• No products in the cart.

লো প্রেশারের কারণ, লক্ষণ, চিকিৎসা এবং ঘরোয়া প্রতিকার

ঘন ঘন মাথা ঘোরা বা হঠাৎ করে চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যাওয়ার পেছনে নিম্ন রক্তচাপ একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হতে পারে । এটি একটি এমন একটি অবস্থা, যেখানে আমাদের শরীরে রক্তের চাপ স্বাভাবিকের থেকে কমে যায় । ডাক্তারি ভাষায় এই অবস্থাকে হাইপোটেনশন বলা হয় । একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের স্বাভাবিক রক্তচাপ 120/80 mmHg থেকে 90/60 mmHg পর্যন্ত হয়ে থাকে । কিন্তু হাইপোটেনশনের একজন রোগীর ক্ষেত্রে রক্তচাপ 90/60 mmHg-এর নিচে নেমে যায় । নিম্ন রক্তচাপের কারণে হৃদরোগের মতো মারাত্মক রোগ হতে পারে ( তথ্যসূত্র ) । আজকের এই আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সাথে লো প্রেশারের কারণ, লক্ষণ, চিকিৎসা এবং ঘরোয়া প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব । সেই সাথে আমরা আপনাদের সাথে লো ব্লাড প্রেশারের চার্ট শেয়ার করব ।

নিম্ন রক্তচাপ কাকে বলে – লো ব্লাডপ্রেশার কাকে বলে

সাধারণত সিস্টোলিক (উপরের) রক্তচাপ ৯০ মি. মি. মার্কারি ও ডায়াস্টোলিক (নিচের) রক্তচাপ ৬০ মি. মি. মার্কারির নিচে হলে তাকে নিম্ন রক্তচাপ বলা হয় । প্রেশার যদি খুব বেশি কমে যায় তাহলে মস্তিষ্ক, কিডনি ও হৃৎপিণ্ডে সঠিকভাবে রক্ত প্রবাহিত হয় না ফলে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয় । অনেকেই মনে করেন যে, যাদের স্বাস্থ্য দুর্বল বা যারা অতিরিক্ত চিকন তারা নিম্ন রক্তচাপে ভুগেণ । কিন্তু এটা কোনভাবেই সত্য নয়। অনেক স্থূল মানুষেরও নিম্ন রক্তচাপ বা লো প্রেশার বা লো ব্লাডপ্রেশার থাকতে পারে ।

নিম্ন রক্তচাপের প্রকারভেদ – লো ব্লাডপ্রেশার কত প্রকার

নিম্ন রক্তচাপ বা লো ব্লাডপ্রেশার সাধারণত ৪ প্রকার –

Severe hypotension  এটি হঠাৎ রক্তক্ষরণ, শক, হার্ট অ্যাটাক, ইনফেকশন বা গুরুতর অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়ার (অ্যানাফিল্যাক্সিস) কারণে হতে পারে ।

Orthostatic hypotension – শরীরের অবস্থানে হঠাৎ কোন পরিবর্তন হলে এই ধরনের নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা হতে পারে । আরও সহজ ভাষায় বললে, কেউ বসে বা শুয়ে থাকার পর হঠাৎ করে উঠে দাঁড়ালে অর্থোস্ট্যাটিক হাইপোটেনশনের সমস্যা হতে পারে । এই ধরনের নিম্ন রক্তচাপ সাধারণত কয়েক সেকেন্ড বা কয়েক মিনিটের জন্য স্থায়ী হয়।

Postprandial orthostatic hypotension – খাওয়ার পরপরই যদি রক্তচাপ কমে যায়, তাহলে তাকে পোস্টপ্র্যান্ডিয়াল অর্থোস্ট্যাটিক হাইপোটেনশন বলে । এটি ধরনের হাইপোটেনশন সাধারণত বয়স্ক, প্রাপ্তবয়স্ক এবং বিশেষ করে পারকিনসন রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে বেশী দেখা যায় ।

Neurally mediated hypotension (NMH) – একজন ব্যক্তি দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকলে এই ধরনের লো ব্লাডপ্রেশারের সমস্যা দেখা দিতে পারে । এটি সাধারণত শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে বেশী ঘটে থাকে ।

নিম্ন রক্তচাপের কারণ – লো ব্লাডপ্রেশারের কারণ

নিম্ন রক্তচাপের সমস্যার পিছনে অনেক ধরনের কারণ থাকতে পারে । নিচে আমরা ব্লাডপ্রেশার কমে যাওয়ার কারণ গুলো সম্পর্কে বলছি –

  • অতিরিক্ত স্ট্রেস, ভয়, নিরাপত্তাহীনতা বা ব্যথার কারণে রক্তচাপ কমে যেতে পারে
  • ডিহাইড্রেশন
  • অতিরিক্ত রক্তদান
  • অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ বা ইন্টারনাল ব্লিডিং
  • গভীর আঘাতের কারনে অতিরিক্ত রক্তক্ষরন
  • গর্ভাবস্থা
  • ডায়রিয়া বা অত্যধিক বমি হওয়া
  • হজমে দুর্বলতা
  • উচ্চ রক্তচাপের কমানোর ওষুধের কারণে
  • বিষণ্নতা কমানোর ঔষধ
  • হৃদরোগ
  • এলার্জি
  • ইনফেকশন
  • স্নায়ুতন্ত্রের ব্যাধি, পারকিনসন রোগ
  • শরীরে হরমোনজনিত ভারসাম্যহীনতা
  • রক্তচাপ কমে যাওয়ার কারণ জানার পর এখন জেনে নেয়া যাক ব্লাডপ্রেশার কমে যাওয়ার লক্ষণ

    নিম্ন রক্তচাপের লক্ষণ – লো ব্লাডপ্রেশারের লক্ষণ

    নিম্ন রক্তচাপ বা লো BP, কিছু লক্ষণের মাধ্যমে সনাক্ত করা যেতে পারে । BP কমে যাওয়ার কিছু লক্ষণ নিচে দেওয়া হল –

    • BP বা ব্লাডপ্রেশার কমে যাওয়ার প্রধান লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে মাথা ঘোরা ।
    • মাথা ঘুরে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
    • চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যাওয়া বা চোখে অন্ধকার দেখা, নিম্ন রক্তচাপের লক্ষণ ।
    • বিভ্রান্ত হওয়া রক্তচাপ কমে যাওয়ার অন্যতম লক্ষণ হতে পারে ।
    • কোনো কিছুতে প্রোপার মনোযোগ দিতে না পারা লো ব্লাডপ্রেশারের লক্ষণ
    • লো ব্লাডপ্রেশারের আরও একটি লক্ষণ হল দুর্বলতা ।
    • ক্লান্তি অনুভব করা নিম্ন রক্তচাপের অন্যতম লক্ষণ হতে পারে ।
    • নিম্ন রক্তচাপের লক্ষণগুলির মধ্যে আরও একটি হল বমি বমি ভাব অনুভব করা ।
    • ত্বকে ঠাণ্ডা হওয়া লাগার অনুভুতিও নিম্ন রক্তচাপের লক্ষণগুলির অন্তর্ভুক্ত ।
    • খুব বেশি তৃষ্ণা অনুভূত হওয়া লো ব্লাডপ্রেশারের লক্ষণ
    • ব্লাডপ্রেশার কমে যাওয়ার কারণে অনেক সময় শরীর থেকে অতিরিক্ত ঘাম বের হতে দেখা যায় ।
    • দুর্বল নাড়ি নিম্ন রক্তচাপের অন্যতম লক্ষণ ।
    • শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়াও লো ব্লাডপ্রেশারের লক্ষণ ।

রক্তচাপ চার্ট – ব্লাডপ্রেশার চার্ট – ব্লাডপ্রেশারের চার্ট – ব্লাড প্রেশার চার্ট

ব্লাড প্রেশারের এই চার্টের মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন যে, একজন নরমাল মানুষের ব্লাড প্রেশার কত থাকা উচিত ? রক্তচাপের চার্ট নিচে দেওয়া হল –

রক্তচাপের পরিসীমা সিস্টোলিক (উপরের) ডায়াস্টোলিক (নিম্ন)
স্বাভাবিক বিপি – নরমাল রক্তচাপ কত 120 এর কম 80 এর কম
নিম্ন রক্তচাপ (নিম্ন রক্তচাপ) – লো ব্লাডপ্রেশার 90 এর কম 60 এর কম
উচ্চ রক্তচাপ – হাই ব্লাডপ্রেশার 130 বা তার বেশি 80 বা তার বেশি

নোট: আগে 140/90 কে উচ্চ রক্তচাপ বা হাই প্রেশার হিসাবে বিবেচনা করা হত । কিন্তু বর্তমানে 130/80 কে উচ্চ রক্তচাপ বলে ধরে নেওয়া হয়

চলুন এবার জেনে নেয়া যাক লো ব্লাডপ্রেশারের সমস্যা হলে কি করবেন ?

