স্মার্টফোনের এই যুগে গুগল ম্যাপস সবথেকে জনপ্রিয় ম্যাপ অ্যাপ্লিকেশন। গুগল ম্যাপ অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীদের জন্য ডিফল্ট ন্যাভিগেশন টুল হিসেবে কাজ করে। তাই যারা অনেক ভ্রমণ করতে পছন্দ করেন তাদের জন্য গুগল ম্যাপ অত্যন্ত কাজের একটি অ্যাপ। এই অ্যাপ আপনাকে ভ্রমণের সময় দিক নির্দেশনা দেয়ার পাশাপাশি আরও বেশ কিছু কাজের ফিচারও দিয়ে থাকে যেগুলো আমাদের অনেকেরই অজানা।
আজকের এই পোস্টে গুগল ম্যাপ সম্পর্কে বেশ কিছু টিপস জেনে নেব যা আপনাকে ভ্রমণের সময় সাহায্য করতে পারে।
রিয়েল টাইম লোকেশন শেয়ার করা
আমরা একা বা ছোট গ্রুপের সাথে ভ্রমণ করলে আমাদের কাছের মানুষেরা সবসময়ই চিন্তায় থাকেন। এজন্য অনেকসময় তারা একটু পরপর ফোন করবার মাধ্যমে খোঁজ-খবর রাখতে চান। তবে গুগল ম্যাপ ব্যবহার করে আপনি এই কাজটি সহজেই করতে পারেন। আপনি চাইলে আপনার প্রতি মুহূর্তের লোকেশন শেয়ার করতে পারেন যে কারো সাথে ১৫ মিনিট থেকে এক দিন পর্যন্ত। এমনকি চাইলে আপনি এই ফিচার চালু রাখতে পারেন যতক্ষণ না নিজে থেকে তা বন্ধ করে দেন।
ফিচারটি ব্যবহার করতে গুগল ম্যাপের অ্যাপে প্রবেশ করে প্রোফাইল পিকচারে ট্যাপ করতে হবে। এরপর ‘Location sharing’ অপশনটি সিলেক্ট করে দিন। সেখান থেকে কতক্ষন পর্যন্ত লোকেশন শেয়ার করতে চান এবং কার সাথে শেয়ার করতে চান সেটি সিলেক্ট করে দিতে পারবেন। এরপর থেকে যার সাথে লোকেশন শেয়ার করেছেন সে তার গুগল অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে আপনার প্রতি মুহূর্তের লোকেশন জেনে নিতে পারবে।
মনে রাখবেন উক্ত ফিচারটি যতক্ষণ ব্যবহার করবেন তত দ্রুত আপনার ফোনের ব্যাটারি কমতে থাকবে। তাই ফিচারটি যতটুকু সময় দরকার ততক্ষন ব্যবহার করাই ভালো। এই ফিচার সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে আমাদের গুগল ম্যাপ লোকেশন শেয়ার পোস্ট দেখে নিতে পারেন।
ব্যাকাপ হিসেবে অফলাইন ম্যাপ ডাউনলোড করে রাখা
যদি আপনি কোন প্রত্যন্ত অঞ্চলে ভ্রমণ করে থাকেন তবে সেখানে খারাপ নেটওয়ার্কের কারণে ইন্টারনেট নাও পেতে পারেন। ফলে গুগল ম্যাপ কাজ করা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। কিন্তু অফলাইন ম্যাপ ফিচারের মাধ্যমে আপনি ওই স্থানের ম্যাপ আগে থেকেই ডাউনলোড করে রেখে দিতে পারেন সহজেই। এতে করে আপনি ইন্টারনেটে যুক্ত না থাকলেও সহজেই গুগল ম্যাপের মাধ্যমে দিক নির্দেশনা পেতে পারেন।
এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আপনি আমাদের গুগল ম্যাপ অফলাইন পোস্টটি দেখে নিতে পারেন। তবে মনে রাখবেন এই ফিচার ব্যবহার করলে লাইভ ট্রাফিক ডাটা এবং অল্টারনেটিভ রাউটিংয়ের মতো সুবিধাগুলো কাজ করবে না কেননা এগুলোর জন্য ইন্টারনেট কানেকশন থাকা বাধ্যতামূলক। তবে জিপিএস এবং টার্ন বাই টার্ন ন্যাভিগেশন অফলাইন ম্যাপে কাজ করবে। তাই ব্যাসিক দিক-নির্দেশনা পেতে সমস্যা হবে না।
ট্রাফিক জ্যাম থেকে বাঁচতে লাইভ ট্রাফিক ডাটা ফিচার ব্যবহার
কেউই ট্রাফিক জ্যামে বসে থাকতে পছন্দ করে না, বিশেষভাবে আপনি যখন কোথাও ঘুরতে যান। কোথাও ঘুরতে যাবার আগে আপনি গুগল ম্যাপের মাধ্যমে পুরো রাস্তার ট্র্যাফিকের তথ্য খুব সহজেই জেনে নিতে পারেন গুগল ম্যাপের লাইভ ট্রাফিক ডাটা ফিচারের মাধ্যমে। এই ফিচারের মাধ্যমে আপনি কোন রোডে কতটুকু জ্যাম আছে সেটি লাইভ দেখতে পাবেন অ্যাপ হতে। এই ফিচার ব্যবহার করতে আপনার ইন্টারনেট সংযোগের দরকার হবে।
আপনি কোন ডেসটিনেশন সেট করলে গুগল ম্যাপে এই তথ্য নিজ থেকেই দেখানো শুরু করবে। ফলে আপনি সহজেই ঠিক করতে পারবেন যে কোন রাস্তা দিয়ে গন্তব্যে যাওয়া আপনার জন্য ভালো হবে। এই ফিচার নিয়ে বিস্তারিত জেনে নিতে পারেন আমাদের গুগল ম্যাপ লাইভ ট্রাফিক পোস্ট থেকে।
টোল প্রাইস ও ভিন্ন রাস্তা ব্যবহার
কোথাও গাড়ি নিয়ে ভ্রমণ করতে চাইলে আগে থেকেই সে রাস্তায় কোথাও টোল আছে কিনা বা থাকলে কত টাকা টোল দিতে হবে এসব তথ্য আগে থেকেই জেনে নেয়া ভালো। আপনি চাইলে এই কাজটি গুগল ম্যাপের মাধ্যমে সহজেই করতে পারবেন। গুগল ম্যাপ আপনাকে আপনার রাস্তায় কোথায় কোথায় টোল দিতে হবে এবং আনুমানিক কত টাকা টোল দিতে হবে তা জানিয়ে দিতে পারে।
গুগল ম্যাপ ব্যবহার করে চাইলে টোল না দিয়ে ভিন্ন রাস্তা ব্যবহার করার উপায়ও খুঁজে পেতে পারেন। ফলে আপনি অর্থ সাশ্রয় করতে পারেন সহজেই এবং ঠিক করে নিতে পারেন যে কোন রাস্তা দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছানো সহজ হবে। তবে টোল ফিচারটি সব জায়গায় কাজ নাও করতে পারে।
গুগলের স্ট্রিট ভিউ ব্যবহার
অনেক সময় শুধু ম্যাপ দেখে রাস্তা খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে যায়। বেশিরভাগ সময় রাস্তা খুঁজে পেলেও কিছুটা বেশি সময় লাগতে পারে পথ খুঁজে নিতে। এই কাজটি চাইলেই আপনি গুগল স্ট্রিট ভিউয়ের মাধ্যমে সহজ করে নিতে পারেন।
স্ট্রিট ভিউ আপনাকে রাস্তা ও তার চারপাশের চিত্রসহ পথ খুঁজে নিতে সাহায্য করতে পারে। ফলে রাস্তায় থাকা কোন স্থাপনা বা সাইনবোর্ড দেখে সহজেই সঠিক রাস্তায় আছেন কিনা বুঝে নিতে পারবেন। ফিচারটি ব্যবহার করতে চাইলে ম্যাপের যে কোন জায়গায় ট্যাপ করে হোল্ড করে স্ট্রিট ভিউয়ের থাম্বনেইল সিলেক্ট করতে হবে।
গুগল ম্যাপের উইজেট ব্যবহার
গুগল ম্যাপের একটি সবথেকে দরকারি উইজেট হলো কাছাকাছি বিভিন্ন জায়গা খুঁজে পাওয়ার জন্য উইজেট। এটি আপনার অবস্থানের উপর নির্ভর করে কাছাকাছি থাকা রেস্টুরেন্ট, হোটেল, আকর্ষণীয় জায়গা এবং অন্যান্য জিনিস সম্পর্কে সহজেই জানিয়ে দিতে পারে। যখন আপনি অনেক বেশি ভ্রমণ করেন এবং নতুন জায়গায় যান তখন এই উইজেট বেশ কার্যকরী। আপনি সহজেই বিভিন্ন পাব্লিক বিল্ডিং, স্থানীয় দোকান, শপিং মল ইত্যাদি সম্পর্কে জেনে যেতে পারবেন।
ভ্রমণের টাইমলাইন দেখে নেয়া
আপানার পুরো ভ্রমণ বা ঘোরাঘুরি শেষ করে আপনি কোথায় কোথায় গিয়েছিলেন সেই তথ্য পুনরায় জেনে নিতে পারেন টাইমলাইন ফিচার ব্যবহার করে। ফিচারটি ব্যবহার করতে গুগল ম্যাপ ওপেন করে আপনার প্রোফাইল পিকচারে ট্যাপ করে ‘Your Timeline’ অপশনটি সিলেক্ট করতে হবে। ওখানে আপনি আপনার ভ্রমণ করা সকল লোকেশনের একটি তালিকা পেয়ে যাবেন। এসব স্থানে আপনি কোন রাস্তা ব্যবহার করে ভ্রমণ করছেন বা কী কী ছবি তুলেছেন সেটিও দেখতে পাবেন।
আপনার পুরো ভ্রমণকে সাজানো গোছানোভাবে শেষ করতে এই ফিচারটি বেশ কাজের। এর মাধ্যমে আপনি কতক্ষন হেঁটেছেন, কতক্ষন হোটেল রুমে ছিলেন বা কতক্ষন বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করেছেন সকল কিছুই জেনে নিতে পারবেনবেশ সহজে।
গুগল ম্যাপের আরও অনেক ধরণের ফিচার আছে যা এখানে আলোচনা করা হয়নি। কিন্তু কোথাও বেড়াতে গেলে উপরের ফিচারগুলোই আপনার সবথেকে বেশি কাজে লাগতে পারে। তাই উপরের ফিচারগুলো ব্যবহারের মাধ্যমে সহজেই আপনার পুরো ভ্রমণের অভিজ্ঞতাকে আরও সুন্দর করে তুলতে পারেন।
0 responses on "ভ্রমণের সময় গুগল ম্যাপের এই সুবিধাগুলো অবশ্যই ব্যবহার করুন"