ফোন শুধু আমাদের সেরা বন্ধুই নয়, বরং এটি আমাদের সবচেয়ে খারাপ শত্রুও বটে । কারণ আমাদের ফোন, আমাদের সম্পর্কে এত বেশি জানে যে আমরা নিজেরাও নিজেদের সম্পর্কে এত বেশী জানি না । তাই এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও আমাদের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব । কিন্তু তা সত্ত্বেও আমরা অনেকেই আমাদের ফোনের নিরাপত্তা নিয়ে উদাসীন । যার কারণে আমাদের অনেকের ফোন হ্যাক হয়ে যায় । আর আমাদের ফোনে থাকা সব তথ্য চুরি হয়ে যায় । এরপর হ্যাকাররা সেই ডেটার মাধ্যমে কি করতে পারে তা আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না । তাই প্রত্যেক স্মার্টফোন ইউজারের জানা উচিত যে, কীভাবে একটি ফোন হ্যাক হয় এবং ফোন হ্যাক হওয়া এড়াতে কি করা যেতে পারে? তাই আজকের এই আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সাথে ফোন হ্যাক করার উপায় কি এবং কিভাবে এড়ানো যায় সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব ।
ফোন হ্যাকিং
আপনার অনুমতি ব্যতিত আপনার ফোন হ্যাক করা যাবে না? হ্যাঁ, আপনি এটা একেবারে সঠিক শুনেছেন । আপনার অনুমতি ছাড়া কোন হ্যাকার আপনার ফোন হ্যাক করতে পারবে না এবং আপনার ফোন থেকে কোন ধরনের ডেটাও চুরি করতে পারবে না ।আজকের আর্টিকেলের মাধ্যেম আপনারা জানতে পারবেন ফোন হ্যাক করার উপায়গুলো কি কি এবং কিভাবে আপনি এগুলোকে এড়াতে পারেন? আর যখন আপনি জানতে পারবেন যে কীভাবে ফোন হ্যাকিং এড়ানো যায় তখন থেকে আপনার ফোন আপনার অনুমতি ছাড়া হ্যাক করতে পারবে না ।
কেন ফোন হ্যাক করা হয়
আমাদের মধ্যে অনেকের মনে, কোনো না কোনো সময় এই প্রশ্ন নিশ্চই এসেছে যে, কেন আমাদের ফোন হ্যাক করা হয়? আর এটা করে হ্যাকারদের কি লাভ হয় ? এটি জানার জন্য আপনাকে আপনার ফোনে থাকা ডেটার গুরুত্ব বুঝতে হবে । কারণ যতক্ষণ না আপনি আপনার ফোনে থাকা ডেটার মূল্য জানেন ততকক্ষন পর্যন্ত আপনি বুঝবেন না এই ডাটা চুরির খেলা ।
আমি আপনাদের বলতে চাই যে, এই ২১ শতকের সবচেয়ে মূল্যবান জিনিস যদি কিছু হয় তাহলে তা হল আমাদের ডেটা । এ কারণেই হ্যাকারদের চোখ সবসময় আমাদের কাছে থাকা ডেটার ওপর থাকে । কারণ এই সমস্ত ডেটা অনেক দামে বিক্রি হয় ।সেজন্য হ্যাকাররা আমাদের ফোন থেকে যে সমস্ত ডেটা চুরি করে, তা বড় বড় বিভিন্ন কোম্পানি বা ব্ল্যাকমার্কেটে বিক্রি করে এবং তা থেকে ভাল পরিমাণ টাকা উপার্জন করে । আবার কিছু হ্যাকার আছে যারা ভিকটিমকে ব্ল্যাকমেইল করে তার কাছ থেকে টাকা আদায় করে । অর্থাৎ ভিকটিমের ফোনে থাকা প্রাইভেট ডাটা (ভিকটিমের নগ্ন ছবি বা ভিডিও) ভাইরাল করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে টাকা নিয়ে থাকে ।
ফোন হ্যাক করার উপায়
ফোন হ্যাক করার অনেক ধরনের উপায় আছে । তবে আমরা এখানে কেবল সেই পদ্ধতিগুলি সম্পর্কে কথা বলব, যা সবচেয়ে বেশী ব্যবহৃত হয় । আমি আপনাদের বলে রাখি যে, বেশিরভাগ হ্যাকার এই পদ্ধতিগুলি ব্যবহার করে ফোন হ্যাক করে থাকে ।
সাধারণত, একটি ফোন হ্যাক করার জন্য, কোন অ্যাপ বা ভাইরাস ফোনে প্রবেশ করানো হয় । কিন্তু ইউজার এটি সম্পর্কে জানতেও পারে না । কারণ এই ধরনের ভাইরাস বেশীরভাগ সময় গোপনে তাদের কাজ করে এবং সেই সাথে পিছনে কোন ট্রেস ছেড়ে আসে না । অতীতে এজেন্ট স্মিথ ভাইরাসের ক্ষেত্রে এমনটি ঘটেছে । এই ভাইরাসটিও এত নিখুঁতভাবে কাজ করেছে যে, ব্যবহারকারীরা বুঝতেও পারেনি যে তাদের ফোনে একটি ভাইরাস রয়েছে ।
আসলে এই ধরনের ভাইরাস ফোনে ইন্সটল হওয়ার সাথে সাথেই সম্পূর্ণ ইনভিসিবল হয়ে যায় অর্থাৎ এরা নিজেকে লুকিয়ে রাখে । এবং ব্যাকগ্রাউন্ডে নীরবে সেটির কাজ করতে থাকে । যে কারণে এই ভাইরাসগুলোকে শনাক্ত করা খুবই কঠিন হয়ে পরে । এখন প্রশ্ন হল, আমাদের ফোনে এই ভাইরাসগুলো প্রবেশ করে কীভাবে? এটা করার অনেক ধরনের উপায় আছে । এখানে আমরা কিছু জনপ্রিয় উপায় সম্পর্কে বলছি ।
ক্ষতিকারক অ্যাপস
ক্ষতিকারক অ্যাপস বলতে সেই অ্যাপগুলিকে বোঝানো হয় যেগুলি ভাইরাস দ্বারা সংক্রামিত । বিপজ্জনক ম্যালওয়্যার এবং ক্ষতিকারক কোডগুলি এই অ্যাপগুলির ভেতরে লুকিয়ে রাখা হয়, যা পরবর্তীতে ভিক্টিমের ফোন দখল করে নেয় । আর ফোন থেকে ডাটা কালেক্ট করে হ্যাকারের কাছে পাঠায় । তবে ভিকটিম এই বিষয়টি বুঝতেও পারে না । RAT , ট্রোজান হর্স এবং Ransomware হল একই ধরনের ম্যালওয়্যার ।
সাধারণত এই ধরনের অ্যাপগুলি থার্ডপার্টি অ্যাপ স্টোর বা বিভিন্ন ওয়েবসাইটে পাওয়া যায় । কারণ এই ধরনের অ্যাপগুলো অফিসিয়াল অ্যাপ স্টোরগুলিতে অনুমোদিত নয় । সে কারণেই এই অ্যাপসগুলো বেশ আকর্ষণীয় এবং বিনোদনমূলক করে তৈরি করা হয় । যাতে করে বেশী বেশি মানুষ এই অ্যাপস ডাউনলোড করে । একই সাথে, পুরষ্কার এবং নগদ টাকার লোভ দেখিয়ে এই অ্যাপগুলি ডাউনলোড করতে উদ্বুদ্ধ করা হয় । যাতে মানুষ লোভে পরে খুব সহজে এই অ্যাপগুলো ডাউনলোড করে এবং হ্যাকারের সহজ শিকারে পরিণত হয় ।
ফিশিং
এটা সম্পূর্ণভাবে লোভ ও প্রতারণার খেলা । এতে ভিকটিমকে একটি লিঙ্ক পাঠানো হয় এবং সেই লিঙ্কের সাথে একটি মেসেজ থাকে । এই বার্তায় ভিকটিমকে বিভিন্ন বিষয়ে প্রলুব্ধ করা হয় । যেমন আইফোন, গাড়ি, নগদ টাকা পুরস্কার বা চাকরির লোভ । এছাড়াও এই ধরনের লিংকের সাথে কোন বড় কোম্পানির নাম এবং লোগো ব্যবহার করা হয় । যাতে ভিকটিম কোন ধরনের সন্দেহ না করে এবং হ্যাকারের পাতা ফাঁদে পা দেয় । ভিকটিম যখন লোভে পরে সেই লিঙ্কে ক্লিক করে, তখন তা একটি নকল ওয়েবপেজে নিয়ে যায় যা দেখতে হুবহু আসল ওয়েবপেজের মতো । এবং সেখান থেকে ভিকটিমকে ম্যালিসিয়াস অ্যাপ ডাউনলোড করতে বলা হয় ।
