আপনি যদি একজন প্রোগ্রামার হতে চান, তাহলে আপনার পাইথন ল্যাঙ্গুয়েজ সম্পর্কে জানা উচিত । কোডিং ল্যাঙ্গুয়েজে আগ্রহী অনেক মানুষই পাইথন সম্পর্কে খুব বেশী জানেন না । কারণ এটি একটি হাই লেভেল প্রোগ্রামিং ভাষা । পাইথন বড় বড় কাজ করতে ব্যবহৃত হয় । পাইথন খুব সহজ একটি প্রোগ্রামিং ভাষা এবং অন্যান্য প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ যেমন C , C++, Java, JavaScript ইত্যাদি থেকে এক ধাপ এগিয়ে । সেই সাথে এটি, বর্তমান যুগের প্রোগ্রামারদের জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ । কারণ, এটি ওয়েবসাইট ডেভেলপ করা থেকে শুরু করে, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট এবং বিভিন্ন ধরনের বৈজ্ঞানিক অ্যাপ্লিকেশন তৈরিতেও ইউজ হয় । বর্তমানে, Google, Yahoo, Pinterest, Quora এবং Spotify এর মত জায়ান্ট কোম্পানিগুলো এটি ব্যবহার করছে । তাই আজকের এই আর্টিকেলে আমরা আপনাদের, পাইথন কি এবং পাইথন ল্যাঙ্গুয়েজ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করব ।
পাইথন কি – পাইথন ল্যাঙ্গুয়েজ কি – পাইথন প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ কি
পাইথন হল একটি অবজেক্ট-ভিত্তিক, হাই লেভেল প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ, যা ওয়েবসাইট তৈরি, অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট , মেশিন লার্নিং, ওয়েব স্ক্র্যাপিং, ডেটা অ্যানালাইসিস এবং ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং এর মতো কাজে ব্যবহৃত হয় ।পাইথনকে জেনারেল পারপাস প্রোগ্রামিং ভাষাও বলা হয় । এটি ১৯৮০ এর দশকে প্রথম শুরু হয়েছিল ।
পাইথন ল্যাঙ্গুয়েজের স্পষ্ট সিনট্যাক্স এবং সহজে পঠনযোগ্য হওয়ার কারণে, এটি বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ হয়ে উঠেছে । পাইথন প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ, ডাইনামিক টাইপিং এবং ডাইনামিক বাইন্ডিং এর মত অপশন প্রদান করে ।এই কারণে, এটি দ্রুত অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপ করার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় ।
পাইথন একটি ইন্টারপ্রেটেড ল্যাঙ্গুয়েজ (interpreted language), যার মানে হল পাইথনে লেখা প্রোগ্রাম, রান করার আগে কম্পাইল করার প্রয়োজন পরে না । পাইথন ল্যাঙ্গুয়েজ, মডিউল এবং প্যাকেজের ব্যবহার সাপোর্ট করে । সহজ কথায়, আপনি একটি মডুলার স্টাইলে, একটি পাইথন প্রোগ্রাম ডিজাইন করতে পারেন এবং এর কোড অন্যান্য অনেক প্রকল্পে পুনরায় ইউজ করতে পারেন ।
আপনি যদি প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ শিখতে চান, তাহলে আপনি পাইথন দিয়েও শুরু করতে পারেন । কারণ এর কোডগুলো হুবহু ইংরেজি ভাষার মতো ।
পাইথন কীভাবে কাজ করে
