ডিজিটাল দুনিয়ায় ব্যাপক পরিসরে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে একটি ওয়েবসাইট বেশ দরকারি।বর্তমানে blogging বা ওয়েবসাইটে লিখে আয় করা বেশ একটি সহায়ক আয়ের মাধ্যম হতে পারে।
আজকাল বিভিন্ন জায়গায় ব্লগিং বা অনলাইনে লেখালেখি করার উপর বেশ নজর দেয়া হচ্ছে।ডোমেইন হোস্টিং ও আগের চাইতে অনেক সহজলভ্য বলা চলে। ইউটিউবে কন্টেন্ট এর কোয়ালিটি ও উন্নত হয়েছে।ফলে এখন চাইলে যেকেউ নিজের মতো ওয়েবসাইট বিল্ড করে নিতে পারে। শুধু তাই নয় এখন ওয়েব ডেভেলপমেন্ট করার টিউটোরিয়ালও ইউটিউবে পাওয়া যায়।
বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং এর কথা মাথায় আসলে প্রথমে আসে SEO,Web Design,Digital Marketing ইত্যাদি ইত্যাদি। বিভিন্ন জবসাইটে এজন্য নিজেদের পোর্টফোলিও দেখাতে অনেকে শিক্ষানবিশ হিসেবে ওয়েবসাইট তৈরি করে থাকে।এটি বেশ দরকারিও বলা চলে। নিজেদের ওয়েবসাইট যখন ইচ্ছা মডিফাই, কাস্টমাইজড করা যায়।
তবে যারা ওয়েবসাইট আয়ের জন্যই খুলতে চাচ্ছেন তাদের একটা বড় অংশ প্রায়সময় কনফিউশনে থাকে।বর্তমানে টেকনোলজির যুগ।ফলে যারা আয়ের জন্য ওয়েবসাইট তৈরি করতে চায় প্রথমেই এটির দিকে ঝুঁকে।তাদের ওয়েবসাইটের কন্টেন্ট হয়ে থাকে বিভিন্ন টেক নিউজ, টিউটোরিয়াল ইত্যাদি।অথচ এই ক্যাটাগরি বাদে অন্য ক্যাটাগরির উপর ওয়েবসাইট বানালেও সেখানে ট্রাফিক আনা সম্ভব।আজকে আমি আলোচনা করব এমন ৫ টি ক্যাটাগরি নিয়ে যেগুলোর উপর ওয়েবসাইট বিল্ড করলে ট্রাফিক আসার চান্স অনেক বেশি।
ওয়েবসাইট থেকে ইনকামে মূলত অনেকের টার্গেট থাকে মনিটাইজ করার দিকে।গুগল adsense থেকে ট্রাফিক আর cpm দ্বারা প্রধানত আয় হয়ে থাকে।সাইটে যত বেশি ট্রাফিক আসবে তত বেশি আয়ের সম্ভাবনা বেশি। তো চলুন দেখে নেয়া যাক টপ ৫ ক্যাটাগরি
জব সার্কুলার ওয়েবসাইট
আচ্ছা চিন্তা করুন বাংলাদেশের বেকার সংখ্যা কত? এক কথায় বলতে গেলে বিশাল।এ বিশাল পরিমাণ মানুষের জন্য চাকরির বাজার বলতে গেলে অতি নগণ্য। তারপরও বিভিন্ন ওয়েবসাইটে,পত্র পত্রিকায় চাকরির বিজ্ঞাপন হয়ে থাকে।কোনো ভালো চাকরির সার্কুলার বের হলে মানুষজন হুমড়ি খেয়ে পড়ে এসব বিজ্ঞপ্তিতে।এ বিষয়টিই আপনারা কাজে লাগাতে পারেন।আপনারা ওয়েবসাইট বিল্ড করে চাকরির বিজ্ঞাপন দিতে পারেন।
কিন্তু আপনি বিজ্ঞাপন পাবেন কোথায়? খুব সহজ অন্যান্য ওয়েব সাইটেই। বিডিজবস,পত্রিকার বিজ্ঞাপন, বেসরকারি কোম্পানীর বিজ্ঞাপন আপনারা নিজেদের ওয়েবসাইটে সুন্দর মতো মডিফাই করে পোস্ট করতে পারেন।এজন্য দরকার ওয়েবসাইটটাকে একটু ভালো মতো ডেভেলপ করা আর একটু SEO স্কিল।কারন আপনার ওয়েবসাইট যদি ভালো না হয় ইউজাররা যদি বিরক্তি প্রকাশ করে তাহলে আপনারা খুব বেশি দূরে এগোতে পারবেন না।তাছাড়া দরকার SEO করা।কারন আপনার দরকার ট্রাফিক আর ট্রাফিক আসার জন্য সার্চ ইঞ্জিনে র্যাংকিং করা অতি দরকারি।একইসাথে দরকার ভালো কপিরাইটিং স্কিল।
