অনলাইন অ্যাকাউন্টের যুগে শুরু থেকেই পাসওয়ার্ড প্রধান নিরাপত্তা ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করে আসছে। সকল অনলাইন অ্যাকাউন্টে লগইন এর জন্য পাসওয়ার্ডের ভালো বিকল্প আসেনি কখনোই। পাসওয়ার্ড নিরাপত্তা নিশ্চিত করলেও এর অনেক রকম অসুবিধাও রয়েছে। ভুলে যাওয়া কিংবা পাসওয়ার্ড চুরি হওয়া ইত্যাদি বিভিন্ন সমস্যায় সকলেই কম বেশি ভুগেছেন। এবার পাসওয়ার্ড থেকেও উন্নত নিরাপত্তা ব্যবস্থা আনতে একযোগে মাঠে নেমেছে বিশ্বের বেশ কয়েকটি বড় টেক প্রতিষ্ঠান।
৫ মে বিশ্ব পাসওয়ার্ড দিবসকে সামনে রেখে গুগল, মাইক্রোসফট এবং অ্যাপল মিলে পাসওয়ার্ডের বিকল্প ব্যবস্থা নিয়ে আসতে সচেষ্ট হয়েছে। আর এরই ধারাবাহিকতায় তারা ফিডো নামের নতুন একটি সংগঠনে যুক্ত হওয়ার ব্যাপারে একমত হয়েছে। এর ফলে পাসওয়ার্ডের থেকেও উন্নত একটি নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভবিষ্যতে এসব প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের সকল ডিভাইসে কাজ করবে । এই নতুন নিরাপত্তা ব্যবস্থার নাম ‘পাসকি’ বা Passkey ।
পাসওয়ার্ড থেকে মুক্ত হয়ে এর মাধ্যমে বায়োমেট্রিক অথেনটিকেশন বা সিকিউরিটি কি ব্যবহার করে সহজেই লগইন করা যাবে অনলাইন যে কোনো অ্যাকাউন্টে। ফলে পাসওয়ার্ড মনে রাখা কিংবা চুরি হয়ে যাওয়ার সমস্যা আর থাকছে না। এই বছরের মধ্যেই প্রায় সকল মূল ধারার অনলাইন প্লাটফর্মে পাসকি কাজ করবে বলে জানা গিয়েছে। গুগল ইতোমধ্যেই গুগল অ্যাকাউন্টে পাসকি ব্যবহার করে লগইন করার সুযোগ চালু করেছে।
পাসকি কী?
আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে পাসকি কি এ ব্যাপারে। তাহলে জেনে নিন- গুগল, মাইক্রোসফট এবং অ্যাপল এই তিন টেক জায়ান্ট মিলে ফিডো বা ফাস্ট আইডেন্টিটি অনলাইন নামক একটি অ্যালায়েন্সে যুক্ত হয়েছে। ফিডো প্রযুক্তির মাধ্যমে ডিভাইস হতে বায়োমেট্রিক ডাটা বিশেষ টোকেনের মাধ্যমে সকল অনলাইন অ্যাকাউন্টে সংরক্ষিত থাকবে। ফলে ফোন ব্যবহার করেই সহজে যে কোনো অনলাইন অ্যাকাউন্টে লগইন করে ফেলা যাবে। এভাবে লগইন এর জন্য আপনি ফোনের যে কোনো ধরনের অথেনটিকেশন মেথড ব্যবহার করতে পারবেন। যেমন: পিন, প্যাটার্ন, ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা ফেস আনলক। এই ব্যবস্থার নাম দেয়া হয়েছে ‘পাসকি’। পাসকি হিসেবে যে কোনো ডিভাইসের অথেনটিকেশন ডাটা আপনি ব্যবহার করতে পারবেন। এর ফলে পাসওয়ার্ড মনে রাখা কিংবা চুরি হয়ে যাওয়ার সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
পাসওয়ার্ডের বদলে পাসকি কেন?
