আমাদের বাংলাদেশ সহ সমগ্র বিশ্বে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে । সেই সাথে স্মার্টফোন জনিত রোগের সংখ্যাও ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে । গত কয়েক বছরে হঠাৎ করেই চক্ষু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে । আর সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল, এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক হল অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশু বা তরুণ । আর এর পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হল, বিভিন্ন ধরনের গ্যাজেটের পর্দা থেকে নির্গত ব্লু লাইট বা নীল আলো । যার কারণে মানুষ চোখে কম দেখার পাশাপাশি অন্ধত্বের শিকার হচ্ছে । এখন আপনারা জিজ্ঞাসা করতে পারেন যে, এই ব্লু লাইট বা নীল আলো কি ? আজকের এই আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সাথে ব্লু লাইট কি এবং এর অসুবিধা কি? এছাড়াও কিভাবে এর থেকে আপনার চোখকে রক্ষা করবেন ইত্যাদি বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব ।
নীল আলো – ব্লু লাইট
বর্তমানে স্মার্টফোনের কারণে শিশু এবং তরুণ-তরুণীদের মধ্যে চোখ সংক্রান্ত অনেক ধরনের সমস্যা দেখা যাচ্ছে ।উদাহরণস্বরূপ, গ্লুকোমা । আগে ‘গ্লুকোমা’ এর সমস্যা দেখা যেত ৪০ থেকে ৫০ বছর বয়সের পর । কিন্তু এখন ছোট শিশু এবং তরুণরাও এর শিকার হচ্ছে । গ্লুকোমা হচ্ছে চোখের সবচেয়ে বড় শত্রু । এটি এমন এক ধরনের ভয়ানক রোগ, যার কারণে একজন মানুষ চিরতরে অন্ধ হয়ে যেতে পারে । এবং সমস্যা হল এই রোগের তেমন কোন কার্যকর প্রতিকার নেই । একবার দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হয়ে গেলে তা আর কোনোভাবেই ফিরিয়ে আনা যায় না । আর এই রোগের আরও একটি বড় সমস্যা হল এর কোনো লক্ষণ দেখা যায় না । এটি গোপনে এসে চোখের আলো কেড়ে নিয়ে আমাদের জীবনকে চিরতরে অন্ধকার করে দেয় ।
নীল আলো কি – ব্লু লাইট কি
ব্লু লাইট বা নীল আলো, যা high energy visible (HEV) লাইট নামেও পরিচিত । এটি দৃশ্যমান আলোর বর্ণালীর একটি রঙ বা কালার, যা মানুষের চোখের মাধ্যমে দেখা যায় । দৃশ্যমান এবং অদৃশ্যমান আলোর এই তরঙ্গদৈর্ঘ্যগুলি ন্যানোমিটারে (এনএম) পরিমাপ করা হয় । সাধারণভাবে, তরঙ্গদৈর্ঘ্য যত কম হবে, শক্তি তত বেশি পরিমাণে উৎপাদিত হবে । নীল আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য অনেক কম, যার মানে হল এটি উচ্চ পরিমাণে শক্তি উৎপাদন করে ।
আলোর অন্যান্য রূপের বিপরীতে, চোখ কার্যকরভাবে এই ব্লু লাইটকে ফিল্টার করতে পারে না । তাই এটি খুব সহজেই আমাদের চোখের মধ্য দিয়ে রেটিনায় প্রবেশ করে এবং সেটির ক্ষতি করে ।