এসব চাকরির বিজ্ঞাপন সরাসরি কপি পেস্ট করে না লিখে সাজিয়ে লিখতে পারেন।সেই সাথে ব্যবহার করতে হবে একটি আকর্ষণীয় শিরোনাম যাতে মানুষের দেখেই লিংকে ক্লিক করতে কৌতুহল হয়।একইসাথে ব্যবহার করতে পারেন link shortener
সরাসরি আবেদনের লিংক কিংবা অফিশিয়াল বিজ্ঞাপনের লিংক এর এখানে আপনি link shortener দ্বারাও ইনকাম করতে পারেন।
ফেসবুক খুললেই চাকরির বিজ্ঞাপন বিষয়ক নানা পাবলিক গ্রুপ আছে।সেখানে আপনার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিজ্ঞাপনটি পোস্ট করতে পারেন।এতে অর্গানিক ট্রাফিক আর cpm ও আসবে।
ইংরেজিতে যাদের দক্ষতা আছে তারা এধরনের ওয়েবসাইট বিল্ড করে নিতে পারেন।গুগল adsense এর বৈশিষ্ট্য হলো বাইরের কান্ট্রির ট্রাফিক যদি আপনার ওয়েবসাইটে আসে তাহলে ইনকাম সাধারনত বেশি হয়ে থাকে।এই How to ওয়েবসাইটে বিভিন্ন ধরনের জিনিস এর উপর লিখতে পারেন। সেটি হতে পারে কিভাবে light এর ভাল্ব বদলানো যায়, কিভাবে পানির ট্যাপ বদলানো যায় ইত্যাদি বিষয়ে। একইসাথে টেকনোলজি রিলেটেড লেখাও লিখতে পারেন। সেটি হতে পারে কিভাবে গুগল স্টোরেজের মাধ্যমে তথ্য সংরক্ষণ করা যায়, কিভাবে এয়ারফোন পরিস্কার করে নিতে হয় ইত্যাদি ইত্যাদি।
এ ক্ষেত্রে আপনাকে বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে হবে। যথেষ্ট ছবির তথ্য দিতে হবে। Royalty free ছবি ব্যবহার করা উত্তম। তাছাড়া এখন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এরও বিশাল পরিমাণ উন্নতি ঘটেছে। Text to image এআই দিয়ে অ্যানিমেটেড ছবি এখন অনায়াসেই বানানো যায়।
এ ধরনের ওয়েবসাইট এ ভালো করতে SEO নলেজ থাকা উচিত।তাছাড়া এমন এমন টপিক নিয়ে লিখতে হবে যাতে মানুষ YouTube এ যাওয়ার আগে একবার গুগলের মতো সার্চ ইঞ্জিনে সে সম্পর্কে তথ্য খুঁজে।যেহেতু আপনার লেখা হবে ইংরেজিতে তাই যতটুকু সম্ভব গ্রামাটিকাল ইরর কমাতে হবে।
শুধু মাত্র আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নির্ভর না লিখে সেটিকে আরেকটু মডিফাই করে হিউম্যান টাচ দিয়ে লেখা বেটার।যদি বিভিন্ন ডেইলি প্রোডাক্টের উপর টিউটোরিয়াল হয় তাহলে সেটিতে অ্যাফিলিয়েট লিংক যোগ করতে পারেন।এতে ভিজিটররা সেটি কেনার ডাইরেক্ট অপশন পেয়ে যাবে।
Story,Pdf website
না আমি কোনো আপনাকে নিজের লেখা প্রকাশ করার কথা বলছি না।২০২৪ এ এসে ওয়েবসাইটে গল্প পড়ার প্রবনতা কমে এসেছে।এর চাইতে সহজ হলো অফলাইন পিডিএফ। বিভিন্ন বইয়ের উপর মানুষজন ফ্রিতে পিডিএফ খুঁজে থাকে।এই পিডিএফ এর উপর আবার গড়ে উঠেছে বিভিন্ন ওয়েবসাইট। আপনারা চাইলে লিংক রিডাইরেক্ট এর উপর ভিত্তি করে একটি পিডিএফ ওয়েবসাইট বানাতে পারেন।
