বৈশ্বিক স্কেলে, মানুষের বিভিন্ন কার্যক্রমের দ্বারা বিকিরণ বা তাপের ভারসাম্য পরিবর্তিত হচ্ছে, যা বিশ্ব উষ্ণায়ন এবং এর ফলে সৃষ্ট বৈশ্বিক পরিবেশগত পরিবর্তনের আকারে বিশ্বের কাছে একটি বড় ধরনের সমস্যা তৈরি করছে । গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা বৈশ্বিক উষ্ণতা হল সৌরজগতে, পৃথিবীর পৃষ্ঠের কাছাকাছি বায়ুমণ্ডলের গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি । বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে সারা পৃথিবীর জলবায়ুর ধরণ পরিবর্তন হচ্ছে । সাধারণত, মানুষের বিভিন্ন ধরনের কার্যকলাপের ফলে নির্গত গ্রিনহাউস গ্যাসের বৃদ্ধির ফলে বিশ্বের গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা বৈশ্বিক উষ্ণতা বলে । আজকের আর্টিকেলের আমরা আপনাদের সাথে গ্লোবাল ওয়ার্মিং কাকে বলে ? গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর কারণ ও বিশ্বের উপর এর প্রভাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব ।
বৈশ্বিক উষ্ণতা কি – গ্লোবাল ওয়ার্মিং কি – গ্লোবাল ওয়ার্মিং কাকে বলে
আমরা সকলেই জানি, সূর্য পৃথিবীকে আলো এবং তাপ দেয় । সূর্যের আলোতে পৃথিবী গরম বা উত্তপ্ত হয় । আর পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে থাকা গ্যাসগুলো পৃথিবী হতে এই তাপকে বাহিরে বের হতে দেয় না । এর ফলে বায়ুমন্ডলে যত বেশী পরিমাণে কার্বন ডাই-অক্সাইড সহ অন্যান্য গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে, পৃথিবী তত বেশী পরিমাণে উত্তপ্ত হবে ।
বর্তমানে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে কার্বন-ডাই-অক্সাইড ও অন্যান্য বিষাক্ত গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে সূর্য থেকে পৃথিবীর ভেতরে আসা তাপ বের হতে পারছে না । ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে । মূলত পৃথিবীর এই তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়াকেই গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বলা হয় ।
আরও সহজভাবে বললে, গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা বৈশ্বিক উষ্ণতা মানে হল পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি । আর এর কারণে পৃথিবীর আবহাওয়ার পরিবর্তন হচ্ছে এবং সেই সাথে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে । এই তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে বৃষ্টিপাতের ধরণ এবং সময় পরিবর্তন, বরফ ও হিমবাহ গলে যাওয়ায় সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং উদ্ভিদ ও প্রাণীজগতের উপর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে । গত ১০০ বছরে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা প্রায় ১ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড বৃদ্ধি পেয়েছে !
বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণ – গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর কারণ
গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা বৈশ্বিক উষ্ণতা এর কিছু কারণ নিচে উল্লেখ করা হল –
গ্রীন হাউস ইফেক্ট – গ্রিন হাউস ইফেক্ট একটি প্রাকৃতিক ঘটনা, কিন্তু বর্তমানে এর সময় এবং পরিমাণ পরিবর্তিত হয়েছে । যার কারণে বিশ্বের উষ্ণতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে । গ্রিন হাউস গ্যাসের বৃদ্ধির কারণে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রাও বৃদ্ধি পাচ্ছে ।
জলীয় বাষ্প – জলীয় বাষ্প স্থলজ বিকিরণ শোষণ করে এবং কার্বন ডাই অক্সাইডের মতো গ্রিন হাউস ইফেক্ট তৈরি করে । তবে জলীয় বাষ্প নির্গমনের জন্য মানুষকে সরাসরি দায়ী বলে মনে করা হয় না, কারণ মানুষ বায়ুমণ্ডলের ঘনত্বে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটাতে পারে এমন জলীয় বাষ্প নির্গত করে না । তবে বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হল, কার্বন ডাই অক্সাইড এবং অন্যান্য গ্রিনহাউস গ্যাস । আর এর কারণে উদ্ভিদের শ্বাস-প্রশ্বাসের হার ত্বরান্বিত হয় ।
