বিদেশ ভ্রমণে বা অন্য কোন জরুরি কাজে বিদেশে গেলে যে সমস্যা সবার আগে দেখা দেয় সেটি হচ্ছে মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ডাটার ব্যবহার। দেশে থাকা মোবাইল অপারেটর সিম স্বাভাবিকভাবেই বিদেশে কাজ করে না। মোবাইল অপারেটরগুলো দেশের মধ্যেই তাদের সেবা দিয়ে থাকে। তাই বিদেশে গেলে যোগাযোগের জন্য আপনাকে বিদেশের সিম, ইসিম বা মোবাইল অপারেটরের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে হয়। তবে এর বড় একটি সমস্যা হচ্ছে যে নতুন সিম কেনার পর নম্বর সকলকে আবারও প্রদান করতে হয় এবং জরুরি প্রয়োজনে আপনার সাথে কেউ যোগাযোগে ব্যর্থও হতে পারে। এই সকল সমস্যার সমাধান করতেই আছে ইন্টারন্যাশনাল রোমিং ব্যবস্থা। এই সেবার মাধ্যমে আপনি সহজেই নম্বর বদল না করেই দেশীয় অপারেটরের সিম বাইরের দেশগুলোর নেটওয়ার্কে ব্যবহার করতে পারেন।
আজকের পোস্টে বিস্তারিত আলোচনা থাকবে ইন্টারন্যাশনাল রোমিং ব্যবস্থা নিয়ে। জেনে নিতে পারবেন কীভাবে এটি কাজ করে এবং কীভাবে চালু করবেন আপনার মোবাইল অপারেটরের জন্য।
ইন্টারন্যাশনাল রোমিং কী?
সকল মোবাইল অপারেটরের নিজস্ব একটি কভারেজ এলাকা থাকে। সেই এলাকার মধ্যেই তারা সেবা দিয়ে থাকে মোবাইল টাওয়ার স্থাপনের মাধ্যমে। সাধারণত মোবাইল অপারেটরগুলো কোন একটি দেশের মধ্যে তাদের সেবা দেয়ার জন্য লাইসেন্স পেয়ে থাকে। ফলে আপনি তাদের কভারেজ এলাকার বাইরে চলে গেলে মোবাইলে আর নেটওয়ার্ক পাবেন না। নেটওয়ার্ক না পেলে কাউকে কল, মেসেজ কিংবা ইন্টারনেট ব্যবহার করা সম্ভব নয়। মূলত নিজস্ব টাওয়ার কোন এলাকাতে না থাকলে তখন ব্যবহারকারীরা এই সমস্যায় পড়ে থাকেন। তাই স্বাভাবিকভাবেই বিদেশে গেলে আপনার নিজ এলাকার মোবাইল অপারেটর সেখানে আর কাজ করে না।
যারা নিয়মিত বিদেশে ভ্রমণ করে থাকেন তাদের জন্য একটি বড় সমস্যা মোবাইল নেটওয়ার্ক বা অপারেটরের সমস্যা। কেননা বিভিন্ন দেশে গেলে বারবার নম্বর পরিবর্তন করে নতুন সিম কেনা ও নতুন অপারেটর ব্যবহার করা বেশ ঝক্কির একটি ব্যাপার। আর এই সমস্যার সমাধান করতেই আছে ইন্টারন্যাশনাল রোমিং ব্যবস্থা।
ইন্টারন্যাশনাল রোমিং ব্যবহার করে আপনি আপনার সিম বা নম্বর পরিবর্তন না করেই বাইরের দেশে সহজেই মোবাইল নেটওয়ার্ক পেয়ে যেতে পারেন। এই ব্যবস্থা কাজ করে বিভিন্ন দেশের মোবাইল অপারেটরগুলোর সঙ্গে আপনার মোবাইল অপারেটরের চুক্তির মাধ্যমে। অর্থাৎ আপনার মোবাইল অপারেটর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মোবাইল অপারেটরের সঙ্গে তাদের মোবাইল টাওয়ার বা নেটওয়ার্ক ব্যবহার করার চুক্তি করে থাকে। এর ফলে আপনি যে দেশেই যান না কেন সেই দেশের কোন মোবাইল অপারেটরের সঙ্গে আপনার মোবাইল অপারেটরের চুক্তি থাকলে আপনি সেখানে পূর্ণ নেটওয়ার্ক পেয়ে যাবেন। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই আপনার দেশি সিমে রোমিং চালু করে নিতে হয়।
রোমিং ব্যবস্থায় আপনি সহজেই সকলের সাথে যোগাযোগ রাখতে পারবেন কোন ঝামেলা ছাড়াই। তবে রোমিং সেবার ক্ষেত্রে মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহারের খরচ কিছুটা বেশি হয়ে থাকে। বর্তমানে আমাদের দেশের সকল অপারেটরই রোমিং সেবা দিয়ে থাকে। বিশ্বের প্রায় সকল দেশেই দেশীয় অপারেটরের সিম ব্যবহার করা যায় রোমিং চালু করে নিলে।
বিভিন্ন অপারেটরে কীভাবে রোমিং চালু করবেন
বাংলাদেশে বর্তমানে মোট চারটি মোবাইল অপারেটর রয়েছে যারা প্রত্যেকেই রোমিং সেবা দিয়ে থাকে। প্রতিটি অপারেটরে কীভাবে এই সেবা পাবেন সে সম্পর্কে আলোচনা থাকছে এই অংশে।
গ্রামীণফোন
গ্রামীণফোন বিশ্বের প্রায় সকল দেশেই রোমিং সেবা দিয়ে থাকে। গ্রামীণফোনের রোমিং সেবার বিস্তারিত পেয়ে যাবেন তাদের ওয়েবসাইট হতে। তিনটি পদ্ধতিতে আপনি গ্রামীণফোনে রোমিং সার্ভিস অ্যাক্টিভ করে নিতে পারেন। এজেন্টের সাহায্য নিয়ে, অনলাইনে ফর্ম পূরণ করে নিজে নিজে কিংবা গ্রামীণফোনের যে কোন সার্ভিস সেন্টারে গিয়ে।
এজেন্টের সাহায্য নিয়ে রোমিং চালু করতে গ্রামীণফোনের ওয়েবসাইটে অ্যাক্টিভেশন পেজে গিয়ে আপনার গ্রামীণফোন নম্বরটি প্রদান করতে হবে। এরপর একজন গ্রামীণফোন এজেন্ট দ্রুতই আপনাকে কল করে যোগাযোগ করবেন। তিনি নিজে থেকেই আপনাকে প্রয়োজনীয় সকল বিষয়ে সাহায্য করবেন এবং রোমিং চালু করে দেবেন।
অনলাইন অ্যাক্টিভেশনের জন্য আপনাকে রোমিং রেজিস্ট্রেশন পেজে চলে যেতে হবে। এখান থেকে ফর্ম ডাউনলোড করে পূরণ করে তা সাবমিট করতে হবে ওয়েবসাইটে। এরপর আপনাকে ক্রেডিট কার্ড বা ডেবিট কার্ডের দুই পাশের ছবি স্ক্যান করে আপলোড করতে হবে। মনে রাখবেন রোমিং চালু করতে হলে অবশ্যই আপনাকে ডুয়াল কারেন্সি ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতে হবে। কার্ডের স্ক্যান কপি সাবমিট করবার সময় কার্ডে অবশ্যই আপনার সিগনেচার থাকতে হবে এবং সিভিসি নম্বর লুকিয়ে এরপর আপলোড করতে হবে। সব তথ্য সঠিক থাকলে দ্রুতই আপনার রোমিং চালু হয়ে যাবে।
অফলাইনে জিপি সেন্টারে গিয়ে আপনি সহজেই এজেন্টের সহযোগীতায় রোমিং চালু করে নিতে পারবেন। আপনার এলাকার জিপি পয়েন্টের ঠিকানা জেনে নিতে পারেন গ্রামীণফোন ওয়েবসাইট হতে। 👉 গ্রামীণফোনের কিছু সাশ্রয়ী ইন্টারনেট প্যাক জেনে নিন।
বাংলালিংক
বাংলালিংক ১০০ টিরও বেশি দেশে রোমিং সেবা দিচ্ছে গ্রাহকদের। বাংলালিংকের রোমিং সেবা মাত্র ১০০ টাকা থেকে পাওয়া যেতে পারে। বাংলালিংক রোমিং সেবা চালুর জন্য অনলাইনের কোন ব্যবস্থা রাখেনি। এজন্য আপনাকে বাংলালিংক কাস্টমার কেয়ারে যেতে হবে এবং সেখান থেকেই এজেন্টের সহায়তায় আপনি রোমিং চালু করে নিতে পারবেন। 👉 বাংলালিংক আনলিমিটেড মেয়াদের ইন্টারনেট চালু করার নিয়ম।
রবি/এয়ারটেল
রবি ও এয়ারটেল বর্তমানে একীভূত হওয়ায় তাদের রোমিং সেবাও একই রকম সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকে।
রবি অনলাইনে রোমিং সেবা চালুর ব্যবস্থা রেখেছে। এজন্য আপনাকে নির্দিষ্ট ফর্ম পূরণ করতে হবে এবং কিছু ডকুমেন্ট কপি অনলাইনে ইমেইলের মাধ্যমে পাঠাতে হবে রবির কাছে। ডুয়াল কারেন্সি ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড, পাসপোর্ট কপি প্রদান করা দরকার হতে পারে। বিস্তারিত তথ্য ও অ্যাক্টিভেশনের জন্য রবির ওয়েবসাইট ভিজিট করতে পারেন। এছাড়া মাই রবি অ্যাপ ব্যবহার করেও রোমিং অ্যাক্টিভ করা যাবে রবিতে।
এয়ারটেলের জন্যও আপনি একইভাবে রোমিং অ্যাক্টিভ করে নিতে পারবেন। অ্যাপের মাধ্যমে করতে চাইলে ব্যবহার করতে হবে মাই এয়ারটেল অ্যাপ। 👉 রবি আনলিমিটেড ইন্টারনেট চালু করার নিয়ম জানুন।
টেলিটক
টেলিটক ও বিভিন্ন দেশে রোমিং সেবা দিচ্ছে। প্রিপেইডে টেলিটক এখনও রোমিং সেবা চালু করে নি। পোস্টপেইডে রোমিং চালু করতে হলে আপনাকে রোমিং চালুর জন্য একটি ফর্ম সংগ্রহ করে পূরণ করে জমা দিতে হবে। এজন্য আপনাকে সরাসরি টেলিটক কাস্টমার কেয়ারে যোগাযোগ করতে হবে। 👉 টেলিটকের সাশ্রয়ী কিছু ডাটা প্যাক।
এভাবে সহজেই বাংলাদেশের অপারেটরগুলোতে রোমিং সেবা চালু করে নিতে পারেন।
0 responses on "সিমে ইন্টারন্যাশনাল রোমিং কী এবং কীভাবে চালু করে জেনে নিন"