নতুন ফ্রিল্যান্সারদের কাজ শুরু করার জন্য ফাইভার মার্কেটপ্লেস খুবই ভালো কাজ করে। এছাড়া বায়ারদের ক্ষেত্রে তাদের কাজ শেষ করার লক্ষ্যে ফ্রিল্যান্সার খোঁজার জন্য এটি একটি আদর্শ অপশন হিসেবে বিবেচনা করা হয় ফাইভারকে। কিন্তু আপনি যদি কখনো এই প্লাটফর্ম ব্যবহার না করে থাকেন তাহলে ফাইভার কিভাবে কাজ করে এটি বের করতে আপনার সময়ে লেগে যেতে পারে।
ফ্রিল্যান্সিং ইনকাম প্লাটফর্ম ফাইভার মূলত একটি সহজে ব্যবহার উপযোগী সাইট। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা নতুনদের জন্য ফাইভার কিভাবে কাজ করে এবং ফাইভারের প্রসেস এর প্রতিটি স্টেপ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো। আপনি বায়ার কিংবা সেলার যেটিই হন না কেন আমাদের এই গাইড আপনাকে ফাইবার সম্পর্কে বুঝতে সাহায্য করবে।
ফাইভার কি?
ফাইভার হলো একটি অনলাইন মার্কেটপ্লেস যেখানে ক্লায়েন্টরা এমন কিছু ফ্রিল্যান্সারের খোঁজ করে থাকেন যারা তাদের সার্ভিস এর মাধ্যমে ক্লায়েন্টের কাজ সম্পন্ন করবে। ফ্রিল্যান্সাররা তাদের সেবার ওপর ভিত্তি করে গিগ এবং মূল্য নির্ধারণ করে থাকে। এছাড়া ক্লায়েন্টরা প্রায় ৫০০ এর বেশি ক্যাটাগরিতে কাজ করা ফ্রিল্যান্সারদের থেকে নিজের মন মতো ফ্রিল্যান্সারদের নিয়ে কাজ করাতে পারবেন।
আপনি কি ফাইভারে টাকা উপার্জন করতে পারবেন?
আপনি ফ্রিল্যান্সার হিসেবে অবশ্যই ফাইভারে টাকা উপার্জন করতে পারবেন। যেহেতু ফাইভার একটি অনলাইন মার্কেটপ্লেস হিসেবে ফ্রিল্যান্সার এবং ক্লায়েন্টের মধ্যে কন্টাক্ট স্থাপন করে সেহেতু আপনি আপনার সার্ভিস ঠিকমতো প্রদান করতে পারলে সে অনুযায়ী অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। তবে ফাইভারে সফলতা পাওয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধৈর্য ধরে এবং কষ্ট করে লেগে থাকতে হবে। এই প্লাটফর্মটি অনেক প্রতিযোগিতামূলক একটি মার্কেট যেখানে বর্তমানে অনেক অভিজ্ঞ ফ্রিল্যান্সার রয়েছেন।
ফ্রিল্যান্সার অর্থাৎ সেলারদের জন্য ফাইভার কিভাবে কাজ করে?
ফ্রিল্যান্সার অর্থাৎ সেলারদের ক্ষেত্রে ফাইভার খুবই সহজে কাজ করে। ফাইভারে নতুন সেলার হিসেবে আপনাকে শুধুমাত্র আপনার সেবার উপরে একটি গিগ তৈরি করতে হবে এবং বায়াররা আপনার কাছ থেকে এসে সেই সেবা কিনে নিবে। অবশ্য কাজের অর্ডার পেতে শুধুমাত্র একটি গিগ বানালেই যে হবে তা না। অনেক সময় প্রথম কাজ পেতে গেলে অনেক বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়। আপনি যখন ফাইবারে প্রথমবারের মত গিগ বানানো শুরু করবেন তখন আপনি সর্বোচ্চ সাতটি গিগ বানাতে পারবেন। তবে আপনার ফাইভার সেলার লেভেল বৃদ্ধির সাথে সাথে এই সংখ্যাটিও বৃদ্ধি পাবে। ফাইভার প্লাটফর্মে আপনি যত বেশি সেল, পজিটিভ রিভিউ পাবেন কিংবা আপনি যত বেশি সময় দিবেন আপনার একাউন্ট তত দ্রুত লেভেল আপ হতে থাকবে।
আপনার কি একজন সেলার হিসেবে ফাইভার ব্যবহার করা উচিতে হবে?
