স্মার্টফোনের দুনিয়ায় আইফোন এক অতি পরিচিত নাম। অ্যাপলের তৈরি এই স্মার্টফোন দীর্ঘ সময় জুড়ে স্মার্টফোনের বাজারে রাজত্ব করে চলেছে। সারা বিশ্বের মত বাংলাদেশে আইফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যাও দিনে দিনে আরো বাড়ছে। প্রতি বছরই নতুন নতুন উদ্ভাবন নিয়ে নতুন আইফোন বাজারে আসে। প্রযুক্তি প্রেমীদের কাছে আইফোনের আলাদা কদর রয়েছে। আইফোনের এই ব্যাপক জনপ্রিয়তার বহু কারণ রয়েছে। নতুন উদ্ভাবন, পারফরমেন্স, ক্যামেরা, রিসেল ভ্যালু সব মিলিয়েই আইফোন অন্য এক উচ্চতায় পৌঁছে গেছে। তাই আইফোনের দাম অন্যান্য স্মার্টফোন হতে বেশি হওয়া সত্ত্বেও এর জনপ্রিয়তা কমেনি একটুও।
আইফোনের রিসেল ভ্যালু বা পুরনো আইফোনের দামও থাকে অন্যান্য স্মার্টফোন থেকে অনেক বেশি। ব্যবহৃত আইফোনের একটি বড় বাজার রয়েছে। অনেকেই চড়া মূল্যে নতুন আইফোন কিনতে পারেন না। তারা আইফোনের স্বাদ নিতেই খোঁজেন ব্যবহৃত আইফোন। তাই ব্যবহৃত আইফোনের ব্যাপক চাহিদার ফলে দাম অন্যান্য ব্যবহৃত স্মার্টফোন থেকে বেশি হয়। আইফোনের দাম না কমার আরেকটি বড় কারন হচ্ছে অ্যাপল লম্বা সময় ধরে পুরনো আইফোনগুলোতেও আপডেট দিয়ে তাদের পারফরমেন্স ঠিক রাখে। এর ফলে কয়েক বছরের পুরনো আইফোনকেও ধীরগতির মনে হয় না। আর তাই ব্যবহৃত আইফোন কিনতে অনেকেই আগ্রহী হন।
তবে ব্যবহৃত আইফোন কিনবার সময় বেশ কিছু ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। ব্যবহৃত ফোন বলে ফোনের বিভিন্ন দিক নিয়ে ধারণা না থাকলে নষ্ট বা সমস্যাযুক্ত ফোন কিনে ফেলার সম্ভাবনা থাকে। তাই এসকল সমস্যা থেকে বাঁচতে আমাদের পুরো পোস্টটি পড়ে নিতে পারেন।
অ্যাক্টিভেশন লক
যে কোনো ব্যবহৃত আইফোন কেনার আগে আইফোনের পূর্বের মালিকানা সেটিংস থেকে পুরোপুরি মুছে ফেলা হয়েছে কিনা তা জানা জরুরি। আইফোনের আইক্লাউড লক বা অ্যাক্টিভেশন লক পুরোপুরি মুছে ফেলে এরপর আইফোন কিনতে হয়। কাজেই আইফোন আগে অফ অবস্থা থেকে অন করে চেক করে নিন কোনরকমের লক দেয়া আছে কিনা। যদি লক দেখতে পান এবং এটা আপনাকে বিক্রেতা খুলে না দিতে পারে তবে আইফোনটি চুরি হওয়া আইফোন হবার সম্ভাবনা রয়েছে। চুরি আইফোন না হলেও লক থাকলে আইফোন আপনি কোনোভাবেই ব্যবহার করতে পারবেন না।
পরীক্ষা করে এরপর আইফোন ইরেজ করা
বিক্রেতা তার আইফোন প্রথমেই ইরেজ করে ফ্যাক্টরি রিসেট দেবার মাধ্যমে ফোন আপনাকে দিতে পারে। এটি ভালো ব্যাপার হলেও এভাবে আইফোন প্রথমে পরীক্ষা করে দেখার সুযোগ থাকে না। কেননা এই অবস্থায় আপনি আইফোন অন করলেই সেটআপ স্ক্রিনে চলে আসবেন। ফলে পুরো সেটআপ না করলে আইফোনের ভেতরের সবকিছু পরীক্ষা করা যাবে না।