কার্বন ডাই অক্সাইড- বৈশ্বিক তাপমাত্রার প্রায় ৬০ ভাগ কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস । এটি একটি প্রাথমিক গ্রিনহাউস গ্যাস, যা মানুষের বিভিন্ন কার্যক্রমের দ্বারা নির্গত হয় । কার্বন ডাই অক্সাইড, পৃথিবীর কার্বন চক্র হিসাবে প্রাকৃতিকভাবেই বায়ুমণ্ডলে উপস্থিত থাকে । এটি তাপ শোষণকারী গ্যাসগুলোর মধ্যে অন্যতম । বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের যে কোনো ধরনের পরিবর্তন, বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রার উপর প্রভাব ফেলতে পারে ।
ক্লোরোফ্লুরোকার্বন- এয়ার কন্ডিশনার (AC) এবং রেফ্রিজারেটরের (ফ্রিজ) অত্যধিক ব্যবহারের কারণে, বায়ুমণ্ডলে সিএফসি-এর পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে । যা বায়ুমণ্ডলের ওজন স্তরকে প্রভাবিত করছে । ওজন স্তর পৃথিবীর পৃষ্ঠকে সূর্যের ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাব থেকে রক্ষা করে । ক্লোরোফ্লুরোকার্বনের কারণে ওজোন স্তরের পুরুত্ব ধীরে ধীরে কমছে, যার ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে ।
বনের অবক্ষয় – গাছপালা হল অক্সিজেনের প্রধান উৎস । এগুলো বায়ুমন্ডল থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে এবং অক্সিজেন ছেড়ে দেয়, যার ফলে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকে । কিন্তু বর্তমানে ঘরোয়া এবং বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে গাছপালা এবং বন কেটে উজাড় করে দিচ্ছে । এর ফলে পরিবেশগত ভারসাম্যহীনতা তৈরি হচ্ছে, যা আমাদেরকে বিশ্ব উষ্ণায়নের দিকে নিয়ে যাচ্ছে ।
যানবাহন ব্যবহার – আজকাল প্রচুর পরিমাণে যানবাহন ব্যবহার করা হচ্ছে । এমনকি খুব কম দূরত্বে যাতায়াত করার জন্যও বিভিন্ন ধরনের যানবাহন ব্যবহার করা হচ্ছে, এর ফলে বিভিন্ন ধরনের গ্যাস নির্গত হচ্ছে । যানবাহন চালাতে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহৃত হয়, যা বায়ুমণ্ডলে প্রচুর পরিমাণে কার্বন ডাই অক্সাইড এবং অন্যান্য বিষাক্ত গ্যাস নির্গত করে যার ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় ।
গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর প্রভাব – বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রভাব
বনভুমি ধ্বংস করার কারণে, বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং সেই সাথে অক্সিজেনের পরিমাণ কমছে । ফলে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রাও বৃদ্ধি পাচ্ছে । কারণ কার্বন ডাই অক্সাইড এমন একটি গ্যাস যা পৃথিবী থেকে প্রতিফলিত বিকিরণ শোষণ করে, যার ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটায় । শুধু তাই নয়, যেখানে জলবায়ু শুষ্ক, সেখানে মরুভূমিও তৈরি হতে পারে । পৃথিবীর উপর গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর প্রভাব নিচে দেওয়া হল –
বরফ গলে যাওয়া – বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে তার প্রভাবে বরফ গলে যায় । তাপমাত্রা হিমাঙ্কের উপরে উঠে গেলে তুষার আচ্ছাদিত এলাকাগুলোর বরফ গলতে শুরু করে । মেরুতে জমে থাকা বরফ গলে গিয়ে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে । বর্তমানে বিশ্বের অনেক এলাকায় হিমবাহ গলার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে । হিমবাহগুলো মিঠা পানির অন্যতম উৎস, তা গলে গেলে মিঠা পানির অভাব দেখা দেবে, খাবার পানিতে লবণের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে । আবার বরফের হিমবাহ গলে গেলে প্রথমে বন্যা, তারপর খরা পরিস্থিতির তৈরি হয় ।
সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি – হিমবাহ গলতে শুরু করলে গলিত পানি প্রথমে নদীতে আসে এবং তারপর সেই পানি নদী হয়ে সমুদ্রে গিয়ে মিশে যায় । এতে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যায় । অতীতের তুলনায় বর্তমানে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ হল হিমবাহ গলে যাওয়া । বিজ্ঞানীদের মতে, ১৯৯৩ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ৩ মিলিমিটার হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এভাবেই যদি তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং সেই সাথে বরফ গলতে থাকে তাহলে ২১০০ সাল নাগাদ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ২৮ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে । অর্থাৎ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে ৪৩ মিটার পর্যন্ত হতে পারে ।