ফ্রিল্যান্সারদের পোর্টফোলিও এবং সার্ভিস দেখানোর ক্ষেত্রে ফাইভার একটি অনেক ভালো প্ল্যাটফর্ম। এটি আপনার প্রথম ফ্রিল্যান্সিং ক্লায়েন্ট পেতে এবং কাজের একটি পোর্টফোলিও এবং সাথে সাথে ৫ স্টার রিভিউ পাওয়ার জন্য আদর্শ জায়গা। ফাইভার তার এলগরিদেমের মাধ্যমে তার ফ্রিল্যান্সারদের গিগ সার্চ লিস্টে নিয়ে আসে। যার ফলে ফ্রিল্যান্সাররা ক্লায়েন্টের কাছ থেকে কাজ পেয়ে থাকে।
ফাইভার কিভাবে গিগ তৈরি করবেন?
গিগের জন্য টাইটেল নির্বাচন করুন
প্রথমে আপনার গিগের জন্য একটি সুন্দর টাইটেল নির্বাচন করতে হবে। ফাইভারে টাইটেলে স্বয়ংক্রিয় ভাবেই “I will” দিয়ে শুরু হয়। আপনি যে ধরনের সেবা প্রদান করতে চান সেটির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং সুন্দর একটি টাইটেল নির্বাচন করুন।
আপনার সেবার মূল্য নির্ধারণ করুন
আপনাকে এরপরে আপনার গিগে আপনার সেবার মূল্য নির্ধারণ করতে হবে। এই স্ক্রিনে আপনি আপনার সেবার মূল্যের মধ্যে ডেলিভারির সময়, রিসার্চ এবং ক্লায়েন্ট কতবার রিভিশন দেওয়ার জন্য অনুরোধ করতে পারবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত লিখে দিতে পারবেন। আপনি চাইলে বিভিন্ন ধরনের প্যাকেজ লেভেল যেমন ব্যাসিক, স্টান্ডার্ড এবং প্রিমিয়াম তৈরি করতে পারবেন। এছাড়া এখানে আপনি অতিরিক্ত সেবার জন্য অতিরিক্ত পেমেন্ট গ্রহণের অপশনটিও পেয়ে যাবেন।
আপনার গিগ বিস্তারিত ব্যাখ্যা করুন
এরপরে আপনি আপনার ফাইভার গিগ বিস্তারিত ভাবে বর্ণনা করুন। আপনি কেমন ধরনের সেবা প্রদান করতে চান সে বিষয়ে ক্লায়েন্ট যাতে ভালো ভাবে বুঝতে পারে সে বিষয়ে খেয়াল রাখুন। তবে চেষ্টা করবেন এটি যেন সংক্ষিপ্ত এবং আকর্ষণীয় হয়। এখানে একটি FAQ সেকশন রয়েছে যেখানে বায়াররা সাধারণত যে সকল প্রশ্ন করে থাকে তার উত্তর দেওয়া যায়। এর ফলে আপনি আপনার এবং বায়ারের সময় বাঁচাতে পারবেন।
মিডিয়া সংযুক্ত করুন
আপনি আপনার ফাইভার একাউন্টের গিগে মিডিয়া সংযুক্ত করে গিগ সম্পন্ন করতে পারবেন। আপনার গিগে একটি কভার ইমেজ সেট করার জন্য এড এন ইমেজ অপশনে ক্লিক করতে হবে। এছাড়াও আপনি আপনার কাজের ছবি কিংবা আপনার গিগ সম্পর্কে কোনো ভিডিও সংযুক্ত করতে পারবেন। আপনি যে সেবা প্রদান করবেন সেটির উপর নির্ভর করে ফাইভার আপনার স্কিল সম্পর্কে কনফার্ম হয়ে পাবলিশ করবে। এর ফলে আপনি যে গিগ প্রদান করছেন সে বিষয়ে আপনি কাজ সম্পন্ন করতে পারবেন কি না ফাইভার সেটির ধারণা নিয়ে রাখছে। এভাবে আপনি আপনার গিগ লাইভে পাবলিশ করতে পারবেন।
বায়ারদের ক্ষেত্রে ফাইভার কিভাবে কাজ করে?
