ফোন আপডেট করার নিয়ম: যদি আপনারা নিজের মোবাইল সফটওয়্যার আপডেট দিতে চাইছে বা মোবাইলে অ্যান্ড্রয়েড ভার্সন কিভাবে আপডেট করবেন, এই বিষয়ে জেনেনিতে চাইছেন তাহলে আমাদের আজকের আর্টিকেল আপনাদের কাজে আসবে।
অনেক সময় যদি আপনার মোবাইল নিয়মিত হ্যাং (hang) হয়ে যায় বা স্লো হয়ে গিয়েছে,
তাহলে হতে পারে আপনার মোবাইলে কোনো ধরণের বাগ (bug) চলে এসেছে যেটাকে আপডেট করে ঠিক করা যেতে পারে।
এছাড়া, মোবাইলের মূল সফটওয়্যার এর মধ্যে আপডেট এর মাধ্যমে কিছু পরিবর্তন করে মোবাইলের ভিজ্যুয়াল লুক (visual look) এর মধ্যে পরিবর্তন করা যায়।
এভাবে, মোবাইলের ওভারঅল লুক চেঞ্জ করা হয়।
Android Mobile, iOS Device বা যেকোনো ধরণের মোবাইল আপনি ব্যবহার করছেননা কেন,
যখন user দ্বারা মোবাইল ব্যবহার করা হয়,
তখন এক এক করে মোবাইলের বা সফটওয়্যার এর মধ্যে থাকা সীমাবদ্ধতা, ত্রুটি এবং ভুল গুলো কোম্পানির চোখে পড়তে থাকে।
আর এই ত্রুটি, সীমাবদ্ধতাবা বা ভুল গুলোকে সময়ে সময়ে আপডেট (update) এর মাধ্যমেই শুধরানো হয়।
এছাড়াও, আরো প্রচুর গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গুলো রয়েছে যেগুলোর জন্যে মোবাইলের সফটওয়্যার আপডেট করা হয়।
সফটওয়্যার আপডেট মোবাইল ফোনের ৭টি অপব্যবহার এবং ক্ষতিকর দিক দিলে কি হয়, এই বিষয়েও আমরা নিচে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করবো।
মোবাইল সফটওয়্যার আপডেট দিলে কি হয় ? কেন দেওয়া হয় ?
সফটওয়্যার আপডেট কেন করতে লাগে ? এই প্রশ্নের উত্তর সরাসরি ভাবে দেওয়ার চেষ্টা আমি করবো।
যখন আমরা আমাদের মোবাইল ৬ মাস থেকে ১ বছর ব্যবহার করে নেই,
তখন ধীরে ধীরে মোবাইলের মধ্যে প্রচুর ত্রুটি এবং সমস্যা গুলো দেখা দিতে শুরু হয়।
যেমন, কোনো apps ওপেন করতে গেলে খুলতে অনেক দেরি হওয়া (slow apps), বার বার মোবাইল অফ হওয়া, হ্যাং হওয়া ইত্যাদি।
আর দ্রুত ভাবে উন্নত হওয়া এই আধুনিক প্রযুক্তির দুনিয়াতে,
আমাদের মোবাইল গুলোতে উন্নত security, features এবং functions গুলো যোগ করার প্রয়োজন হয়েই থাকে।
এছাড়া, সময়ে সময়ে মোবাইলের পারফরমেন্স (mobile performance) ভালো রাখার জন্যেও কোম্পানি গুলোর ওপরে দায়িত্ব থেকে যায়।
তাই, এই সব সমস্যা গুলোর সমাধান করার জন্যে, মোবাইল কোম্পানির দ্বারা সময়ে সময়ে আপডেট গুলো নিয়ে আসা হয়।
সোজা এবং সরল ভাবে বলতে গেলে,
মোবাইল লঞ্চ হওয়ার পর তার প্রযুক্তিগত মান নতুন রেখে সেটাকে সবসময় বজায় রাখার জন্যে এই আপডেট গুলোর প্রয়োজন।
মনে রাখবেন, যখনি আপনার মোবাইলে কোনো নতুন সফটওয়্যার আপডেট বের হয়,
তখন সেটা আপনাকে মোবাইল নোটিফিকেশন এর মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয়।
সফটওয়্যার আপডেট এর প্রকার – (Types of updates)
মূলত দুই ধরণের software update থাকতে পারে যেগুলো আপনারা নিয়মিত পেয়ে থাকেন।
Version update
Security and Incremental Updates
