২০০ এর অধিক দেশ বা অঞ্চলে পেপাল এর সেবা থাকলেও বাংলাদেশে পেপাল তাদের জনপ্রিয় এই ওয়ালেট সেবা চালু করেনি। এই কারণে বাংলাদেশের জন্য পেপাল এর বিকল্প খুঁজে থাকেন অনেকে। বিশেষ করে পেপাল প্রয়োজন হয় ফ্রিল্যান্সার এবং অনলাইন পেশাজীবীদের। দেশে যেহেতু পেপাল নেই, তাই কার্যকরী বিকল্প সেবা গ্রহণ ছাড়া উপায় নেই। এই পোস্টে বাংলাদেশের জন্য পেপালের বিকল্প কি হতে পারে সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানবেন।
পেওনিয়ার
পেপাল এর সবচেয়ে সেরা বিকল্প হিসেবে বিবেচনা করা হয় পেওনিয়ারকে। বিশ্বের প্রায় সকল দেশে সেবা চালু রয়েছে পেওনিয়ার এর, যার ফলে যেকোনো দেশ থেকে বাংলাদেশে টাকা পাঠানোর সহজ উপায় হতে পারে পেওনিয়ার। এছাড়া ইন্টারনেট ভিত্তিক অগণিত ওয়েবসাইট এর পেআউট মেথডে পেওনিয়ার তালিকাভুক্ত রয়েছে যা বেশ ভালো একটি বিষয়। বিশ্বব্যাপী ফ্রিল্যান্সার ও আন্তর্জাতিক কর্পোরেশনগুলোর মধ্যে অর্থ আদানপ্রদানে পেপাল এর বিকল্প হিসেবে ব্যাপক হারে পেওনিয়ার ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি নির্দিষ্ট ফি এর বিনিময়ে ইন্টারন্যাশনাল মাস্টারকার্ড ডেবিট কার্ডও ইস্যু করে থাকে, যা ব্যবহার করে টাকা তোলা কিংবা অনলাইনে খরচও করা যাবে। ক্রেডিট কার্ড পেমেন্ট আপনার পছন্দ না হলে পেওনিয়ার বেশ ভালো একটি পেপাল বিকল্প হতে পারে। এছাড়া পেওনিয়ারের নিজস্ব একাউন্টের পশাপাশি ভার্চুয়াল ব্যাংক একাউন্টেও আপনি পেমেন্ট গ্রহণ করতে পারবেন।
স্ক্রিল
পেপাল এর বিকল্প হিসেবে আরেকটি জনপ্রিয় পেমেন্ট সার্ভিস হলো স্ক্রিল। শুধুমাত্র বাংলাদেশ নয়, বরং বিশ্বব্যাপী স্ক্রিল এর জনপ্রিয়তা দিনদিন বেড়ে চলেছে। বাংলাদেশ এর স্ক্রিল ব্যবহারকারীগণ কার্ড ইস্যু করা ছাড়াই ব্যাংকের মাধ্যমে যেকোনো দেশ থেকে টাকা নিয়ে আসতে পারবে। আবার এদিকে অনেক অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্ম স্ক্রিল পেমেন্ট সাপোর্ট করে বলে পেপাল এর অসাধারণ একটি বিকল্প হিসেবে বিবেচনা করা হয় স্ক্রিলকে।
লো কারেন্সি কনভার্সেশন রেট এর কারণে পেমেন্ট গেটওয়ে হিসেবে স্ক্রিল বেশ জনপ্রিয় বটে। প্রিপেইড মাস্টারকার্ড অফার করে থাকে স্ক্রিল যা ব্যবহার করে বিশ্বের অসংখ্য অনলাইন ও অফলাইন স্টোরে কেনাকাটা করা যাবে। ফাইনান্সিয়াল কনডাক্ট অথোরিটি এর আওতাধীন এই সার্ভিসের সেফটি ও সিকিউরিটি নিয়ে তেমন একটা চিন্তাও করতে হয়না। তবে সিকিউরিটি বেশ কড়া স্ক্রিল এর ক্ষেত্রে, যার ফলে ভেরিফিকেশনে কিছুটা সময় নিয়ে পারে এই সেবা।
ওয়াইজ (পূর্বে ট্রান্সফারওয়াইজ নামে পরিচিত ছিল)
আন্তর্জাতিক পেমেন্ট এর জন্য পেপাল এর আরেক অসাধারণ বিকল্প হলো ওয়াইজ, যা পূর্বে ট্রান্সফারওয়াইজ নামে পরিচিত ছিল। কারেন্সি এক্সচেঞ্জ রেট এর ক্ষেত্রে বেশ ট্রান্সপারেন্ট এই সেবা যার ফলে আন্তর্জাতিকভাবে অর্থ সেন্ড বা রিসিভ এর ক্ষেত্রে এই সেবা বেশ জনপ্রিয়। আবার অ্যাপ ব্যবহার করে অনলাইনে ট্রান্সফার করার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের হিডেন ফি কাটেনা ওয়াইজ যা নিঃসন্দেহে অসাধারণ। কেউ কেউ এই সেবাকে পেওনিয়ার এর চেয়েও অধিক সুবিধাজনক হিসেবেও অবহিত করে থাকেন।
নেটেলার