পাইথন তার কোডকে সরাসরি মেশিন কোডে রূপান্তর করে না । মূলত এটি তার কোডকে বাইট কোডে কনভার্ট করে । তাই পাইথনের মধ্যে, কম্পাইলেশন ঘটে, তবে এটি শুধুমাত্র একটি মেশিন ল্যাঙ্গুয়েজ নয় ।
এই বাইট কোড ( .pyc বা .pyo ) CPU সরাসরি বুঝতে পারে না । তাই এই বাইট কোড রান করার জন্য পাইথন ভার্চুয়াল মেশিন নামে একটি দোভাষীর প্রয়োজন হয় ।
সহজ কথায়, পাইথন সোর্স কোড থেকে একটি এক্সিকিউটেবল পাইথন কোড তৈরি করতে মোট ৩ টি ধাপ অতিক্রম করে :
- ধাপ 1: প্রথম ধাপে, পাইথন কম্পাইলার একটি সোর্স কোড রিড করে এবং পরীক্ষা করে ।
- ধাপ 2: কোডে যদি কোন ত্রুটি না থাকে, তাহলে কম্পাইলার এটিকে ” বাইট কোড ” নামে একটি মধ্যবর্তী ভাষায় ট্রান্সলেট বা অনুবাদ করে ।
- ধাপ 3: পরবর্তীতে বাইট কোডটিকে পাইথন ভার্চুয়াল মেশিনে (PVM) পাঠানো হয়, যা পাইথন ইন্টারপ্রেটার নামে পরিচিত । PVM পাইথন বাইট কোডকে মেশিন-এক্সিকিউটেবল কোডে কনভার্ট করে ।
পাইথনের ইতিহাস
- ১৯৮০ এর দশকের শেষের দিকে এর প্রথম পাইথনের ভিত্তি স্থাপন করা হয়েছিল ।
- ১৯৮৯ সালের ডিসেম্বর মাসে, নেদারল্যান্ডসের CWI-তে Guido Van Rossum পাইথন বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেন ।
- ১৯৯১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে, Guido Van Rossum alt.sources- এ, এই কোড (লেবেল সংস্করণ 0.9.0) প্রথম প্রকাশ করেন ।
- ১৯৯৪ সালে, Python 1.0 ভার্শন Lambda, Filter, Map এবং Reduce এর মত কিছু নতুন বৈশিষ্ট্য সহ মুক্তি পায় ।
- ২০০০ সালে Python 2.0 রিলিজ করা হয় । এতেও নতুন কিছু বৈশিষ্ট্য যুক্ত করা হয়, যেমন – লিস্ট কম্প্রিহেনশন, গারবেজ কালেকশন সিস্টেম ইত্যাদি ।
- ২০০৮ সালের ৩ ডিসেম্বর, Python 3.0 (” Py3K ” নামেও পরিচিত ) রিলিজ করা হয় । এটি ল্যাঙ্গুয়েজের একটি মৌলিক আইন সংশোধন করার জন্য তৈরি করা হয়েছিল ।
- ABC প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজকে, পাইথন প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজের পূর্বসূরি বলা হয়, যেটি অ্যামিবা অপারেটিং সিস্টেমের সাথে এক্সপেক্টেশান হ্যানডেলিং করতে এবং ইন্টারফেস করতে সক্ষম ছিল।
নিম্নলিখিত প্রোগ্রামিং ভাষাগুলি পাইথনকে প্রভাবিত করে:
(i) ABC প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ
(ii) মডিউল-৩
কেন এটি পাইথন নামকরণ করা হয়েছিল ?
পাইথন নামটি নিয়ে অনেকের মধ্যেই একটি প্রশ্ন থাকে যে, প্রোগ্রামিং ভাষার সাথে সাপের নামের কি সম্পর্ক ? পাইথন নামটি সিলেক্ট করার পেছনে একটি সত্য ঘটনা রয়েছে । মূলত একটি কমেডি শো এর নাম থেকে পাইথন নামের উৎপত্তি হয়েছে । ১৯৭০ এর দশকে, “মন্টি পাইথনস ফ্লাইং সার্কাস” নামে একটি স্ক্রিপ্ট বিবিসি কমেডি সিরিজ এর মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল । এই সার্কাসের নাম থেকে প্রভাবিত হয়ে ভ্যান রোসাম, এই ল্যাঙ্গুয়েজের নাম দেন পাইথন ।