কম্পিউটার, ল্যাপটপ, স্মার্টফোন, ট্যাবলেট, এলসিডি, স্মার্ট টিভি ইত্যাদি ইলেকট্রনিক ডিভাইসের স্ক্রীন থেকে একটি আলো নির্গত হয় যাকে ব্লু লাইট বা নীল আলো বলে । এটি আমাদের চোখের সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ অংশ রেটিনার আলোক গ্রহণকারী কোষের ( Light Receptive Cells ) ব্যাপক ক্ষতি করে । আলোক গ্রহণকারী কোষগুলি (Light Receptive Cells) আলোর প্রতি অত্যন্ত সংবেদনশীল । ব্লু লাইট এই কোষগুলির অনেক ক্ষতি করে, যার কারণে শুধু দৃষ্টিশক্তিই দুর্বল হওয়ার পাশাপাশি মানুষ পুরোপুরি অন্ধও হয়ে যেতে পারে ।
যারা দীর্ঘ সময় ফোন/ল্যাপটপ ব্যবহার করে বা প্রচুর পরিমাণে টিভি দেখে, তাদের এই ব্লু লাইটের কারণে চোখের অনেক ক্ষতি হয় । শুরুতে স্ট্রেচ, চোখে ব্যথা, মাথাব্যথা, চোখে লালভাব এবং চোখে শুষ্ক হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা যায় । কিন্তু কখন সেগুলো গ্লুকোমা এবং অন্ধত্বে পরিণত হয়, তা সঠিকভাবে বোঝা বা জানা যায় না । এবং যখন আমরা বুঝতে পারি, তখন আসলে অনেক দেরি হয়ে গেছে । কারণ ততক্ষণে ব্যক্তিটি তার চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেছে এবং তার জীবনে তখন অন্ধকার ছাড়া আর কোন কিছুই অবশিষ্ট থাকে না । তাই সময় থাকতে আপনার চোখের যত্ন নিন এবং সবসময় নীল আলো বা ব্লু লাইট থেকে আপনার চোখকে রক্ষা করুন ।
কোন ডিভাইসগুলি নীল আলো তৈরি করে
বর্তমানে বিভিন্ন ডিভাইস বা গ্যাজেট আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে । সেগুলি কৃত্রিম ব্লু লাইট তৈরি করে এবং আমাদের শরীরের মেলাটোনিন তৈরির ক্ষমতাকে বাধা দিয়ে আমাদের ঘুম নষ্ট করতে পারে । এই ডিভাইসগুলির মধ্যে রয়েছে –
- স্মার্ট ফোন
- কম্পিউটার বা ল্যাপটপ স্ক্রিন
- ট্যাবলেট
- টেলিভিশন
নীল আলোর অসুবিধা – ব্লু লাইটের অসুবিধা
প্রথমেই বলে রাখি যে, সব ধরনের নীল আলো বা ব্লু লাইট কিন্তু আমাদের চোখের জন্য ক্ষতিকর নয় । কিছু ব্লু লাইট আমাদের শরীরের জন্য উপকারী । সূর্যের আলোতে উপস্থিত ব্লু লাইট আমাদের জন্য উপকারী । হ্যাঁ, আপনি ঠিকই শুনেছেন । সূর্যের আলোতেও ব্লু লাইট আছে । সূর্যের আলোতে উপস্থিত ব্লু লাইট আমাদের স্মৃতিশক্তি বজায় রাখতে এবং শরীরকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলতে সাহায্য করে ।
কিন্তু স্মার্টফোন বা ল্যাপটপের স্ক্রীন থেকে নির্গত ব্লু লাইট শুধু আমাদের ক্ষতি করে । এটি আমাদের চোখের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক । আসুন, ব্লু লাইটের কিছু অসুবিধা সম্পর্কে জেনে নেই-