চলুন, এই দুই ধরণের update এর বিষয়ে কিছুটা জেনেনেই।
Version update
এই ধরণের আপডেট গুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বছরে ১ বার করে রিলিজ করা হয়।
আপডেট গুলোর মাধ্যমে মূলত operating system এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন নিয়ে আনা হয়।
যেমন, UI changes, new apps, settings, features, security ইত্যাদি।
System updates গুলোর size তুলনামূলক ভাবে অনেক বেশি থাকতে পারে।
যেমন, 700MB থেকে 1.5GB বা এর থেকেও বেশি।
এভাবেই, সফটওয়্যার ভার্সন আপডেট এর মাধ্যমে আমরা Android 1.0 থেকে Android 12 এবং iOS 1 থেকে iOS 15.6 পর্যন্ত চলে এসেছি।
Security and Incremental Updates
Security update গুলো তুলনামূলক ভাবে সাইজে ছোট থাকে এবং এই ধরণের আপডেট নিয়মিত আসতেই থাকে।
এই ধরণের আপডেট গুলোকে security patches বলেও বলা হয়।
নাম থেকেই বুঝা যাচ্ছে যে, এই আপডেট গুলো আপনার বর্তমান অপারেটিং সিস্টেম এর মধ্যে থাকা বাগ (bugs) গুলোকে ঠিক করার কাজ করে।
এভাবে, আপনার মোবাইলের security lapses গুলোকে fix করে বিভিন্ন malicious attacks থেকে আপনার মোবাইল টিকে সিকিউর (secure) করা হয়।
আপনার মোবাইলে এই ধরণের security updates গুলো কত সময় পর পর চলে আসবে,
সেটা সম্পূর্ণ ভাবে নির্ভর করছে আপনার স্মার্টফোন মেকার (smartphone maker) এর ওপরে।
যদি আপনার কপাল ভালো থাকে, তাহলে প্রত্যেক ২-৩ মাসের মধ্যে একটি করে আপডেট পাবেন।
এমন অনেক ছোট ছোট incremental update রয়েছে,
যেগুলোতে minor new features এবং security updates একসাথে বান্ডিল হিসেবে থেকে থাকে।
মোবাইল আপডেট করার আগে কোন বিষয়ে ধ্যান রাখবেন ?
নিজের এন্ড্রয়েড ফোন আপডেট করার নিয়ম গুলো কিন্তু আপনাকে সঠিক ভাবে জেনেনিতে হবে।
মানে, ফোন আপডেট করাটা এতটা জটিল না হলেও মোবাইল আপডেট করার আগে আপনাকে কিছু জিনিসের ধ্যান অবশই রাখতে হবে।
Battery Power
ফোন আপডেট হতে অল্প সময় অবশই লাগবে।
তাই, আপডেট করার সময় যাতে আপনার মোবাইলে যথেষ্ট ব্যাটারি / চার্জ থাকে সেই বিষয়ে খেয়াল রাখবেন।
তাই, আপনার মোবাইলে যাতে কমেও ৭০% চার্জ থাকে সেটা মনে রাখবেন।
এছাড়া, যদি আপনার ফোনের চার্জ অনেক তাড়াতাড়ি শেষ হয়, তাহলে চার্জার প্লাগিন করেই আপডেট দিতে পারেন।
ফোন আপডেট হওয়ার সময় যদি সুইচ অফ হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে লাগতে পারে।
তাই, কমেও ৭০% থেকে ৮০% চার্জ থাকলেই মোবাইল আপডেট দিবেন।
Mobile data বা Wi-Fi
মোবাইল আপডেট করার জন্য high speed data ইন্টারনেট এর প্রয়োজন হয়ে থাকে।
আপডেট করতে প্রচুর ডাটার প্রয়োজন হতে পারে।
তাই, যদি আপনার কাছে একটি ভালো এবং দ্রুত Wi-Fi connection আছে, তাহলে অবশই সেটার মাধ্যমে আপডেট ডাউনলোড করুন।
ইন্টারনেট অধিক ফাস্ট থাকলে, অনেক তাড়াতাড়ি আপডেট ডাউনলোড হবে এবং সময় বাঁচবে।
এছাড়া, যদি আপনার mobile data দ্রুত ও ফাস্ট কাজ করে তাহলে মোবাইলের ইন্টারনেট অবশই ব্যবহার করতে পারবেন।
