মেয়েদের জন্য কোন চাকরি ভালো ? আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে চলেছি।
বিগত কয়েক দশকে মেয়েরা কর্মজীবনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন জায়গাতে স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত রয়েছে।
আগেকার সময়ে, সংসার সামলানোর ঝামেলায় বহু নারীরই চাকরি করার স্বপ্ন অধরাই থেকে যেত।
কিন্তু, সময় ও যুগ- দুইই পাল্টেছে।
তাই, এখনকার নারীরা বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে নিজেদের গুরুত্বকে সফলভাবে প্রমাণ করেছে।
আর, সবথেকে বড় বিষয় হল, চাকরির ক্ষেত্রে নারীদের আর্থিক স্বাধীনতা তাদের ব্যক্তিত্ব ও দৃষ্টিভঙ্গিতে যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে।
একজন মহিলার চাকরি করার সবচেয়ে প্রধান কারণ হল তাদের আর্থিক স্বাধীনতা।
যা, তাদের অস্তিত্বকে একটা আত্মপরিচয় দিয়েছে।
এছাড়াও, পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি নিজেদের ভবিষ্যতকে সুরক্ষিত করতেও নারীদের স্বাবলম্বী হয়ে ওঠা একান্ত প্রয়োজনীয়।
আজ চাকুরীর জগতে এমন অনেক ইন্ডাস্ট্রি আছে, যা মেয়েদের জন্যে শ্রেষ্ঠ অপশন দেয়।
ক্যারিয়ারে ফোকাসড মহিলারা এখন টেকনোলজি, ফিনান্স, ও বিজ্ঞানের মতো ক্ষেত্রেও দাপিয়ে কাজ করছে।
অতীতে, এই ধরণের ইন্ডাস্ট্রিগুলোতে পুরুষদের আধিপত্য থাকলেও, বর্তমানে, নারী বা পুরুষদের মধ্যে চাকরি নিয়ে ভেদাভেদ অনেকটাই কমেছে।
আর, নারীদের চাকরির ক্ষেত্রেগুলোও ক্রমশ অনেকটা প্রশস্ত হচ্ছে।
মেয়েদের জন্য কোন চাকরি ভালো – (সেরা ১০টি তালিকা)
একজন নারী হিসেবে, আপনি যে ক্ষেত্রে আগ্রহী, তার উপর নির্ভর করে অনলাইনে সৃজনশীল ও নানান অপ্রচলিত চাকরির সুযোগ খুঁজতেই পারেন।
তবে, এতো অসংখ্য বিকল্পের মধ্যে, উপযুক্ত পেশা নির্বাচন করা সবসময়ই নারীদের জন্য চ্যালেঞ্জিং কাজ হয়ে দাঁড়ায়।
তাই, এখানে আমরা মেয়েদের জন্য সেরা কয়েকটি চাকরির সম্পর্কে কথা বলব।
এখান থেকে আপনারা জানতে পারবেন যে, মেয়েদের জন্য সবচেয়ে ভালো বেতনের সেরা চাকরিগুলোর ব্যাপারে।
১. শিক্ষকতা:
শিক্ষকতা সর্বদাই ভারতীয় নারীদের জন্য সেরা জীবিকার মধ্যে অন্যতম।
এছাড়াও, নারীরা স্বভাবতই সহানুভূতিশীল, ধৈযশীল ও বুঝদার হওয়ার ফলে, শিক্ষকতার পেশায় এরা বেশি সফল হয়ে থাকে।
আপনি আপনার স্বতন্ত্রতা, দক্ষতা ও যোগ্যতার উপর নির্ভর করে নিম্নলিখিত যেকোনো বিকল্পটি বাছতে পারেন –
- প্রাথমিক শিক্ষাদান
- জুনিয়র শিক্ষকতা
- উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা
- স্নাতকোত্তর শিক্ষকতা (PGT)
- প্রশিক্ষিত স্নাতক শিক্ষকতা (TGT)
- সহকারী অধ্যাপক
- প্রফেসর
এছাড়াও, আজকাল অনলাইনে শিক্ষকতা করাও বহু নারীর কাছেই পছন্দের পেশা হয়ে উঠছে।
আপনি অনলাইন শিক্ষণ ওয়েবসাইটের মাধ্যমে শিশুদের নাচ, গান কিংবা নানান ধরণের শৌখিন বিষয়েও শিক্ষা
প্রদান করতে পারেন।
২. হিউমান রিসোর্স:
হিউমান রিসোর্স জীবিকাটি হল বর্তমানের সবথেকে জনপ্রিয় পেশাগুলোর মধ্যে একটি।
এই পেশায় আপনাকে কথা বলায় পারদর্শী হতে হবে ও কথোপকথনেও দক্ষ হতে হবে।
আর, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের কথোপকথনের কাজটি অনেক বেশি সাবলীল হয়ে থাকে।
যেকোনো প্রতিষ্ঠানের হিউমান রিসোর্স কর্মচারীরা সেখানকার সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ।
এই পেশাতে প্রতিষ্ঠানের হয়ে আপনাকে সেখানকার প্রশাসনিক কাজকর্মগুলোতে নির্দেশনার, পরিকল্পনা, সমন্বয়ের কাজ করতে হয়।
এছাড়াও, কোম্পানিতে নতুন প্রার্থীদের নিয়োগ, সাক্ষাৎকার ও অনবোর্ডিং তত্ত্বাবধানও করতে হয়।
এটি মহিলাদের জন্যে খুব লাভজনক একটা পেশা।
আর, এই পদে উন্নতির জন্যে প্রয়োজন একটা হিউমান রিসোর্স ম্যানেজমেন্টের স্নাতকোত্তর ডিগ্রির।
৩. চিকিৎসা ক্ষেত্র:
মেয়েরা স্বাস্থ্যসেবা খাতেও চমৎকার উন্নতি করে থাকে।
আপনি একজন ডাক্তার, নার্স বা চিকিৎসা শিল্পের অন্য ক্ষেত্রের সাথেও যুক্ত হতে পারেন।
এই পেশায় পদের স্থিতিশীলতার পাশাপাশি কর্মসংস্থানেরও সুযোগ আছে।
সরকারী বা বেসরকারী যেকোনো হাসপাতালেই নিযুক্ত হওয়া যেতেই পারে।
এছাড়াও, আপনি ফার্মেসি কিংবা ডায়াগনস্টিকসকেও পেশা হিসেবে নির্বাচিত করতে পারেন।
তবে, ডাক্তারির জন্যে প্রথমে আপনাকে NEET পরীক্ষাটিতে সফল হয়ে, মেডিকেল কলেজ থেকে এমডি ডিগ্রি পেতে হবে।
এরপর, আপনি উচ্চতর অধ্যয়ন কিংবা এমবিবিএসও করতে পারেন।
৪. নিউট্রিশনিস্ট:
এই সময়ে, মেয়েদের জন্যে নিউট্রিশনিস্টও বেশ আকর্ষণীয় একটা পেশা।
আপনাকে এই পেশাতে মানুষকে, তাদের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে সঠিক ডায়েট প্ল্যান করে দিতে হবে।
এখানে আপনাকে রোগীদেরকে সুষম ও পুষ্টিকর খাদ্য বজায় রেখে সুস্থ থাকতে আপনার মূল্যবান পরামর্শ দিতে হয়।
কোনো ব্যক্তির শারীরিক অসুস্থতা থাকলে, এই পেশায় আপনাকে সেই ব্যক্তির স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্যে উপযোগী ডায়েট পরিকল্পনাও করে দিতে হয়।
