বর্তমান ডিজিটাল যুগে এসে ফেসবুক মেসেঞ্জার হয়ে উঠেছে বন্ধু ও পরিচিতজনের সাথে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম। প্রথমে ফেসবুক মেসেঞ্জার ফেসবুকের সাথেই একটি ফিচার হিসেবে থাকলেও এটি ধীরে ধীরে আলাদা হয়ে যায়। বর্তমানে ফেসবুক আইডি এক্টিভ না থাকলেও মেসেঞ্জার ব্যবহার করা যায় আলাদা সেবা হিসেবে।
মেসেঞ্জারের অসংখ্য গ্রাহক থাকায় প্রতিনিয়তই নতুন নতুন বিভিন্ন আপডেটের মাধ্যমে বিভিন্ন সুবিধা নিয়ে আসে। এসব ফিচার অনেকগুলোই আড়ালে থেকে যায়। মেসেঞ্জার সম্পর্কে ব্যবহারকারীদের একটি পুরনো অভিযোগ যে মেসেঞ্জারের নিরাপত্তা ও প্রাইভেসি ফিচার অন্যান্য বিভিন্ন সেবা থেকে কম। আর তাই অনেকে নিরাপত্তার জন্য হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রাম ইত্যাদি সেবাও ব্যবহার করেন।
আর এই কারণেই ফেসবুক বর্তমানে মেসেঞ্জারের নিরাপত্তা ও প্রাইভেসির দিকে আরও বেশি নজর দিচ্ছে। এজন্য তারা নতুন নতুন বিভিন্ন ফিচারও নিয়ে আসছে। এসব ফিচার সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি না। এমন একটি ফিচার নিয়েই আমাদের আলোচনা।
মেসেঞ্জার ২০১৭ সালে নতুন একটি ফিচার নিয়ে আসে ‘সিক্রেট কনভারসেশন’ নামে। এই ফিচারটি সম্পর্কে অনেকেরই হয়তো ধারণা নেই। ফিচারটি অনেক বছর ধরেই মেসেঞ্জারের সাথে যুক্ত আছে। মেসেঞ্জারের ‘সিক্রেট কনভারসেশন’ ফিচারটি ব্যবহারকারীদের গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা আরও বাড়াবে। সেই সাথে অ্যাকাউন্ট হ্যাক হলেও মেসেজের বিষয়বস্তু অন্যের জেনে ফেলার সম্ভাবনা কমে যাবে। সিক্রেট কনভারসেশন ফিচারটি অ্যান্ড্রয়েড ও আইওএস স্মার্টফোনে মেসেঞ্জার অ্যাপের মাধ্যমে ব্যবহার করা যায়। এটি ব্যবহারের মাধ্যমে মেসেঞ্জারেও এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন পাওয়া যায় যেটি বর্তমানে অনেক ইনস্ট্যান্ট মেসেঞ্জার সেবাই ব্যবহার করছে। এই পোস্ট থেকে এই ফিচারটির সুবিধা এবং কীভাবে ব্যবহার করবেন সে বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
সিক্রেট কনভারসেশন ব্যবহারের সুবিধা
সিক্রেট কনভারসেশন ফিচারটি মূলত দুজনের মধ্যে চ্যাট, কল কিংবা ভিডিও কল গোপন রাখতে ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ এটি আপনার চ্যাটে বাড়তি নিরাপত্তা দিতে পারে। সিক্রেট কনভারসেশন ফিচারটি ব্যবহার করে এন্ড টু এন্ড এনক্রিপটেড চ্যানেলে চ্যাট করা যাবে।
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে যে এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন ব্যাপারটি কী? এটি মূলত চ্যাট করার জন্য একটি সিকিউর বা নিরাপদ ব্যবস্থা যার মাধ্যমে দুটি ডিভাইসের মধ্যে সংযোগ এনক্রিপটেড হয়ে যাবে। ফলে যে ডিভাইস থেকে চ্যাট শুরু করা হয়েছে এবং যে ডিভাইসে এই চ্যাট পাঠানো হয়েছে সেই ডিভাইস ছাড়া আর কোথাও থেকে চ্যাটের কোন তথ্য দেখা যাবে না। এর ফলে আপনি অন্য একটি ডিভাইস থেকে মেসেঞ্জারে লগইন করলেও সেই চ্যাট দেখতে পাবেন না। ফলে হ্যাকারদের পক্ষেও এটি দেখা সম্ভব হবে না।
সিক্রেট কনভারসেশন ফিচারটি অন করে চ্যাট করলে আপনি বাড়তি নিরাপত্তা পাবেন এবং আপনার চ্যাটের বিষয়বস্তু অন্য কারো দেখে ফেলার সম্ভাবনাও থাকবে না। এমনকি ফেসবুক নিজেও এই চ্যাট দেখতে পারবে না। এর মাধ্যমে শুধু টেক্সট মেসেজিং নয়, চাইলে কল এবং ভিডিও কলও করা যাবে।