আরেকটু সহজভাবে বললে আপনি গুগল থেকে খুজে খুজে বের করবেন মানুষ কোন ধরনের বই এর জনরার উপর আকৃষ্ট হচ্ছে।ফিকশন,নন ফিকশন ইত্যাদি ইত্যাদি বইয়ের ক্যাটাগরি তৈরী করবেন।তারপর সেসব ক্যাটাগরির উপর ধরা যাক ১০০ বইয়ের তালিকা তৈরি করলেন। তারপর সুন্দর মত সেগুলোর ডাইরেক্ট লিংক বের করে নিবেন। তারপর আপনার ওয়েবসাইটে বইয়ের নামটি কি-ওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহার করে SEO করে নিবেন।
যেহেতু পিডিএফ এর ওয়েবসাইট তাই এখানে আপনি বইয়ের সুন্দরমতো ছবি thumbnail আর ফিচার ইমেজ দিবেন।বইয়ের কিছু অংশ hook টাইপের দিতে পারেন যাতে মানুষ পড়তে আগ্রহী হয়।অতপর ডাউনলোডের এখানে ad.fly টাইপের লিংক রিডাইরেক্টর ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়া দিতে পারেন টপ ১০ সাইন্স ফিকশন বই,যে ১০টি বই ২০২৪ সালে পড়া উচিত টাইপের আর্টিকেল। ওয়েবসাইট র্যাংক করলে ভালো পরিমান ট্রাফিক এসে পড়বে।আর এসব আর্টিকেল লিখলে সম্ভাবনা আছে ভালো cpm এর।
আরেকটি হচ্ছে story ওয়েবসাইট। এখানে মূলত আপনি কি কি ধরনের লেখা দিবেন? এখানে আপনি ফিকশন বই দিবেন না। তার চাইতে এখানে ব্যবহার করবেন যেসব জিনিসের উপর মানুষ বেশি আকৃষ্ট হয়।সেখানে ভাইকিংস এর গল্প,বিমানের অন্তর্ধানের গল্প,সার্ভাইব ধরনের গল্প দিতে পারেন। ফেসবুকে এ ধরনের বিভিন্ন ভিডিও রয়েছে। সেখান থেকে আইডিয়া নিয়ে লেখা শুরু করে দিতে পারেন। লেখার শেষ দিকে সে সম্বন্ধে বই থাকলে সেগুলোর অ্যাফিলিয়েট লিংক দিতে পারেন। বেশ ভালো পরিমান ট্রাফিক আসার সম্ভাবনা প্রবল।
Statistics ও prediction ওয়েবসাইট
সারাবছর ধরে কোন না কোন লীগের খেলা চলতেই আছে। কখনো ucl কখনো ইউরোপ লীগ কখনো বা ipl.এ ধরনের খেলাধুলায় মানুষের আগ্রহ থাকে চরম ধরনের।তাদের আগ্রহকে পূঁজি করে বানিয়ে ফেলতে পারেন একটি সম্পূর্ণ ওয়েবসাইট!
এক্ষেত্রে ওয়েবসাইট সাজানোই গুরুত্বপূর্ণ। মানুষ যেন আপনার ওয়েবসাইটে এসে ভালো অভিজ্ঞতা পায়। গতানুগতিক ওয়েবসাইট বানালে মানুষজন মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে।
ভালো কোন ওয়েব ডেভেলপার দিয়ে ওয়েবসাইটটি বিল্ড করা থাকলে ভালো হয়।এরপরে আপনার কাজ খেলার আগে statictics প্রোভাইড করা। এজন্য আপনি অন্যান্য ওয়েবসাইটের কন্টেন্ট কপিরাইট করে নিজের ওয়েবসাইটে আপলোড দিতে পারেন।
সেখানে থাকতে পারে শেষ ১০ ম্যাচের statistic, ফাউলের সংখ্যা ইত্যাদি ইত্যাদি তথ্য।ভালো cpm আনার জন্য আপনি এক পেজেই সব তথ্য না দিয়ে ছোট ছোট করে তথ্য দিতে পারেন।যেমন ধরা যাক foul এই হেডিং দিবেন কিন্তু তথ্য দিবেন না। তথ্য জানার জন্য মানুষ যাতে ক্লিক করে।এই foul হেডিং এর ভিতরেই তথ্য দিবেন।
এছাড়া ম্যাচের সামারি লিখতে পারেন, সম্ভাব্য ফলাফল কি হতে পারে সেটি লিখতে পারেন। এ ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে ওয়েবসাইটে থিম যাতে আকর্ষনীয় হয়।