পাসওয়ার্ড লম্বা সময় ধরে অনলাইন অ্যাকাউন্টে নিরাপত্তার কাজটি করে আসলেও পাসওয়ার্ডের রয়েছে নানারকম অসুবিধা। বেশিরভাগ মানুষেরই অসংখ্য অনলাইন অ্যাকাউন্ট থাকে। প্রতিটি অ্যাকাউন্টে ভিন্ন ভিন্ন পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা এবং সেটি মনে রাখা অত্যন্ত জটিল কাজ। আবার একই পাসওয়ার্ড সবখানে ব্যবহার করলে নিরাপত্তার ঝুঁকিও বেড়ে যায়।
তাছাড়া পাসওয়ার্ড হ্যাক বা চুরি করে ফেলা যায় খুব সহজেই। বিভিন্ন ফিশিং সাইট এবং হ্যাকিং টুলের মাধ্যমে সহজেই আপনার পাসওয়ার্ড হ্যাকারদের হাতে চলে যেতে পারে। এসব সমস্যা থেকে মুক্তি দিতেই পাসওয়ার্ডের সঙ্গে বর্তমানে টু ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন ব্যবস্থা চালু হয়েছে। তবে এর ফলে অনলাইন অ্যাকাউন্টে লগইন করা আরও ঝামেলা ও সময়সাপেক্ষ হয়ে গিয়েছে। সব মিলিয়েই পাসওয়ার্ডের বিকল্প দ্রুতগতির কোনো সহজ ব্যবস্থা নিয়ে আসা অতি জরুরি হয়ে পড়েছিল।
আর তাই তৈরি করা হয়েছে এই পাসকি নামক ব্যবস্থা। পাসকির মাধ্যমে লগইন করতে আপনার পাসওয়ার্ডের কোনো প্রয়োজন হবে না। বায়োমেট্রিক অথেনটিকেশন কিংবা সিকিউরিটি কি ব্যবহার করে যে কোনো অনলাইন অ্যাকাউন্টে যে কোনো ডিভাইস থেকে লগইন করে ফেলা যাবে। এই ব্যবস্থায় ফিশিং বা অন্য কোনো মাধ্যমে এই কি চুরি হবার কোনো ভয় থাকবে না। ফলে অনলাইন অ্যাকাউন্ট হবে আরও নিরাপদ।
পাসকি কীভাবে কাজ করে?
পাসকি একটি ক্রস-প্ল্যাটফর্ম ফাংশন যেটি ফিডো নামক একটি স্ট্যান্ডার্ডে কাজ করবে। আপনি আপনার স্মার্টফোন আনলক করতে নিয়মিত পিন, প্যাটার্ন, ফিঙ্গারপ্রিন্ট কিংবা ফেস আনলকের মতো পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকেন। এই লগইন কৌশল এতোদিন শুধুমাত্র আপনার নিজস্ব ডিভাইসেই ব্যবহৃত হত। নতুন পাসকি প্রযুক্তিতে আপনার এই লগইন ব্যবস্থা অনলাইনে ব্যবহার করা যাবে। তবে এটি হবে সম্পূর্ণ নিরাপদে এবং দ্রুত। আপনি পাসকি ব্যবহারের অনুমতি দিলেই এই অথেনটিকেশন কৌশল অনলাইনে সিঙ্ক হতে থাকবে। এরপর আপনি কোনো অনলাইন অ্যাকাউন্ট যেমন জিমেইলে পিসি থেকে লগইন করতে চাইলে আপনার ফোনে একটি নোটিফিকেশন চলে যাবে। তখন যে কোনো অথেনটিকেশন মেথড যেমন ফিঙ্গারপ্রিন্ট কিংবা ফেস আনলক ব্যবহার করলেই সেই অথেনটিকেশন কনফার্মেশন সরাসরি জিমেইল ওয়েবসাইটে চলে যাবে। সঙ্গে সঙ্গেই লগইন হয়ে যাবে আপনার অ্যাকাউন্টে।
