মানব সভ্যতার জন্ম লগ্নের শুরু থেকেই মানুষ চাঁদ দেখে অভিভূত হয়েছে। চাঁদ মহাকাশে আমাদের এধরণের সবথেকে কাছের প্রতিবেশী। তাই চাঁদ নিয়ে মানুষের এই অভিভূত হওয়া স্বাভাবিক। চাঁদের মধ্যে রয়েছে রহস্যময়তা, আর এই রহস্যময়তাই মানুষের মনে সৃষ্টি করেছে চাঁদ নিয়ে অসংখ্য জল্পনাকল্পনা ও কিংবদন্তি। কিন্তু বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে চাঁদ নিয়ে মানুষের অনেক ধারণাই ভুল।
চাঁদ নিয়ে কিছু ধারণা মানুষের মনে এমন ভাবে গেঁথে গিয়েছে যে এখন সঠিক থেকে ভুল আলাদা করাই কঠিন হয়ে গিয়েছে। যেমন চাঁদের বুড়ির সুতা কাটার কথাই ধরুন! অনেকেই তো এটা আগে বিশ্বাস করত! এই ভুল ধারণাগুলো আমাদের সমাজ, সংস্কৃতি এবং জীবনের সঙ্গে এক হয়ে গিয়েছে। আজকের এই পোস্টে আমরা চাঁদ নিয়ে মানুষের মধ্যে যেসব ভুল ধারণা রয়েছে সেগুলোর কয়েকটি নিয়ে আলোচনা করবো। সেই সাথে সংশ্লিষ্ট সঠিক তথ্যগুলোও আমরা জানতে চেষ্টা করবো।
মানুষ কি আসলেই চাঁদে গিয়েছিল?
চাঁদ নিয়ে সব থেকে বড় ভুল ধারণাটি হলো অনেকেই বিশ্বাস করেন মানুষ কখনো চাঁদে পা ফেলে নি। অনেকের মতেই নাসার অ্যাপোলো ১১ মিশন পুরোপুরি বানোয়াট ও সাজানো নাটক ছিল। নাসা ভিডিও এবং ছবি এডিট করার মাধ্যমে মানুষকে বোকা বানিয়েছে বলে অনেকেই বিশ্বাস করে থাকেন। তবে এটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন একটি ধারণা। অ্যাপোলো ১১ মিশনের অনেক রকমের প্রমাণ রয়েছে।
অ্যাপোলো ১১ মিশনের হাজার হাজার ছবি রয়েছে, ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময়ের ভিডিও ফুটেজ রয়েছে। প্রচুর পরিমাণে বৈজ্ঞানিক তথ্য, অডিও রেকর্ডিংও রয়েছে এই মিশনের। এছাড়া ৩৮০ কেজি ওজনের একটি চাঁদের পাথর রয়েছে যা অ্যাপোলো মিশন হতে ফেরার পথে পৃথিবীতে নিয়ে এসেছিলেন নভোচারীরা। এটি যে চাঁদেরই পাথর এটা আলাদাভাবে অসংখ্য ল্যাবরেটরীতে প্রমাণিত হয়েছে। তাই বৈজ্ঞানিকভাবে চিন্তা করলে আপনাকে বিশ্বাস করতে হবে যে মানুষ আসলে চাঁদে গিয়েছিল
পূর্ণিমা কি মানুষকে পাগল করে ফেলতে পারে?
সারা পৃথিবী জুড়ে অসংখ্য মানুষ বিশ্বাস করে থাকেন যে পূর্ণিমা মানুষের মনের উপর প্রভাব ফেলে। পূর্ণিমার সময় মানুষ পাগল হয়ে যেতে পারে। পূর্ণিমার প্রভাবে অবৈধ বিভিন্ন কাজ করা, ঘুমের মধ্যে হাঁটা, আত্মহত্যা, পাগলের মত আচরণ, এমনকি ওয়েরউলফ নামের জন্তুতে পরিবর্তিত হয়ে যাওয়া এমন বিভিন্ন কুসংস্কার প্রচলিত আছে সারাবিশ্ব জুড়ে বিভিন্ন সমাজে। হাজার বছর ধরে মনোবিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করতেন যে মানুষের পাগল হয়ে যাওয়ার সঙ্গে চাঁদের সংযোগ আছে। তবে বিভিন্ন পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে যে পূর্ণিমার সঙ্গে মানুষের আচরণের বড় ধরনের পরিবর্তনের কোন সংযোগ নেই।
চাঁদের একটি পাশ কি পুরোপুরি কালো?
অনেকেই মনে করে থাকেন যে চাঁদের একটি পাশ সবসময় অন্ধকার থাকে। সেটিকে অনেকে চাঁদের কলঙ্ক, অনেকে চাঁদের অন্ধকার অংশ বলে থাকেন। তবে ধারণাটি একদমই ঠিক নয়। পৃথিবী থেকে আমরা চাঁদের যে অংশ দেখতে পাই তা সূর্যের আলোয় আলোকিত হয় বলেই আমরা দেখতে পাই। কিন্তু চাঁদের যে অংশ আমরা দেখতে পাই না, সেই অংশটিও একইভাবে সূর্যের আলোয় আলোকিত হয়
আসলে চাঁদ এবং পৃথিবী দুটিই নিজেদের কক্ষে একই দিকে একই সাথে সূর্যের চারদিকে ঘুরছে বলে সাধারনত আমরা পৃথিবী হতে চাঁদের ৫৯ শতাংশ দেখতে পাই, বাকি অংশ সবসময় আমাদের দৃষ্টিসীমার আড়ালেই থেকে যায়। তবে চাঁদের সেই অংশটিও একইভাবে সূর্য দ্বারা আলোকিত হয়। তাই চাঁদের একটি পাশ সবসময় অন্ধকার থাকে এই ধারণাটি ভুল।
চাঁদের কি অভিকর্ষ বল নেই?
অনেকে চন্দ্রাভিযানের ভিডিওতে চাঁদে নভোচারীদের ভেসে ভেসে হাঁটতে দেখে ভেবে থাকেন যে চাঁদের কোন অভিকর্ষ বল নেই। এটিও সম্পূর্ণ ভুল একটি ধারণা। প্রত্যেক গ্রহ বা উপগ্রহের একটি অভিকর্ষ বল থাকে যা সমস্ত কিছুকে তার নিজের দিকে টানে। তবে কোথাও তা বেশি এবং কোথাও বা কম। পৃথিবীর মতো চাঁদেও মধ্যাকর্ষণ বল রয়েছে, তবে তা পৃথিবীর ছয় ভাগের এক ভাগ। তাই চাঁদে অল্প শক্তি ব্যবহার করতেই ভেসে ভেসে হাঁটা সম্ভব যা দেখলে মনে হবে চাঁদের অভিকর্ষ বল নেই।
চন্দ্রগ্রহণ নিয়ে কুসংস্কার
চন্দ্রগ্রহণ নিয়ে নানা রকমের কুসংস্কার চালু রয়েছে পুরো বিশ্ব জুড়েই। অনেকের মতেই চন্দ্রগ্রহণের সময় কিছু খাওয়া ঠিক নয়। চন্দ্রগ্রহণের সময় খারাপ কিছু ঘটবে এই ভ্রান্ত ধারণা পৃথিবীর অনেক দেশেই প্রচলিত। তবে এসব ধারণার কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই। এসব ভ্রান্ত ধারণা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সমাজে তৈরি হয়েছে।
চাঁদ নিয়ে এরকম ধারনা অঞ্চলভেদে, দেশভেদে বিভিন্ন স্থানে আলাদা। এখানে পরিচিত কিছু ভ্রান্ত ধারণা তুলে ধরা হয়েছে। (সূত্র)। তবে চাঁদ কিছুটা হলেও মানুষের মনের ওপর প্রভাব ফেলে যেটা বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে। তাই চাঁদ নিয়ে কিছু শুনেই বিশ্বাস না করে বৈজ্ঞানিকভাবে ভাবতে চেষ্টা করাই শ্রেয়।
0 responses on "চাঁদ সম্পর্কে কিছু ভুল ধারণা এবং সেগুলোর ব্যাপারে সঠিক তথ্য জানুন"