বাংলাদেশের অর্থনীতির বড় একটি অংশ সচল আছে রেমিটেন্সের টাকায়। আর এই রেমিটেন্সের অর্থ পাওয়া আরও সহজ করে দিচ্ছে বিকাশ। সম্প্রতি বিশ্বের অন্যতম বড় রেমিটেন্স লেনদেন প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের সঙ্গে মিলে বিকাশ সরাসরি আপনার নিজের বিকাশ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে যে কোন বিকাশ এজেন্ট থেকে রেমিটেন্সের টাকা আনার সুবিধা চালু করেছে। এর ফলে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের মাধ্যমে পাঠানো টাকা তুলতে আপনাকে আর ব্যাংকে যেতে হবে না। নিজের একটি সচল বিকাশ অ্যাকাউন্ট থাকলেই এই সেবা গ্রহণ করতে পারবেন সহজেই। সেই সাথে সরকারীভাবে দেয়া বোনাস ও বিকাশের নিজস্ব বোনাসও পেয়ে যাবেন।
ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন থেকে বিকাশে যেভাবে রেমিটেন্স টাকা তোলা যাবে
ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে একটি এমটিসিএন নাম্বার থাকে। এমটিসিএন নাম্বার বলতে বোঝায় ‘মানি ট্রান্সফার কন্ট্রোল নাম্বার’‘মানি ট্রান্সফার গোপন নাম্বার’ অথবা ‘মানি ট্রান্সফার রেফারেন্স নাম্বার’ নামেও অনেকে চেনেন। এই নাম্বারের মাধ্যমেই বাইরে থেকে পাঠানো টাকা তোলা যায় খুব সহজে। কিন্তু আগে এই টাকা তুলতে আপনাকে যেতে হতো নিকটস্থ ব্যাংকে। সেই সাথে একটি ফর্ম পূরণ করার মাধ্যমে টাকা তুলতে অপেক্ষা করতে হতো। বিকাশে এই সেবা চলে আসায় এখন আর এধরণের কোন ঝামেলাই নেই। আপনি সহজেই যে কোন এজেন্টের কাছে গিয়ে কয়েকটি তথ্য দেয়ার মাধ্যমে সাথে সাথেই টাকা পেয়ে যাবেন।
কেউ আপনার নামে রেমিটেন্সের টাকা পাঠালে তা প্রথমে আপনার নিজস্ব বিকাশ অ্যাকাউন্টে জমা হবে। এই টাকা হাতে পেতে আপনাকে বিকাশ এজেন্টের কাছে যেতে হবে। যে আপনাকে টাকা পাঠাবে তার কাছ থেকে ১০ ডিজিটের এমটিসিএন নাম্বারটি জেনে নিন। এরপর নিকটস্থ এজেন্টের কাছে চলে যান। বিকাশ এজেন্টের কাছ থেকে টাকা গ্রহণ করতে আপনাকে যেসব তথ্য প্রদান করতে হবেঃ
- রেমিটেন্সের গ্রহীতার বিকাশ একাউন্ট নাম্বার
- রেমিটেন্সের গ্রহীতার জাতীয় পরিচয়পত্র নাম্বার
- ১০ সংখ্যার MTCN/গোপন নাম্বার
- রেমিটেন্সের টাকার পরিমাণ
সকল তথ্য ঠিক থাকলে এজেন্ট সঙ্গে সঙ্গেই আপনাকে রেমিটেন্সের টাকা প্রদান করবে। তবে আপনার নিজের সচল বিকাশ অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে। এই মুহূর্তে শুধু বিকাশ এজেন্টের নম্বর দিয়ে টাকা তোলার কোন উপায় নেই। এজন্য আপনার কাছে বিকাশ অ্যাপ না থাকলেও চলবে। অবশ্যই যার নামে রেমিটেন্সের টাকা পাঠানো হবে তাকে সশরীরে উপস্থিত থেকে টাকা গ্রহণ করতে হবে। এছাড়াও জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া অন্য কোন ডকুমেন্ট যেমনঃ জন্ম সনদ বা পাসপোর্ট দিয়ে আপনি এই সেবা নিতে পারবেন না। আপনার নিজের মূল জাতীয় পরিচয়পত্র দরকার হবে। জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি বা ডিজিটাল কপি দিয়েও সেবাটি গ্রহণ করতে পারবেন না।
বর্তমানে শুধু ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের মাধ্যমেই এই ধরনের রেমিটেন্স সেবা প্রদান করেছে বিকাশ। নতুন প্রক্রিয়ায় রেমিটেন্স গ্রহনের ফলে এর মাধ্যমে প্রতারণার ঝুঁকিও বেড়ে যেতে পারে। তাই এই প্রক্রিয়ায় লেনদেনের ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। আপনি এজেন্টের কাছে সকল তথ্য প্রদান করলে একটি এসএমএস পেয়ে যাবেন আপনার মোবাইলে। আপনি এই লেনদেন না করেও এসএমএস পেলে সঙ্গে সঙ্গে বিকাশকে জানিয়ে দিন। আপনার রেমিট্যান্স প্রক্রিয়াধীন অবস্থায় চলে যাবার ১৫ মিনিটের মধ্যেই তা সফল হবে সকল কিছু ঠিক থাকলে।
এই সেবায় ফি কেমন?
