বর্তমানে ডিজিটাল মার্কেটিং বেশ পরিচিত একটি ধারণা, যা হয়ত আপনি বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া কিংবা আলোচনায় শুনে থাকবেন। এই আধুনিক যুগে যেকোনো কোম্পানি বা উদ্যোগের সফলতার জন্য ডিজিটাল মার্কেটিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এটা থেকে আয় করার উপায়ও আছে অসংখ্য।
কিন্তু অনেকেরই এই ব্যাপারে খুব বেশি জানাশোনা না থাকায় তারা এর সুবিধা গ্রহণ করতে পারেন না। কি এই ডিজিটাল মার্কেটিং, এর সুবিধাসমূহ কি ও কিভাবে ডিজিটাল মার্কেটিং থেকে আয় করা যায়, সে সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত জানবো এই পোস্টে।
ডিজিটাল মার্কেটিং কি? – What’s Digital Marketing?
ইন্টারনেট বা যেকোনো ধরণের ডিজিটাল যোগাযোগ এর মাধ্যম ব্যবহার করে কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্র্যান্ডের প্রচার চালানোকে বলা হচ্ছে ডিজিটাল মার্কেটিং বা অনলাইন মার্কেটিং। ডিজিটাল মার্কেটিং এর মধ্যে ইমেইল, সোশ্যাল মিডিয়া, ওয়েব-ভিত্তিক বিজ্ঞাপন এর পাশাপাশি এসএমএস, অডিও মার্কেটিং চ্যানেল, ইত্যাদিও অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ যে মার্কেটিং ক্যাম্পেইনে ডিজিটাল যোগাযোগ অন্তর্ভুক্ত, সেটিই হলো ডিজিটাল মার্কেটিং।
ডিজিটাল মার্কেটিং এর সুবিধা
খুব সহজে বিশাল অডিয়েন্সের কাছে পোঁছানো যায় বলে ডিজিটাল মার্কেটিং অনেক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। এছাড়াও ডিজিটাল মার্কেটিং এর আরো অনেক সুবিধা বিদ্যমান, চলুন জেনে নেওয়া যাক ডিজিটাল মার্কেটিং এর উল্লেখযোগ্য সুবিধাসমূহ সম্পর্কে।
বিশ্বব্যাপী রিচ
কোনো বিজ্ঞাপন যখন গ্লোবালি টার্গেট করে অনলাইনে পোস্ট করা হয়, তখন বিশ্বের সকল প্রান্তের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীগণ উক্ত বিজ্ঞাপন দেখতে পাবেন। কোনো ব্যবসাকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে এই বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ।
খরচ সাশ্রয়
ডিজিটাল মার্কেটিং এর মাধ্যমে বিস্তৃত অডিয়েন্সের কাছে পৌঁছে যাওয়া যায় অনেক কম খরচে। কোনো টিভি বা পেপারে এড দিলে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়, সেই তুলনায় কম অর্থ খরচ করে একই বিজ্ঞাপন বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া যায় ডিজিটাল মার্কেটিং ব্যবহার করে। তবে সময়ের সাথে সাথে চাহিদা বাড়ায় ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের খরচও বাড়ছে।
নির্ভরযোগ্য ফলাফল
ডিজিটাল মার্কেটিং এর সবচেয়ে বড় একটি সুবিধা হলো এর থেকে প্রাপ্ত ফলাফল ব্যবহার করে পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করা যায়। নন-ডিজিটাল মাধ্যমে এই ফলাফল পরিমাপ করে বুঝেশুনে আগানোর কোনো উপায় নেই। অনেকটা অনুমানের উপর থেকে যায় ট্রেডিশনাল মার্কেটিং এর ফলাফল।
ডিজিটাল মার্কেটিং ব্যবহার করে কাস্টমারের পছন্দ, বিহেভিয়র, এক্টিভিটি, ইত্যাদি জানা যায় বেশ সহজে। আবার এই ডাটা পরবর্তী ক্যাম্পেইনে ব্যবহার করে কনভার্সন রেট বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। অর্থাৎ ডিজিটাল মার্কেটিং থেকে প্রাপ্ত ডাটা বেশ নির্ভরযোগ্য ও কাজে লাগানো সম্ভব।
পারসোনালাইজেশন
ডিজিটাল মার্কেটিং এর সবচেয়ে সেরা বিষয় হতে হবে পারসোনালাইজেশন এর সুবিধা। ডিজিটাল মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে টার্গেটেড অডিয়েন্সের কাছে পৌঁছে যাওয়া যায় তুলনামূলক সহজে। অর্থাৎ আপনার প্রোডাক্টের পোটেনশিয়াল কাস্টমারের কাছে সহজে পোঁছে যেতে পারবেন ডিজিটাল মার্কেটিং এর মাধ্যমে। সকল গুরুত্বপূর্ণ ডাটা আপনার হাতের নাগালে থাকায় স্বল্প খরচে টার্গেটেড অডিয়েন্স এর কাছে পোঁছানো যায় ডিজিটাল মার্কেটিং এর সাহায্যে।
কাস্টমারের সাথে যোগাযোগ
ডিজিটাল মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে কাস্টমারের সাথে সরাসরি যোগাযোগের সুযোগ রয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়া ক্যাম্পেইনের ক্ষেত্রে অডিয়েন্স এর লাইক, কমেন্ট, শেয়ার, ইত্যাদি বিবেচনা করে অডিয়েন্স আপনার প্রোডাক্টকে ব্যক্তিগতভাবে কিভাবে গ্রহণ করেছে, তা জানতে পারবেন। এভাবে কাস্টমারের সংযুক্ততাআপনার ব্র্যান্ডের ইমেজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
বিভিন্ন ধরনের ডিজিটাল মার্কেটিং পদ্ধতি ও সেগুলো থেকে আয়
ডিজিটাল মার্কেটিং অনেক ধরণের হয়ে থাকে। এবার আমরা জানবো ডিজিটাল মার্কেটিং এর প্রধান কিছু ধরন সম্পর্কে যার থেকে আয় করা সম্ভব।
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন বা এসইও হলো একটি মার্কেটিং টুল যা একবার ঠিকমত সেটাপ করলে নিজ থেকেই ফলাফল প্রদান করে। মূলত ওয়েবসাইটের কনটেন্ট সার্চ ইঞ্জিনের জন্য অপটিমাইজ করাকে এসইও বলা হচ্ছে।
একটি ব্র্যান্ডের ইন্টারনেট এক্সপোজার নির্ভর করে উক্ত ব্র্যাডের এসইও প্রেজেন্স এর উপর। ব্র্যান্ডের ওয়েবসাইটে থাকা কনটেন্ট এর কোয়ালিটি, ইউজার এনগেজমেন্টম, মোবাইল-ফ্রেন্ডলিনেস, লিংকিং, ইত্যাদি বিষয়ের উপর এসইও নির্ভর করে।
ইন্টারনেট এর সেরা সার্চ ইঞ্জিনসমূহ, যেমনঃ গুগল এর ফ্রন্টে পেজে অবস্থান করার মাধ্যম হলো এসইও। আর এই অসাধারণ টুল এর যথেষ্ট ব্যবহারেরকার্যকরীতা নিশ্চিত করতে কোম্পানিগুলো এসইও এক্সপার্ট হায়ার করছে।
কনটেন্ট মার্কেটিং
কনটেন্ট মার্কেটিং ও এসইও, এই দুইটি একই সাথে সংযুক্ত। মূলত টার্গেট অডিয়েন্সকে প্রাসঙ্গিক ও মূল্যবান রিসোর্স প্রদান করে মার্কেটিংকে ডিজিটাল মার্কেটিং এর ভাষায় কনটেন্ট মার্কেটিং বলা হয়। তবে কনটেন্ট মার্কেটিং সরাসরি বিজ্ঞাপনের কাজ করেনা। বরং কাস্টমারকে বিভিন্ন তথ্য প্রদান করে নিজের প্রোডাক্টের দিকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করা হয় কনটেন্ট মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে।
কনটেন্ট মার্কেটিং এর প্রধান উদ্দেশ্য থাকে টার্গেট অডিয়েন্সকে প্রয়োজনীয় রিসোর্স প্রদান করা, যা পোটেনশিয়াল কাস্টমার তৈরিতে কাজে আসতে পারে। ব্লগ, ইউটিউব ভিডিও, ইত্যাদি হলো কনটেন্ট মার্কেটিং এর অংশ। অনলাইনে আয়ের ক্ষেত্রে ফ্রিল্যান্সারগণ কনটেন্ট মার্কেটিং এর কাজ করতে পারেন।
সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং
সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ডিজিটাল মার্কেটিং এর বিষয়টি বর্তমানে বহুল জনপ্রিয়। এই ক্ষেত্রে সুবিধা হলো কাস্টমারের এনগেজমেন্ট ও ডিসকাশন কাজে লাগিয়ে মার্কেটিং সম্ভব হয়। যেহেতু সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে সরাসরি অডিয়েন্স সংযুক্ত থাকে, তাই এটি বর্তমানে অন্যান্য ডিজিটাল মার্কেটিং এর মাধ্যম থেকে অধিক কার্যকর বলে বিবেচনা করা হয়।
যারা সোশ্যাল মিডিয়া সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান রাখেন, তাদের আয়ের একটি অসাধারণ উৎস হতে পারে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং। ধরুন আপনি যদি ফেসবুক বা ইন্সটাগ্রাম এড এক্সপার্ট হয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে একাধিক মাধ্যমে উক্ত সেবা প্রদান করে মোটা অংকের আয় করতে পারেন। এছাড়াও সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট এর মাধ্যমেও আয় সম্ভব, যার চেয়ে সহজে ফ্রিল্যান্সিং করে আয়ের কোনো উৎস নেই বললেই চলে।
