প্রযুক্তিপ্রেমী হলে অ্যাপলের ম্যাকবুকের নাম অবশ্যই শুনে থাকবেন। ল্যাপটপ কম্পিউটারের জগতে অ্যাপলের ম্যাকবুকের নাম বেশ উজ্জ্বল। অ্যাপলের এই ল্যাপটপ সিরিজ অনেকের কাছেই প্রথম পছন্দের। বিশেষ করে যারা বিভিন্ন স্থান থেকে কন্টেন্ট তৈরি করেন তারা ম্যাকবুককে অত্যন্ত গুরুত্ব দেন।
অ্যাপলের এই ল্যাপটপ কেন এতো জনপ্রিয় এবং এটি আসলে কী এ নিয়ে অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগতে পারে। উইন্ডোজ পিসির সাথে বর্তমানে বাজারে পাল্লা দেয়ার মতো অপারেটিং সিস্টেম (ম্যাকওএস) শুধু অ্যাপলেরই রয়েছে। আর এই অপারেটিং সিস্টেমযুক্ত অ্যাপলের তৈরি ল্যাপটপই মূলত ম্যাকবুক নামে পরিচিত যা অ্যাপল নিজেই তৈরি করে থাকে। আজকের পোস্টে আমরা অ্যাপলের ম্যাকবুকের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জেনে নেব।
ম্যাকবুক কী?
ম্যাকবুক অ্যাপলের তৈরি করা তৃতীয় প্রজন্মের ল্যাপটপ। অর্থাৎ এর আগেও দুটি সিরিজের ল্যাপটপ অ্যাপল বাজারে এনেছিল যাদের নাম ছিল পাওয়ারবুক এবং আইবুক। ২০০৬ সালে অ্যাপল প্রথম তাদের এই নতুন সিরিজের ল্যাপটপ বাজারে আনে। এই সিরিজে বিভিন্ন আধুনিক প্রযুক্তি যুক্ত করার মাধ্যমে ল্যাপটপের ব্যাপক উন্নতি সাধন করে অ্যাপল। নতুন প্রজন্মের প্রযুক্তি সবার আগে অ্যাপলের ম্যাকবুকগুলোতেই পাওয়া যায়। ২০১৫ সালে অ্যাপল তাদের রেটিনা প্রযুক্তির ডিসপ্লে প্রথম এই ল্যাপটপে ব্যবহার করে। এছাড়াও ২০১৬ সালে তারা নতুন প্রযুক্তির স্টোরেজ এসএসডি বা সলিড স্টেট ড্রাইভ তাদের ম্যাকবুকে ব্যবহার করে।
ম্যাকবুক অ্যাপলের নিজেদের তৈরি এবং তাদের নিজস্ব অপারেটিং সিস্টেমে চলে যা ম্যাকওএস নামে পরিচিত। ম্যাকওএস একটি আধুনিক অপারেটিং সিস্টেম যা উইন্ডোজের সাথে পাল্লা দিতে সক্ষম এবং এতে কিছু অসাধারন ফিচার রয়েছে। তাছাড়া ম্যাকবুকগুলোতে থাকে একদম আধুনিক ও নতুন জেনারেশনের বিভিন্ন প্রযুক্তি। খুবই সুন্দর ও প্রিমিয়ামভাবে ডিজাইন করা হয় বলে ম্যাকবুকগুলোর বাড়তি আকর্ষণ রয়েছে বাজারে। তাছাড়া এই ল্যাপটপ ব্যবহার করা সহজ নতুন ব্যবহারকারীদের জন্য। ম্যাকবুকে এমন বেশ কিছু ফিচার থাকে যা সাধারণ উইন্ডোজ ল্যাপটপে পাওয়া যায় না। আর সব মিলিয়ে তাই ম্যাকবুক ল্যাপটপ অনেকের কাছেই বেশ জনপ্রিয়।
ম্যাকবুক ল্যাপটপের জনপ্রিয়তার কারণ
ম্যাকবুক ল্যাপটপের জনপ্রিয়তার বিভিন্ন কারণ রয়েছে। কোন একটি দিক দিয়ে এই ল্যাপটপকে সেরা বলা যাবে না। বিভিন্ন ব্যবহারকারীর চাহিদা অনুযায়ী উইন্ডোজ বা ম্যাকবুক যে কোন ধরণের ল্যাপটপ কারো প্রিয় হতে পারে। এখানে আমরা বেশ কিছু কারণ নিয়ে কথা বলবো যেগুলোর কারণে ম্যাকবুক সহজেই বাজার ধরে রাখতে পারে।
ম্যাকবুক তথা যে কোন অ্যাপল ডিভাইসেরই আকর্ষণের অন্যতম কারণ এদের ডিজাইন। অ্যাপল তাদের ডিভাইসগুলোর ডিজাইনের ক্ষেত্রে অনেক সময় ব্যয় করে বলে তাদের প্রতিটি ডিভাইসই দেখতে সুন্দর, প্রিমিয়াম ও আধুনিক হয়ে থাকে। ম্যাকবুকও তার ব্যতিক্রম নয়। বাজারের বেশিরভাগ ল্যাপটপ হতে ম্যাকবুক পাতলা ও প্রিমিয়াম একটি অভিজ্ঞতা দিতে সক্ষম। শুনতে খুব একটা ভাল না লাগলেও, বাস্তবতা হচ্ছে, ম্যাকবুক আপনার সামাজিক মর্যাদার মাপকাঠিও হতে পারে। তাই অনেকেই তাদের ল্যাপটপ হিসেবে ম্যাকবুক পছন্দ করে থাকেন।
তবে ম্যাকবুকের জনপ্রিয়তার একটি বড় কারণ অ্যাপলের ইকোসিস্টেম। অ্যাপল তাদের ডিভাইস ও অপারেটিং সিস্টেম নিজেদের তত্বাবধানে তৈরি করে বলে বেশ সুন্দর ও স্মুথ অভিজ্ঞতা দিতে পারে প্রতিটি ডিভাইসে। যেমন কারো যদি আইফোন থাকে তবে খুব সহজেই সে এয়ারড্রপ ব্যবহার করে ম্যাকবুক থেকে আইফোন বা আইফোন থেকে ম্যাকবুকে ফাইল শেয়ার করে ফেলতে পারে। এমন বেশ কিছু অসাধারন ফিচার ব্যবহার করা যায় অ্যাপলের ইকোসিস্টেমের মধ্যে থাকা গেলে।
অ্যাপলের আইফোন, আইপ্যাড, অ্যাপল টিভি, অ্যাপল ওয়াচ, ম্যাক, আইক্লাউড, অ্যাপল মিউজিক সবগুলো মিলিয়েই আপনি এমন অভিজ্ঞতা পেতে পারেন যা বেশ দুর্লভ। কাজেই একটি অ্যাপল ডিভাইস থাকলেই অনেকের ক্ষেত্রে আরেকটি অ্যাপল ডিভাইস নেয়ার ইচ্ছা জাগাটা স্বাভাবিক।
তবে শুধুই ইকোসিস্টেম নয়, ম্যাকওএসে এমন বেশ কিছু অ্যাপ আছে যেগুলো ম্যাক ছাড়া আর কোথাও পাওয়া সম্ভব নয়। যেমন অ্যাপলের তৈরি ভিডিও এডিটিং করার সফটওয়্যার ফাইনাল কাট। এটি বেশ অসাধারণ ভিডিও এডিট করার অভিজ্ঞতা দিতে সক্ষম এবং এটি শুধুমাত্র ম্যাকওএসের জন্য পাওয়া যায়। আর তাই কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের কাছে ম্যাক বেশ পছন্দের। এছাড়াও সকল গুরুত্বপূর্ণ অ্যাপও ম্যাকের জন্য সহজেই পাওয়া যায়। যদিও উইন্ডোজের মতো এতো পরিমাণ সফটওয়্যার নেই ম্যাকের জন্য। তবে ম্যাকের জন্য একজন সাধারণ ব্যবহারকারীর যেসব অ্যাপ দরকার তার সবই অ্যাপস্টোরেই খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিটি অ্যাপই ম্যাকে খুব ভালো কাজ করে। আর তাই ম্যাকের আলাদা আকর্ষণ রয়েছে বাজারে।
বেশ কিছু হার্ডওয়্যার ফিচারও ম্যাককে অন্যান্য ল্যাপটপ থেকে আলাদা করেছে। যেমন ম্যাকের রেটিনা ডিসপ্লে অনেকের কাছেই বেশ পছন্দের এর বেশি পিক্সেল ডেনসিটির জন্য। ম্যাকবুকের কীবোর্ডেও টাইপ করে অসাধারন অভিজ্ঞতা পাওয়া যায়। এছাড়া স্পিকারের সাউন্ড কোয়ালিটির দিক থেকেও ম্যাকবুক বেশ ভাল। ম্যাকবুকের ম্যাজিক ট্র্যাকপ্যাডও অনেকের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে। পুরো ট্র্যাকপ্যাডে প্রতিটি কাজে আলাদা হ্যাপ্টিক ফিডব্যাক পাওয়া যায়। শুধু তাই নয় এতে ক্লিকের ক্ষেত্রে ম্যাগ্নেট ব্যবহার করা হয়। এই ট্র্যাকপ্যাডের হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার ফিচার মিলিয়ে এমন এক অভিজ্ঞতা আপনি পাবেন যে সাধারণ ল্যাপটপের ট্র্যাকপ্যাড আর ব্যবহার করতে মন চাইবে না।
এছাড়া ম্যাকবুকের প্রতিটি হার্ডওয়্যার খুব উচ্চ মান সম্পন্ন। দামী ল্যাপটপ হওয়ায় ম্যাকের সবকিছুই খুবই ভালো সেবা দিতে পারে। তাই সাধারণত ম্যাকবুক অন্যান্য ল্যাপটপ হতে বেশিদিন টেকে। ম্যাকবুককে অ্যাপল তাদের অন্যান্য সকল ল্যাপটপের মতোই দীর্ঘদিন পর্যন্ত সফটওয়্যার সাপোর্ট দেয়। ফলে লেটেস্ট অনেক কিছুই সবার আগে পাওয়া যায়। আর একারণে ম্যাকবুকের রিসেল ভ্যালুও অন্যান্য ল্যাপটপ থেকে বেশি। ৩ বছরের আগের ম্যাকবুকও বাজারে এর আসল দামের ৫০ শতাংশের উপরে বিক্রি করা যায়। অন্য কোন ল্যাপটপকে আপনি এতো দামে বিক্রি করতে পারবেন না।
কাজেই সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার সবদিক দিয়েই ম্যাকবুকের বেশ ভালো কিছু সুবিধা আছে যা অনেক ব্যবহারকারীর কাছেই পছন্দের। ম্যাকবুক বাজারে নিজের এমন একটি জায়গা করে নিয়েছে যা উল্লেখ না করলেই নয়। ম্যাকবুকের যে বিভিন্ন রকম সমস্যা নেই তা নয়। যেমন অনেক দক্ষ ব্যবহারকারীর কাছেই ম্যাকবুককে অনাকর্ষণীয় লাগতে পারে।
কেননা এখানে আপনি অনেক প্রোগ্রাম ব্যবহার করতে পারবেন না যা উইন্ডোজ ল্যাপটপে পারা যায়। তাছাড়া আপনি চাইলেও অপারেটিং সিস্টেম পরিবর্তন করতে পারবেন না ম্যাকবুকে। কাজেই অনেক দিক থেকেই ম্যাকবুকের সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। তাই আপনি কী কাজে ল্যাপটপ ব্যবহার করবেন সেটির উপর ভিত্তি করে আপনার জন্য ম্যাকবুক বা অন্য কোনো ল্যাপটপ সেরা পছন্দ হতে পারে।
আপনি কি ম্যাকবুক পছন্দ করেন? আপনার মতামত কমেন্টে জানান!