীকে সেই আকৃতিকে ট্যাপ অ্যান্ড হোল্ড করে প্রদত্ত চিত্রে স্লাইড করতে হয় । এবং আকৃতিটি তার নির্ধারিত অবস্থানে পৌঁছানোর সাথে সাথে ক্যাপচা সমাধান হয়ে যায় এবং ব্যবহারকারী সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার অনুমতি পায় ।
অ্যাড ইনজেক্টেড ক্যাপচা – ক্যাপচার এই ফরম্যাটটি মার্কেটিং একটি অংশ । অর্থাৎ এই ধরনের ক্যাপচা বিভিন্ন পণ্যের প্রচারের উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয় । এতে ব্যবহারকারীকে একটি বিজ্ঞাপন দেখানো হয়। যেখানে কোন পণ্য বা কোম্পানির প্রচার করা হয় ।এই ধরনের ক্যাপচায় ব্যবহারকারীকে পণ্য বা কোম্পানি সম্পর্কিত একটি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হয় । আর ব্যবহারকারীকে বিজ্ঞাপন বা এড দেখে তার উত্তর লিখতে হবে । উত্তরটি বিজ্ঞাপনের মধ্যেই থাকে । এটি একটি পণ্য বা কোম্পানির নাম হতে পারে, এটি একটি কীওয়ার্ড হতে পারে বা কোন একটি ছবিও হতে পারে। এটা নির্ভর করে বিজ্ঞাপনটি কোন পণ্য বা কোম্পানিরএবং তাতে কী দেখানো হয়েছে?
চেকবক্স ক্যাপচা – এটি Google দ্বারা তৈরি একটি উন্নত ধরনের ক্যাপচা । যা একটি সাধারণ কাজের মাধ্যমে ব্যবহারকারীর আচরণ সনাক্ত করে । অর্থাৎ হিউম্যান এবং রোবটের মধ্যে পার্থক্য করে । এই জন্য, I am not a Robot লেখা একটি চেকবক্স ব্যবহারকারীকে দেওয়া হয় এবং এটিতে ক্লিক করতে বলা হয় । যখন ব্যবহারকারী সেই চেকবক্সে ক্লিক করে তখন তার ক্লিক করার পদ্ধতি, কোণ ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে তার আচরণ বিশ্লেষণ করা হয় । এবং ব্যবহারকারীর আচরন যদি একজন মানুষের মত হয় তবে চেকবক্সটি ডান হয়ে যায় এবং ব্যবহারকারী সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার অনুমতি পায় ।
আপনি লক্ষ্য করলে দেখবেন যে, চেকবক্সে ক্লিক করার কিছুক্ষণ পরে একটি বৃত্ত উপস্থিত হয় । এবং তার পরে টিক মার্ক আসে ।মূলত, এই সময়ে ব্যবহারকারীর আচরণ বিশ্লেষণ করা হয় । এজন্য আপনাকে ১ বা ২ সেকেন্ড অপেক্ষা করতে হতে পারে ।
সময়-ভিত্তিক ক্যাপচা – এটি একটি সহজ এবং স্মার্ট ক্যাপচা, যা ব্যবহারকারী কত সময় ব্যয় করছে তা রেকর্ড করে এবং এর উপর ভিত্তি করে মানুষ এবং বটের মধ্যে পার্থক্য করে । অর্থাৎ, একজন মানুষের ফর্মটি পূরণ করতে যে সময় লাগে তার উপর ভিত্তি করে , এটি মানুষ এবং বট ডিটেক্ট করে । একটি উদাহরণের মাধ্যমে বোঝা যাক ।
ধরুন কোন একটি ওয়েবসাইটের রেজিস্ট্রেশন ফর্মে সময়-ভিত্তিক ক্যাপচা ব্যবহার করা হয়েছে । এখন যদি কোন ব্যবহারকারী সেই ওয়েবসাইটে রেজিস্ট্রেশন করে, তখন সে প্রথমে প্রতিটি ক্ষেত্র পড়বে এবং তারপর তা পূরণ করবে । কিন্তু যখন কোন বট একই কাজ করবে, তখন মোটেও এত বেশী সময়ের প্রয়োজন হবে না । কারণ বট অটোফিলের মাধ্যমে একবারে সম্পূর্ণ ফর্মটি পূরণ করে ফেলবে এবং এভাবেই বটকে সনাক্ত করা হয় ।
অদৃশ্য reCAPTCHA – এটি Google reCAPTCHA এর সবচেয়ে উন্নত ভার্শন, যা দৃশ্যমান নয় বা অদৃশ্য ৷ অর্থাৎ এটি সম্পূর্ণ গোপন অবস্থায় থাকে । এজন্য ব্যবহারকারীকে কোন কিছুই করতে হয় না । এটি ব্যাকগ্রাউন্ডে অটোমেটিক তার কাজ করতে থাকে এবং ব্যবহারকারীর আচরণের উপর নজর রাখে । অর্থাৎ ইউজারের ইন্টারঅ্যাকশন এবং ইউসেজ প্যাটার্ন পর্যবেক্ষণ করে ব্যবহারকারী মানুষ না রোবট তা চিহ্নিত করে ।