বিকাশ ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের মাধ্যমে এই রেমিটেন্স সেবাটি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে প্রদান করছে। এর জন্য আলাদা কোন ফি এর প্রয়োজন নেই। যদি কোন এজেন্ট আপনার কাছে আলাদা ফি বা চার্জ দাবি করেন তবে আপনি বিকাশ হেল্পলাইন (16247) -এ কল দিয়ে বিস্তারিত তথ্য দিয়ে অভিযোগ জানাতে পারেন।
বিকাশে রেমিটেন্স গ্রহণ করার সুবিধা
বিকাশের মাধ্যমে রেমিটেন্স গ্রহণ করার মাধ্যমে আপনি বেশ কিছু বাড়তি সুবিধা পাবেন। বিকাশ পুরোপুরি ডিজিটাল সেবা হওয়ায় আপনি রাত দিন ২৪ ঘণ্টা এই সেবা পাবেন। এক্ষেত্রে কোন বাড়তি চার্জ নেই এবং আপনার সময় বাঁচবে। পূর্বে ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা নিতে হলে আপনাকে ব্যাংকের নিকটস্থ শাখায় যেতে হতো। কিন্তু বিকাশের এজেন্ট বর্তমানে দেশের সবখানে থাকায় আপনার বাসার পাশ থেকেই এই সেবা গ্রহণ করা সম্ভব হবে। ব্যাংকে গিয়ে বাড়তি ফর্ম পূরণ করতে হবে না বলে সময় বাঁচবে, সেই সাথে যাতায়াতের বাড়তি খরচও বেঁচে যাবে। ব্যাংকে টাকা তুলতে আপনাকে ব্যাংকের কর্মদিবসে তুলতে হতো। ফলে জরুরি প্রয়োজনে সমস্যার সৃষ্টি হতো। বিকাশে এই সেবা চলে আসায় এই সমস্যা আর থাকল না। রাত-দিন যেকোনো সময় এখন টাকা তুলে ফেলতে পারবেন। সেই সাথে বাড়তি খরচ নেই। বরং বিকাশের ১০০ টাকা বোনাস অফারও পেয়ে যাবেন রেমিটেন্সের অর্থের সঙ্গে।
বোনাস অফার
সরকারীভাবে রেমিটেন্সের টাকা তোলার ক্ষেত্রে হাজারে ২৫ টাকা বোনাস দেয়া হয়ে থাকে। এই বোনাস আপনি বিকাশের মাধ্যমে রেমিটেন্স গ্রহণ করলেও পেয়ে যাবেন অন্য সকল মাধ্যমের মতোই। সেই সাথে বিকাশের বাড়তি ১০০ টাকার বোনাস অফারও থাকছে।
বিকাশের এই ১০০ টাকা বোনাস পেতে আপনাকে ১০ হাজার টাকা বা তার বেশি পরিমাণ রেমিটেন্স গ্রহণ করতে হবে। অফারটি ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ থেকে ৩০ এপ্রিল ২০২৩ পর্যন্ত চালু থাকবে বলে বিকাশ ঘোষণা দিয়েছে। তবে প্রতি মাসে আপনি একবার এই অফার নিতে পারবেন। অর্থাৎ খরচ বাঁচার সঙ্গে সঙ্গে বিকাশে রেমিটেন্স আনার মাধ্যমে আপনি বাড়তি আয় করতে পারবেন।
বিকাশে রেমিটেন্স নেয়ার সীমা
বিকাশে রেমিটেন্স গ্রহণ করার ক্ষেত্রে বেশ কিছু সীমাও নির্ধারণ করা হয়েছে। এই নির্ধারিত সীমার মধ্যে থেকেই আপনাকে লেনদেন করতে হবে।
প্রতিদিন আপনি সর্বোচ্চ ১০ বার ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের মাধ্যমে এই রেমিটেন্স নিতে পারবেন। আর প্রতি মাসে এই সীমা ৫০ বার পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতি লেনদেনে অর্থের পরিমানের উপরও সীমা নির্ধারণ করা আছে। আপনি সর্বনিম্ন ৫০ টাকা রেমিটেন্স গ্রহণ করতে পারবেন। আর একবারে সর্বোচ্চ টাকা গ্রহণ করতে পারবে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। এছাড়াও দৈনিক সর্বোচ্চ ১০ বার লেনদেনে মোট ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা পর্যন্তই গ্রহণ করতে পারবেন। আর প্রতি মাসে এর পরিমাণ ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
তাই এখন থেকে সহজেই ঘরে বসে রেমিটেন্স গ্রহণ করতে পারেন বিকাশ থেকেই। আপনার বিকাশ অ্যাকাউন্ট না থাকলে অ্যাপ থেকে বা বিকাশ এজেন্টের মাধ্যমে সহজেই অ্যাকাউন্ট খুলে নিতে পারেন। তাছাড়া বিকাশ অ্যাপ ব্যবহার করে রেমিটেন্সের অর্থের বিস্তারিত জানতে পারবেন। মনে রাখবেন আপনার রেমিটেন্স আপনার নামে ছাড়া অন্য কারো মাধ্যমে নেয়া নিরাপদ নয়। তাই রেমিটেন্সের অর্থ নিরাপদে গ্রহণ করতে নিজের বিকাশ অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করুন। এছাড়া ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের এমটিসিএন নাম্বারটি এজেন্ট ছাড়া কারো কাছে বলা থেকে বিরত থাকুন। বিকাশের এই রেমিটেন্স সেবা নিয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য জেনে নিতে পারেন তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে।
0 responses on "বিকাশে ১০০ টাকা বোনাস রেমিটেন্স নিলে – সাথে সরকারি বোনাস!"