রেটিনার ক্ষতি – রেটিনা আমাদের চোখের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় এবং সবচেয়ে সংবেদনশীল অংশ । এটি অনেক কোষ নিয়ে গঠিত, যা লাইট ক্যাপচার করে এবং আমাদের মস্তিষ্কে প্রেরণ করে । আর এই আলোর কারণেই আমরা সবকিছু দেখতে পাই ।কিন্তু ব্লু লাইট আমাদের চোখের রেটিনার অনেক ক্ষতি করে । এই ব্লু লাইটের শক্তির তরঙ্গদৈর্ঘ্য খুব বেশি । যা খুব সহজেই চোখের রেটিনায় পৌঁছে সংবেদনশীল কোষগুলিকে আঘাত করে সেগুলোকে ক্ষতিগ্রস্থ করে ।
স্থায়ী অন্ধত্ব – চোখের বেশিরভাগ অসুখ রেটিনার সাথে সম্পর্কিত । আর অন্ধত্ব হল তার মধ্যে অন্যতম । আসলে ব্লু লাইটের কারণে রেটিনার সংবেদনশীল কোষ এবং পেশীর ক্ষতি হয় । সেই কারণে দৃষ্টিশক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে । এমনকি অনেকে চিরতরে অন্ধও হয়ে যায় ।
স্বাস্থ্য রোগ – নীল আলো বা ব্লু লাইট আমাদের চোখের ক্ষতি করার সাথে সাথে শরীর ও মনের উপরেও ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলে । ব্লু লাইটের কারণে অলসতা, ক্লান্তিভাব, অনিদ্রা, উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়ার মত সমস্যা তৈরি হয় ।
অনিদ্রা – রাতে আমাদের শরীর থেকে মেলাটোনিন নামক এক ধরনের হরমোন নিঃসৃত হয় । যা আমাদের ঘুম নিয়ে আসতে সহায়তা করে । কিন্তু রাতে যদি ফোন ব্যবহার করা হয় তাহলে ফোনের স্ক্রিন থেকে নির্গত ব্লু লাইটের কারণে মস্তিষ্ক বিভ্রান্ত হয় ।আর চোখের মাধ্যমে মস্তিষ্কে বার্তা পৌঁছে যায় যে এখন দিন । এটা বুঝতে এই ছবিটি দেখুন:-
সাধারণত, সূর্যের আলোতে উপস্থিত ব্লু লাইট আমাদের মস্তিষ্ককে বলে যে এটি এখন দিন । আর এই ব্লু লাইট যখন একটা গ্যাজেটের স্ক্রিন থেকে আমাদের চোখে লাগে, তখন মস্তিষ্কের মনে হয় এটা দিন । এর ফলে মস্তিষ্ক শরীরের মেলাটোনিন হরমোনের নিঃসরণ বন্ধ করে দেয় । এর ফলে আপনার আর ঘুম আসতে চায় না ।
সার্কাডিয়ান রিদম খারাপ হচ্ছে – ব্লু লাইট বা নীল আলোর কারণে আমাদের শরীরের সার্কাডিয়ান রিদম খারাপ হয়ে যায় । এটি আসলে আমাদের শরীরের একটি ন্যাচারাল সিস্টেম, যা আমাদের সঠিক সময়ে ঘুমাতে এবং সময়মতো ঘুম থেকে উঠতে সাহায্য করে । কিন্তু ব্লু লাইটের কারণে এই প্রক্রিয়া ব্যহত হয়, যার কারণে আমাদের ঘুমানোর এবং ঘুম থেকে জাগার সময় ঠিক থাকে না । অর্থাৎ রাতে ঠিক মত ঘুম হয় না এবং সকালে ঘুম ভাঙ্গে না ।
ক্ষণস্থায়ী ভিসন ক্ষতি – এটি একটি অত্যন্ত বিপজ্জনক রোগ । কারণ এতে এক চোখের আলো চিরতরে নিভে যায় অর্থাৎ এক চোখের দৃষ্টি শক্তি নষ্ট হয়ে যায় । সাধারণত যারা মোবাইল ইউজ করেন তারা যে কোন একপাশে শুয়ে মোবাইল দেখেন । তাদের ক্ষেত্রে এই রোগ বেশী দেখা যায় । আর এই রোগে এক চোখের দৃষ্টি শক্তি নষ্ট হয়ে যায় ।