এর ফলে পাসওয়ার্ড মনে রাখা বা চুরি যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না। যেহেতু অনলাইনেই বায়োমেট্রিক অথেনটিকেশন এর মাধ্যমে এই কনফার্মেশন দেয়া হচ্ছে ফলে ফিশিং সাইটের মাধ্যমে এই ডাটা চুরি করা কখনোই সম্ভব নয়। আপনি চাইলে যে কোনো ডিভাইসের পাসকি যুক্ত কিংবা বাতিল করতে পারবেন আপনার অনলাইন অ্যাকাউন্টে। এই সেবার ফলে উইন্ডোজ পিসিতে ক্রোম ব্রাউজার থেকে আইফোন ব্যবহার করেও যে কোনো অনলাইন অ্যাকাউন্টে লগইন করে ফেলা যাবে। অর্থাৎ যে কোনো প্লাটফর্মে এবং যে কোনো অপারেটিং সিস্টেমে এই সেবা ব্যবহার করা সম্ভব হবে।
যেসব স্থানে পাসকি ব্যবহার করা যাচ্ছে
পাসকি ইতোমধ্যেই গুগল তাদের অনলাইন অ্যাকাউন্টে আলাদা একটি লগইন অপশন হিসেবে যুক্ত করেছে। ফলে যে কোন ডিভাইস হতে গুগল অ্যাকাউন্টে লগইন করতে আপনি আপনার ফোনের ক্রেডেনশিয়াল ব্যবহার করতে পারবেন। এই ব্যবস্থাটি ইতোমধ্যেই খুব ভালোভাবে কাজ করছে। এটি ব্যবহার করতে গুগল অ্যাকাউন্টে থেকে পাসকি অপশনটি চালু করে নিন।
মাইক্রোসফট এবং অ্যাপলও দ্রুতই তাদের অনলাইন সার্ভিসে এই সেবা প্রদান করা শুরু করবে বলে জানিয়েছে। বিশ্বের সকল বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানই এই বছরের মধ্যেই এই সেবা চালু করবে বলে আশা করছে। ফলে খুব দ্রুতই সব স্থানেই পাসকি এর ব্যবহার দেখা যাবে বলে আশা করা যায়।
পাসকি কতটা নিরাপদ?
পাসকি অনলাইন অ্যাকাউন্টে নিরাপত্তার ভবিষ্যৎ। বর্তমানে পাসকি প্রথমবার সেটআপ করতে হলে পাসওয়ার্ড সেটআপ করে নিতে হয়। তবে ধীরে ধীরে সকল স্থানে পাসকি এর ব্যবহার শুরু হলে পাসওয়ার্ড আর বাধ্যতামূলক থাকবে না। ফলে ধীরে ধীরে সকল অনলাইন সেবাই শুধুমাত্র পাসকি দিয়ে নিরাপত্তা দিতে পারবে। তবে যেহেতু এখনও পাসওয়ার্ড দরকারী ফলে পাসওয়ার্ড চুরি হয়ে যাবার ঝুঁকি রয়ে যাবে আপাতত।
এছাড়া পাসকি কোনো শেয়ার্ড ডিভাইসে ব্যবহার করা যাবে না। কেননা ডিভাইসের নিয়ন্ত্রণ অন্য কারো হাতে চলে গেলে সহজেই সে আপনার অনলাইন অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করে ফেলতে পারবে। তবে যে কোনো সময় অনলাইন অ্যাকাউন্টে লগইন করে যে কোনো ডিভাইসের পাসকি বাতিল করা যাবে। কাজেই ডিভাইস চুরি হয়ে গেলে প্রথমেই এই কাজটি করা জরুরি হবে।
সুতরাং পাসকি পাসওয়ার্ড থেকে অধিক নিরাপত্তা প্রদান করবে বলে আশা করা যায়। তাই পাসকি সেবা সম্ভব হলে এখন থেকেই ব্যবহার শুরু করে দিতে পারেন।
0 responses on "পাসওয়ার্ড ছাড়া লগিন ‘পাসকি’ সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন"