প্রযুক্তি উন্নত হবার সাথে সাথে মানুষের পৃথিবীর বাইরের জগৎ সম্পর্কে জানার আগ্রহ বাড়তে থাকে। স্পেস সম্পর্কে জানার জন্য মানুষ এখন অহরহই স্পেসশিপে করে মহাশূন্যের নানা রকমের তথ্য সংগ্রহ করে। স্পেস বা মহাশূন্যে ভ্রমণ করার জন্য একটি বিশেষ ধরনের স্যুট পরিধান করতে হয়। এসকল স্যুটকে স্পেস স্যুট বলা হয়ে থাকে। চলুন স্পেসস্যুট সম্পর্কে চমকপ্রদ কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক।
স্পেস স্যুট হলো এমন এক ধরনের পোশাক যা একজন মানুষকে বাইরের মহাকাশ, ভ্যাকুয়াম এবং তাপমাত্রার চরম পরিবেশে টিকে থাকতে ব্যবহার করা হয়। স্পেস স্যুট প্রথম বার ব্যবহারের পর থেকে এর দুইটি প্রধান প্রয়োজনীয়তা এখনো পর্যন্ত বজায় রয়েছে। স্পেস স্যুটের প্রধান কাজ হচ্ছে মহাকাশচারীকে সুরক্ষা প্রদান করা। স্পেস স্যুট এমনভাবে তৈরি করা হয় যাতে করে মহাকাশচারীরা খুব সহজেই শ্বাস-প্রশ্বাস চালাতে ও চলাফেরা করতে পারেন।
প্রযুক্তি উন্নত হওয়ার সাথে সাথে স্পেস স্যুটের ডিজাইনেও অনেকটা পরিবর্তন এসেছে। এছাড়া নতুন ধরনের ম্যাটেরিয়াল এবং পদ্ধতি অবলম্বন করে আরামদায়ক এবং দক্ষ স্পেস স্যুট তৈরি করা হচ্ছে। একটি স্পেস স্যুটকে অবশ্যই চরম তাপমাত্রায় মহাকাশচারীকে রক্ষা করতে হয়। স্পেসে থাকার সময় মহাকাশচারী -২৫০ ডিগ্রী ফারেনহাইট এর মতো ঠান্ডার পাশাপাশি ২৫০ ডিগ্রী ফারেনহাইট পর্যন্ত গরম অনুভব করতে পারেন। সুতরাং স্পেস স্যুট এমনভাবে তৈরি করা হয় যাতে মহাকাশচারী অনেক গরম অথবা অনেক ঠান্ডা অনুভব না করেন। মহাকাশচারীরা যখন মহাশূন্যে কাজ করেন তখন স্পেস স্যুটের মাধ্যমে তারা অক্সিজেন পেয়ে থাকেন।
১৯৫৮ থেকে ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত চলমান নাসার মারকিউরি প্রোগ্রামে সর্বপ্রথম মহাকাশচারীদের জন্য স্পেস স্যুট তৈরি করা হয়। এ সময়ই প্রথম মহাকাশচারীরা মহাকাশে ভ্রমন করেছিলেন। যেহেতু সেসময় তারা কখনোই তাদের বাহন ত্যাগ করেননি তাই তারা যাত্রার শুরুতেই যেই স্পেসস্যুট পরে ছিলেন সেটি পরেই তাদের সকল কাজ সম্পন্ন করেন। ১৯৬১ সালে সর্বপ্রথম সোভিয়েত মহাকাশচারী ইউরি গ্যাগারিন স্পেসে স্পেস স্যুট পরিধান করেন।
এর পরবর্তী স্পেস স্যুট ১৯৬০-১৯৭২ পর্যন্ত থাকা এপোলো প্রোগ্রামের জন্য তৈরি করা হয়। এই প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে ১৯৬৯ সালে মানুষ প্রথম বারের মতো চাঁদের মাটিতে পা রাখে। এসকল স্পেস স্যুটের সাথে বিশেষ ধরনের বুট ব্যবহার করা হয়েছিলো যার মাধ্যমে চাঁদের পাথুরে পৃষ্ঠতলে হাঁটা সম্ভব হয়েছে। এসকল স্পেস স্যুট মহাকাশচারীকে লাইফ সাপোর্ট সহ অতিরিক্ত সুরক্ষা প্রদান করেছিলো যার মাধ্যমে স্পেসে চলাফেরা করার সময় চরম তাপমাত্রা অথবা স্পেসের ময়লা থেকে বাড়তি সুবিধা পাওয়া গিয়েছিলো।
বর্তমান সময়ে মহাকাশচারীরা লঞ্চের সময়, স্পেসে কাজ করা এবং ফেরার জন্য আলাদা আলাদা স্পেস স্যুট ব্যবহার করে থাকেন। তবে স্পেস স্টেশনের মধ্যে তারা পৃথিবীতে যেমন কাপড় পরিধান করে তেমন কাপড় পরেই কাজ সম্পন্ন করতে পারেন। স্পেস স্যুট সাধারণত আলাদা মহাকাশচারীর জন্য আলাদা আলাদাভাবে অবস্থা অনুযায়ী তৈরি করা হয়ে থাকে।
মহাকাশচারীরা স্পেসে চলাফেরা করার কিছু সময় আগে স্পেস স্যুট পরিধান করে রাখেন। এই সময়ের মধ্যে তারা বিশুদ্ধ অক্সিজেন নিতে থাকেন। স্পেসে কাজ করার জন্য যেসকল স্পেস স্যুট ব্যবহার করা হয় সেগুলো সাধারণত সাদা রঙ এর হয়ে থাকে। এর ফলে স্পেসে থাকা তাপ রিফ্লেক্ট হতে পারে।
পুরুষ বা মহিলা স্পেস স্যুটের মধ্যে কোনো প্রকার পার্থক্য নেই। লাইফ সাপোর্ট ব্যাকপ্যাক সহ এসকল স্যুটের ওজন প্রায় ৩১০ পাউন্ড পর্যন্ত হতে পারে। মহাকাশচারীরা তাদের স্পেস স্যুটের সাথে পলি কার্বনের তৈরি পোশাক পরিধান করে থাকেন।
মহাকাশ সম্পর্কে জানার জন্য মহাকাশচারীদের মহাকাশের তথ্য সংগ্রহ করতে হয়। আর এসকল মহাকাশচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অন্যতম প্রধান উপাদান হলো স্পেস স্যুট। একটি স্পেস স্যুট কেবলই একটি পোশাক নয়! এটিকে একটি ছোট আকৃতির মহাকাশযান বলা যেতে পারে। স্পেস স্যুট সম্পর্কিত আমাদের এই আর্টিকেলটি আপনাদের কেমন লেগেছে তা আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারবেন। টেকনলোজি সম্পর্কিত নতুন তথ্য পেতে চোখ রাখুন আমাদের ওয়েবসাইটে।
0 responses on "স্পেস স্যুট সম্পর্কে চমকপ্রদ কিছু তথ্য যা আপনার জানা ছিল না"