ইনভিজিবল reCAPTCHA আসলে AI বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে কাজ করে । এটি মূলত মেশিন লার্নিং এর টেকনিক ইউজ করে । সেজন্য এটি ব্যবহারকারীর আচরণ এবং প্যাটার্ন থেকে অটোমেটিকভাবে খুঁজে বের করে যে, সে একজন মানুষ নাকি বট বা রোবট । ব্যবহারকারী যদি মানুষ হয়, তাহলে এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সমাধান হয়ে যায় । তবে আপনাদের বলে রাখি যে ইনভিজিবল reCAPTCHA এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে ৷
ক্যাপচা এর উপকারিতা
এতক্ষণে আপনারা ক্যাপচা সম্পর্কে অনেক কিছু জেনে ফেলেছেন । তাহলে এবার জেনে নেওয়া যাক ক্যাপচা এর উপকারিতা সম্পর্কে । আসলে ক্যাপচা এর অনেক ধরনের সুবিধা আছে । আসুন, জেনে নেই ক্যাপচার কিছু উপকারিতা সম্পর্কে । ক্যাপচার সুবিধা –
- ক্যাপচা, বট এবং অটোক্লিক স্ক্রিপ্টের মাধ্যমে হওয়া আক্রমণ প্রতিরোধ করে এবং আমাদের ওয়েবসাইটটিকে স্প্যাম থেকে রক্ষা করে ।
- এটি হিউম্যান এবং রোবটের মধ্যে পার্থক্য করে ।
- ওয়েবসাইটের নিরাপত্তা বা সিকিউরিটি নিশ্চিত করে ।
- হ্যাকার এবং স্প্যামারদের থেকে দূরে রাখে ।
- জাল অ্যাকাউন্ট এবং প্রোফাইল তৈরির বট এবং স্ক্রিপ্ট প্রতিরোধ করে ।
- ভুয়া ব্লগ কমেন্ট প্রতিরোধ করে ।
- বট আক্রমণ এবং বট ট্রাফিক থেকে ওয়েবসাইটকে রক্ষা করে ।
- অনলাইন বিভিন্ন সমীক্ষা এবং পোল রক্ষা করে ।
ক্যাপচা এর অসুবিধা
ক্যাপচা এর সুবিধা অনেক কিন্তু এর কিছু অসুবিধাও আছে । চলুন জেনে নেই ক্যাপচা এর কিছু অসুবিধা সম্পর্কে । ক্যাপচা এর অসুবিধা –
- ক্যাপচা এর সবচেয়ে বড় অসুবিধা হল এটি সাধারণ ইউজারের সময় নষ্ট করে । অনেক সময় ক্যাপচা ভেরিফাই হয় না, যার কারণে কয়েকবার করে চেষ্টা করতে হয় । এর ফলে আমাদের অনেক সময় নষ্ট হয় ।
- শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তিদের সমস্যায় পড়তে হয় ।
- অনেক সময় প্রযুক্তিগত সমস্যা বা ইন্টারনেট স্পীডের কারণে ক্যাপচা সঠিকভাবে লোড হয় না । যা আমাদের কাজের উপর খারাপ প্রভাব ফেলে ।
শেষ কথা
ক্যাপচা হল একটি পাবলিক টিউরিং পরীক্ষা যা স্প্যাম নিয়ন্ত্রণে কাজ করে । এটি হ্যাকার, স্প্যামার, অটো ক্লিক স্ক্রিপ্ট এবং বট আক্রমণ ডিটেক্ট এবং প্রতিরোধ করে এবং সেই সাথে ওয়েবসাইটের নিরাপত্তা প্রদান করে । ক্যাপচা অনেক ধরনের আছে । যেমন টেক্সট ক্যাপচা, ইমেজ ভিত্তিক ক্যাপচা, অডিও ভিত্তিক ক্যাপচা, সময় ভিত্তিক ক্যাপচা, লজিক প্রশ্ন ভিত্তিক ক্যাপচা, 3D ক্যাপচা, স্লাইডার ক্যাপচা, ড্র্যাগ অ্যান্ড ড্রপ ক্যাপচা, নো ক্যাপচা reCAPTCHA, অদৃশ্য reCAPTCHA ইত্যাদি । সময়ের সাথে সাথে ক্যাপচা আরও বেশী উন্নত এবং স্মার্ট হয়ে যাচ্ছে । বর্তমানে ক্যাপচা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং মেশিন লার্নিং ইউজ করে । এই কারণেই সেগুলো পুড়োনো ক্যাপচা গুলির চেয়ে দ্রুত এবং আরও বেশী নির্ভুল । আমরা আশা করছি আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনারা ক্যাপচা সম্পর্কে বিস্তারিত অনেক কিছু জানতে পেড়েছেন । আর্টিকেলটি নিয়ে যে কোন ধরনের প্রশ্ন বা মন্তব্য থাকলে কমেন্ট সেকশনে জানান ।
0 responses on "ক্যাপচা কি ? এটা কিভাবে কাজ করে?"