নিম্ন রক্তচাপের ঘরোয়া প্রতিকার – লো ব্লাডপ্রেশারের ঘরোয়া প্রতিকার

নিম্ন রক্তচাপ বা লো ব্লাডপ্রেশারের কিছু ঘরোয়া প্রতিকার নিচে দেওয়া হল –

কফি – যদি আপনি বুঝতে পারেন যে আপনার লো ব্লাডপ্রেশারের সমস্যা হচ্ছে, তাহলে দ্রুত এক মগ গরম পানিতে কফি ও চিনি মিশিয়ে ধীরে ধীরে পান করুন । লো বিপির সমস্যা সমাধান না হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন এক কাপ করে কফি পান করুন । যাদের লো প্রেশারের সমস্যা রয়েছে, তারা প্রতিদিন কফি খেতে পারেন । কফি রক্তচাপ বৃদ্ধি করতে খুব ভাল কাজ করে । পোস্টপ্র্যান্ডিয়াল অর্থোস্ট্যাটিক হাইপোটেনশনের (অর্থাৎ, নিম্ন রক্তচাপ যা খাওয়ার ঠিক পরে দেখা যায়) ক্ষেত্রে কফি খুব ভাল কাজ করে । মূলত কফিতে ক্যাফেইন থাকে, যা নিম্ন রক্তচাপের ক্ষেত্রে কার্যকর ভুমিকা পালন করে । সেই সাথে, কফি অর্থোস্ট্যাটিক হাইপোটেনশনের (অর্থাৎ হঠাৎ করে অবস্থান পরিবর্তনের কারণে নিম্ন রক্তচাপ) জন্য একটি অত্যন্ত কার্যকর ঘরোয়া প্রতিকার । তবে খেয়াল রাখবেন অতিরিক্ত কফি পান করলে পানিশূন্যতার সমস্যা হতে পারে । তাই প্রতিদিন ১ বা ২ কাপ করে কফি পান করুন ।

লবণ পানি – আপনি যদি পুরোপুরি কনফার্ম হন যে, আপনার লো প্রেশারের সমস্যা হচ্ছে তাহলে দ্রুত প্রেশার বাড়ানোর জন্য এক গ্লাস পানিতে আধা চা চামচ লবণ মিশিয়ে নিন এবং তারপর দ্রবণটি পান করুন । আমরা যদি নিম্ন রক্তচাপের ইনস্ট্যান্ট প্রতিকারের কথা বলি, তবে বেশিরভাগ মানুষ ঘরোয়া প্রতিকার হিসাবে লবণ পানি ব্যবহার করেন । এই ক্ষেত্রে, যাদের ব্লাডপ্রেশার কম, বিশেষ করে যাদের স্নায়বিক মধ্যস্থতা হাইপোটেনশন রয়েছে, তারা তাদের খাদ্যে বেশি লবণ খেতে পারেন ( তথ্যসূত্র )।রক্তচাপ বাড়ানোর এই উপায় খুবই সহজলভ্য এবং কার্যকর ।

স্যালাইন – আপনি যদি হঠাৎ করে লো প্রেশারের সমস্যা অনুভব করেন তাহলে দ্রুত প্রেশার বাড়ানোর জন্য আপনি ওরস্যালাইন পান করতে পারেন । ওরস্যালাইন দ্রুত প্রেশার বাড়াতে খুব ভাল কাজ করে ।

ডিম – যাদের লো প্রেশারের সমস্যা রয়েছে তারা প্রতিদিন সকালে ডিম হাফ বয়েল করে খাবেন । যদি হাসের ডিম খেতে পারেন তাহলে আরও বেশী উপকার পাওয়া যাবে । প্রতিদিন ডিম খেলে আপনার লো প্রেশারের সমস্যা অনেকটা কমে যাবে ।