মূলত ভ্যান রসম, তার তৈরি এই প্রোগ্রামিং লাঙ্গুয়েজের জন্য এমন একটি নাম নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন, যা হবে ইউনিক, সুশৃঙ্খল এবং কিছুটা রহস্যময় । তাই তিনি তার সদ্য নির্মিত প্রোগ্রামিং ভাষার জন্য ” মন্টি পাইথনস ফ্লাইং সার্কাস” থেকে পাইথন নামটি নির্বাচন করেন ।
পাইথন সংস্করণ ইতিহাস – পাইথনের ভার্শনের ইতিহাস
পাইথন ল্যাঙ্গুয়েজের বিভিন্ন ভার্শনের ইতিহাস নিচে দেওয়া হল –
- পাইথন 1.0 – জানুয়ারী 1994
- পাইথন 1.2 – এপ্রিল 10, 1995
- পাইথন 1.3 – অক্টোবর 12, 1995
- পাইথন 1.4 – অক্টোবর 25, 1996
- পাইথন 1.5 – 31 ডিসেম্বর, 1997
- পাইথন 1.6 – সেপ্টেম্বর 5, 2000
- পাইথন 2.0 – অক্টোবর 16, 2000
- পাইথন 2.1 – এপ্রিল 15, 2001
- পাইথন 2.2 – 21 ডিসেম্বর, 2001
- পাইথন 2.3 – জুলাই 29, 2003
- পাইথন 2.4 – নভেম্বর 30, 2004
- পাইথন 2.5 – সেপ্টেম্বর 19, 2006
- পাইথন 2.6 – অক্টোবর 1, 2008
- পাইথন 2.7 – জুলাই 4, 2010
- পাইথন 3.0 – 3 ডিসেম্বর, 2008
- পাইথন 3.1 – জুন 27, 2009
- পাইথন 3.2 – 20 ফেব্রুয়ারি, 2011
- পাইথন 3.3 – সেপ্টেম্বর 29, 2012
- পাইথন 3.4 – মার্চ 16, 2014
- পাইথন 3.5 – 13 সেপ্টেম্বর, 2015
- পাইথন 3.6 – 23 ডিসেম্বর, 2016
- পাইথন 3.7 – জুন 27, 2018
পাইথন ভাষার যে কোন ভার্শন পড়তে বা ব্যবহার করতে, আমাদের কোন ধরনের লাইসেন্স কেনার প্রয়োজন হবে না । কারণ পাইথন ভাষা, জেনারেল পাবলিক লাইসেন্সের (জিপিএল) অধীনে পাওয়া যায় । GNU বা জেনারেল পাবলিক লাইসেন্স হল একটি বহুল ব্যবহৃত ফ্রি সফটওয়্যার লাইসেন্স, যা সফটওয়্যার চালানো, পড়া এবং পরিবর্তন করার স্বাধীনতা প্রদান করে ।
পাইথনের বৈশিষ্ট্য
বর্তমান সময়ে অনেকগুলো প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ রয়েছে । যার কারণে আমাদের, সেগুলির মধ্যে থেকে যে কোন একটি বেছে নিতে অনেক সমস্যা হয় । এমন অবস্থায়, এই প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজের বৈশিষ্ট্যগুলির তুলনা করে দেখা প্রয়োজন । আপনাকে দেখতে হবে কোন প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজের কি কি ফিচার আছে । তাহলে চলুন জেনে নিই পাইথন প্রোগ্রামিং ভাষার কিছু ফিচার সম্পর্কে –
সহজ প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ:- অন্য সব প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজের মধ্যে, যদি এমন একটি ভাষা থাকে, যা শেখা এবং ইউজ করা অনেক বেশী সহজ, তবে সেটি হল পাইথন । এই অন্যান্য প্রোগ্রামিং ভাষার মত নয়, পাইথনে কোড করা বা লেখা অনেক সহজ ।অল্প পরিশ্রমে এবং খুব দ্রুত পাইথনের সিনট্যাক্স শেখা যায় । হাই লেভেল প্রোগ্রামিং থাকা সত্ত্বেও, পাইথন কোডগুলি হুবহু ইংরেজি ভাষার মত, এর কারণে এর কোড লেখা, বোঝা এবং শেখা অন্যান্য প্রোগ্রামিং ভাষার তুলনায় সহজ । এই কারণে আপনারা এটিকে প্রোগ্রামার ফ্রেন্ডলি ল্যাঙ্গুয়েজও বলতে পারেন ।