Wait for few time
মনে রাখবেন, আপডেট ডাউনলোড হওয়ার পর যখন সেটাকে ইনস্টল করবেন, তখন আপনি ফোন ব্যবহার করতে পারবেননা।
আপনাকে, ‘Installing system update’ এই ধরণের text দেখানো হবে।
তাই, মনে রাখবেন, একবার download হয়ে যাওয়া update ইনস্টল করতে দিলে যতক্ষণ ইনস্টল প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ না হচ্ছে,
আপনাকে ধর্য্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে।
Do Not Switch Off Your Phone
এই বিষয়টা মনে রাখা অবশই জরুরি যে, যখনি ফোন আপডেট প্রক্রিয়া শুরু হবে, আপনি মোবাইল সুইচ অফ করতে পারবেননা।
যদিওবা অনেক বেশি সময় লাগছে আপডেট ইনস্টল হতে,
তাও মোবাইল switch off না করে আপনাকে ধর্য্য ধরে অপেক্ষা করতেই হবে।
তাই, যখন আপনার কাছে ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘন্টা সময় আছে, কেবল তখনি ফোনে আপডেট ইনস্টল প্রক্রিয়া শুরু করুন।
এন্ড্রয়েড মোবাইল ফোন আপডেট করার নিয়ম – (Update android phone)
চলুন, এবার আমরা সরাসরি মোবাইল সফটওয়্যার আপডেট কিভাবে করতে হয়, সেই বিষয়ে জেনেনেই।
এন্ড্রয়েড ফোন আপডেট করার নিয়ম অনেক সোজা।
তবে, আলাদা আলাদা কোম্পানির smartphone গুলোতে steps কিছুটা আলাদা আলাদা হতেই পারে।
সবচে আগে আপনাকে নিজের মোবাইলের settings পেজে যেতে হবে।
Settings এর মধ্যে about phone এর option দেখতে পাবেন যেখানে click করুন।
About phone এর মধ্যে, আপনারা Software Update, System Update বা খালি Update যেকোনো একটি লিখা দেখতে পাবেন যেখানে click করতে হবে।
Update এর মধ্যে click করার পর, যদি কোনো নতুন system update এসে থাকে, তাহলে আপনি সেটা দেখতে পাবেন।
যদি কোনো available update file থেকে থাকে, তাহলে পাশে আপনারা “download update” লিখা দেখবেন যেখানে click করতে হবে।
Update download হওয়ার পর আপনাকে “restart”, “install update” বা “reboot” এই ধরণের option দেখানো হবে।
Restart, install update বা reboot, যেকোনো একটি option সিলেক্ট করার পর, আপনার মোবাইলে নিজে নিজে automatic update ইনস্টল হওয়া শুরু হয়ে যাবে।
যা আমি আগেই বলেছি, আপডেট ইনস্টল হওয়ার সময় টুকু আপনি নিজের ফোন ব্যবহার করতে পারবেননা।
একবার নতুন সিস্টেম আপডেট ইনস্টল হয়ে যাওয়ার পর আপনার মোবাইল নিজে নিজে রিস্টার্ট হয়ে যাবে।
এখন, যদি আপনারা ভাবছেন যে মোবাইলের অ্যান্ড্রয়েড ভার্সন কিভাবে আপডেট করবেন, তাহলে এই একি প্রক্রিয়াতে অ্যান্ড্রয়েড ভার্সন আপডেট করা যাবে।
যদি কোম্পানির তরফ থেকে অফিসিয়ালি আপনার মোবাইলের অ্যান্ড্রয়েড ভার্সন আপডেট নিয়ে আসা হয়,
তাহলে সেই update এর notification আপনারা পেয়ে যাবেন।
এছাড়া, সরাসরি, “settings >> about phone >> update / system update” এর মধ্যে গিয়েও আপডেট আছে কি নেই সেটা দেখতে পারবেন।
মোবাইলে আপডেট ইনস্টল করার পর কি হয় ?