তুলসী – একটি সসপ্যানে বা পাত্রে ১ থেকে দেড় কাপ নিয়ে, তাতে ৮ থেকে ১০ টি তুলসী পাতা দিয়ে ভাল করে ফুটিয়ে নিন । এরপর একটি পাত্রে লেবুর রসের সাথে ফুটানো তুলসি পাতার পানি মিশিয়ে সেই পানি পান করুন । তুলসী বহু বছর ধরে আয়ুর্বেদিক ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে । যদি আমরা লো বিপির সমস্যার কথা বলি, তাহলে তুলসীর ব্যবহার উপকারী হতে পারে । ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সী মহিলাদের উপর পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, তুলসীর রস হাইপোটেনশনে উপকারী ভুমিকা পালন করে । তুলসী রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক ভুমিকা পালন করে ।

লিকোরিস পাউডার – ১ কাপ পানিতে ১ চা চামচ লিকোরিস পাউডার মিশিয়ে নিন । এরপর একটি সসপ্যানে এই মিশ্রণটি ৫ মিনিটের মত ফুটিয়ে নিন । এরপর কিছুক্ষণ ঠাণ্ডা করে এতে মধু মিশিয়ে সেবন করুন । প্রতিদিন একবার এই মিশ্রণ পান করতে পারেন । লো ব্লাডপ্রেশার নিরাময়ের জন্য লিকোরিস খুব ভাল কাজ করে । এর শিকড় হাইপোটেনশনে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য উপকারী হতে পারে । একটি গবেষণায় দেখা গেছে, লিকোরিস রক্তচাপ বাড়িয়ে নিম্ন রক্তচাপ বা লো বিপির অবস্থার উন্নতি করতে পারে ( তথ্যসূত্র )।

রোজমেরি তেল – নারকেল বা অলিভ অয়েলের সাথে রোজমেরি তেল মিশিয়ে নিয়ে আপনার সারা শরীরে ম্যাসাজ করুন ।
আপনি চাইলে গোসল করার পানিতেও কয়েক ফোঁটা রোজমেরি অয়েল যোগ করতে পারেন । নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আপনি রোজমেরি তেল ব্যবহার করতে পারেন । NCBI-এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ৩২ জন মানুষের উপর করা একটি গবেষণায়, রোজমেরি অয়েল হাইপোটেনশনের জন্য উপকারী বলে প্রমাণিত হয়েছে । রোজমেরি তেলের অ্যান্টিহাইপোটেনসিভ বৈশিষ্ট্য নিম্ন রক্তচাপের চিকিৎসা করতে পারে । নিম্ন রক্তচাপের লক্ষণ এবং ক্ষতি এড়াতে বা কমাতে এই তেল ব্যবহার করতে পারেন ।

লেবুর সরবত – এক গ্লাস পানিতে অর্ধেক লেবু এবং লবণ মিশিয়ে সরবত বানিয়ে পান করুন । আমরা আপনাদের আগেই জানিয়েছি যে হাইপোটেনশনের অন্যতম একটি কারণ হল শরীরে তরলের অভাব । এমন পরিস্থিতিতে, ডিহাইড্রেশনের কারণে যারা হাইপোটেনশনে ভুগছেন তারা এভাবে লেবুর শরবত বানিয়ে পান করলে দ্রুত সমাধান পাবেন ।

দুধ চা – প্রথমে একটি সসপ্যানে পানি ফুটিয়ে নিয়ে তাতে চিনি এবং চা পাতা দিয়ে দিন । এরপর এতে দুধ দিন এবং চা ভাল করে ফুটিয়ে নিয়ে পান করুন । লো বিপির ঘরোয়া প্রতিকার হিসেবে চা খুব ভাল কাজ করে । অর্থোস্ট্যাটিক হাইপোটেনশনের ক্ষেত্রে নিয়মিত চা পান করলে ভাল উপকার পাওয়া যায় । আসলে, চায়ে ক্যাফেইন থাকে, যা লো প্রেশারের ক্ষেত্রে কার্যকরী ভুমিকা পালন করে । এমন অবস্থায়, যারা লো ব্লাডপ্রেশারের সমস্যায় ভুগছেন তারা সারাদিনে একবার বা দুবার চা অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন । এছাড়াও, মনে রাখবেন যে অতিরিক্ত ক্যাফিন ডিহাইড্রেশনের কারণ হতে পারে, তাই এটি কখনই বেশি পান করবেন না ।

পুষ্টিকর খাবার খান – কখনও কখনও পুষ্টির অভাবের কারণেও নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা হতে পারে । বিশেষ করে, ভিটামিন B12 এবং ফোলেটের ঘাটতির কারণে রক্তসল্পতা (অ্যানিমিয়া) হতে পারে, যা নিম্ন রক্তচাপের কারণ হতে পারে । তাই নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার গ্রহন করুন ।

নিম্ন রক্তচাপের জন্য কখন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত?

লো ব্লাডপ্রেশারে নিম্নলিখিত সমস্যা দেখা গেলে দ্রুত চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা প্রয়োজন –

  • কালো বা মেরুন মল
  • বুকে ব্যাথা
  • মাথা ঘোরা
  • অজ্ঞান হয়ে গেলে দেরি করবেন না
  • জ্বর ১০০ এর উপরে
  • শ্বাসকষ্ট অনুভব করা
  • যদি আপনার হৃদস্পন্দন অনিয়মিত হয় ।

লো প্রেশার নাকি হাই প্রেশার, কোনটি বেশি খারাপ?

লো প্রেশার এবং হাই প্রেশার দুটোই খারাপ । তবে যদি প্রশ্ন করা হয় এই দুটির মধ্যে কোনটি বেশি খারাপ? তাহলে এক কথায় উত্তর হবে লো প্রেশার বা নিম্ন রক্তচাপ বেশি খারাপ । কারণ, যে কোন কারণে হঠাৎ প্রেশার কমে গেলে তাৎক্ষণিক শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যেমন কিডনি, মস্তিষ্ক ইত্যাদি বিকল হয়ে যেতে পারে এবং তাৎক্ষণিকভাবে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে । এ জন্যই ডায়রিয়ায় পানিশূন্যতা রোধ করতে শিরায় স্যালাইন দেওয়া হয় । তবে উচ্চ রক্তচাপও দীর্ঘ মেয়াদে আমাদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের ক্ষতির কারণ হয়ে থাকে । তাই উচ্চ রক্তচাপও নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করা উচিত ।

নিম্ন রক্তচাপের চিকিৎসা – লো প্রেশারের চিকিৎসা

লো প্রেশার বা নিম্ন রক্তচাপের কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই । লো প্রেশারের উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে । বেশীরভাগ নিম্ন রক্তচাপের লক্ষণ কিছু ঘরোয়া প্রতিকারের মাধ্যমে নিরাময় করা সম্ভব । তবে কারো যদি নিম্ন রক্তচাপের গুরুতর সমস্যা থাকে, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত । লো প্রেশারের চিকিৎসা নির্ভর করে এর কারণ ও উপসর্গের ওপর । নীচে আমরা সেগুলো সম্পর্কে তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করছি –

  • নিম্ন রক্তচাপের চিকিত্সার জন্য, ডাক্তার শরীরে রক্ত ​​​​সঞ্চালনের পরামর্শ দিতে পারেন।
  • নিম্ন রক্তচাপের চিকিৎসা হিসেবে রক্তচাপ বৃদ্ধি করতে ও হৃদযন্ত্রের শক্তি বাড়াতে ডাক্তার রোগীর অবস্থার উপর ভিত্তি করে ওষুধ দিয়ে থাকেন ।
  • যদি কোন ওষুধের কারণে নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা হয়ে থাকে, তাহলে নিম্ন রক্তচাপের চিকিৎসা হিসেবে ডাক্তার ওষুধের ডোজ পরিবর্তন করে দিতে পারেন ।
  • ডিহাইড্রেশনের কারণে লো প্রেশারের সমস্যার হলে ডাক্তাররা বেশি বেশি তরল পান করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন ।

নিম্ন রক্তচাপের ডায়েট – লো প্রেশারের ডায়েট

অনেক সময় পুষ্টির অভাবের কারণে লো বিপির সমস্যা হয়ে থাকে । এমন পরিস্থিতিতে নিম্ন রক্তচাপ হলে কী খাবেন তা নিচে উল্লেখ করা হল –

