• No products in the cart.

দ্য লাইন – মরুভূমিতে সায়েন্স ফিকশনের শহর বানাচ্ছে সৌদি আরব

Credit: NEOM

‘ইউটোপিয়া’ শব্দটি বহুলভাবে প্রচলিত একটি শব্দ যার অর্থ হচ্ছে এমন এক দুনিয়া যেখানে সবকিছুই নিখুঁত। এমন স্বপ্নের এক বাসস্থান তৈরি করতে উঠেপড়ে লেগেছে সৌদি আরব। নিখুঁত এক শহর তৈরির ধারণা নিয়ে ‘নিওম’ (NEOM) নামের একটি প্রকল্প চালু করেছে সৌদি আরব যার চেয়ারম্যান সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। এই শহরের নাম দেয়া হয়েছে ‘দ্য লাইন’। দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের তাবুক প্রদেশে এই শহর নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে ‘নিওম’।

সৌদি আরবের মরুভূমির বুকে এমন শহরের চিন্তা সায়েন্স ফিকশন গল্পের মতো মনে হলেও এটি বাস্তবে রূপ দিতে ইতিমধ্যেই কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। এই শহরে সকল কিছুতে সামঞ্জস্য আনতে মানুষ ও প্রকৃতি উভয়কেই গুরুত্ব দেয়া হবে। প্রকৃতিকে সামনে রেখে এর মাঝেই আধুনিক সকল সুযোগ-সুবিধা নিয়ে তৈরি হবে এই শহর। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে এই শহর তৈরির পরিকল্পনা প্রকাশ করেন সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান।

‘দ্য লাইন’ শহরে মানুষ যেন সকল রকম দূষণমুক্ত একটি পরিবেশে বসবাস করতে পারে সেটির দিকেই নজর রাখা হবে। সকল প্রয়োজনীয় জিনিস থাকবে ৫ মিনিটের হাঁটা দূরত্বের মধ্যে। আর সেটি নিশ্চিত করতে এই শহরকেও তৈরি করা হবে বিশেষ ডিজাইনে।

শহরটি ২০০ মিটার চওড়া, ১৭০ কিলোমিটার লম্বা এবং সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে ৫০০ মিটার উঁচুতে তৈরি করা হবে। এই দূরত্বের মাঝে ২০ মিনিটের মধ্যেই এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াত করা যাবে। দরকার হবে না কোন গাড়ির। থাকবে অত্যন্ত দ্রুত গতির নতুন প্রযুক্তির যাতায়াত ব্যবস্থা। দ্রুত গতির রেল সেবার মাধ্যমে এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত যুক্ত থাকবে।

বসবাসের জন্য গুনগত মান নিশ্চিত করতে এই শহরে মাত্র ৯০ লাখ লোকের জন্য বসবাসের সুবিধা থাকবে। শতভাগ নবায়নযোগ্য শক্তিতে চলবে এই শহরের সবকিছু। তাই পরিবেশ দূষণ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে এবং স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। ৩৪ বর্গকিলোমিটার আয়তনের শহরের মধ্যে উন্নয়নের থেকে প্রকৃতি প্রাধান্য পাবে। আর তাই প্রকৃতির মাঝে সুস্থ, সুন্দর জীবনযাপন করতে পারবে শহরের বাসিন্দারা। শহরের মাঝেই সকল সুবিধা থাকবে বলে শহর হতে বাইরে বের হওয়ার প্রয়োজন হবে না। শহরের ভিতরটি হবে পুরোপুরি ডিজিটালাইজড এবং বাইরের সীমানা কাঁচ দিয়ে ঘেরা থাকবে।

বাড়ি, স্কুল, পথ, পার্ক, অফিস সবকিছু এমন স্তরে সাজানো থাকবে যাতে সবকিছুই থাকে একদম হাতের নাগালে। মানুষ প্রকৃতির মাঝে হাঁটতে হাঁটতে শহরের সকল কিছু উপভোগ করতে পারবেন। ড্রোন ব্যবহার করে নানা ধরণের সেবা দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

শহরের নকশার জন্য পৃথিবীর সবথেকে প্রতিভাবান প্রকৌশলী ও ইঞ্জিনিয়ারদের ব্যবহার করা হবে বলে জানিয়েছেন সৌদি প্রিন্স। নতুন পদ্ধতির নকশার প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে এই শহরের জন্য। সাধারন উঁচু দালানের মতো নয়, বরং সকল কিছুই পাশাপাশি স্তরে স্তরে সাজানো থাকবে। এতে মানুষ সবকিছুই ৫ মিনিট হাঁটা দূরত্বের মধ্যে পেয়ে যাবে এবং নির্বিঘ্নে তার মাঝখান থেকে হাঁটতে পারবে। এই নকশাকে ‘জিরো গ্র্যাভিটি আরবানিজম’ বলা হয়।

‘দ্য লাইন’ শহরের আবহাওয়া এবং জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ করা হবে যাতে সবসময়ই একটি আরামদায়ক পরিবেশ বজায় থাকে। পুরো শহর চারদিক থেকেই আটকানো থাকবে বক্সের মতো এবং উপরে ছাঁদে বিশেষ পদ্ধতির ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা থাকবে। আর তার মাধ্যমেই আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।

Credit: NEOM

এই শহরের পরিকল্পনা নিয়ে একাধিক ভিডিও ইউটিউবে প্রকাশ করেছে নিওম যেখানে এই শহরের ধারণা দেয়া হয়েছে। যদিও ভিডিওতে অনেকটাই সাইন্স ফিকশনের মতো করে এই শহরকে চিত্রায়িত করা হয়েছে, তবে বাস্তবে এটি কেমন হবে তা দেখবার জন্য এখনও অপেক্ষা করতে হবে।

নিওম বলছে, ‘লম্বা সময় ধরে মানুষ প্রকৃতি ভুলে অকার্যকর ও দূষিত শহরে বসবাস করেছে। এখন সভ্যতার এক বিপ্লব দেখা দিয়েছে। প্রকৃতিকে রক্ষা ও উন্নত করার জন্য এক ঐতিহ্যবাহী শহরকে কল্পনা করুন যা ধীরে ধীরে পদচিহ্ন রাখছে।’ এভাবেই পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়েছে নতুন এ শহরের পরিকল্পনার সঙ্গে।

তবে এরকম ডিস্টোপিয়ান শহরের ধারণা এবারই প্রথম নয়। এরকম আরও অনেক শহর তৈরির পরিকল্পনা করেছেন অনেকেই। এমনকি অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস ২০১৯ সালে মহাশুন্যে এমন শহরের কথা চিন্তা করেছিলেন।

তবে শুধু টাকা খরচ করলেই আসলে এমন শহর তৈরি সম্ভব নয়। কাগজে কলমে পরিকল্পনা করা গেলেও বাস্তবে তা রূপ দেয়া কঠিন। তাই প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের এই পরিকল্পনা কতদূর বাস্তবে রূপ পায় সেটি ভবিষ্যতেই জানা যাবে। সৌদি আরবের মরুভূমির বুকে এমন শহরের চিন্তা অকল্পনীয় মনে হলেও হয়তো এটিই হতে পারে প্রথম ডিস্টোপিয়ান শহর।

 

 

0 responses on "দ্য লাইন – মরুভূমিতে সায়েন্স ফিকশনের শহর বানাচ্ছে সৌদি আরব"

Leave a Reply

top
Technical Bangla ©  All rights reserved.