আপনি যদি ফাইভার ফ্রিল্যান্সার বা সেলার হয়ে থাকেন তাহলে বায়ারদের জন্য এটি কীভাবে কাজ করে সেটাও আপনার জেনে রাখা ভাল। ফাইভারের হোমপেজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে বায়ারদের বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সার এর গিগ রেকমেন্ড করে থাকে। এছাড়াও বায়াররা নির্দিষ্ট যে বিষয়ের একজন ফ্রিল্যান্সার চান সে বিষয়ে সার্চ করে ফ্রিল্যান্সার খুঁজে নিতে পারেন। ধরুন কেউ ব্র্যান্ডের লোগো তৈরি করার জন্য একজন ফ্রিল্যান্সার খুঁজছেন। তিনি যখনই সার্চ তুলে তার প্রয়োজন মত কিওয়ার্ড প্রদান করবেন তখন এই সেবা প্রদানকারী ফ্রিল্যান্সারের লিস্ট তিনি দেখতে পাবেন।
বায়াররা চাইলে সকল ফ্রিল্যান্সার এর গিগ বাজেট, ডেলিভারি টাইম এবং সেলারের রেটিং অনুযায়ী লিস্ট ফিল্টার করে নিতে পারেন। বায়ার যখন সঠিক ফ্রিল্যান্সার পেয়ে যাবেন তখন তিনি চাইলে তাদের সাথে কন্টাক্ট করতে পারবেন। এছাড়া তারা চাইলে সাথে সাথে তাকে অর্ডার প্রদান করতে পারবেন।
ফাইভারে নতুনদের জন্য সেরা কিছু টিপস
ফাইভারে আপনি প্রথমবারের মতো বায়ার কিংবা সেলার যেটাই হোন না কেন আপনাকে কিছু জিনিস মাথায় রাখতে হবে। এগুলো মাথায় রাখলে আপনি দ্রুতই ফাইভার থেকে আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী কাজ করতে পারবেন।
- গিগ ডেসক্রিপশন এ কোনো মিথ্যা কথা বলবেন না।
- আপনি আপনার বায়ার বা সেলার থেকে ঠিক কোন জিনিসটা চান সেটি সম্পর্কে শুরু থেকেই অবহিত করুন।
- আপনার পার্টির প্রতি সর্বদা সদয় থাকুন।
- ফাইভার প্ল্যাটফর্ম ব্যতীত অন্য কোন মাধ্যমে পেমেন্ট কিংবা যোগাযোগ স্থাপন করার চেষ্টা করবেন না।
- আপনার কাছে যে সকল গিগ এভেলেবেল রয়েছে সেগুলোর পূর্ণাঙ্গ ব্যবহার করুন।
শুরুর দিকে ফ্রিল্যান্সিং কাজ করার জন্য ফাইভার একটি জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেস। এছাড়া আপনি এখন জেনে গেছেন কিভাবে ফাইভারে কাজ শুরু করতে হয়। আপনি যে বিষয়ে পারদর্শী সে বিষয়ে ফাইভারে ফ্রিল্যান্সিং করে আপনার জীবন নির্বাহ করা আরো সহজ করে তুলুন।
0 responses on "ফাইভার থেকে টাকা ইনকাম করতে শুরুতেই এগুলো জানুন"