স্মার্টফোনের দুনিয়ায় ওয়ানপ্লাস এখন বেশ জনপ্রিয় একটি নাম। নতুন নতুন উদ্ভাবন দিয়ে ক্রেতাদের নজর কাড়তে ওয়ানপ্লাসের জুড়ি নেই। আর এমনই এক নতুন উদ্ভাবন দেখিয়েছে ওয়ানপ্লাস সম্প্রতি স্পেনের বার্সেলোনাতে চলতে থাকা ‘মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস’ -এ। ফোনেও তারা লিকুইড কুলিং প্রযুক্তির ব্যবহার করেছে। যে কোন ডিভাইসকে ঠাণ্ডা রাখতে লিকুইড কুলিং সবথেকে ভালো পদ্ধতি। এর ফলে লম্বা সময় ধরে ডিভাইস থেকে সেরা পারফর্মেন্স পাওয়া সম্ভব হয়। এই নতুন উদ্ভাবনী ফোনের নাম দেয়া হয়েছে ওয়ানপ্লাস ১১ কনসেপ্ট ফোন।
আজকের পোস্টে জানাবো এই ফোন সম্পর্কে বিস্তারিত। ওয়ানপ্লাস যেসব নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার এই ফোনে করেছে সে সম্পর্কেও আলোচনা থাকছে এই পোস্টে।
ওয়ানপ্লাস এই ফোনে ব্যবহার করা কুলিং টেকনোলজিকে বলছে ‘অ্যাক্টিভ ক্রায়োফ্লাক্স’। ফোনটির পিছনে নীল রঙের এই লিকুইড ক্রমাগত পরিবাহিত হয়ে ফোনটিকে ঠাণ্ডা রাখছে। এর ফলে ফোন থেকে আরও বেশি পারফর্মেন্স পাবার সঙ্গে সঙ্গে ফোনের সৌন্দর্যও বৃদ্ধি করেছে ওয়ানপ্লাস। ওয়ানপ্লাসের মতে দেখতে আকর্ষণীয় হলেও এই কুলিং টেকনোলজি বাস্তবেও ফোনকে ঠাণ্ডা রাখতে পারবে সাধারণ যে কোন কুলিং টেকনোলজির থেকে বেশি।
খুব ভারী কাজের সময় ফোনকে ঠাণ্ডা রেখে ফোন থেকে আরও ভালো পারফর্মেন্স পাওয়া সম্ভব হবে বলে দাবি ওয়ানপ্লাসের। এর ফলে এই ফোন গেমিংয়ে পারদর্শী হবে এবং আরও দ্রুত চার্জ হতে পারবে। এই লিকুইড কুলিং প্রযুক্তি গেমিং ফোনের ক্ষেত্রে ফ্যান ব্যবহারকে কমিয়ে আনবে বলে আশা করছে ওয়ানপ্লাস। বর্তমানে আসুস ও নুবিয়ার গেমিং ফোনগুলোতে আলাদা এক্সেসরি হিসেবে কুলিং ফ্যান ব্যবহার করা যায়।
ওয়ানপ্লাস নিজেদের ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করার মাধ্যমে দাবি করছে যে এই প্রযুক্তির ব্যবহারে গেমিংয়ের সময় প্রায় ৩.৭৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত কম তাপমাত্রা থাকে এই ফোনে। ওয়ানপ্লাসের মতে এর ফলে গেমিংয়ের ক্ষেত্রে ৩ থেকে ৪ ফ্রেম প্রতি সেকেন্ডে বেশি পাওয়া যায়। এছাড়া চার্জিংয়ের ক্ষেত্রেও এই পরীক্ষা চালিয়েছে ওয়ানপ্লাস। চার্জিংয়ের সময় ২.৮৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত কম গরম হয় এই ফোনটি। ফলে ৩০ থেকে ৪৫ সেকেন্ড পর্যন্ত বেশি দ্রুত চার্জ হতে পারে ফোনটি।