মায়োপিয়া – ব্লু লাইটের কারণে শিশুদের চোখ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় । সাধারণত মানুষের চোখ তৈরি হয় দূরের কোন বস্তু দেখার জন্য । কিন্তু শিশুরা যখন ফোন বা ল্যাপটপের স্ক্রিনে তাদের চোখ ফোকাস করে, তখন তাদের চোখের ওপর অনেক বেশী চাপ পড়ে । এই কারণে তাদের চোখ প্রসারিত এবং বড় হয় । আর রেটিনা তার জায়গা থেকে পিছলে যায় । এ কারণে শিশুদের মধ্যে মায়োপিয়ার সমস্যা দেখা দেয় অর্থাৎ তখন তাদের মাইনাস পাওয়ারের চশমার প্রয়োজন হয় ।
কম্পিউটার ভিশন সিন্ড্রোম – যারা দীর্ঘ সময় ধরে ল্যাপটপ বা কম্পিউটারে কাজ করেন তারা কম্পিউটার ভিশন সিনড্রোম বা সিভিএস এর শিকার হন । যদিও এটি একটি সাময়িক সমস্যা, কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এর যত্ন না নিলে পরবর্তীতে এটি অনেক মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে । তাই এটাকে হালকাভাবে নিবেন না । সাধারণত যারা ব্যাংকে বা আইটি সেক্টরে কাজ করেন তাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা বেশি হয় ।
ত্বকের ক্ষতি – দীর্ঘক্ষণ এই ব্লু লাইট আমাদের ত্বকের ওপর পড়লে, আমাদের স্কিন সেল বা ত্বকের কোষ নষ্ট হয়ে যায় । বয়সের আগেই মুখে বলিরেখা দেখা দিতে পারে । মূলত ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস ঘাঁটাঘাঁটি করার সময় আমাদের মুখের উপরেই সবচেয়ে বেশি পরিমাণে ব্লু লাইট এসে পড়ে । তাই ব্লু লাইটের কারণে আমাদের মুখের ত্বক বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয় । collagen এবং elastin হল আমাদের ত্বকের দুটি মুখ্য উপাদান । এই দুটির কারনেই আমাদের ত্বক থাকে প্রাণোজ্জ্বল। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ ব্লু লাইট মুখে এসে পড়লে ত্বকের এই দুটি উপাদান নষ্ট হয়ে যায় । ফলে মুখের ত্বক শুকনো রুক্ষ এবং জৌলুসহীন হয়ে পড়ে । সেই সাথে দেখা দেয় বলিরেখা এবং চামড়া কুঁচকে যাওয়ার মত সমস্যা । এছাড়াও চোখের চারপাশে ডার্ক সার্কেল তৈরি হতে পারে এবং চামড়া কুঁচকে যাওয়ার প্রবণতাও দেখা যায় ।
ব্লু লাইট প্রতিরোধের উপায় – ব্লু লাইট থেকে চোখকে রক্ষা করার উপায়
শুধুমাত্র চোখের কারণেই আমরা এই পৃথিবীর সব সৌন্দর্য দেখতে পাই এবং উপভোগ করতে পারি । যদি আমাদের চোখ না থাকত, তাহলে এই পৃথিবী আমাদের জন্য শুধু অন্ধকার ছাড়া আর কিছুই না । তাই আমাদের উচিত সময় থাকতে চোখের যত্ন নেওয়া । তাই চোখকে আমৃত্যু পর্যন্ত সুস্থ ও নিরাপদ রাখার চেষ্টা করতে হবে । কিন্তু কিভাবে? বিভিন্ন গ্যাজেটের পর্দা থেকে নির্গত নীল আলো বা ব্লু লাইট থেকে আপনার চোখকে কীভাবে রক্ষা করবেন? আসুন জেনে নেই ব্লু লাইট থেকে চোখকে নিরাপদ রাখার কিছু উপায় সম্পর্কে –
থ্রি লেয়ার ব্লু লাইট ফিল্টার
