প্রত্যেকেই যারা বিভিন্ন বোর্ড পরীক্ষা দিয়েছেন বা দিচ্ছেন, অথবা কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা কিংবা চাকরির পরীক্ষা দিয়েছেন বা দিবেন তারা নিশ্চয়ই জানেন যে এসকল পরীক্ষায় প্রোগ্রামেবল ক্যালকুলেটর ব্যবহার করা যাবে না। এসকল পরীক্ষার নোটিশে দেখা যায় লেখা থাকে যে কোনো প্রকার প্রোগ্রামেবল ক্যালকুলেটর ব্যবহার করা যাবে না। আমাদের সকলের মনেই কোনো না কোনো সময়ে প্রশ্ন জেগেছে যে প্রোগ্রামেবল ক্যালকুলেটর কী, অথবা এটি কীভাবে চেনা যায়, কিংবা এটি কেনই বা পরীক্ষার হলে নিষিদ্ধ থাকে। চলুন আজ প্রোগ্রামেবল ক্যালকুলেটর সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।
প্রোগ্রামেবল ক্যালকুলেটর কী?
প্রোগ্রামেবল ক্যালকুলেটর হলো হাতেধরে ব্যবহারযোগ্য একটি ইলেকট্রনিক যন্ত্র যেটি গাণিতিক গণনার পাশাপাশি ব্যবহারকারীদের নির্ধারিত প্রোগ্রামগুলো সম্পাদন করতে পারে। ব্যবহারকারী তাদের নিজেদের ইচ্ছামতো প্রোগ্রাম লিখে সেটি এখানে সংরক্ষন করতে পারে যাতে করে তারা পরবর্তীতে পুনরায় এই প্রোগ্রাম ব্যবহার করে গাণিতিক সমস্যার সমাধান করতে পারে। এই ক্যালকুলেটর গুলোতে ইনপুট হিসেবে সাধারণত কীবোর্ড, আউটপুটের জন্য একটি ডিসপ্লে এবং প্রোগ্রাম লেখা বা প্রোগ্রাম সম্পাদন করার জন্য প্রোগ্রামিং ভাষা থাকে।
সাধারণত প্রোগ্রামেবল ক্যালকুলেটর দ্বারা ইঞ্জিনিয়ারিং, বিজ্ঞান এবং অর্থনীতি বিষয়ক অনেক জটিল সমস্যার সমাধান সহজে করা যায়। এছাড়া প্রোগ্রামেবল ক্যালকুলেটর ব্যবহার করার ফলে অনেক সময় বাঁচিয়ে নেওয়া যায়। টেক্সাস ইন্সট্রুমেন্ট, ক্যাসিও, শার্প, এইচপি প্রভৃতি ব্রান্ডের প্রোগ্রামেবল ক্যালকুলেটর বর্তমানে বাজারে পাওয়া যায়।
প্রোগ্রামেবল ক্যালকুলেটর চেনার উপায়
প্রথম কথা হচ্ছে, প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সাথে প্রোগ্রামেবল/নন-প্রোগ্রামেবল এর সংজ্ঞা পরিবর্তন হতে পারে। তবে ক্যালকুলেটরের বাহ্যিক গঠন এবং মডেল নম্বর থেকে আপনি প্রাথমিক ধারণা নিতে পারেন। প্রোগ্রামেবল ক্যালকুলেটর এবং নন প্রোগ্রামেবল ক্যালকুলেটর এর মধ্যে সবচেয়ে বড় যে পার্থক্য সেটি হলো নন প্রোগ্রামেবল ক্যালকুলেটরে কোনো প্রকার ফাংশন/লজিক বাটন নেই। এছাড়া আরও একটি পার্থক্য লক্ষ্য করা যায় যে নন প্রোগ্রামেবল ক্যালকুলেটরের ডিসপ্লেতে কোনো প্রকার ম্যাট্রিক্স অথবা ভেক্টর ফাংশন দেওয়া থাকে না। প্রোগ্রামিং ক্যালকুলেটর সাধারণত কম্পিউটার এলজেব্রিক সিস্টেম এর মাধ্যমে কঠিন সমস্যাগুলো সহজ ভাবে সমাধান করে ফেলে। সাধারণত যে সকল ক্যালকুলেটরে গ্রাফ করার সক্ষমতা রয়েছে সেগুলো প্রোগ্রামেবল ক্যালকুলেটর এর আওতাধীন। প্রোগ্রামেবল ক্যালকুলেটর এর ডিসপ্লে সাধারণত নন প্রোগ্রামেবল ক্যালকুলেটরে থেকে সাইজে বড় হয়ে থাকে।