যেসব ছবি দেয়া হবে সেগুলো যেন কপিরাইটফ্রি আর ইনফোগ্রাফিক ধরনের হয়। খেলার জনপ্রিয়তা সারা বিশ্বেই রয়েছে।আপনার ওয়েবসাইটে যদি Seo করেন আর সেটি rank করে তাহলে বিশাল পরিমাণ ট্রাফিক আনতে পারেন।
তাছাড়াও জনপ্রিয় খেলোয়ারদের ট্রান্সফার নিউজ,ম্যাচের ফলাফলের নিউজ, প্লেয়ারদের ক্যারিয়ারের গোল বায়োগ্রাফি সম্বন্ধে লিখতে পারেন।
Fashion lifestyle ওয়েবসাইট
মানুষ সৌন্দর্যের পূজারী।আর এটির উপর ভিত্তি করে তৈরি করতে পারেন আপনার ওয়েবসাইট। বিভিন্ন ইনফরমেটিক তথ্য,ফ্যাশন সম্পর্কে লেখালেখি করে নিতে পারেন। আপনার ওয়েবসাইটের লেখার শিরোনাম হতে হবে আকর্ষণীয়।তাছাড়া লেখার মান হতে হবে ভালো।
ফ্যাশন সচেতন যারা আছেন তাদের এই সেক্টরটি সবচেয়ে উপযোগী। আপনার কন্টেন্ট এর শিরোনাম হতে পারে 10 type of shoe you need কিংবা 10 solution to reduce dark circle ধরনের। কারন এসবের উপরেই মানুষজন সাধারনত অনলাইনে আর্টিকেল পড়তে আসে।একইসাথে পোস্টে আপনি অ্যাফিলিয়েট প্রোডাক্ট যুক্ত করতে পারেন।এ ধরনের ওয়েবসাইটে লেখা বা কনটেন্টই মূল উপকরন।
ওয়েবসাইটিতে অ্যানিমেটেড ছবি ব্যবহার করতে পারেন। একইসাথে yoga, exercise ধরনের কন্টেন্ট ও আপলোড দিতে পারেন। ওয়েবসাইটটির কনটেন্টের শিরোনাম আকর্ষণীয় হওয়া উচিত।সেই সাথে thumbnail টিও। বিভিন্ন ফ্যাশন রিলেটেড ফেসবুক গ্রুপে আপনাদের ফেক আইডি গুলো নিয়ে পোস্ট করতে পারেন।এতে ১০০ জনের মধ্যে ৯০ জন না দেখলেও অন্তত ১০ জন আপনার ওয়েবসাইট ভিজিট করবে।নিত্য নতুন ট্রাফিক আসতে আসতে দেখবেন একসময় আপনার ওয়েবসাইটটি ranking এ চলে এসেছে। এক্ষেত্রে কন্টেন্ট গুলোর লেখার মান ধরে রাখাটাই গুরুত্বপূর্ণ।
এখন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স দিয়েই এসব কন্টেন্ট লেখা যায়।Chatgpt,Copilot ধরনের ai ব্যবহার করে আপনার কন্টেন্ট এর আইডিয়া জেনারেট করতে পারেন। পুরোপুরি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নির্ভর না করে খানিকটা ক্রিয়েটিভভাবে লিখলেই একটি ভালো আর্টিকেলে সেটি পরিনত হতে পারে।তাছাড়া এখানে theme ভালোভাবে সাজানো উচিত।ভিজিটররা যাতে প্রিমিয়াম ধরনের ফিল পায়। লেখার শেষে Faq প্রশ্ন দিয়ে দিবেন। সাথে সেই সম্পর্কিত লেখার লিংকও। এতে ওয়েবসাইটে ক্লিক পড়বে অনেক। ভালো আর্নিং এর জন্য এ ক্লিক অতি গুরুত্বপূর্ণ।
যেকোন কিছুতে ভালো করতে চাইলে ধৈর্য্যের দরকার।সেইসাথে ভালো প্রস্ততিরও।যেমন তেমনভাবে ওয়েবসাইট না সাজিয়ে একটু কষ্ট করে সময় নিয়ে তৈরি করাটাই সবচেয়ে উপযোগী। ওয়েবসাইট থেকে আর্নিং একটি লং টার্ম প্রজেক্ট। আজকে ধারনা দিলাম কি কি ধরনের ওয়েবসাইট বিল্ড করে নিতে পারেন।আশা করি ভালো ধারনা দিতে পেরেছি।আজ এটুকুই।দেখা হবে আবারো নতুন কোন পোস্ট নিয়ে। সাথেই থাকুন, ধন্যবাদ।
0 responses on "লেখালেখি করে আয়ের ৫টি ওয়েবসাইট তৈরীর আইডিয়া"