Update এর একেবারে শেষ প্রক্রিয়াতে, আপনার মোবাইল সাধারণ ভাবে restart / reboot হয়ে যাবে।
মোবাইল reboot হওয়ার পর “Finishing software update” এবং “Update successful” এর notification অবশই দেখতে পাবেন।
এবার মোবাইলের মধ্যে আপনাকে আপনার আগে সেট করা PIN code / passcode দিতে বলা হবে।
সম্ভবত, fingerprint scanner বা face unlock এর মতো অন্যান্য authentication প্রক্রিয়া গুলো কাজ করবেনা।
চলুন, এবার সরাসরি দেখেনেই মোবাইলে সফটওয়্যার আপডেট হওয়ার পর কি হয়।
আপনার OLD data গুলো
Mobile update এর ফলে আপনার ফোন থেকে আগের পুরোনো data বা files গুলো কিন্তু ডিলিট হয়ে যাবেনা।
আপনার প্রত্যেক পার্সোনাল ডক্যুমেন্ট গুলো যেমন,
Downloaded PDFs, photos, installed apps, app data (WhatsApp chats, offline music), settings ইত্যাদি,
এই ধরণের ডাটা ও ফাইল গুলোতে কোনো ধরণের পরিবর্তন করা হবেনা।
তবে, আপডেট ইনস্টল করার আগে নিজের phone এর একটি backup নিয়ে নেওয়াটা অবশই একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং জরুরি পদক্ষেপ।
New Features
হ্যান্ডসেট না বদলেই পুরোনো মোবাইলের মডেল গুলোতে নতুন features নিয়ে আসে এই ছোট বড় আপডেট গুলো।
তাই, একি হার্ডওয়্যার ক্ষমতার সাথেই আপনারা নতুন ফীচার গুলো ব্যবহার করতে পারছেন।
এছাড়া, প্রত্যেক software update এর মাধ্যমে user experience উন্নত করার ক্ষেত্রে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়।
তাই, সফটওয়্যার আপডেট এর ওপরে নির্ভর করে আপনারা নতুন features গুলোর সুবিধা বা লাভ নিতে পারবেন।
Performance Improvements
বেশিরভাগ মোবাইল সিস্টেম আপডেট গুলোর মাধ্যমে মোবাইলের কর্মক্ষমতা উন্নত করার ক্ষেত্রে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়।
এছাড়া, একটি software update এর মাধ্যমে মোবাইলের Wi-Fi, Bluetooth, permissions, camera ইত্যাদির সাথে জড়িত বিভিন্ন ত্রুটি (error) গুলোকে ঠিক করা হয়।
এই ধরণের bug বা error fix গুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিজে নিজে ঠিক হয়ে যায়। কার পরিবর্তন গুলো সাধারণত লুকিয়েই থাকে।
এছাড়া, আপনার মোবাইল অনেক দ্রুত ভাবে কাজ করতে শুরু করবে এবং সাথে battery improvements অবশই অনুভব করতে পারেন।
এর বাইরেও, OS developers রা আপনার ফোনের security ও update করে থাকে।
আমাদের শেষ কথা,,
যেকোনো মোবাইলের আপডেট চলে আসলে সেটাকে তাড়াতাড়ি ডাউনলোড করে ইনস্টল করাটা অবশই জরুরি।
কেননা, মোবাইলের সফটওয়্যার আপডেট দিলে কি হয় কি কি লাভ আমরা পেয়ে থাকি সবটাই তো জানলেন।
তাই, এবার আর software update করতে অবহেলা করবেননা।
আমি আশা করছি, আজকের আর্টিকেলটি আপনাদের কাজে অবশই আসবে।
এছাড়া, আর্টিকেলের সাথে জড়িত কোনো ধরণের প্রশ্ন বা পরামর্শ থাকলে, সেটা নিচে কমেন্ট করে অবশই জানিয়ে দিবেন।
0 responses on "এন্ড্রয়েড মোবাইল সফটওয়্যার আপডেট কিভাবে করবেন ?"