নেটেলার অধিক পরিমাণে ব্যবহার করা হয় মার্চেন্ট পেমেন্ট এর ক্ষেত্রে। তবে কিছু কিছু অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মগুলোতেও নেটেলার সাপোর্ট রয়েছে, যার ফলে ফ্রিল্যান্সারগণ নেটেলার ব্যবহার করে থাকেন পেপাল এর বিকল্প হিসেবে। বাংলাদেশে নেটেলার ব্যবহার করা যায়। অ্যান্ড্রয়েড ও আইফোন এর জন্য মোবাইল অ্যাপ এর কল্যাণে সেবাটি ব্যবহার বেশ সহজ। নেটেলার এর ক্ষেত্রে নেট+ কার্ড ব্যবহার করে মার্চেন্ট পেমেন্ট করার ফিচারটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। অবশ্য বর্তমানে বাংলাদেশে নেট+ কার্ড সার্ভিস নেই।
জুম
বাংলাদেশ থেকে আন্তর্জাতিক লেনদেন এর ক্ষেত্রে জুম (Xoom) একটি পরিচিত সেবা হয়ে উঠছে। জুম আর পেপাল ব্যবহার করা অনেকটা একই মনে হয়, কেননা জুম হলো পেপাল এর একটি অংশ। পেপাল এর সাবসিডারি এই প্রতিষ্ঠান এখনো বিশ্বের সকল দেশে না থাকলেও ফিচারের দিক দিয়ে কোনো কমতি নেই সার্ভিসটিতে। বিশ্বব্যাপী আরো অনেক দেশে জুম এর সেবা আগামী দিনগুলোতে পৌছে যাবে বলে আশা করা যায়।
পেজা
বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক পেমেন্ট মেথড Payza এর যাত্রা শুরু হয় ২০১২সালে। বিশ্বব্যাপী অধিকাংশ দেশে ও অধিক ব্যবহৃত কারেন্সিগুলোতে আন্তর্জাতিক পেমেন্ট এর সুবিধা প্রদান করে থাকে পেযা। মজার ব্যাপার হলো বিকাশের মাধ্যমে পেজা একাউন্টে ফান্ড যোগ করার অপশন রয়েছে। তবে বিভিন্ন ফোরামে দেখা গেছে যে, বিকাশ থেকে পেজা একাউন্টে ফান্ড যোগ করলে সেটা বিডিটি হিসেবেই থাকে, ডলার হয়না। এটা আগে ভালভাবে সাপোর্ট থেকে কনফার্ম হয়ে নিবেন। আবার লোকাল ব্যাংক থেকে অর্থ উত্তোলনের সুবিধাও প্রদান করে পেযা। এছাড়া পেযা ব্যবহার করে অনলাইন পেমেন্টও করা যায়।
২চেকআউট
2checkout হলো একটি পেমেন্ট গেটওয়ে, যা ব্যবহার করে ভিসা, মাস্টারকার্ড বা অ্যামেক্স কার্ড থেকে পেমেন্ট একসেপ্ট করা যায়। ওয়াইজ, পেপাল, ও পেওনিয়ার সাপোর্টেড মাস্টারকার্ড মার্চেন্ট পেমেন্ট সুবিধা প্রদান করে ২চেকআউট। একাধিক অর্থ উত্তোলনের উপায় অফার করে সেবাটি, এছাড়া পেওনিয়ার ডেবিট কার্ড ব্যবহার করে ফান্ড উইথড্র করার সুযোগও প্রদান করে ২চেকআউট। ব্যবসায়ীরা তাদের বিজনেস পেমেন্ট নিতে ওয়েবসাইটে এটা ব্যবহার করতে পারবেন।
বিকাশ
দেশ বিদেশে অর্থ আদানপ্রদানের ক্ষেত্রে বিকাশ একটি নির্ভরযোগ্য সেবায় পরিণত হয়েছে। দেশের সেরা ডিজিটাল ওয়ালেট এই সেবাকে কিছু কিছু পেপাল এর বিকল্প হিসেবে তুলনা করা যেতে পারে। অসংখ্য ফিচারে ভর্তি এই সেবা ব্যবহার করে অসংখ্য প্ল্যাটফর্মে অনলাইন পেমেন্ট করার সুবিধা পাওয়া যাবে। এছাড়া বিভিন্ন বিদেশি পেমেন্ট সাইট থেকে বিকাশে ফান্ড গ্রহণ করা যায়। আবার সম্প্রতি পেওনিয়ার এর সাথে পার্টনারশিপ করেছে বিকাশ যার কল্যাণে এক্সক্লুসিভ কিছু সুবিধাও প্রদান করছে সেবাটি। ওয়াইজ থেকেও বিকাশ একাউন্টে টাকা তোলা যায়।
অসাধারণ সব সুবিধার কারণে পেপাল বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে জনপ্রিয় পেমেন্ট গেটওয়ে। যেহেতু বাংলাদেশে পেপাল এর ওয়ালেট সেবা নেই, তাই উল্লেখিত সেবাগুলো ব্যবহার করে একই ধরনের অভিজ্ঞতা পেতে পারেন।
0 responses on "বাংলাদেশের জন্য পেপালের বিকল্প জানুন"