ইন্টারপ্রেটেড ল্যাঙ্গুয়েজ:- পাইথন ব্যতিত অন্য যে কোন প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ রান করার আগে, আমাদের সেটিকে কম্পাইল করার প্রয়োজন হয় । কিন্তু পাইথনের ক্ষেত্রে কোন ধরনের কম্পাইলেশনের প্রয়োজন হয় না । পাইথনে লেখা কোড কম্পাইল না করে সরাসরি রান করা যায় । এখানে ইন্টারপ্রেটেড মানে, সোর্স কোড প্রত্যেক লাইন বাই লাইন এক্সিকিউট হয় ।
অভিব্যক্তিপূর্ণ ভাষা:- যখন কোন কিছুর ক্ষেত্রে অভিব্যক্তিমূলক শব্দটি ব্যবহার করা হয়, তখন এর অর্থ বোঝায় যে, সেটি সহজে বোধগম্য এবং পাঠযোগ্য । পাইথনও তেমনই একটি প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ, যা পড়া এবং বোঝা খুব সহজ । এমন অনেক প্রোগ্রাম রয়েছে, যেগুলো অন্য প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজে করা যায় না, কিন্তু পাইথনে সেটি সহজেই করা যায় ।
ক্রস-প্ল্যাটফর্ম ভাষা:- আমরা যদি যে কোনো একটি অপারেটিং সিস্টেমের (উইন্ডোজ, অ্যান্ড্রয়েড, ম্যাক, লিনাক্স ) জন্য পাইথন কোড লিখি, তাহলে অন্য কোনো অপারেটিং সিস্টেমে সেই কোড রান করার জন্য কোনো ধরনের পরিবর্তন করতে হবে না । এর অর্থ হল, পাইথন ভাষায় লেখা কোড সব ধরনের প্ল্যাটফর্ম সমর্থন করে । যে কোনো প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ শেখা শুরু করার আগে দেখতে হবে যে, সেটি পোর্টেবল ল্যাঙ্গুয়েজ কিনা ।
ওপেন সোর্স:- পাইথন হল ওপেন সোর্স প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ, যার অর্থ হল পাইথন সোর্স কোড পুরো বিশ্বের মানুষের জন্য ফ্রিতে উপলব্ধ । আমরা সহজেই এটিকে ডাউনলোড, পরিবর্তন, ব্যবহার এবং ডিস্ট্রিবিউট করতে পারি । সেই সাথে, পাইথন একটি ফ্রি ভাষা, সেই কারনে এর সমস্ত টুলস আপনি সহজেই ব্যবহার করতে পারবেন ।
এমবেডেড:- পাইথন সম্পূর্ণভাবে এমবেডেড, অর্থাৎ, অন্যান্য প্রোগ্রামিং ভাষায় লেখা কোড, এর সোর্স কোডে এবং পাইথনে লেখা কোড অন্যান্য ভাষার সোর্স কোডে ইনসারশান বা সন্নিবেশ করা যেতে পারে । এটি, অন্যান্য ভাষার স্ক্রিপ্টিং ক্ষমতাগুলিকে আমাদের প্রোগ্রামগুলিতে ইন্টিগ্রেট করতে দেয় ।
বড় স্ট্যান্ডার্ড লাইব্রেরি:- যখন আমরা পাইথন ডাউনলোড করি, তখন এর সাথে আমরা কোডের একটি বড় লাইব্রেরিও পাই । এই লাইব্রেরীর কারণে আপনাকে সবকিছুর জন্য নিজের কোড লিখতে হবে না । এটি আমাদের দ্রুত অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপ করার জন্য মডিউল এবং ফাংশনগুলির একটি সমৃদ্ধ সেট সাপ্লাই করে ।
এক্সটেনশন:- প্রয়োজনে আমরা পাইথন ল্যাঙ্গুয়েজের কোড অন্যান্য ভাষায় লিখতে পারি যেমন C++ । এটি পাইথনকে একটি এক্সটেনসিবল ল্যাঙ্গুয়েজ করে তোলে । এই কারণে আমরা পাইথনকে অন্যান্য ভাষায় এক্সপান্ড করতে পারি ।
GUI প্রোগ্রামিং সাপোর্ট:- পাইথন ল্যাঙ্গুয়েজ ইউজ করে গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেস (GUI) তৈরি করা যায় । GUI হল ইউজার ইন্টারফেসের একটি ফর্ম, যা আইকন বা অন্যান্য ভিজ্যুয়াল ইন্ডিকেটরের মাধ্যমে ব্যবহারকারীকে কোন রকম টেক্সট বা কমান্ড লাইন ছাড়া একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইসের সাথে ইন্টারঅ্যাক্ট করতে দেয় ।
পাইথন কোথায় ব্যবহার করা হয় – পাইথনের ব্যবহার
পাইথন একটি জেনারেল পারপাস, ওপেন-সোর্স, হাই লেভেল প্রোগ্রামিং ভাষা । এছাড়াও এটি অনেক লাইব্রেরি এবং ফ্রেমওয়ার্ক প্রদান করে । পাইথনের সহজ সিনট্যাক্স এবং ইউজার ফ্রেন্ডলী হওয়ার কারণে এর জনপ্রিয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে । পাইথনের কিছু ব্যবহার নিচে দেওয়া হল –
- ডেস্কটপ অ্যাপ্লিকেশন
- ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন
- ডেটা সায়েন্স
- কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা
- মেশিন লার্নিং
- বৈজ্ঞানিক কম্পিউটিং
- রোবোটিক
- ইন্টারনেট অফ থিংস (IoT)
- জুয়া
- মোবাইল অ্যাপস
- ডেটা এনালাইসিস এবং প্রি-প্রসেসিং
পাইথনের সুবিধা
পাইথন প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজের কিছু সুবিধা নিচে দেওয়া হল –
- একজন নতুন ডেভেলপারের জন্যও পাইথন শেখা অনেক সহজ । পাইথনের কোড গুলো হুবহু ইংরেজী ভাষার মত হওয়ায় এর কোডটি পড়া অনেক বেশী সহজ এবং আপনি এর কোড দেখেই অনেক কিছু বুঝতে পারবেন ।
- এটি একাধিক সিস্টেম এবং প্ল্যাটফর্ম সাপোর্ট করে । UNIX-ভিত্তিক সিস্টেম, MS-DOS, OS/2, Mac OS এবং Microsoft Windows 98 এর বিভিন্ন সংস্করণ সহ ।
- পাইথন হল একটি অবজেক্ট ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ ।
- একটি কার্ড-সাইজের মাইক্রোকম্পিউটার প্রবর্তনের মাধ্যমে, পাইথন ল্যাঙ্গুয়েজ অভূতপূর্ব উচ্চতায় পৌঁছেছে । এর মাধ্যমে ডেভেলপাররা এখন সহজেই ক্যামেরা, রেডিও এবং গেম তৈরি করতে পারে । অতএব, পাইথন ভাষা শেখা, আপনার জন্য কিছু আউট-অফ-দ্য-বক্স গ্যাজেট তৈরি করার জন্য নতুন রাস্তা খুলে দিতে পারে ।
- পাইথনের অনেক ধরনের ফ্রেমওয়ার্ক রয়েছে, যা ওয়েব প্রোগ্রামিংকে খুব ফ্লেক্সিবল করে তোলে । যেমন- জ্যাঙ্গো হল ওয়েব ডেভেলপমেন্টের জন্য সবচেয়ে বিখ্যাত পাইথন ফ্রেমওয়ার্ক ।
- Python ল্যাঙ্গুয়েজের মাধ্যমে গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেস (GUI) তৈরি করা যায় ।
- পাইথন সম্পূর্ণরূপে এম্বেডযোগ্য, অর্থাৎ, অন্যান্য প্রোগ্রামিং ভাষায় লেখা কোড, এর সোর্স কোডে এবং পাইথনে লেখা কোড অন্যান্য ভাষার সোর্স কোডে ইনসারশান বা সন্নিবেশ করা যেতে পারে । এটি, অন্যান্য ভাষার স্ক্রিপ্টিং ক্ষমতাগুলিকে আমাদের প্রোগ্রামগুলিতে ইন্টিগ্রেট করতে দেয় ।
- পাইথন একটি ওপেন সোর্স প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ, যার মানে হল পাইথনের সোর্স কোড সমগ্র বিশ্বের কাছে উপলব্ধ । আমরা সহজেই এটি ডাউনলোড, চেঞ্জ, ব্যবহার এবং ডিস্ট্রিবিউট করতে পারি
পাইথনের অসুবিধা
পাইথন প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজের কিছু অসুবিধা নিচে দেওয়া হল –
- পাইথন অন্যান্য প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজের তুলনায় ধীর গতির ।
- পাইথন মোবাইল ডেভেলপমেন্টের জন্য খুব একটা ভালো ল্যাঙ্গুয়েজ নয় ।
- পাইথনের মাধ্যমে একটি হাই-গ্রাফিক্স 3D গেম তৈরি করা অসম্ভব ।
- পাইথন মাল্টি-প্রসেসর/মাল্টি-কোরের জন্য উপযুক্ত নয় ।
জাভা এবং পাইথনের মধ্যে পার্থক্য
জাভা – জাভা হল একটি অবজেক্ট-ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রামিং ভাষা, যেমন C++ । কিন্তু এর উন্নত এবং সিমপ্লিফায়েড বৈশিষ্ট্য এটিকে C++ থেকে আলাদা করে । এটির অ্যাক্সেস ফ্রি । এটি একটি ক্লাস ওরিয়েন্টেড, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ল্যাঙ্গুয়েজ । নিম্নলিখিত ধরনের অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপ করার জন্য জাভা সবচেয়ে উপযুক্ত ল্যাঙ্গুয়েজ –
- এন্টারপ্রাইজ সলিউশন
- ডেস্কটপ অ্যাপ্লিকেশন
- এমবেডেড সিস্টেম
- মিডলওয়্যার অ্যাপ্লিকেশন
পাইথন – পাইথন একটি হাই লেভেল, অবজেক্ট-ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ । এটি কোডের লাইনকে হ্রাস করে, যার ফলে পণ্য রক্ষণাবেক্ষণের খরচও কমে যায় । নিম্নলিখিত ধরণের অ্যাপ্লিকেশনগুলি ডেভেলপ করার জন্য পাইথন প্রোগ্রামিং ভাষা ইউজ করা হয় –
- মেশিন লার্নিং অ্যাপ্লিকেশন
- অপারেটিং সিস্টেম
- ল্যাঙ্গুয়েজ ডেভেলপমেন্ট
- প্রোটোটাইপ
- ইমেজ প্রসেসিং
জাভা এবং পাইথন ল্যাঙ্গুয়েজের মধ্যে পার্থক্য নিচে দেওয়া হল –
পার্থক্য | জাভা | পাইথন |
---|---|---|
কর্মক্ষমতা | দ্রুত | অন্যান্য ভাষার তুলনায় ধীর |
শেখা | শিখতে কষ্ট হয় | শেখা অনেক সহজ |
টাইপিং | স্থিরভাবে টাইপ করা হয়েছে | গতিশীল-টাইপ করা হয়েছে |
অবজেক্ট-ওরিয়েন্টেড/ স্ক্রিপ্টিং ভাষা | কন্টেন্ট-ভিত্তিক ভাষা | স্ক্রিপ্টিং ভাষা |
ক্রস-প্ল্যাটফর্ম | হ্যাঁ | হ্যাঁ |
বাক্য গঠন | পড়া এবং মনে রাখা কঠিন | পড়া এবং মনে রাখা সহজ |
কিসের জন্য সেরা | এন্টারপ্রাইজ, এমবেডেড এবং ক্রস-প্ল্যাটফর্ম অ্যাপ্লিকেশন | কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ডেটা সায়েন্স এবং মেশিন লার্নিং |
কোডের লাইন | কোডের লাইন অনেক বেশী | কোডের লাইনের সংখ্যা অনেক কম |
পাইথন এত জনপ্রিয় কেন
TIOBE এর সূচক অনুসারে, বর্তমানে পাইথন হল বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ । এই TIOBE প্রোগ্রামিং ল্যেঙ্গুয়েজের জনপ্রিয়তা পরিমাপ করে ।