এই ধরনের অ্যাপের সাথে কিছু নির্দেশনা লেখা থাকে যেমন এই অ্যাপটি ডাউনলোড করুন এবং এটিতে রেজিস্টার করুন । তারপর আপনার প্রোফাইল সম্পূর্ণ করুন । তবেই আপনি আপনার পুরষ্কার বা টাকা পাবেন (সেটি যাই হোক না কেন) । এরপর ভিকটিম যখন সেই ম্যালিসিয়াস অ্যাপটি তার ফোনে ডাউনলোড করে ওপেন করে, তখন তার কাছ থেকে অনেক ধরনের অনুমতি চাওয়া হয় । আর এই অনুমতি দেওয়া মাত্রই আপনার ফোন হ্যাক হয়ে যাবে ।
স্প্যাম লিঙ্ক
স্প্যাম লিঙ্কের মাধ্যমে ফোন হ্যাক করা খুবই নরমাল ব্যাপার । এটি করার জন্য সাধারণত মেসেজ, ইমেইল বা সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম (যেমন ফেসবুক, টুইটার, হোয়াটসঅ্যাপ ইত্যাদি) ব্যবহার করা হয় । এতে ভিকটিমকে একটি লিঙ্ক পাঠানো হয় , যা সাধারণত সংক্ষিপ্ত URL বা শর্ট ইউআরএল আকারে পাঠানো হয় । তাই ভিকটিম বুঝতে পারে না যে সেই লিঙ্কের পেছনে আসলে কী আছে ? তাই ভিকটিম যখন সেই লিঙ্কে ক্লিক করে তখন কিছু সংক্রমিত ফাইল বা অ্যাপ অটোমেটিক তার মোবাইলে ডাউনলোড হয়ে যায় । যার মাধ্যমে ফোনের সিস্টেম হ্যাক করা হয় ।
পপআপ
ওয়েবসাইট ব্রাউজ করার সময়, আপনারা বিভিন্ন ধরনের পপআপ মেসেজ দেখতে পাবেন । কিন্তু কিছু পপআপ আছে যেগুলো হঠাৎ মাঝে মাঝে দেখা দেয় এবং সেখানে বলা থাকে যে আপনার ফোন বিপদে পড়েছে অথবা আপনার ফোনে একটি বিপজ্জনক ভাইরাস পাওয়া গেছে । তাই দ্রুত এই অ্যাপটি ডাউনলোড করুন এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আপনার ফোনটি এই অ্যাপের মাধ্যমে স্ক্যান করুন । নইলে আপনার ফোন হ্যাক হয়ে যাবে । এইরকম মেসেজ দেখে অনেক ব্যবহারকারী, বিশেষ করে নতুন স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা সেই ক্ষতিকারক অ্যাপটি তাদের ফোনে ডাউনলোড করে ইন্সটল করে এবং নিজের হাতে তার ফোন হ্যাকারের কাছে তুলে দেয় ।
ইমেইল এটাচমেন্ট
ইমেইল অ্যাটাচমেন্ট হল ফোন হ্যাক করা আরও একটি কমন টেকনিক । কারণ ইমেইল একটি মৌলিক এবং ফ্রি ইন্টারনেট সেবা ।তাই বেশীরভাগ মানুষ এটা ব্যবহার করে । এর মধ্যে কিছু মানুষ ইমেইলে আসা অ্যাটাচমেন্ট ডাউনলোড করে দেখে এতে কি আছে ? কিন্তু কখনও কখনও এই কিউরিসিটি থেকে তারা কোন ভাইরাস সংক্রমিত ফাইল ডাউনলোড করে ফেলে । এবং তার ফলে সেই ভাইরাস ফোনে এটাক করে তার সব তথ্য হ্যাকারের কাছে পাঠিয়ে দেয় । তাই ইমেল এটাচমেন্ট ডাউনলোড করার সময় সর্বদা সতর্ক থাকুন ।
ডাউনলোড ফাইলের মাধ্যমে
আমাদের যখন কোন ফটো, ভিডিও, Mp3 গান, ডকুমেন্ট বা সফ্টওয়্যার ইত্যাদি ডাউনলোড করার প্রয়োজন হয় তখন আমরা সাধারণত গুগলে গিয়ে সার্চ করি এবং গুগলের প্রস্তাবিত কোনো ওয়েবসাইট থেকে সেই ফাইল ডাউনলোড করি । কিন্তু আমরা বেশীরভাগ সময় সেই ফাইলটি আসল কিনা তা পরীক্ষা করি না । আবার যে ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করছি তা বিশ্বাসযোগ্য কিনা তাও পরীক্ষা করি না । যার ফলে আমরা খুব সহজেই হ্যাকারের শিকারে পরিণত হই ।
আমি আপনাদের বলে রাখি যে, ইন্টারনেটে এমন অনেক ওয়েবসাইট আছে, যেখানে আপনি ভাইরাস সংক্রামিত ফাইল পাবেন ।এই ওয়েবসাইটগুলিতে, আপনি পাইরেটেড সিডি/ডিভিডি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের ক্র্যাকড সফটওয়্যার পর্যন্ত সবকিছুই পাবেন । আর অনেকেই টাকা দিয়ে সফটওয়্যার কেনার পরিবর্তে এই সব ওয়েবসাইট থেকে ক্র্যাক সফটওয়্যার ডাউনলোড করেন এবং সেই সাথে বিপজ্জনক ট্রোজানগুলিও বিনামূল্যে ফোনে ইন্সটল হয়ে যায় । যার ফলে আপনার ফোন হ্যাকারের হাতে চলে যায় ।
রুটেড ফোন
অনেকেই তাদের ফোনের পারফরম্যান্স নিয়ে খুশি থাকেন না । এজন্য তারা তাদের ফোনটিকে রুট করেন । এতে ফোনের কর্মক্ষমতা কিছুটা বৃদ্ধি পায় কিন্তু সেই সাথে এর সিকিউরিটি হারিয়ে যায় । তাই এই সব রুটেড ফোন হ্যাক করা হ্যাকারের জন্য বেশ সহজ হয়ে যায় ।
আপনাদের মধ্যে অনেকেই জানেন যে রুটেড ফোনে বিপজ্জনক ভাইরাস এবং ট্রোজান খুব সহজেই প্রবেশ করতে পারে । আবার অনেকে শুধু শুনেছেন যে রুটেড ফোনে ভাইরাস অনেক আসে । আসলে এই কথাটি একেবারেই সত্য । তাই আপনি যদি রুটেড ফোন ব্যবহার করেন, তাহলে আপনার ফোন যে কোনো সময় হ্যাক হতে পারে।
বন্ধুরা
আপনার ফ্রেন্ড সার্কেলে যদি এমন কোন বন্ধু থাকে যার প্রযুক্তি সম্পর্কে খুব ভালো জ্ঞান আছে, তাহলে তার হাতে কখনই আপনার ফোন দেবেন না । কারণ আপনার বন্ধুর দ্বারাই আপনার ফোন হ্যাক হতে পারে । আমার এই কথাটি আপনাদের অনেকের কাছেই খারাপ লাগতে পারে । তবে এমন ঘটনা অনেক ঘটেছে । আমরা শুধুমাত্র আপনাকে সতর্ক করলাম । বাকিটা আপনাদের ইচ্ছা ।
এই ধরনের বন্ধুরা প্রায়ই বিভিন্ন ধরনের অজুহাত দেখিয়ে ফোন চায় । আর ফোন হাতে পেলে তারা আপনার দৃষ্টির বাইরে চলে যাবে এবং আপনার ফোনে স্পাই অ্যাপস ইনস্টল করে সেগুলি লুকিয়ে রাখবে । তারপর ফোনটি আপনার কাছে পুনরায় ফিরিয়ে দেবে । এর পরে আপনার বন্ধু আপনার ফোন থেকে কল, টেক্সট, ইন্টারনেট ব্রাউজিং বা আপনি যা কিছু করেন সে সম্পর্কে তথ্য পেতে থাকবে । এমনকি কাকে কি মেসেজ পাঠিয়েছেন? কার সাথে কথা বলছেন? এই সব কিছুই জানতে পারবে ।
ফোন হ্যাক হওয়া থেকে কিভাবে রক্ষা করবেন?