পে-পার-ক্লিক মার্কেটিং
পে-পার-ক্লিক বা পিপিসি হলো কোনো প্ল্যাটফর্মে বিজ্ঞাপন পোস্ট করা ও প্রতি ক্লিকের বিনিময়ে অর্থ প্রদান করা। এই মার্কেটিং এর ক্ষেত্রটি কিছুটা জটিল হলেও ব্রান্ডের কাছে বেশ আকর্ষণীয় ডিজিটাল মার্কেটিং এর এই ধরন।
প্রতি পিপিসি ক্যাম্পেইন থেকে টার্গেট অডিয়েন্স পাওয়ার পাশাপাশি উচ্চ কনভার্সন রেট ও বিদ্যমান থাকে, যা ব্র্যান্ডের কাছে বেশ লাভজনক। আপনি যদি পিপিসি মার্কেটিং সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান রাখেন, তবে বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং প্লাটফর্মে উক্ত সেবা প্রদান করে আয় করতে পারেন।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং
ডিজিটাল মার্কেটিং এর সেরা একটি মাধ্যম হলো অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং। এই মাধ্যমের ভালো বিষয় হলো ব্রান্ড ও প্রোমোটার উভয়েই এর থেকে লাভবান হয়। মূলত একটি নির্দিষ্ট অংকের কমিশনের বিনিময়ে কোনো ব্যক্তিকে প্রোমোশনের কাজ দেওয়াকে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং বলা হয়। অধিকাংশ ব্র্যান্ড বর্তমানে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর কাজ করে থাকে।
যেকেউ অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং থেকে আয় করতে পারে। আর অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে ক্রমাগত কাজ করার প্রয়োজন পড়েনা, যা একটি ভালো বিষয়। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে আয় সম্পর্কে বাংলাটেক এর পোস্টসমূহ ঘুরে আসতে পারেন বিস্তারিত জানতে।
মার্কেটিং অটোমেশন
ডিজিটাল মার্কেটিং ক্যাম্পেইনের কার্যকরীতা বাড়াতে ও অডিয়েন্সের সাথে যোগাযোগ স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতির মধ্যে নিয়ে আসতে সফটওয়্যারের ব্যবহারকে মার্কেটিং অটোমেশন বলা হচ্ছে। কনজ্যুমার সম্পর্কে যথেষ্ট তথ্য সংগ্রহ করে টার্গেট অডিয়েন্সের জন্য মার্কেটিং ক্যাম্পেইন চালানো হয় ডিজিটাল মার্কেটিং এর এই মাধ্যমে।
এছাড়াও অডিয়েন্সকে কাস্টম মেসেজ পাঠানোর মত অসাধারণ টুলস ও অন্তর্ভুক্ত মার্কেটিং অটোমেশনের ক্ষেত্রে। মার্কেটিং অটোমেশন শিখে বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মে এ সংক্রান্ত কাজ করতে পারেন।
ইমেইল মার্কেটিং
ডিজিটাল মার্কেটিং এর বেশ পুরোনো একটি মাধ্যম হলো ইমেইল মার্কেটিং। মূলত ইমেইল এর মাধ্যমে প্রোমোশনাল মেসেজ পাঠানোকে বলা হচ্ছে ইমেইল মার্কেটিং। ইমেইল মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে প্রথমে পোটেনশিয়াল অডিয়েন্সের ইমেইল সংগ্রহ করা হয়। এরপর উক্ত ইমেইলসমূকে কাজে লাগিয়ে প্রোমোশন চালানো হয়। মার্কেটিং অটোমেশনের মত অন্যন্য টুলস ও ব্যবহার হয় ইমেইল মার্কেটিং এর কাজ সহজ করতে।
বর্তমানে যেকোনো ব্যবসার মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে প্রধান ফোকাস হওয়া উচিত ডিজিটাল মার্কেটিং। কাস্টমারের সাথে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করে হাতের কাছে থাকা ডাটা ব্যবহার করে মার্কেটিং এর এই অসাধারণ মেথড আগে ছিলোনা। তাই সকল ব্যবসার উচিত এই ডিজিটাল মার্কেটিং এর আশীর্বাদকে বরণ করে নেওয়া। আর যারা উল্লেখিত ডিজিটাল মার্কেটিং এর বিভিন্ন স্কিলেদক্ষতা রাখেন, তাদের উচিত এসব মাধ্যমে থেকে আয়ের কাজে নেমে পড়া।