যদিও ওয়ানপ্লাসের এই ফোনটি নিজে থেকে পরীক্ষা করার কোন উপায় এই সভায় নেই। ফলে অনেকেই এর কার্যকারিতা নিয়ে সন্দিহান। তবে ফোনটি দেখতে যে বেশ সুন্দর এবং অনন্য সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই।
ওয়ানপ্লাস জানিয়েছে যে একদম নতুন প্রযুক্তির ‘পাইজোইলেকট্রিক সিরামিক মাইক্রোপাম্প’ এই লিকুইডকে ফোনের মধ্যে পরিবাহিত করছে। এটি ফোনের ভেতরে মাত্র ০.২ স্কয়ার সেন্টিমিটার জায়গা দখল করে। আর তাই হাতে নিলে এই নতুন কুলিং প্রযুক্তি ব্যবহারের পরেও ফোনটিকে বেশি ভারী বা মোটা মনে হয় না।
ওয়ানপ্লাস ফোনের ভিতরের ডিজাইনের ব্যাপারে আর কোন তথ্য জানায় নি। ফোনের পিছনটি একধরনের স্বচ্ছ বস্তু দিয়ে তৈরি। ফলে পিছনে থাকা ছোট পাইপের মধ্যে তরল চলাচলের দৃশ্য খালি চোখেই দেখা সম্ভব হয়। এই পাইপটি ফোনের পিছনের বিভিন্ন অংশ ছাড়াও ফোনের গোলাকৃতির ক্যামেরার চারপাশেও দেয়া হয়েছে। ফলে ফোনের পিছন জুড়ে এবং ক্যামেরার চারপাশে এই তরল পরিবাহিত হবার দৃশ্য দেখা সম্ভব হয়।
স্মার্টফোনকে পাতলা রেখেও এই নতুন ধরণের লিকুইড কুলিং প্রযুক্তি ফোনকে ঠাণ্ডা রাখার ক্ষেত্রে নতুন দিকের উন্মোচন করতে পারে। তবে এটি এখনও এই কনসেপ্ট ফোনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। নতুন এই প্রযুক্তি সঠিকভাবে কোন সমস্যা ছাড়াই সাধারণ স্মার্টফোনগুলোতে নিয়ে আসতে এখনও আরও অপেক্ষা করতে হবে।
বর্তমানে ডেস্কটপ গেমিং পিসিতে এই ধরণের লিকুইড কুলিং প্রযুক্তির দেখা মেলে। ফোনের ক্ষেত্রে লিকুইড কুলিং নতুন ধারণা হলেও এর আগেও এই ধরণের বিভিন্ন কনসেপ্ট ডিভাইস দেখিয়েছে ওয়ানপ্লাস। পূর্বে তারা ফোনের পিছনে রঙ পরিবর্তনের প্রযুক্তি ও অদৃশ্য ক্যামেরার প্রযুক্তি তাদের কনসেপ্ট ফোনে ব্যবহার করেছে। তবে শেষ পর্যন্ত এসব প্রযুক্তি ক্রেতাদের হাতে পৌছায়নি।
ফোনের এমন নতুন নতুন ডিজাইন স্মার্টফোনের ভবিষ্যতকে আমাদের সামনে নিয়ে আসে। এই লিকুইড কুলিং প্রযুক্তি এখন স্মার্টফোনে ব্যবহারযোগ্য নয়। তবে এই নিয়ে নিয়মিত গবেষণার মাধ্যমে ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তি প্রতিটি স্মার্টফোনেই ব্যবহার হতে পারে। তাই নতুন এই প্রযুক্তি আমাদের জানায় যে স্মার্টফোনকে এখনও আরও উন্নত করা সম্ভব।
0 responses on "ওয়ানপ্লাসের অবাক করা নতুন কনসেপ্ট ফোন! (লিকুইড কুলিং চমক)"