পাইথন ল্যাঙ্গুয়েজ সর্বাধিক জনপ্রিয় হওয়ার পেছনে কিছু কারণ রয়েছে, যার মধ্যে কয়েকটি নিচে দেওয়া হল –
- এর সহজ সিনট্যাক্স: পাইথন পড়া এবং বোঝা, অন্যান্য প্রোগ্রামের তুলনায় সহজ, কারণ এর সিনট্যাক্সগুলো হুবহু ইংরেজির মতো ।
- এর বহুমুখীতা : পাইথন ল্যাঙ্গুয়েজের বহুমুখিতা একে আরও বেশী জনপ্রিয় করে তুলেছে । আপনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, বা ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, যে বিষয়েই আগ্রহী হন না কেন, আপনি পাইথনের মাধ্যমে সেটি করতে পারবেন ।
- পাইথন শেখা সহজ: পাইথনের কীওয়ার্ড, সহজ গঠন এবং সহজ সিনট্যাক্সের কারণে এটি যে কেউ খুব সহজেই বুঝতে পারে, যার ফলে পাইথন শেখা অনেক বেশী সহজ হয়ে যায় ।
- পোর্টেবল : পাইথন, বর্তমানে উপলব্ধ প্রায় সব ধরনের হার্ডওয়্যার প্ল্যাটফর্মেই চলতে পারে এবং সমস্ত প্ল্যাটফর্মে একই ধরনের ইন্টারফেস প্রদান করে ।
- ব্যবহারের সহজতা : যারা কোডিং এবং প্রোগ্রামিংয়ের ক্ষেত্রে একেবারেই নতুন, তাদের জন্য পাইথন একটি চমৎকার অপশন হতে পারে ।
কিভাবে পাইথন ডাউনলোড এবং ইনস্টল করবেন?
আপনার কম্পিউটারে পাইথন ডাউনলোড এবং ইন্সটল করার জন্য নিচের ধাপগুলো অনুসরন করুন –
পাইথন ডাউনলোড এবং ইনস্টল করার জন্য প্রথমে, পাইথনের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন এবং আপনি যে ভার্শনটি ডাউনলোড করতে চান তা নির্বাচন করুন । আমরা এখানে পাইথনের 3.10.7 ভার্শনটি বেছে নিয়েছি । এরপর আপনি নিচের ছবিতে দেখানো অংশে ক্লিক করলে অটোমেটিক ডাউনলোড শুরু হবে ।
ডাউনলোড কমপ্লিট হওয়ার পর, আপনার পিসিতে পাইথন ইনস্টল করতে ডাউনলোড হওয়া python-3.10.7.exe ফাইলটির উপরে ডাবল ক্লিক করুন । এরপর নিচের ছবির মত “Install Now” অপশনে ক্লিক করুন ।
এরপরা আপনার সামনে Do you allow the program লেখা একটি উইন্ডো ওপেন হবে, সেখান থেকে YES বাটনে ক্লিক করুন । YES বাটনে ক্লিক করার সাথে সাথে আপনার পাইথন ইন্সটলেশনের প্রসেস অটোমেটিক শুরু হবে । এবং ইন্সটলেশন কমপ্লিট হওয়ার পর Installation Successfull লেখা একটি উইন্ডো দেখতে পাবেন ।
এইভাবে আপনার উপরের ধাপ গুলো অনুসরন করে, আপনাদের পিসিতে পাইথন ডাউনলোড এবং ইন্সটল করতে পারবেন ।
শেষ কথা
আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সাথে, বর্তমান সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ, পাইথন নিয়ে বিস্তারিত আলচনা করার চেষ্টা করেছি । পাইথন ল্যাঙ্গুয়েজের জনপ্রিয়তা প্রিতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং পাইথন ভবিষ্যতে আরও ব্যপকভাবে ব্যবহার করা হবে । তাই আপনারা চাইলে পাইথনের মাধ্যমে আপনাদের ক্যারিয়ার শুরু করতে পারেন । আর্টিকেলটি নিয়ে যে কোন ধরনের প্রশ্ন বা মন্তব্য থাকলে কমেন্ট সেকশনে জানান ।