নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হওয়া, সম্পর্ক তৈরি করা বা অবসর সময় কাটানো, ইত্যাদি বিষয়ে ফেসবুক এর জুড়ি নেই। ফেসবুক মূলত ব্যক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে কাজ করলেও বর্তমানে এর পরিসর অনেকটাই বিস্তৃত।
ফেসবুক এর এই বিস্তৃত পরিসর একদিকে যেমন ভালো ও কল্যাণ বয়ে আনছে, অন্যদিকে ঠিক তেমনি এটিই আবার সবচেয়ে বড় সমস্যা। বর্তমানে অনলাইনে ফেইক প্রোফাইলের অভাব নেই। এই পোস্টে ফেসবুকে ফেইক প্রোফাইল চেনার উপায় জানবেন।
ফেসবুকে মানুষ ফেইক প্রোফাইল কেন তৈরী করে?
মনে না হলেও ফেসবুকে নিজের আসল পরিচয় ব্যবহার করা বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। ফেসবুকে নিজের আসল পরিচয় ব্যবহার করলে আপনার বন্ধুরা খুব সহজে আপনাকে খুঁজে পাবে ও ফেসবুকে কোনো ব্যবসা পরিচালনা করলে অন্যরা আপনাকে বিশ্বাস করার সম্ভাবনা বেশি। তবে প্রশ্ন হলো মানুষ কেনোই বা ফেইক ফেসবুক প্রোফাইল তৈরী করে থাকে?
ফেসবুকে ফেইক আইডি খোলার মূল কারণই হলো নিজের পরিচয় গোপন রাখা কিংবা অন্য কোনো ব্যক্তির ছদ্মবেশ ধারণা করা। যেমনঃ ফেইক প্রোফাইলের মাধ্যমে ক্লাস ১০ এর স্টুডেন্ট নিজেকে পাইলট বলে পরিচয় দিতে পারবে। অনেকে আবার ফেসবুকে ফ্রেন্ড, বিশেষ করে মেয়েবন্ধু বাড়াতে এই ধরনের ধূর্ত কাজ করে থাকে।
আবার অনেক সময় প্রতারকরা বন্ধু বা পরিবারের সদস্যের ছদ্মবেশ ধারণ করে গোপন তথ্য জানার চেষ্টা করে। আবার অনেকে তো রীতিমত বিভিন্ন সেলিব্রিটি বা ব্র্যান্ডের ছদ্মবেশ ধারণ করে বসে থাকে। এসব বিষয়ে অনেক ধরনের ফায়েদা তোলার সম্ভাবনা থাকে ফেইক আইডি অপব্যবহারে।
ফেসবুক ফেইক প্রোফাইল চেনার উপায়
ফেইক ফেসবুক প্রোফাইল দেখতে যেকোনো সাধারণ আইডির মত, তবে কিছু সাধারণ বিষয় সকল ফেইক আইডি এর ক্ষেত্রে একই ধরনের হয়ে থাকে। চলুন জেনে নেওয়া যাক ফেসবুকে ফেইক বা ভুয়া প্রোফাইল চেনার কিছু কার্যকরী উপায় সম্পর্কে।
ফেইক বা চুরি করা ছবি
একজন সাধারণ মানুষের জীবনে যা কিছু ঘটে তা ফেসবুকে শেয়ার করে থাকে কমবেশি সবাই, তবে ফেইক প্রোফাইলের ক্ষেত্রে এমন কিছুই থাকেনা। অধিকাংশ ফেইক প্রোফাইল শুধুমাত্র ছবি পোস্ট করে থাকে, আর এসব ছবি সাধারণত অন্যের প্রোফাইল থেকে চুরি করা ছবি হয়ে থাকে। কোনো ফেসবুক একাউন্টে ব্যবহৃত প্রোফাইল ছবি নিয়ে সন্দেহ হলে গুগল রিভার্স সার্চ, TinEye বা Pixsy এর মত সেবা ব্যবহার করে ছবির আসল উৎস খুঁজে বের করতে পারবেন। উক্ত ছবি যদি ইন্টারনেটে অন্য কোনো ব্যক্তি আগে থেকে আপলোড করে থাকে, তবে বুঝে নিবেন যে ফেসবুক প্রোফাইলে ছবিটি দেখছেন সেটি সম্ভবত ফেইক প্রোফাইল।