তবে সিক্রেট কনভারসেশন কোন গ্রুপ চ্যাটে বা পিসি থেকে ব্যবহার করতে পারবেন না। এজন্য স্মার্টফোনে ফেসবুক অ্যাপের দরকার হবে। চলুন জেনে নেয়া যাক সিক্রেট কনভারসেশন ফিচারটি কীভাবে চালু করতে পারবেন যে কারো জন্য।
স্মার্টফোনে সিক্রেট কনভারসেশন চালুর নিয়ম
স্মার্টফোন ছাড়া সিক্রেট কনভারসেশন ফিচারটি ব্যবহার করা যাবে না। তাই অ্যান্ড্রয়েড বা আইওএস যে কোন একটি স্মার্টফোনের দরকার হবে। এছাড়া দরকার হবে মেসেঞ্জার অ্যাপ। মেসেঞ্জার অ্যাপ ইন্সটল করতে গুগল প্লেস্টোর কিংবা অ্যাপল অ্যাপ স্টোরে চলে যান এবং ইন্সটল করে নিন। এরপর নিচের নির্দেশনা অনুসরণ করতে পারেনঃ
- স্মার্টফোনের অ্যাপ লিস্ট থেকে মেসেঞ্জার অ্যাপটি ওপেন করুন। লগইন করা না থাকলে লগইন করে নিন।
- এবার মেসেঞ্জারের হোম স্ক্রিনের ডানদিকে উপরে কোনায় একটি পেন্সিলের মতো আইকন দেখতে পাবেন। এই আইকনটি নতুন চ্যাট শুরু করার জন্য। এখানে ট্যাপ করুন।
- এবার আপনার সামনে চ্যাট করার জন্য আপনার ফ্রেন্ড লিস্টের তালিকা চলে আসবে। নতুন এই পেজে ডান দিকের কোনায় একই স্থানে একটি নতুন টগল দেখতে পাবেন যেখানে তালার আইকন থাকবে। সিক্রেট কনভারসেশন চালু করতে চাইলে এই টগলটি অন করে দিন।
- এবার আবারও আপনার বন্ধু তালিকা দেখতে পাবেন। যার সঙ্গে সিক্রেট কনভারসেশন চালু করতে চান তার নামটি খুঁজে বের করে ট্যাপ করুন।
- নতুন একটি চ্যাট উইন্ডো ওপেন হয়ে যাবে যেটি মূল চ্যাট থেকে আলাদা হবে পুরোপুরি। এই চ্যাট উইন্ডোর মধ্যে আপনি যেসব মেসেজ পাঠাবেন সেগুলো পুরোপুরি এন্ড টু এন্ড এনক্রিপটেড এনক্রিপটেড হবে বা নিরাপদ হবে।
সিক্রেট কনভারসেশন কি নিরাপদ?
মূলত বাড়তি নিরাপত্তা দিতেই মেসেঞ্জারের এই ফিচারটি চালু করা হয়েছে। কাজেই নিরাপত্তা নিয়ে টেকনিক্যাল ঝুঁকি থাকবে না এই ফিচারে। বরং সাধারন চ্যাট থেকে এই ফিচার চালু করে চ্যাট করলে আরও বেশি নিরাপত্তা পাবেন। কেননা আপনি আপনার মেজেঞ্জারে অন্য ডিভাইস থেকে লগইন করলেও এই চ্যাট দেখতে পাবেন না। কাজেই খুবই গোপনীয় তথ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে এই ফিচারটি ব্যবহার করলেই আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারবেন।
অন্য যে কোন ডিভাইস থেকে লগইন করে এই সিক্রেট কনভারসেশনে ঢুকলেই সেখানে একটি নতুন মেসেজ দেখতে পাবেন নতুন ডিভাইস অ্যাড হবার। আপনি বা যার সাথে চ্যাট করছেন তিনি নিজে থেকে এই ডিভাইস অ্যাড না করলে দ্রুত দুজনের অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তার দিকে নজর দিন এবং চ্যাট বন্ধ করে দিন। ফেসবুক অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তার জন্য যেসব কাজ করতে পারেন সে বিষয়ে আমাদের পোস্ট দেখে নিতে পারেন।
মেসেঞ্জার ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাড়তি নিরাপত্তার এই ফিচারটি অনেক ব্যবহারকারীর জন্যই নিয়ে এসেছে স্বস্তি। এই ফিচারের ফলে মেসেঞ্জারেও অন্যান্য মেসেজিং সেবার মতই এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন পাওয়া যাবে এবং নিরাপত্তার দিকটিও নিশ্চিত হবে। কাজেই এখন থেকে মেসেঞ্জারে গুরুত্বপূর্ণ চ্যাটে এই ফিচারটি ব্যবহার শুরু করতে পারেন।
মেসেঞ্জারের সিক্রেট কনভারসেশন ফিচারটি আপনি ব্যবহার করেছেন কি? ব্যবহার করে থাকলে আপনার অভিজ্ঞতা জানাতে পারেন আমাদের পোস্টে কমেন্টের মাধ্যমে।
0 responses on "মেসেঞ্জারে সিক্রেট কনভারসেশন ফিচার ব্যবহার করবেন যেভাবে"