• No products in the cart.

শেয়ার বাজার কি | শেয়ার বাজারে কিভাবে বিনিয়োগ করব | what is share market in bengali

শেয়ার বাজার কি? (What is Share Market?)

শেয়ার বাজার বা স্টক মার্কেট হলো এমন একটি স্থান যেখানে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার বা স্টক (Stock) ক্রয়-বিক্রয় করা হয়। এখানে ব্যবসায়ীরা, বিনিয়োগকারী এবং কোম্পানিগুলি তাদের শেয়ারের লেনদেন করে থাকে। এটি একটি বাজার যেখানে কোম্পানির শেয়ার বা ইকুইটি পণ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয় এবং এটি ক্রয় এবং বিক্রয় করার সুযোগ প্রদান করে।

এটি সাধারণত বিনিয়োগকারীদের পুঁজি (money) থেকে কোম্পানির মূলধন সংগ্রহ করতে সাহায্য করে, যেখানে বিনিয়োগকারীরা শেয়ার কেনার মাধ্যমে কোম্পানির অংশীদার হন। বিনিয়োগকারী তাদের শেয়ারের দাম বাড়ানো এবং ডিভিডেন্ডের মাধ্যমে লাভ করতে পারেন।

শেয়ার বাজার মূলত দুইটি অংশে বিভক্ত:

  1. প্রাথমিক বাজার (Primary Market): এখানে কোম্পানির নতুন শেয়ার সাধারণ জনগণের কাছে বিক্রি করা হয়। এটি আইপিও (Initial Public Offering) বা প্রাথমিক শেয়ার ইস্যু নামে পরিচিত।
  2. গৌণ বাজার (Secondary Market): এখানে এক্ষেত্রে প্রথম বাজার থেকে কিনে নেওয়া শেয়ারগুলি ক্রয়-বিক্রয় করা হয়। এর মধ্যে পরিচিত বাজার হচ্ছে বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জ (BSE) এবং ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ (NSE)

শেয়ার বাজারে কিভাবে বিনিয়োগ করব? (How to Invest in Share Market?)

শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ অনুসরণ করতে হয়। এখানে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের মৌলিক প্রক্রিয়া আলোচনা করা হলো:

১. বিনিয়োগের উদ্দেশ্য নির্ধারণ করুন:

  • শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের আগে, প্রথমে নিজের বিনিয়োগের উদ্দেশ্য স্পষ্ট করে নিন। আপনি কি দীর্ঘমেয়াদি (long-term) বিনিয়োগ করতে চান, নাকি স্বল্পমেয়াদি (short-term) লাভের জন্য বিনিয়োগ করতে চান? আপনার উদ্দেশ্য অনুসারে বিনিয়োগের ধরন নির্বাচন করা গুরুত্বপূর্ণ।

২. ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট খুলুন:

  • শেয়ার বাজারে শেয়ার কেনা-বেচা করার জন্য ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট (Demat Account) এবং ট্রেডিং অ্যাকাউন্ট প্রয়োজন। ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট এমন একটি অ্যাকাউন্ট যা শেয়ারগুলোকে ডিজিটালভাবে সংরক্ষণ করে। আপনি ব্যাংক বা অন্য কোনো ব্রোকারেজ ফার্ম এর মাধ্যমে ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন।

ট্রেডিং অ্যাকাউন্ট হলো একটি অ্যাকাউন্ট যা আপনার শেয়ারের কেনাবেচার জন্য ব্যবহৃত হয়।

৩. স্টক ব্রোকার নির্বাচন করুন:

  • শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করার জন্য আপনাকে একটি স্টক ব্রোকার (Stock Broker) নির্বাচন করতে হবে, যিনি আপনার বিনিয়োগের লেনদেন সম্পন্ন করবেন। আপনার ব্রোকার নির্বাচন করার সময় তার কমিশন চার্জ, পরিষেবা, এবং ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিন।

৪. নিরাপদ এবং কার্যকরী গবেষণা করুন:

  • শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করার আগে, শেয়ার বা কোম্পানির গবেষণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনি আপনার বিনিয়োগ কোন সেক্টরে করতে চান, তা ঠিক করুন এবং সেই সেক্টরের জন্য সম্ভাব্য কোম্পানি নির্বাচন করুন। শেয়ারের পূর্বের পারফরম্যান্স, কোম্পানির আর্থিক অবস্থা, উন্নয়ন পরিকল্পনা, এবং শেয়ারের মূল্যবান উপাত্ত (fundamentals) সম্পর্কে ভালোভাবে বিশ্লেষণ করুন।

৫. বিনিয়োগের জন্য পুঁজি নির্ধারণ করুন:

  • আপনি কতো টাকা শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করতে চান, তা ঠিক করুন। এর সাথে সাথে রিস্ক টলারেন্স বা ঝুঁকি গ্রহণ ক্ষমতাও বিশ্লেষণ করুন। শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করার সময় আপনার বিনিয়োগের একটি ছোট অংশ রেখেই শুরু করা ভালো।

৬. শেয়ার কেনার সিদ্ধান্ত নিন:

  • একবার আপনার ডিম্যাট এবং ট্রেডিং অ্যাকাউন্ট প্রস্তুত হলে, আপনার নির্বাচিত শেয়ারগুলো কিনুন। ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম এর মাধ্যমে আপনি শেয়ার কেনার জন্য একটি নির্দিষ্ট মূল্য বাছাই করতে পারেন। সেই মূল্য যদি বাজারের মূল্য অনুযায়ী মেলে, তবে আপনার লেনদেন সফল হবে।

৭. লাভের এবং ক্ষতির ওপর নজর রাখুন:

  • শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করার পর, শেয়ারের দাম ওঠানামা হতে পারে। তাই বিনিয়োগকারী হিসেবে আপনি প্রতি মুহূর্তে বাজারের অবস্থা, শেয়ারের মূল্য এবং আর্থিক বিশ্লেষণ পরীক্ষা করে লভ্যাংশ (Dividends) এবং ক্যাপিটাল গেইন লাভ নিশ্চিত করতে পারবেন।

শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের সুবিধা (Advantages of Investing in Share Market)

  1. উচ্চ মুনাফা লাভের সুযোগ:
    • শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের মাধ্যমে আপনি ক্যাপিটাল গেইন (Capital Gain) এবং ডিভিডেন্ড এর মাধ্যমে লাভ উপার্জন করতে পারেন। অনেক কোম্পানি তাদের শেয়ারের উপর ডিভিডেন্ড দেয় যা আপনার বিনিয়োগের আয় বৃদ্ধি করে।
  2. দীর্ঘমেয়াদী বৃদ্ধি:
    • শেয়ার বাজারের ইতিহাস দেখলে দেখা যায় যে, সময়ের সাথে সাথে শেয়ার বাজারে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ লাভজনক হতে পারে। শেয়ারের মূল্য দীর্ঘ সময় ধরে বাড়তে পারে।
  3. দ্রুত লিকুইডিটি:
    • শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করলে আপনার বিনিয়োগগুলি লিকুইড (liquid) থাকে। অর্থাৎ, আপনি আপনার শেয়ারগুলি সহজে বিক্রি করে ক্যাশে রূপান্তর করতে পারেন।
  4. বিভিন্ন পছন্দের সুযোগ:
    • শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের জন্য ভিন্ন ধরনের কোম্পানি এবং বিভিন্ন সেক্টর এর শেয়ার কেনার সুযোগ থাকে, যা আপনার বিনিয়োগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক।

শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের ঝুঁকি (Risks of Share Market Investment)

  1. মূল্য ওঠানামা:
    • শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হল শেয়ারের মূল্য ওঠানামা। অর্থাৎ, কোন একটি শেয়ারের দাম বাড়তে পারে, আবার কমতেও পারে। এটি বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, রাজনৈতিক পরিবর্তন অথবা কোম্পানির পারফরম্যান্স এর ওপর নির্ভর করে।
  2. বাজারের অস্থিরতা:
    • শেয়ার বাজার প্রায়ই অস্থির থাকে। কখনও কখনও বাজারে পতন (market crash) ঘটতে পারে, যেখানে আপনি ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন।
  3. বিশ্লেষণের অভাব:
    • শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করার সময় যদি যথাযথ গবেষণা এবং বিশ্লেষণ না করা হয়, তবে বিনিয়োগকারীরা ভুল শেয়ারে বিনিয়োগ করতে পারেন, যা তাদের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।

উপসংহার:

শেয়ার বাজার হলো একটি শক্তিশালী বিনিয়োগের প্ল্যাটফর্ম, যেখানে আপনি পুঁজির বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন লাভ অর্জন করতে পারেন। তবে এটি একটি ঝুঁকিপূর্ণ বাজার, যেখানে সঠিক বিশ্লেষণ এবং পরিকল্পনার মাধ্যমে বিনিয়োগ করা উচিত। সুতরাং, শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করার আগে অবশ্যই যথাযথ গবেষণা, অর্থনৈতিক ধারণা এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

0 responses on "শেয়ার বাজার কি | শেয়ার বাজারে কিভাবে বিনিয়োগ করব | what is share market in bengali"

Leave a Reply

© Technial Bangla. All rights reserved. 2025