তাই সবথেকে সেরা উপায় হচ্ছে প্রথমেই বিক্রেতার কাছে আইফোন ইরেজ না করে পরীক্ষা করে দেখতে চাওয়া। আপনি বিক্রেতার তথ্য দিয়েই ফোনে প্রবেশ করে প্রয়োজনীয় সকল কিছু ঠিকঠাক কাজ করছে কিনা সেটি পরীক্ষা করে নিন। এরপর সন্তুষ্ট হলে বিক্রেতাকে আইফোন ইরেজ করতে বলুন।
ইরেজ করতে হলে আইফোনের Settings > General > Transfer or Reset iPhone হতে Erase All Content and Settings অপশনে চলে যেতে হবে। তবে এসময় বিক্রেতার অ্যাপল আইডি থেকে লগইন করে অ্যাক্টিভেশন লক বন্ধ করে নিতে হবে। এরপর বিক্রেতার অ্যাপল আইডি থেকে লগ আউট করতে হবে। এরপর ইরেজ করা ভাল হবে।
বাইরে থেকে পুরো ফোন পরীক্ষা করা
ব্যবহৃত আইফোনে বিভিন্ন ঘষার দাগ থাকবে এটাই স্বাভাবিক। এই দাগ স্ক্রিন থেকে শুরু করে পুরো স্মার্টফোনেই থাকতে পারে। তবে যেসব আইফোন যত্ন নিয়ে গ্লাস প্রটেক্টর ও কেস দিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে সেগুলোতে দাগ কম থাকবে এবং দামও কিছুটা বেশি হবে। তবে এসব দাগ চিন্তার তেমন কোনো কারণ নয়। তবে আইফোনটি ভালোভাবে পরীক্ষা করে দেখে নিন ফোনের বডির কোনো অংশে আঘাতের ফলে নিচের দিকে দেবে যাওয়ার মত কোনো অংশ আছে কিনা। এমন ক্ষতি ফোনের ভিতরের বিভিন্ন যন্ত্রাংশে সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। এমনকি ব্যাটারিও নষ্ট হয়ে যেতে পারে। একটি মসৃণ টেবিলে আইফোনটি রেখে দেখে নিন আইফোনটি বাঁকা বা কোনো অংশ ফুলে রয়েছে কিনা। এছাড়া ক্যামেরার লেন্সগুলো ঠিকঠাক আছে কিনা সেটিও পরীক্ষা করে নিতে পারেন।
ব্যাটারি হেলথ
আইফোন ব্যাটারি হেলথ ব্যবহৃত আইফোন কেনার ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার। আইফোনে ব্যবহৃত লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি সময়ের সাথে সাথে ক্ষয় হতে থাকে এবং চার্জ ধরে রাখার ক্ষমতা কমে যেতে পারে। এই ব্যাটারির কতটুকু অংশ ভালো আছে সেটি আইফোন শতাংশের মাধ্যমে প্রকাশ করে থাকে। একদম নতুন আইফোনের ব্যাটারি হেলথ পুরোপুরি ১০০% হয়ে থাকে।
Settings > Battery > Battery Health এই স্থানে গেলেই আপনি যেকোনো আইফোনের ব্যাটারি হেলথ দেখতে পাবেন। সাধারণত ৮০ শতাংশের বেশি ব্যাটারি হেলথ থাকলে সেই আইফোনটি ভালো ব্যাকাপ দিতে পারবে বলে ধারণা করা যায়। এর নিচের ব্যাটারি হেলথের আইফোন কিনলে খুব ভালো চার্জ ব্যাকাপ পাবেন না এবং পারফরমেন্সেও সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়া দেখে নিন ব্যাটারি হেলথ অংশে আইফোন “Peak Performance Capability” দেখাচ্ছে কিনা। কেননা অন্য কোনোকিছু দেখালে সেই আইফোনে ব্যাটারিজনিত কারণে পারফরমেন্সে সমস্যা হবে বলে বোঝা যায়। এরকম হলে আইফোনের ব্যাটারি পরিবর্তন করা জরুরি।