ফোন কখনই স্বয়ংক্রিয় বা অটোমেটিকভাবে হ্যাক হয় না । বরং আমাদের নিজেদের কিছু ভুলের কারণে আমাদের ফোন হ্যাক হয় । তাই আমরা যদি কিছু বিষয়ের দিকে খেয়াল রাখি তাহলে আমরা আমাদের ফোন হ্যাক হওয়া থেকে রক্ষা করতে পারি ।এছাড়াও, আপনি সবসময় আপনার ডেটা নিরাপদ রাখতে নিচের বিষয়গুলো সবসময় মাথায় রাখবেন –
- সব সময় শুধুমাত্র অফিসিয়াল অ্যাপ স্টোর (যেমন – প্লে স্টোর) থেকে অ্যাপ ডাউনলোড করবেন । কোনো থার্ড পার্টি অ্যাপ স্টোর বা ওয়েবসাইট থেকে কখনোই কোনো ধরনের অ্যাপ ডাউনলোড করবেন না ।
- গাড়ি, বাড়ি, লটারি এবং নগদ টাকা পুরস্কার দেবে এইরকম দাবি করা বিভ্রান্তিকর বার্তা থেকে সর্বদা দূরে থাকুন । কারণ এভাবে ফ্রিতে কেউ কখনোই কাউকে লাখ-লাখ টাকা দেয় না । তাই চলুন আমরা আমাদের লোভ নিয়ন্ত্রণ করি এবং হ্যাকারদের পাতা এই ধরনের ফাঁদে পা না দেই ।
- চিন্তা না করে বা ভালভাবে না দেখে, শুধুমাত্র কিউরিসিটির বশবর্তী হয়ে ইমেইল বা মেসেজে থাকা কোন লিঙ্কে ক্লিক করবেন না । বিশেষ করে যদি সেন্ডার কোন অপরিচিত ব্যক্তি হয়, তাহলে তো কোন অবস্থাতেই ক্লিক করবেন না ।
- ইন্টারনেট ব্রাউজ করার সময় কখনই পপআপ এনাবল করবেন না ৷ আর পপআপ এড ব্লক করে রাখলে বেশী ভালো হবে । এর জন্য আপনি ব্রাউজারের সেটিংস অপশনে গিয়ে পপআপ ব্লক করে দিন ।
- কখনই আপনার ফোনে কোন ক্র্যাকড অ্যাপস এবং গেমস ডাউনলোড বা ইন্সটল করবেন না । কারণ সিকিউরিটির দিক থেকে এগুলো খুবই বিপজ্জনক। তাই সবসময় অরিজিনাল অ্যাপস স্টোর থেকে অ্যাপস ডাউনলোড করে ব্যবহার করুন ।
- শুধুমাত্র তখনই ইমেইলে থাকা এটাচমেন্ট ডাউনলোড করুন, যখন আপনি সেন্ডারের উপর সম্পূর্ণ আস্থা রাখেন । কোনো অজানা ব্যক্তির পাঠানো ইমেলে কোনো এটাচমেন্ট থাকলে তা কখনই ডাউনলোড করবেন না ।
- যদিও ফোন রুট করার অনেক ধরনের সুবিধা রয়েছে । কিন্তু সেই সাথে অসুবিধার বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে । সেজন্য বিনা কারণে আপনার ফোন রুট না করাই ভাল ।
- যখনই আপনার কোন বন্ধু ফোন চাইবে তখন তাকে আপনার কাছ থেকে দূরে যেতে দেবেন না । যতক্ষণ তিনি আপনার ফোন ব্যবহার করবে ততক্ষণ তাকে আপনার চোখের সামনে রাখার চেষ্টা করুন ।
- কোনো অ্যাপ যদি প্রয়োজনের চেয়ে বেশি বিষয়ের পারমিশন চায়, যে বিষয়গুলো সেই অ্যাপ রান করার জন্য প্রয়োজন নেই । সেই ধরনের অ্যাপ ব্যবহার করা এড়িয়ে চলুন ।
- যাইহোক, আপনার ফোনে কোনো ধরনের অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই । কিন্তু তারপরও, আপনি যদি অ্যান্টিভাইরাস ইউজ করতে চান, তাহলে একটি ভালো পেইড অ্যান্টিভাইরাস ইউজ করুন । কারণ ফ্রি এন্টিভাইরাস মূলত আপনার কোন কাজে আসবে না ।
এই কয়েকটি বিষয় মেনে চললে আপনি আপনার ফোনকে হ্যাক হওয়া থেকে রক্ষা করতে পারবেন এবং সেই সাথে আপনার ব্যক্তিগত তথ্যও সুরক্ষিত রাখতে পারবেন ।
ফোন হ্যাক সম্পর্কে কিছু কমন প্রশ্ন
প্রশ্ন 1 – কিভাবে ফোন হ্যাক করা যায় ?
উত্তরঃ মোবাইল ফোন হ্যাক করার অনেক ধরনের উপায় আছে । যেমন ক্ষতিকারক অ্যাপ, ফিশিং অ্যাটাক, ট্রোজান, RAT, ইমেইল অ্যাটাচমেন্ট, স্পাইওয়্যার ইত্যাদি । এছাড়াও আপনি যদি একজন হ্যাকার হন তবে আপনি নিজেই নতুন কোন পদ্ধতি উদ্ভাবন করতে পারেন ।
প্রশ্ন 2 – কারো মোবাইল স্পর্শ না করে কিভাবে হ্যাক করা যায়?
উত্তরঃ এর জন্য ভিকটিম এর ফোনে কিছু অ্যাপ, ম্যালওয়্যার বা RAT (রিমোট এক্সেস ট্রোজান) ইন্সটল করা হয় । আর এগুলো ইন্সটল করার জন্য Fishing, Spam Links এবং Email Attchments ব্যবহার করা হয় । ভিকটিম অ্যাপ ডাউনলোড করলে অথবা হ্যাকারের পাঠানো লিঙ্কে ক্লিক করলে ভিকটিমের ফোনে RAT বা ভাইরাস ইন্সটল হয়ে যাবে এবং হ্যাকার এটির সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ পেয়ে যাবে ।
প্রশ্ন 3 – কিভাবে একজন সার্টিফাইড হ্যাকার হবেন? হ্যাকিং এর ক্ষেত্রে কিভাবে ক্যারিয়ার গড়বেন?
উত্তরঃ এথিক্যাল হ্যাকিং হল এমন একটি পেশা যার নাম এবং অর্থ উভয়ই রয়েছে । হ্যাকিং এ ক্যারিয়ার গড়ার জন্য অনেক সার্টিফাইড কোর্স রয়েছে । এথিক্যাল হ্যাকিং কোর্স করে আপনি সার্টিফিকেট পেতে পারেন এবং সেই সাথে একজন সার্টিফাইড হ্যাকার হতে পারেন । এর জন্য অনেক ধরনের অনলাইন এবং অফলাইন কোর্স রয়েছে ।
প্রশ্ন ৪ – কিভাবে অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল হ্যাক করবেন?
উত্তর: অ্যান্ড্রয়েড একটি সিকিউর প্ল্যাটফর্ম, যা খুব সহজেই ক্ষতিকারক এবং ভাইরাস সংক্রমিত অ্যাপ ডিটেক্ট করতে পারে ।এছাড়াও, এটি সাধারণত থার্ড পার্টি ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করা অ্যাপ ইনস্টল করার অনুমতি দেয় না । কিন্তু যদি Unknown Source ফিচারটি নিষ্ক্রিয় করা হয়, তবে ক্ষতিকারক অ্যাপগুলি সহজেই ফোনে ইনস্টল করা যেতে পারে । অর্থাৎ ফোনে RATs এবং Spyware এর মতো প্রোগ্রাম ইনস্টল করে অ্যান্ড্রয়েড ফোন হ্যাক করা যায় ।
প্রশ্ন 5 – ফোন হ্যাক করার উপায় কি কি?
উত্তরঃ ফোন হ্যাক করার অনেক ধরনের উপায় রয়েছে যেমন ফিশিং, ম্যালওয়্যার এট্যাক, ট্রোজান হর্স, RAT, স্পাইওয়্যার, ইনফেক্টেড ফাইল, ম্যালিসিয়াস কোড, স্ক্রিপ্ট, ইমেল এটাচমেন্ট ইত্যাদি । এছাড়াও হ্যাকাররা প্রতিদিন নতুন নতুন উপায় উদ্ভাবন করে ।
শেষ কথা
আশা করি, আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে কিভাবে আপনারা ফোন হ্যাক করবেন ? এবং কিভাবে আমরা আমাদের ফোন হ্যাক হওয়া থেকে রক্ষা করতে পারি ইত্যাদি বিষয়ে অনেক তথ্য জানতে পেড়েছেন । আর্টিকেলটি নিয়ে যে কোন ধরনের প্রশ্ন বা মন্তব্য থাকলে কমেন্ট সেকশনে জানান ।
0 responses on "ফোন হ্যাক করার উপায় কি এবং কিভাবে এড়ানো যায় ?"