এটি এমন একটা পেশা; যেটা আমাদের খাদ্য-পানীয়ের পিছনে থাকা বিজ্ঞানকে ভিত্তি করেই কাজ করে।
তাই, আপনি চাইলে এই স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত পেশাটিকেও আপনার নিজস্ব পেশাতে পরিণত করতে পারেন।
৫. ফ্যাশন ডিজাইনিং:
নারীদের জন্যে সবথেকে জনপ্রিয় ও উচ্চ বেতনের চাকরি হল ফ্যাশন ডিজাইনিং।
এই পেশাতে আপনাকে পোশাকের আকৃতি, রঙ, নকশা ও কাপড় সম্পর্কিত দিক; এমনকি পোশাকের বিশেষ ডিসাইনও তৈরি করতে হয়।
এখানে আপনার প্রাথমিক কাজ থাকে পোশাক, আনুষাঙ্গিক জিনিসপত্র ও জুতোর ডিজাইনের স্কেচ করতে হয়।
এছাড়াও, আপনাকে দর্জিদের পোশাক বানানোর জন্যে নির্দেশনাও দিতে হয়।
আমাদের দেশে সবথেকে স্বনামধন্য ফ্যাশন ইনস্টিটিউট হল ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ফ্যাশন টেকনোলজি।
এখানে সুযোগ পেতে হলে, আপনাকে এদের এন্ট্রান্স এক্সামে পাশ করতে হবে।
এছাড়াও, বর্তমানে আরও বিভিন্ন ফ্যাশন ডিজানিং ইনস্টিটিউটও খুলেছেন এই বিষয়ে শিক্ষাদানের জন্যে।
৬. ব্যাঙ্কিং বা ইন্সুরেন্স:
ফিনান্স ও ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রগুলো নারীদের চাকরির ব্যাপক আর্থিক সুযোগ ও সম্মান দেয়।
এই পেশার সবচেয়ে ভালো দিক হল, এখানে একজন ব্যক্তি স্নাতক হওয়ার পরই ব্যাঙ্কিং পরীক্ষাগুলোতে বসতে পারে।
আপনি এখানের বিভিন্ন বিভাগীয় পরীক্ষাতেও বসতে পারেন।
এই ক্ষেত্রে পদোন্নতি লাভ করাটা অনেকটা সহজ।
যেকোনো ব্যাঙ্কিং ও বীমা চাকরির ক্ষেত্রে ধৈর্য, ভালো কথা বলার ক্ষমতার পাশাপাশি দক্ষ পরিচালন ক্ষমতাও থাকা দরকারি।
এছাড়াও, আপনি নিম্নলিখিত ফিনান্স পেশাগুলোও দেখতে পারেন –
- ফিনান্স বিশ্লেষক
- চার্টার্ড একাউন্টেন্ট
- রিলেশনশিপ ম্যানেজার
- কাস্টমার সার্ভিস এক্সিকিউটিভ
- ক্যাপিটাল মার্কেট ট্রেডার
৭. সিভিল সার্ভিসেস:
সিভিল সার্ভিস হল মহিলাদের জন্য অন্যতম সেরা, সম্মানীয় ও সুরক্ষিত পেশা।
আর, সিভিল সার্ভিসে প্রবেশের জন্য আপনাকে ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (UPSC) পরীক্ষাতে পাস করতে হয়।
এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য আপনার কাছে ন্যূনতম স্নাতক ডিগ্রি থাকতে হবে।
এখানে উত্তীর্ণ ক্যান্ডিডেটদের তিনটি ভিন্ন সরকারি শাখায় নিযুক্ত করা হয় –
- প্রশাসনিক পরিষেবা (আইএএস)
- বৈদেশিক পরিষেবা (আইএফএস)
- পুলিশ সার্ভিস (আইপিএস)
৮. ব্লগিং:
ব্লগিং, মহিলাদের মধ্যে একটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় জীবিকা হতে পারে।