প্রতিদিন ল্যাপটপ বা ডেস্কটপে দীর্ঘক্ষণ কাজ করলে অথবা অত্যধিক ফোন ব্যবহার করলে থ্রি লেয়ার ফিল্টার ব্যবহার করুন । ‘থ্রি লেয়ার ফিল্টার’ মানে হল স্ক্রীন থেকে নির্গত ব্লু লাইট এবং আপনার চোখের মধ্যে ৩ টি ফিল্টার ব্যবহার করুন । কোন তিনটি ফিল্টার? প্রথমে আপনার ডেস্কটপ বা স্মার্টফোনের ব্লু লাইট ফিল্টার অপশন চালু করুন । দ্বিতীয়ত, স্ক্রীনের উপর ব্লু লাইট ব্লকার গ্লাস বা ব্লু লাইট স্ক্রীন প্রোটেক্টর ইউজ করুন । এবং তৃতীয়ত, আপনার চোখে ব্লু লাইট ব্লকার বা ব্লু লাইট রিফ্লেক্টর গ্লাসের চশমা লাগান । এই নিয়মগুলো মেনে চললে আপনার চোখ ব্লু লাইট থেকে নিরাপদ থাকবে ।
20-20-20 নিয়ম অনুসরণ করুন
আপনি যদি প্রতিদিন অনেক ঘন্টা ল্যাপটপ বা কম্পিউটারে কাজ করেন অথবা দীর্ঘক্ষন ফোন ইউজ করেন, তাহলে আপনাকে অবশ্যই 20-20-20 নিয়ম মেনে চলতে হবে । এটা খুবই সহজ একটি নিয়ম । যার অর্থ, প্রতি ২০ মিনিট পর পর ২০ সেকেন্ডের জন্য ২০ ফুট দূরে তাকান এবং একটি নির্দিষ্ট জায়গায় ফোকাস করুন । এছাড়াও দ্রুত কয়েকবার আপনার চোখের পলক ফেলুন । এর ফলে আপনার চোখ বিশ্রাম পায় ।
1.5 ফুট দূরত্ব
আমাদের চোখ প্রাকৃতিকভাবে দূরের জিনিস দেখার জন্য তৈরি । তাই ফোন বা ল্যাপটপ ব্যবহার করার সময় স্ক্রিন এবং চোখের মধ্যে কমপক্ষে দেড় ফুটের দূরত্ব রাখুন । স্ক্রিনের লেখা পড়তে সমস্যা হলে ফন্ট সাইজ বাড়িয়ে নিন । কিন্তু খুব কাছাকাছি রেখে ফোন বা ল্যাপটপ ব্যবহার করবেন না । কারণ এতে আপনার চোখের উপর অনেক বেশী প্রেসার পরবে । এর কারণে চোখের পিউপিল প্রসারিত ও বড় হয় । আর এর ফলে আপনার চোখে চশমা পড়ার দরকার পরবে ।
আলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ
যারা ফোন আসক্তির শিকার হয় , তাদের কাছে দিনরাত বলে কিছু থাকে না । সারাক্ষণ শুধু ফোন নিয়েই বসে থাকে । কিন্তু তারা জানে না যে, অন্ধকারের মধ্যে ফোন ব্যবহার করা আত্মহত্যার সমান । কারণ এতে চোখের অনেক বেশি ক্ষতি হয় । সেজন্য ফোন বা কম্পিউটার ইউজ করার সময় বিশেষ করে খেয়াল রাখবেন যে আপনার ঘরে পর্যাপ্ত পরিমাণে আলো আছে । অন্ধকারের মধ্যে কোন ধরনের গ্যাজেট ইউজ করা উচিত নয় । কারণ অন্ধকারে গ্যাজেট ব্যবহার করলে চোখের অনেক বেশী ক্ষতি হয় ।
ঘুমানোর 1 ঘন্টা আগে ফোন বন্ধ করুন
ভালো করে ঘুমাতে চাইলে আর সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর যদি সতেজ ভাব অনুভব করতে চান তাহলে ঘুমানোর প্রায় এক ঘণ্টা আগে ফোন বন্ধ করে রাখুন । পরের দিন সকালে আবার ফোন ওপেন করুন । এতে আপনার ভালো ঘুম হওয়ার পাশাপাশি সকাল বেলা ঘুম থেকে ওঠার পর অলসতাও থাকবে না । তার মানে আপনি সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠবেন এবং সেই সাথে সতেজ বোধ করবেন ।
ঘুমানোর সময় ফোন ৮-১০ ফুট দূরে রাখুন