অদ্ভুত টাইমলাইন
অনেক সময় হ্যাক করা একাউন্টকে ফেইক একাউন্ট হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। পুরোনো ফেসবুক একাউন্টের বেশ চাহিদা রয়েছে, তাই কেউ যদি নতুন ফেসবুক একাউন্ট খুলে অন্যের ছদ্মবেশ ধরে, তবে তা বুঝা বেশ সহজ। টাইমলাইন ঘুরে দেখলে পোস্টের অসামঞ্জস্যপূর্ণতা দেখে ফেইক প্রোফাইল চেনা যায়। আবার অনেক সময় দেখবেন বেশ আগের একাউন্টেও কোনো পোস্টই নেই। এসব একাউন্ট মূলত ফেইক হয়ে থাকে। আবার অনেক ফেইক একাউন্টে দেখা যায় একটি নির্দিষ্ট সময়ে প্রচুর পোস্ট করা হয়েছে, আবার হঠাৎ পোস্ট বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
অদ্ভুত আবেদন
আপনার পরিবারের সদস্য বা বন্ধুর মধ্যে কেউ যদি হঠাৎ কোনো গোপন তথ্য জানতে চায় বা আর্থিক সাহায্যের আবেদন জানায়, তাহলে অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করুন। এক্ষেত্রে কোনো ধরনের তথ্য বা অর্থ প্রদানের আগে উক্ত ব্যাক্তিকে ফোন করে তার একাউন্ট হ্যাক হয়েছে কিনা সে বিষয়টি নিশ্চিত করুন।
একাউন্ট হ্যাক করে কিংবা অন্যের ছদ্মবেশ নিয়ে আর্থিক সাহায্যের আবেদন জানানো বেশ পুরোনো প্রতারণার ধরন। তাই কোনো নিকটাত্মীয় বা বন্ধু তার ফেসবুক একাউন্ট থেকে এমন আবেদন জানালে অবশ্যই ফোন করে বিষয়টি প্রথমে নিশ্চিত করে নিন।
মিউচুয়াল ছাড়া ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট
হঠাৎ করে যদি মিউচুয়াল ফ্রেন্ডস নেই এমন একাউন্ট থেকে নিয়মিত ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পেয়ে থাকেন, তবে বুঝে নিবেন কেউ আপনার একাউন্টকে টার্গেট করেছে। মিউচুয়াল ফ্রেন্ড ছাড়া রিকুয়েস্ট পাঠানো অধিকাংশ ফেইক হয়ে থাকে। আবার অনেক একাউন্ট তো রীতিমত মিউচুয়াল ফ্রেন্ড তৈরী করে ধোকাবাজি করে থাকে। তাই ফেসবুক পরামর্শ প্রদান করে শুধুমাত্র পরিচিত ব্যাক্তিদের ফেসবুকে ফ্রেন্ড হিসেবে এড করতে।
যেসব আইডির সাথে কোনো ধরনের মিউচুয়াল ফ্রেন্ড নেই, সেসব আইডি যাতে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠাতে না পারে এমন সেটিংস সেট করে নিতে পারেন ফেসবুক সেটিংস থেকে। এছাড়া কোনো ধরনের মেসেজের মাধ্যমে হঠাৎ অপরিচিত কেউ লিংক পাঠালে উক্ত লিংকে ক্লিক করা থেকে বিরত থাকুন, অধিকাংশ সময় এসব লিংক দ্বারা ফিশিং স্ক্যাম করা হয়।
0 responses on "ফেসবুকে ভুয়া প্রোফাইল চেনার উপায়"