কারণ, এখানে তারা তাদের নিজস্ব অভিজ্ঞতা, মতামত ও অনুভূতি ভাগ করে নেওয়ার মাধ্যম পায়।
এখানে, আপনি কার্যকরভাবে আপনার প্রতিভা ও জ্ঞান প্রদর্শনের সুযোগ পাবেন।
ব্লগিং মানুষকে বর্তমান সময় সম্পর্কে সচেতন থাকতে সাহায্য করে।
আর, সারা বিশ্বের লোকেরা আমাদের এই লেখা পড়তে, মন্তব্য ও মতামত প্রকাশ করতে সক্ষম৷
তাই, এই ক্ষেত্রে উন্নতির অনেকটাই সুযোগ আছে।
৯. শিল্পোদ্যোগতা:
আগে উদ্যোক্তা হওয়া পুরুষদের একচেটিয়া ব্যাপার ছিল।
তবে, বর্তমানে অনেক নারীই উদ্যোক্তাপতি হওয়ার পথে পা বাড়িয়েছে।
এবং, বহু মহিলা ব্যক্তিত্বই অত্যন্ত দক্ষতার সাথেই নিজেদের ব্যবসা পরিচালনা করছে।
অনেক নারীরা বিভিন্ন উদ্ভাবনী স্টার্ট-আপও শুরু করেছে।
আপনার যদি উন্নত ব্যবসায়িক ধারণা বা আগ্রহ থাকে; তাহলে, আপনি স্ব-নিযুক্ত থেকে একজন উদ্যোগপতি হয়ে ওঠার চেষ্টা করুন।
সময় নিয়ে ধীরভাবে পরিকল্পনা করে উদ্যোগ নিয়ে, আপনি লাভ, ঝুঁকি ও লোকসান সমানভাবে ব্যালেন্স করে, যথেষ্ট সফল উদ্যোক্তা হয়ে উঠতে পারবেন।
১০. বিউটি জবস:
এই ডিজিটাল দুনিয়ায় সবাই নিজেদেরকে টিপটপ দেখতে বেশি পছন্দ করে।
তাই, এই সময়ে মানুষের রূপচর্চা ও মেকআপের হ্যাবিটটাও অনেকটাই বেড়েছে।
আর, এই সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে, মেকআপ আর্টিস্ট, হেয়ার স্টাইলিস্ট আর বিউটি আর্টিস্টদের চাহিদা।
এই কারণেই, এখনকার বহু মেয়েরাই এই ধরণের বিউটি জবগুলোকে নিজেদের পেশা হিসেবে বেছে নেওয়া পছন্দ করছে।
সঠিক ট্রেনিং ও অভিজ্ঞতার সাথে আপনি সহজেই বিউটি জবগুলোতে সফলতা পেতে পারেন।
পরিশেষে:
বর্তমান শতাব্দীতে মেয়েরা সফলতার সাথে বিভিন্ন চাকরি ক্ষেত্রেই নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করছে।
কোন বৈষম্য ছাড়াই, তারা কর্মজীবনের বিকল্পগুলোকে নির্বাচন করতে পারছে।
এখানে, আমরা অনেকগুলো চাকরির বিকল্পের মধ্যে মাত্র সেরা কয়েকটিকেই তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছি।
তবে, আপনি নিজের স্বপ্ন, আত্মবিশ্বাস, চাহিদা, পরিপূর্ণতা ও কৃতিত্বের জোরে- স্বাধীনভাবে যেকোনো জীবিকাকেই নির্বাচন করতে পারেন।
সেক্ষেত্রে, ১০০% সফলতার জন্যে আপনাকে সেই ব্যাপারে দৃঢ়-প্রতিজ্ঞ হয়ে উপযুক্ত পরিকল্পনা নিতেই হবে।
আমাদের আজকের মেয়েদের জন্যে সেরা চাকরি নিয়ে লেখা আর্টিকেলটি এখানেই শেষ হল।
লেখাটি পছন্দ হলে অবশ্যই তা কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন।
0 responses on "মেয়েদের জন্য কোন চাকরি ভালো ও সুবিধাজনক"