সমুদ্রের স্রোতের পরিবর্তন – বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রভাব, সমুদ্রের স্রোতের পরিবর্তনের আকারে দৃশ্যমান হতে পারে । কারণ এটির কারণে সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা, লবণাক্ততা এবং ঘনত্ব পরিবর্তন হয় । এর ফলে সমুদ্রের স্রোতের গতি, দিক এবং আকার পরিবর্তিত হতে পারে । যখন সমুদ্রের স্রোতের প্রবাহ চক্র প্রভাবিত হয়, তখন তাপ স্থানান্তরের প্রক্রিয়াও বাধাগ্রস্ত হয় ।
বৃষ্টিপাতের ধরনে পরিবর্তন – গ্লোবাল ওয়ার্মিং আরও একটি প্রভাব হল যে এটি গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলের তুলনায় মেরু অঞ্চলে তাপমাত্রার বৃদ্ধি বেশী ঘটায় । এতে রেইন বেল্টগুলো পোলের দিকে সরে যাওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায় । এতে বৃষ্টিপাতের তীব্রতা বৃদ্ধি পায় । ফলে নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলগুলো ধ্বংসাত্মক ঝড় ও বন্যার কবলে পড়ে ।
কৃষিতে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাব – বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ব্যাপকভাবে কৃষির উপরে প্রভাব ফেলে । কারণ তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে মাটির আর্দ্রতা কমে যায় । আর মাটির আর্দ্রতা কমে যাওয়ার কারণে গাছপালা ঠিকমতো বেড়ে উঠতে পারে না, যার জন্য বেশি আর্দ্রতা এবং পানির প্রয়োজন হয় । অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে ফসল ধ্বংসের ঝুঁকি বাড়ে । এছাড়াও তাপমাত্রা বাড়লে পোকামাকড়ের ওপর সাধারণ কীটনাশকের প্রভাব কমে যায় । ফলে পোকামাকড়ের উপদ্রপ বেড়ে যায় এবং ফসলের ক্ষতি হয় ।
পরিবেশের উপর বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাব – বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বা গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর কারণে, পরিবেশের ওপর চরম বিরূপ প্রভাব পড়ে । গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর ফলে হিমবাহ গলে যায়, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পায়, বৃষ্টিপাতের ধরন পরিবর্তন হয়, সমুদ্রের স্রোতের গতিপথ পরিবর্তন হয়, ফসলের উপর কীটপতঙ্গের আক্রমণ বেড়ে যায়, কৃষি উৎপাদন কমে যায় । এছাড়াও আওর কিছু প্রভাব দেখা দিতে পারে, যেমন- বনের দাবানলের ঝুঁকি বেড়ে যায়, মাটি আদ্রতা হ্রাস পায় এবং মরুভূমির তৈরি হয় ।
সমাজের উপর বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাব – গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর খারাপ প্রভাব, পরিবেশের পাশাপাশি সমাজের উপরেও পরে । বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ার কারণে উপকূলীয় এলাকার আবাদি জমি তলিয়ে যায়, যার ফলে অনেক দেশে খাদ্য সংকটের তৈরি হয় । বৃষ্টিপাতের ধরণ এবং সময়ের পরিবর্তনের কারণে অনেক দেশে সঠিক সময়ে বৃষ্টি না হওয়ায় ঠিক ভাবে ফসল হয় না, আবার অনেক জায়গায় অসময়ে অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে ফসল নষ্ট হয়ে যায় এবং সেখানে খাবারের অভাব দেখা দেয় ।
গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর সুবিধা
গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর কিছু সুবিধা নিচে উল্লেখ করা হল –
- তেল ও গ্যাসের মজুদ পাওয়া যেতে পারে ।
- অল্প কিছু এলাকায় কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পেতে পারে
- পরবর্তী বরফ যুগ প্রতিরোধ করা যেতে পারে
গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর অসুবিধা
গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর কিছু অসুবিধা নিচে উল্লেখ করা হল –
- উপকূলীয় আবাদি জমি পানির নিচে তলিয়ে যাবে
- পান করার জন্য বিশুদ্ধ বা মিঠা পানির অভাব হবে
- কৃষি উৎপাদন কমে যাবে
- সব মহাদেশের উপকূলীয় এলাকা তলিয়ে যাবে, যার কারণে সেখানে বসবাসকারী মানুষকে সেই এলাকা ত্যাগ করতে হবে
- পৃথিবীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য হ্রাস পাবে এবং পৃথিবীকে পরিবেশগত ভারসাম্যহীনতার মতো পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে
গ্লোবাল ওয়ার্মিং প্রতিরোধের ব্যবস্থা
বৈশ্বিক উষ্ণতা প্রতিরোধে নিচের ব্যবস্থা গুলো গ্রহন করা যেতে পারে –
- শিল্প কারখানার চিমনি থেকে নির্গত ধোঁয়া ক্ষতিকর এবং তা থেকে নির্গত কার্বন ডাই অক্সাইড বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে । এসব শিল্প কারখানার দূষণ রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে ।
- যানবাহন ( বাস, ট্রাক, মোটরসাইকেল) থেকে নির্গত ধোঁয়ার প্রভাব কমাতে পরিবেশগত মান কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে । শিল্প এবং বিশেষ করে রাসায়নিক ইউনিটের বর্জ্য যেখানে সেখানে না ফেলে, সেগুলোকে পুনরায় ইউজ করার চেষ্টা করতে হবে ।অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে গাছপালা কাটা বন্ধ করতে হবে এবং সেই সাথে গাছ বপন এবং বন সংরক্ষণের দিকেও নজর দিতে হবে ।
- নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারের দিকে মনোযোগ দিতে হবে । অর্থাৎ কয়লা থেকে উৎপন্ন বিদ্যুতের পরিবর্তে যদি বায়ুশক্তি, সৌরবিদ্যুৎ ও জলবিদ্যুৎ ব্যবহার করা হয়, তাহলে বায়ুমণ্ডলের ভারসাম্য নষ্টকারী গ্যাসগুলো যেমন নিয়ন্ত্রণ করা যাবে, তেমনি বনের দাবানলও বন্ধ হবে ।
- চোরাইভাবে গাছ কাটা বন্ধ করতে হবে এবং বনভূমিকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে ।
- বিজ্ঞানী ও পরিবেশবিদরা বলছেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা কমানোর জন্য সিএফসি গ্যাসের নির্গমন বন্ধ করতে হবে । এর জন্য ফ্রিজ এয়ার কন্ডিশনার এবং অন্যান্য ধরনের কুলিং মেশিনের ব্যবহার কমাতে হবে । এবং এমন ধরনের মেশিন ব্যবহার করতে হবে যেগুলো থেকে কম সিএফসি গ্যাস উৎপন্ন হয় ।
- রাসায়নিক সারের ব্যবহার যতটা সম্ভব কম করতে হবে
- জনসচেনতা বৃদ্ধি এবং রাষ্ট্রীয় ও বৈশ্বিকভাবে গ্লোবাল ওয়ার্মিং প্রতিরোধে পদক্ষেপ গ্রহন ।
বৈশ্বিক উষ্ণতা প্রতিরোধে আমাদের করনীয়
বৈশ্বিক উষ্ণতা প্রতিরোধ করতে আমরা আমাদের নিজেদের জায়গা থেকে নিচে উল্লেখিত কাজগুলো করতে পারি –
- ওয়াশিং মেশিনে কাপড় ধোয়ার পর সেটিকে শুকানোর কাজ মেশিনের টাম্বেল ড্রায়ারে না করে, রোদে বা বাতাসের মধ্যে দড়িতে মেলে দিন । এতে কাপড় শুকানোর সাথে সাথে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে । এবং সেই কারণে বিদ্যুতের জন্য জীবাশ্ম জ্বালানীও কম পোড়ানো হবে ।
- ঘরকে ঠাণ্ডা করতে এসির তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস বা তার থেকে বাড়িয়ে রাখুন ।
- সবসময় ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারের পরিবর্তে হেঁটে, সাইকেল চালিয়ে বা গণপরিবহনে চলাচল করলে কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন কম হবে । এবং সেই সাথে এটি আপনাকে ফিট রাখতেও সাহায্য করবে ।
- যেসব বৈদ্যুতিক সামগ্রী ইউজ হচ্ছে না, সেগুলোকে আনপ্লাগ করে রাখুন অথবা সেগুলোর সুইচ বন্ধ করে রাখুন ।
- দুগ্ধজাত খাবার এবং মাংস কম পরিমাণে খান । কারণ এসব খাদ্যের উৎপাদন ও পরিবহণে প্রচুর পরিমাণে গ্রীনহাউস গ্যাস তৈরি হয় ।
- নিজের বা বাড়ির প্রয়োজনীয় কিছু ছোটখাট কাজের জন্য আপনি পুনর্ব্যবহারযোগ্য শক্তির উৎস ব্যবহার করতে পারেন । যেমন: পানি গরম করতে সৌরশক্তি চালিতে ওয়াটার হিটার ইউজ করতে পারেন ।
- বৃক্ষ রোপন করতে হবে অর্থাৎ পরিকল্পিত বনায়ন করতে হবে ।
শেষ কথা
আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনারা নিশ্চই বুঝতে পেড়েছেন যে, আমরা যদি এখন থেকেই সচেতন না হই, তাহলে গ্লোবাল ওয়ার্মিং আমাদের জন্য কতটা মারাত্মক হতে পারে । গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর খারাপ প্রভাবের কথা মাথায় রেখে আমাদের সকলকে নিজ নিজ জায়গা থেকে সচেতন হতে হবে । আর্টিকেলটি নিয়ে যে কোন ধরনের প্রশ্ন বা মন্তব্য থাকলে কমেন্ট সেকশনে জানান ।
0 responses on "গ্লোবাল ওয়ার্মিং কাকে বলে ? গ্লোবাল ওয়ার্মিং প্রতিরোধে আমাদের করনীয়"