বর্তমান সময়ে ইন্টারনেট এবং সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তিতে বিশ্বজুড়ে প্রচুর ছাত্রছাত্রীরা এবং প্রায় প্রত্যেক বয়েসের লোকেরাই ভুগছেন। Social media-র ব্যবহার আমাদের জীবনে নানান ধরণের পরিবর্তন গুলি নিয়ে এসেছে। বর্তমান সময়ে আমরা সবাই বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপ গুলো নিয়মিত ব্যবহার অবশই করছি। এর সাথে সাথে সোশ্যাল মিডিয়ার অধিক ব্যবহারের ফলে হওয়া ক্ষতি এবং অসুবিধা গুলো নিয়েও লোকেদের মধ্যে সচেতনা বাড়ছে।
সামাজিক মিডিয়া আসক্তি বা সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তি এমন একটি সমস্যা যেখানে একজন ব্যক্তির কেবল সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করতে ইচ্ছে করে। কাজ কর্ম বা পড়াশোনা ছেড়ে, কারণ বা বেকারণে কেবল সোশ্যাল মিডিয়া সাইট বা অ্যাপ গুলো ব্যবহার করতে মন চাইবে।
এই পরিস্থিতিটিকে ইংরেজিতে social media addiction বলে বলা হয়।
এই আসক্তি থেকে দূরে থাকা বা সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করাটা আমাদের জন্যে অনেক জরুরি যাতে আমাদের জীবন সুস্থ থাকে এবং আমরা সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষতি গুলোকে এড়াতে পারি। আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা সামাজিক মিডিয়া আসক্তি কি এর বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে জানবো এবং এর থেকে কিভাবে বাঁচা যাবে সেই বিষয়ে আলোচনা করবো।
সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তি কি ?
সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তিকে আমরা সামাজিক মিডিয়া নির্ভরতা বা সোশ্যাল মিডিয়ার অত্যধিক ব্যবহার হিসেবেও বুঝতে পারি। এটা এমন একটি পরিস্থিতি যেখানে, একজন ব্যক্তি সামাজিক মিডিয়া প্লাটফর্ম গুলোর অত্যধিক ব্যবহার করতে শুরু করেন এবং যার ফলে সেই ব্যক্তির দৈনন্দিন জীবন এবং সম্পর্কের ওপর খারাপ প্রভাব বা খারাপ ছাপ পড়তে শুরু করে। এটা একটি আচরণগত আসক্তি যার কারণে আপনি বিভিন্ন নেতিবাচক পরিনীতিগুলোর সম্মুখীন হতে পারেন।
যেমন, এংজাইটি, ডিপ্রেশন, ঘুমের ব্যাঘাত হওয়া এবং ব্যক্তির উত্পাদনশীলতা হ্রাস পাওয়া ইত্যাদি।
যারা এই সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তির সমস্যার সাথে জড়িত, তাদের মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করার একটি অনেক প্রবল ইচ্ছা থেকে থাকে। এছাড়া, দিনের বেশিরভাগ সময় এরা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করেই নষ্ট করেন। এটা পড়াশোনা বা কাজকর্মে মন লাগেনা এবং খালি নিজের স্মার্টফোনে থাকা সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপটি খুলে ওপর থেকে নিচে স্ক্রল করতে মন চায়।
কে কি নতুন ভিডিও পোস্ট করলো, কি কি নতুন ভিডিও রিলিস / শর্টস বা স্ট্যাটাস লাগানো হয়েছে, এগুলো দেখার প্রবল ইচ্ছা আমাদের দিনের বেশিরভাগ সময় কেবল নষ্ট আর নষ্ট করে থাকে।
অনেকের জন্যে এই সামাজিক মিডিয়া আসক্তি একটি অনেক বড় ও সাংঘাতিক সমস্যা, কারণ এর জন্যে তারা তাদের জীবনের জরুরি ও প্রয়োজনীয় দিক গুলোতে ফোকাস করতে পারছেননা। তাহলে এই আসক্তির থেকে দূরে থাকার উপায় কি ? নিচে আমি উপায় বলে দিচ্ছি।
সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তি থেকে মুক্তির উপায় কি ?
আমি আপনাকে আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকেই সমাধান বলতে চলেছি। আমিও এক সময় সোশ্যাল মিডিয়ার আসক্তিতে ভুগেছি এবং কিছু সাধারণ তবে কার্যকর ধাপ গুলো অনুসরণ করে কিছু দিনের মধ্যেই এই আসক্তির থেকে মুক্তি পেতে পেরেছি।
দেখুন, সোশ্যাল মিডিয়ার অত্যাধিক ব্যবহার থেকে মুক্তি পাওয়ার আমার হিসেবে একটাই উপায় রয়েছে। সেটা হলো, সোশ্যাল মিডিয়া সাইট এবং অ্যাপ গুলোর থেকে দূরে থাকা। শুরুতে আমারো অসুবিধা হয়েছে। তবে, কিছুদিন নিজের মনের জোরের সাথে এগিয়ে আমি এই আসক্তির থেকে সম্পূর্ণ ভাবে মুক্তি পেতে পেরেছি। তাই, আপনিও অবশই পারবেন।
সোশ্যাল মিডিয়া থেকে দূরে থাকার উপায় গুলো কি ?
আপনি যদি নিচে বলে দেওয়া, সোশ্যাল মিডিয়া থেকে দূরে থাকার উপায় গুলো ভালো করে অনুসরণ করতে পারেন, তাহলেই দেখবেন কিছু দিনের মধ্যে আপনার সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করার প্রবল ইচ্ছে আর থাকবেনা।
১. লক্ষ্য স্থির কর:
সবচে আগে আপনাকে নিজেকে এটা বুঝাতে হবে যে, কেন আপনি সোশ্যাল মিডিয়া থেকে দূরে থাকতে চাইছেন। বা, সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার কমানোর ফলে আপনার কি কি লাভ হবে, সেটা নিজেকে বুঝান। উদাহরণ স্বরূপ, আপনি হয়তো নিজের উত্পাদনশীলতা বৃদ্ধি বা আপনার মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করার উদ্দেশ্যে এই আসক্তি থেকে দূরে থাকতে চাইবেন।
২. স্ক্রিন টাইম কমিয়ে দিন:
কতক্ষন নিজের স্মার্টফোন ব্যবহার করবেন এটা নিয়ে আপনাকে একটি কঠোর নিয়ম তৈরি করতে হবে। বিশেষ করে, যেই সময় গুলিতে অধিক পরিমানে সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার করে থাকেন, সেই সময় নিজের মোবাইল থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করবেন।
৩. নোটিফিকেশন ডিসএবল করুন:
স্মার্টফোনে, সোশ্যাল মিডিয়া গুলোর অধিক ব্যবহার হওয়ার একটি মূল কারণ হলো, “নোটিফিকেশন”। কারণ, আপনার মোবাইলে থাকা বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপস গুলো কিছুক্ষন পর পর নতুন নতুন নোটিফিকেশন গুলো আপনাকে দেখিয়ে আপনার ধ্যান আকর্ষণ করার চেষ্টা করে থাকে। আর সেই নোটিফিকেশন পেয়ে আমরা আবার কাজ কর্ম ছেড়ে সেই সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপ গুলো ওপেন করে ব্যবহার করতে শুরু করি।
তাই, যত জলদি সম্ভব আপনাকে নিজের মোবাইলে নোটিফিকেশন গুলো ডিসএবল করতে হবে। যেকোনো স্মার্টফোনেই আপনি কোনো বিশেষ অ্যাপের নোটিফিকেশন বা সম্পূর্ণ নোটিফিকেশন বন্ধ করার অপসন পেয়ে যাবেন।
মনে রাখবেন, এই নোটিফিকেশন এর মাধ্যমেই কিন্তু বার বার আপনাকে বিভ্রান্ত করা হয়।
৪. বিকল্প খুঁজুন:
সম্পূর্ণ দিনে কেবল বিছানায় শুয়ে বসে সোশ্যাল মিডিয়া সাইট গুলো স্ক্রল করতে থাকলে মনে কোনো ধরণের খুশি অনুভব করতে পারাটা অনেক কঠিন। এতে আপনার সময় নষ্ট হওয়া ছাড়া আর কিছুই হবেনা।
তাই, আপনি যেই কাজ গুলো করতে পছন্দ করেন, আনন্দ উপভোগ করেন বা যেই কাজ গুলো করলে কিছু নতুন শিখবেন ও জানবেন সেগুলি করুন। যেমন, বই পড়া, ব্যায়াম করা বা বন্ধু, পরিবারের সাথে সময় কাটানো কোনো নতুন কোর্স করুন এবং নিজের দক্ষতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে নজর দিন।
এমন গুরুত্বপূর্ণ কার্যকলাপ গুলো যেগুলো করতে পাপিনী ভালোবাসেন সেগুলো করার মাধ্যমে এই অতিরিক্ত সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের সমস্যা থেকে তাড়াতাড়ি মুক্তি পেতে পারবেন।
৫. অ্যাপ আনইনস্টল করুন:
যদি দেখছেন, কোনো ভাবেই আপনি আপনার এই অতিরিক্ত সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করার অভ্যাস পরিবর্তন করতে পারছেননা, এবং এই খারাপ অভ্যাস আপনাকে আপনার জীবনের অন্যান্য দিক গুলোতে ফোকাস করতে দিচ্ছেন, তাহলে মোবাইলে থাকা সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপস গুলো সরাসরি আনইনস্টল করে ফেলুন। এতে, যখন আবার আপনার সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করতে মন করবে তখন অ্যাপ গুলো নতুন করে ইনস্টল করে লগইন করার ঝামেলার কারণে আগের মতো কিছুক্ষন পর পর সেগুলো ব্যবহার করার প্রবণতা থাকবেনা।
উপসংহার
তাহলে বন্ধুরা, ওপরে বলা এই ৫টি উপায় অনুসরণ করে আমি নিজে সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তির থেকে মুক্তি পেয়েছি। এখন সোশ্যাল মিডিয়া গুলো ব্যবহার করলেও সারাদিন বা একটানা এগুলো ব্যবহার করার প্রবণতা বা নেশা আমার মধ্যে নেই। তাই, সোশ্যাল মিডিয়া থেকে দূরে থাকার উপায় গুলো অনুসরণ করে আপনিও অতিরিক্ত সোশ্যাল মিডিয়া মিডিয়া ব্যবহারের সমস্যার থেকে মুক্তি অবশই পেতে পারবেন।
0 responses on "সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তি কি – সোশ্যাল মিডিয়া থেকে দূরে থাকার উপায়"