পার্টস পরিবর্তন বা রিফারবিশড আইফোন কিনা
রিফারবিশড আইফোন বলতে বোঝায় যে আইফোনে সমস্যা থাকায় সেটি ঠিক করে পুনরায় বেচা হচ্ছে। অনেক সময় অ্যাপল নিজেরাই এই ধরনের আইফোন দিয়ে থাকে। আপনি এটি চেক করে দেখতে পারেন Settings > General > About অংশে গিয়ে “Model Number” খুঁজে বের করে। এখানে মডেল নাম্বার যদি F দিয়ে শুরু হয় সেটি অ্যাপলের দ্বারা রিফারবিশড আইফোন। এটি খারাপ কিছু নয়, তবে জেনে রাখা ভালো। তবে থার্ড পার্টি কেউ পুরনো আইফোন ঠিক করে বিক্রি করলে বোঝার সহজ কোনো উপায় নেই।
তবে আইফোনের কোনো পার্টস বা যন্ত্রাংশ পরিবর্তন করা হয়েছে কিনা সেটি সহজেই বোঝা সম্ভব। Settings > General > About অংশে গিয়ে মডেল নম্বরের নিচে আপনাকে খোঁজ করতে হবে এজন্য। সেখানে কোনো কিছু ঠিক করা হয়েছে বা রিপ্লেস করে হয়েছে এমন হলে একটি তালিকা থাকবে ‘Parts and Service History’ অংশের নিচে। যদি রিপ্লেস করা হয়ে থাকে এবং অ্যাপল নিজেরাই রিপ্লেস করে দেয় তবে সেটিকে জেনুইন পার্ট হিসেবে দেখাবে, আর অন্য কোনো থার্ড পার্টি করলে সেখানে Unknown দেখতে পাবেন। তবে সকল পার্টসের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি কাজ নাও করতে পারে।
এই তালিকা যদি না দেখতে পান তবে আইফোনের কোনো পার্টস রিপ্লেস করা হয় নি কিংবা আইফোনটি আইওএস ১৫.২ ভার্সনের নিচের কোনো ভার্সনে চলছে। কাজেই ব্যবহৃত আইফোন কিনবার আগে গুরুত্বপূর্ণ এই ব্যাপারটি দেখে নিন। ঠিক করে বিক্রি করা আইফোনের দাম অবশ্যই কম হবে।
ডিসপ্লে
ব্যবহৃত আইফোনের ডিসপ্লে পরীক্ষা করে নেয়া অতি জরুরি। যদি এলসিডি স্ক্রিনযুক্ত (আইফোন এক্সআর, এসই, ১১) কোন আইফোন হয় তবে এলসিডি প্যানেলে কোন ছোট ব্ল্যাকস্পট আছে কিনা চেক করুন। আর ওলেড প্যানেল যুক্ত আইফোনের ক্ষেত্রে দেখতে হবে ডিসপ্লেতে কোন বার্ন ইন আছে কিনা। স্বাভাবিকভাবে ডিসপ্লেতে থাকা বার্ন ইন বোঝার উপায় নেই। এজন্য আপনাকে এক রঙয়ের কোন কিছু এনে এরপর অন্ধকারে পরীক্ষা করে দেখতে হবে। বার্ন ইন বলতে ডিসপ্লেতে আগের কন্টেন্টের একটা ছায়া থেকে যাওয়া বোঝায়। কাজেই এই ব্যাপারগুলো ভালোভাবে পরীক্ষা করে তবেই ডিভাইস কিনুন।
ব্যবহৃত আইফোন কিনতে হলে নিজের নিরাপত্তার ব্যাপারেও সচেতন থাকা উচিত। অনেক মানুষ আছে এমন জায়গায় বিক্রেতার সঙ্গে দেখা করা এবং ফোনটির মালিকানা সংক্রান্ত বিষয়ে নিশ্চিত হতে রশিদ চেয়ে নেয়াও জরুরি। এভাবে সবকিছু দেখে তবেই ব্যবহৃত আইফোন কেনা উচিত।
0 responses on "ব্যবহৃত আইফোন কেনার আগে যে বিষয়গুলো যাচাই করতে হবে"