রাতে ঘুমানোর সময় কখনোই মাথার কাছে ফোন রেখে ঘুমাবেন না । বরং আপনার থেকে কমপক্ষে ৮-১০ ফুট দূরে ফোন রেখে ঘুমান । কারণ অনেক সময় দেখা যায় যে রাতে হঠাৎ করে ঘুম ভেঙ্গে গেলে যদি আমাদের হাতের কাছে ফোন থাকে তাহলে তখন আমরা ফোন ব্যবহার করা শুরু করি । আর এই কিছুক্ষন ফোন ইউজ করার পর যখন আমরা পুনরায় ঘুমানোর চেষ্টা করি তখন আর আমাদের ঘুম আসতে চায় না । কারণ ফোনের ব্লু লাইট চোখের মাধ্যমে মস্তিষ্কে বার্তা পাঠায় যে এখন দিন । এ কারণে মস্তিষ্ক মেলাটোনিন হরমোন নিঃসরণ বন্ধ করে দেয় । যার ফলে রাতে ঘুমে সমস্যা হবে । আর এই কারণে সকালেও আপনি সঠিক সময়ে উঠতে পারবেন না । কারণ রাতে ঠিক মত ঘুম না হওয়ার কারণে আপনার শরীর খুব ক্লান্ত থাকবে । সেজন্য ঘুম থেকে দ্রুত ওঠার বদলে ১০ মিনিট ১০ মিনিট করে অ্যালার্ম বাজিয়ে আরও কিছুক্ষন ঘুমিয়ে নেবেন । এর ফলে শরীরে অলসতা চলে আসবে । আর সারাদিন মাথা ভার হয়ে থাকবে । কোন কাজে ঠিকমত মনোনিবেশ করতে পারবেন না । তাই ঘুমানোর সময় ফোন বন্ধ করে নিজের থেকে ৮ থেকে ১০ ফুট দূরে রেখে ঘুমান ।
স্টেরয়েড এড়িয়ে চলুন
চোখে চুলকানি, জ্বালাপোড়া বা অন্য কোনো ধরনের সমস্যা অনুভুত হলে কেউ কেউ নিজেরাই ডাক্তার হয়ে যান । অথবা মেডিকেল স্টোরের লোকের পরামর্শ নিয়ে যেকোন আই ড্রপ কিনে এনে চোখে লাগাতে শুরু করেন । এতে হয়ত অনেক সময় সাময়িক ভাবে চোখে আরাম পাওয়া যায় । কিন্তু এর পাশাপাশি অনেক ধরনের চোখের রোগ ও ছানি বিনামূল্যে পাওয়া যায় ।কারণ এই ধরনের ড্রপে স্টেরয়েড থাকে , যা অনেকটা নেশার মতো । অর্থাৎ এটা একটা নেশার মত হয়ে যায়, যা সহজে ছাড়া যায় না । সেজন্য আমরা আপনাদের অনুরোধ করছি যে, নিজে নিজে ডাক্তার হবেন না বা মেডিক্যাল স্টোরের লোকের কথায় চোখে যে কোন ধরনের ওষুধ ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন । চোখে কোন ধরনের সমস্যা অনুভব করলে একজন ভালো চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহন করুন ।
শেষ কথা
সামগ্রিকভাবে ব্লু লাইট বা নীল আলো আমাদের চোখের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর । সেজন্য এটাকে পরিহার করা অত্যন্ত জরুরি । এর জন্য আপনি থ্রি লেয়ার ফিল্টার ব্যবহার করতে পারেন । কিন্তু আপনি যদি নোমোফোবিয়ার শিকার হন তাহলে আপনাকে আরও বেশী সতর্ক হতে হবে । এর জন্য আপনাকে আপনার ফোনের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে । আর বুঝতে হবে ফোনটা আমাদের জন্য তৈরি হয়েছে, আমরা ফোনের জন্য তৈরি হই নাই ।
আমরা আশা করছি আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে ব্লু লাইট সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন এবং সেই সাথে এটি আমাদের চোখের জন্য কতটা বিপজ্জনক সেটিও বুঝতে পেরেছেন । আর্টিকেলটি নিয়ে যে কোন ধরনের প্রশ্ন বা মন্তব্য থাকলে কমেন্ট সেকশনে জানান ।