এছাড়া প্রোগ্রামেবল ক্যালকুলেটরে আলাদাভাবে কিপ্যাড অথবা অতিরিক্ত কিছু বাটন থাকে যেগুলো শুধুমাত্র প্রোগ্রামিং ফাংশন সম্পন্ন করার জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে। প্রোগ্রামেবল ক্যালকুলেটরে ইংরেজি অক্ষর A থেকে Z পর্যন্ত সকল অক্ষর ব্যবহারের সুবিধা থাকে। যেহেতু প্রোগ্রামেবল ক্যালকুলেটরে প্রোগ্রাম সংরক্ষণ করা যায় সেহেতু প্রোগ্রামেবল ক্যালকুলেটরের মেমোরি এবং স্টোরেজ ক্ষমতা বেশি।
প্রোগ্রামেবল ক্যালকুলেটর নন প্রোগ্রামেবল ক্যালকুলেটর থেকে সাধারণত ভারি হয়। এছাড়া ক্যালকুলেটরের ব্র্যান্ড ও মডেল নম্বর সম্পর্কে ইন্টারনেটে রিসার্চ করলে আপনি জেনে নিতে পারবেন আপনার হাতে থাকা ক্যালকুলেটর প্রোগ্রামেবল নাকি নন প্রোগ্রামেবল। পরীক্ষার হলে যাওয়ার আগে অবশ্যই নিশ্চিত হয়ে নিবেন আপনার কাছে থাকা ক্যালকুলেটরটি পরীক্ষার হলে নিয়ে যাওয়া বৈধ কি না। আপনি হয়ত অনলাইনে বিভিন্ন তালিকা পাবেন নন-প্রোগ্রামেবল ক্যালকুলেটরের, তবে অনেক সময় সেসব তালিকার সাথে আপনার নির্দিষ্ট পরীক্ষার নির্দেশনার মিল নাও থাকতে পারে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, অনেক সময় পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ বিশেষ কিছু ক্যালকুলেটর মডেল ছাড়া বাকি সব মডেলই পরীক্ষাকেন্দ্রে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে পারে। তাই আপনার উচিত হবে সে সম্পর্কে জানা এবং সেই অনুযায়ী ক্যালকুলেটর বাছাই করা। সুতরাং আপনার ক্যালকুলেটর যদি নন-প্রোগ্রামেবল হয়েও থাকে, কিন্তু সেটা যদি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের অফিসিয়াল তালিকায় বৈধ হিসেবে তালিকাভুক্ত না থাকে, তাহলে সেই ক্যালকুলেটর পরীক্ষায় না নিয়ে যাওয়াই ভাল।
প্রোগ্রামেবল ক্যালকুলেটর কেন বিভিন্ন পরীক্ষায় নিষিদ্ধ করা হয়?
প্রোগ্রামেবল ক্যালকুলেটর সাধারণত পরীক্ষার মধ্যে স্বচ্ছতা আনার জন্য নিষিদ্ধ করা হয়। প্রোগ্রামেবল ক্যালকুলেটর ছাত্রছাত্রীদের জন্য অসম সুবিধা প্রদান করে কারণ প্রোগ্রামেবল ক্যালকুলেটরে আগে থেকেই খুব সহজে উত্তর সংরক্ষণ করে রাখা যায়। এসকল ক্যালকুলেটর নিষিদ্ধ করার মাধ্যমে পরীক্ষার মানদন্ড এবং পরীক্ষার নিরাপত্তা বজায় থাকে। এসব ক্যালকুলেটর নিষিদ্ধ করার ফলে ছাত্র-ছাত্রীদের প্রয়োজনীয় দক্ষতা উন্নত এবং বাইরের সাহায্যের উপর নির্ভর না করে মানসিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করে গাণিতিক সমস্যা গুলোর সমাধান করতে হয়। এর ফলে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান আরো বেশি বিকশিত হয় এবং সকল শিক্ষার্থী সমান প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা প্রদান করতে পারে।
আপনার পরবর্তী পরীক্ষার আগে জেনে নিন আপনার ক্যালকুলেটরটি প্রোগ্রামেবল নাকি নন প্রোগ্রামেবল। এক্ষেত্রে আপনি আমাদের এই পোষ্টটির সহায়তা নিতে পারবেন। প্রোগ্রামেবল ক্যালকুলেটর সম্পর্কে আপনার কোনো মতামত এবং অভিজ্ঞতা থাকলে আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন।