ইন্টারনেট ব্যাংকিং বর্তমানে দেশে খুব জনপ্রিয়। অর্থনীতির ক্রমবর্ধমান উন্নতির সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টরে অনলাইন ব্যাংকিং এর ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ৪০ টিরও বেশি ব্যাংকের নিজস্ব অ্যাপ রয়েছে।
একটি ভালো ব্যাংকিং অ্যাপের মাধ্যমে ব্যাংক তার গ্রাহকদের সাথে দারুন সম্পর্ক তৈরি করে। মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে সকল সেবা গ্রাহকের হাতের নাগালে চলে এসেছে। বিল পরিশোধ করা থেকে শুরু করে ফোনে টপ আপ করা, টাকা স্থানান্তর করা, থিয়েটার বা প্লেনের টিকিট অগ্রিম বুক করা এবং বর্তমান, সঞ্চয়, স্থায়ী আমানত বা ঋণের অ্যাকাউন্টের ট্র্যাক রাখা সব কিছুই মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সম্পন্ন করা সম্ভব।
এসব দিক বিবেচনা করে অসংখ্য ব্যাংক তাদের নিজস্ব অ্যাপ লঞ্চ করে গ্রাহকদের সেবার মান বৃদ্ধি করেছে। বর্তমানে বাংলাদেশে বেশ কিছু ব্যাংকের সকল লেনদেন দ্রুত এবং সহজে সম্পন্ন করতে পারবেন অ্যাপ দিয়ে। আমাদের পোস্টে দেশের সেরা কিছু মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
SC মোবাইল অ্যাপ
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক বাংলাদেশে কার্যক্রম চালানো অন্যতম প্রাচীন একটি ব্যাংক। বর্তমানে এই ব্যাংকের ১৩ টি ব্রাঞ্চ এবং ৮৭টি এটিএম বুথ রয়েছে। ২০১৬ সালে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক তাদের SC মোবাইল অ্যাপ লঞ্চ করে। অ্যাপটি ব্যবহার করে গ্রাহক তাদের আর্থিক লেনদেন খুব সহজ এবং দ্রুততার সাথে সম্পন্ন করতে পারবেন।
SC মোবাইল অ্যাপের সুবিধা
- স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের যেকোনো একাউন্ট থেকে যেকোনো একাউন্টে দ্রুত টাকা ট্রান্সফার করা যাবে। এছাড়াও BEFTN ও NPSB চ্যানেলের মাধ্যমে অন্য যেকোনো ব্যাংকের একাউন্টে টাকা ট্রান্সফার করা যাবে।
- স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ক্রেডিট কার্ড, মোবাইল বিল, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারের বিল, ইন্স্যুরেন্স প্রিমিয়ামের বিল সহ ক্যাবল নেটওয়ার্কের বিল ও প্রদান করা সম্ভব।
- ট্র্যাঞ্জাকশন হিস্টোরি দেখা এবং ব্যাংক স্টেটমেন্ট যেকোনো সময়ে ডাউনলোড করা যাবে।
- কাস্টমার সার্ভিস রিকুয়েস্ট এবং চেকবুকের রিকুয়েস্ট এই অ্যাপ ব্যবহার করে করা যাবে।
সিটি টাচ
২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এই অ্যাপটি বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন কমার্শিয়াল ব্যাংক সিটি ব্যাংকের আওতাধীন। দেশে বর্তমান এই ব্যাংকের ১৩২ টি ব্রাঞ্চ ও ৪১১ টি এটিএম বুথ রয়েছে। সিটি টাচ অ্যাপ তাদের গ্রাহকদের জন্য সেবা খুহ সহজ ও নিরাপদ উপায়ে সম্পন্ন করার ব্যবস্থা করেছে। এই অ্যাপটির দারুন পারফমেন্সের কারনে সিটি ব্যাংক বহু সংখ্যক নতুন গ্রাহক এবং পুরাতন গ্রাহকদের সাথে নিজেদের সম্পর্কে দৃঢ় করেছে।
সিটি টাচের সুবিধা সমূহ
- বাংলাদেশের যেকোনো ব্যাংকের একাউন্টে একসাথে ৫ লক্ষ টাকা ট্রান্সফার করার সুবিধা রয়েছে।
- ব্যাংক একাউন্ট, লোন একাউন্ট এবং কার্ড একাউন্ট ম্যানেজ করার সুবিধা পাওয়া যাবে।
- টিউশন ফি, মোবাইল বিল, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারের বিল সহ বিভিন্ন বিল দ্রুততার সাথে দেওয়া সম্ভব।
- নতুন চেক বুক রিকুয়েস্ট, চেক ব্লক রিকুয়েস, কার্ড বন্ধ করার রিকুয়েস্ট সব কিছুই এই অ্যাপ ব্যবহার করে করা সম্ভব।
- কার্ডের পিন যেকোনো সময়ে পরিবর্তন করার সুযোগ রয়েছে।
EBL স্কাই ব্যাংকিং
ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড বাংলাদেশের একটি সম্ভাবনাময় ব্যাংক যেটি দক্ষ খরচ ব্যবস্থাপনা অনুসরন করে ব্যবসায়িক ফাংশন গুলোর মধ্যে নিরবিচ্ছিন্ন সমন্বয়ের মাধ্যমে ধারাবাহিক উৎপাদনশীলতা বজায় রাখে। সারা দেশে এই ব্যাংকের ৮৫ টি শাখা এবং ২১৪ টি এটিএম বুথ রয়েছে। ২০১৫ সালে ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড ইবিএল এবং নন ইবিএল উভয় গ্রাহকদের জন্যই EBL স্কাই ব্যাংকিং অ্যাপটি চালু করেছে।
EBL স্কাই ব্যাংকিং এর সুবিধা
- ক্রেডিট কার্ড থেকে ইবিএল ব্যাংকে অথবা অন্যান্য ব্যাংকে কিংবা বিকাশেও টাকা ট্রান্সফার করা যাবে।
- ইন্সট্যান্ট কার্ড ব্লক ও ফিংগারপ্রিন্ট লগইন এর সুবিধা।
- BTCL, DPDC, DESCO সহ আকাশ DTH এর ও বিল প্রদান করা সম্ভব।
- অগমেন্টেড রিয়েলিটি ব্যবহার করে ইবিএল এর সকল শাখা সম্পর্কে জানা যাবে।
- ইন্সট্যান্ড কার্ড অথবা একাউন্ট ব্যবহার করে নিজে থেকে রেজিস্ট্রেশন এবং পাসওয়ার্ড রিসেট করা যাবে।
ব্রাক ব্যাংক আস্থা অ্যাপ
ব্র্যাক ব্যাংক দেশের মধ্যে অনেক আস্থাবান এবং দ্রুত উন্নয়নশীল একটি ব্যাংক। এই ব্যাংকের দেশে মোট ১৭৬ টি শাখা এবং ৫০০ এর উপরে এটিএম বুথ রয়েছে। ২০২২ সালে ব্রাক ব্যাংক তাদের আস্থা অ্যাপ লঞ্চ করে এবং এটি ব্যবহার করে কিউ আর বেজড ট্র্যাঞ্জাকশন করা যায়। এই অ্যাপে অটো আপডেট ফিচার চালু করলে খুব সহজেই নতুন ফিচারের সুবিধা গ্রহণ করা যাবে।
আস্থা অ্যাপের সুবিধা
- ব্রাক ব্যাংক অথবা অন্যান্য ব্যাংকে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ট্রান্সফার করা যবে। এছাড়া যেকোনো মোবাইল ওয়ালেটে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত পাঠানো যাবে।
- ইউটিলিট বিল, ক্রেডিট কার্ড বিল কিংবা মোবাইল রিচার্জ করা সম্ভব।
- পিন চেঞ্জ করা অথবা একাউন্ট ব্লক কিংবা এক্টিভ করা যাবে।
- পেমেন্ট কনফার্ম করার জন্য OTP ব্যবহার করার মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
- QR কোডের মাধ্যমে ট্র্যাঞ্জাকশন করলে রিওয়ার্ড পয়েন্টের ব্যবস্থা রয়েছে।
সেলফিন
ইসলামী ব্যাংকের আওতাধীন সেলফিন অ্যাপটি ২০২০ সালে চালু হয়েছে। এই অ্যাপে অনেক আর্থিক সুবিধা পাওয়া যায় যা সাধারণ মানুষকে এই অ্যাপের প্রতি আকৃষ্ট করছে
সেলফিন অ্যাপের সুবিধা
- যেকোনো ব্যাংক একাউন্ট, ভিসা, মাস্টারকার্ড থেকে টাকা এড করা যাবে।
- যেকোনো ব্যাংক একাউন্ট, ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার অথবা মানি রিকুয়েষ্ট এর সুবিধা রয়েছে।
- ফরেন রেমিট্যান্স নেওয়া যায়।
- ATM থেকে কার্ডলেস টাকা উত্তোলনের সুবিধা রয়েছে।
- মোবাইল টপ আপ সহ বিভিন্ন বিল পেমেন্টের সুবিধা রয়েছে।
নেক্সাস পে
বাংলাদেশে সম্পূর্ণ অটোমেশন ব্যবস্থার আওতার আনা প্রথম ব্যাংক হলো ডাচ বাংলা ব্যাংক। ২০০২ সালে সর্বপ্রথম ডাচ বাংলা ব্যাংক দেশে অটোমেটিক ব্যাংকিং সুবিধা নিয়ে এসেছিলো। ২০১০ সালে ব্যাংকিং আরো সহজ এবং দ্রুততম উপায়ে সম্পন্ন করার জন্য তাদের নেক্সাস পে অ্যাপ লঞ্চ করে। নেক্সাস পে ভিসা, মাস্টার কার্ড, ডাচ বাংলা ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং ও রকেট এজেন্ট ব্যাংকিং সহ সকল অ্যাপের সাথে যুক্ত হয়ে কাজ করে।
নেক্সাস পে এর সুবিধা
- সম্পূর্ণ ডিবিবিএল নেটওয়ার্কের মধ্যে কিউ আর কোড এবং এনএফসি পেমেন্টের সুবিধা রয়েছে।
- কার্ড ছাড়া এটিএম থেকে টাকা তোলার সুবিধা।
- সকল সিস্টেমের মধ্যে পেমেন্টের সুবিধা রয়েছে।
- অনলাইন পেমেন্টের ক্ষেত্রে ১০ মিনিটের জন্য টেম্পোরারি কার্ড নাম্বার জেনারেট করা যাবে।
- টিউশন ফি, মোবাইল ফোন বিল সহ ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারের বিল প্রদান করা যাবে।
- ডিবিবিএল এর মিনি স্টেটমেন্ট অথবা শেষ লেনদেনের স্টেটমেন্ট দেখা যাবে।
MTB স্মার্ট ব্যাংকিং
MTB থার্ড জেনারেশনের একটি প্রাইভেট কমার্শিয়াল ব্যাংক। বাংলাদেশে এই ব্যাংকের ১১৯ টি শাখা, ৩৩ টি উপশাখা এবং ৩১০ টি আধুনিক এটিএম বুথ রয়েছে। এই ব্যাংক একটি স্মার্ট ব্যাংকিং অ্যাপ রিলিজ করেছে যার মাধ্যমে রিয়েল টাইম অনলাইন ব্যাংকিং সুবিধা সহ এসএমএস ব্যাংকিং এর সুবিধা ও পাওয়া যাবে।
MTB স্মার্ট ব্যাংকিং এর ফিচার সমূহ
- বিস্তারিত ব্যাংকিং স্টেটমেন্ট পাওয়া যাবে।
- চেক বুক রিকুয়েস্ট করা যাবে।
- অন্যান্য MTB ব্যাংকের একাউন্টে টাকা ট্রান্সফার করা যাবে।
- সহজে মোবাইল টপ করার সুবিধা পাওয়া যাবে।
- ইউটিলিটি পেমেন্ট করার সুবিধা পাওয়া যাবে।
- MTB ব্যাংকের সকল শাখা ও এটিএম বুথের ঠিকানা জানা যাবে।
বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেন গত অর্থবছরে দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে কারণ বিপুল সংখ্যক মানুষ আর্থিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহার করছেন। যদিও এই ইন্টারনেট ব্যাঙ্কিং অ্যাপগুলি আমাদের ব্যাঙ্কিং করার উপায় পরিবর্তন করেছে তবে এখনও অনেক পথ বাকি আছে। ইটারনেট ব্যাংকিং সম্পর্কিত আমাদের এই আর্টিকেলটি আপনাদের কেমন লেগেছে তা আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারবেন। নিত্য নতুন প্রযুক্তি ভিত্তিক সকল প্রকার আপডেট এবং টিপস পেতে চোখ রাখুন আমাদের ওয়েবসাইটে।
0 responses on "দেশের সেরা ইন্টারনেট ব্যাংকিং অ্যাপ কোনটি?"