  • আমরা ইতিমধ্যেই আপনাদের জানিয়েছি যে, ভিটামিন-বি 12 এবং ফোলেটের অভাব রক্তাল্পতার কারণ হতে পারে, যার কারণে লো প্রেশার হতে পারে । এমন অবস্থায়, আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ভিটামিন-বি 12 এবং ফোলেটযুক্ত খাবার অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন ।
  • ভিটামিন-বি১২ পাওয়ার জন্য আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় দই, মুরগির মাংস, ডিম, দুধ এবং দুগ্ধজাত খাবার অন্তর্ভুক্ত করুন । সেই সাথে, সাইট্রাস ফল, দুধের পণ্য, ডিম, বাদাম, মটরশুটি ইত্যাদি খাবার ফোলেটের জন্য অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন । এখন কেউ যদি আপনাকে জিজ্ঞেস করেন যে, লো ব্লাড প্রেশারে কী খাবেন, তাহলে অবশ্যই ভিটামিন-বি১২ এবং ফোলেট এর কথা মাথায় রাখবেন ।
  • ক্যাফেইন সাময়িকভাবে রক্তচাপ বৃদ্ধি করতে সাহায্য করতে পারে । অতএব, লো প্রেশারের ডায়েট চার্টে কফি বা অন্যান্য ক্যাফিনযুক্ত খাবার গ্রহণ করতে পারেন ।
  • সেই সাথে লো ব্লাড প্রেসার ডায়েট চার্টে নিয়মিত সবুজ শাকসবজি ও ফলমূল অন্তর্ভুক্ত করুন নিম্ন রক্তচাপের প্রতিকার হিসেবে ।

নিম্ন রক্তচাপ প্রতিরোধ – লো প্রেশার প্রতিরোধের টিপস

নিম্নে উল্লিখিত ব্যবস্থা অনুসরণ করে লো প্রেশার প্রতিরোধ করা সম্ভব –

  • বেশি বেশি করে তরল পান করুন
  • ঘুমানোর পর বা কোথাও বসার পর ধীরে ধীরে উঠুন বা ধীরে ধীরে বসুন । হঠাৎ করে উঠবেন না বা বসবেন না ।
  • অ্যালকোহল পান করা থেকে বিরত থাকুন
  • বেশিক্ষণ দাঁড়াবেন না
  • লো প্রেশারের রোগীরা অনেকক্ষণ একই স্থানে বসে বা শুয়ে থাকবেন না
  • খাবার সময় পাতে এক চিমটি করে কাঁচা লবণ খেতে পারেন
  • দৈনন্দিন খাবারের তালিকায় গ্লুকোজ এবং স্যালাইন রাখুন
  • কম্প্রেশন স্টকিংস পরুন যাতে পায়ে রক্ত ​​না জমে
  • মাঝে মাঝে হালকা খাবার খান । অনেক্ষন খালি পেটে থাকলে রক্তচাপ কমে যেতে পারে

শেষ কথা

লো প্রেশারের লক্ষণ এবং চিকিৎসার বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করে নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা এড়ানো যায় । আপনি যদি বারবার লো প্রেশারের উপসর্গ দেখতে পান, তাহলে দ্রুত রক্তচাপ পরীক্ষা করান । সেই সাথে আপনি এই আর্টিকেলে উল্লিখিত নিম্ন রক্তচাপের ঘরোয়া প্রতিকারগুলি চেষ্টা করতে পারেন । লো প্রেশারের ক্ষেত্রে এই ঘরোয়া উপায়গুলো আপনার লো প্রেশারের লক্ষণগুলি কমিয়ে আপনাকে কিছুটা স্বস্তি দিতে পারে । আর লো বিপির সমস্যা যদি তীব্র হয় তাহলে রক্তচাপ কমাতে ঘরোয়া প্রতিকারের উপর নির্ভর না করে, ডাক্তার বা বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে লো প্রেশারের চিকিৎসা নিন । আর্টিকেলটি নিয়ে যে কোন ধরনের প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট সেকশনে জানান ।

0 responses on "লো প্রেশারের কারণ, লক্ষণ, চিকিৎসা এবং ঘরোয়া প্রতিকার"

Leave a Reply

© Technial Bangla. All rights reserved. 2025