গুগল এডসেন্স (Google adsense), এমন একটি advertisement program, যার মাধ্যমে যেকোনো “blogger” বা “YouTube channel” মালিক ঘরে বসে অনলাইনে টাকা আয় করে নিতে পারবেন।
এবং, বর্তমান সময়ে গুগল এডসেন্সের মাধ্যমে টাকা আয় করাটা লোকেদের মধ্যে অনেক জনপ্রিয় একটি প্রক্রিয়া হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কারণ, আজ যেকোনো blog বা YouTube channel অনেক বেশি পরিমানের টাকা কেবল এই মাধ্যমে আয় করতে পারছেন।
তাছাড়া, ইন্টারনেটে থাকা অন্যান্য ad-network গুলির তুলনায়, “Google adsense” আমাদের অধিক বেশি আয় করার সুযোগ দেয়।
কেননা, এডসেন্সের দ্বারা দেখানো বিজ্ঞাপনে “CPC” এবং “CTR” অনেক বেশি পরিমানে পাওয়া যায়।
কিন্তু, ব্লগ এবং ওয়েবসাইটের জন্য গুগল এডসেন্স যেভাবে একটি অনেক জনপ্রিয় এবং অধিক ইনকামের মাধ্যম, ঠিক সেভাবেই এডসেন্সের জন্য approval পাওয়াটাও কিন্তু সহজ কাজ নয়।
মানে, গুগল এডসেন্স পাওয়ার জন্য, সবচে প্রথমেই আপনার ওয়েবসাইট বা ইউটিউবের চ্যানেল গুলি, এডসেন্সের দ্বারা রিভিউ (review) করা হবে।
এবং, যদি আপনার ওয়েবসাইট বা ইউটিউবের চ্যানেলটি, এডসেন্সের প্রত্যেকটি নিয়ম কানুন ও শর্তাবলী মেনে কাজ করছেন, কেবল তখন আপনাকে approve করা হবে এবং বিজ্ঞাপন লাগিয়ে টাকা আয় করার সুযোগ আপনি পাবেন।
তাই, গুগল এডসেন্স পাওয়ার উপায়টি তেমন একটি সোজা কাজ নয় যতটা অধিক লোকেরা ভেবে থাকেন।
তাছাড়া মনে রাখবেন, গুগল এডসেন্স একাউন্ট পাওয়ার পরেও, চিরকাল গুগল এডসেন্সের কিছু পলিসি, নিয়ম-কানুন ও শর্তাবলী মেনেই কাজ করতে হবে।
এনাহলে, যেকোনো সময় আপনার একাউন্টে ad-limit চলে আসতে পারে।
তবে কিছু ক্ষেত্রে, সম্পূর্ণ account suspension এর ভয় ও থেকে যায়।
তাই বন্ধুরা, যদি আপনি এডসেন্স ব্যবহার করে ব্লগ বা ইউটিউবের থেকে টাকা আয় করতে চাচ্ছেন, তাহলে এর নিয়ম কানুন ও মনিটাইজেশন রুল গুলি ফলো করতেই হবে।
এই আর্টিকেলে আমি আপনাদের বলবো,
- ওয়েবসাইটের জন্য গুগল এডসেন্স পাওয়ার নিয়ম গুলি কি ?
- Adsense program policies গুলি কি কি ?
- Google adsense publisher policies গুলি কি ?
- ইউটিউব এডসেন্স এর নিয়ম কানুন ও monetization rules.
এই Google adsense policy ও নিয়ম গুলি কিন্তু একজন ব্লগার বা ইউটিউব চ্যানেল এর জন্য জেনে রাখাটা অনেক বেশি জরুরি।
Website এর ক্ষেত্রে গুগল এডসেন্স পাওয়ার কি নিয়ম রয়েছে ?
একজন ব্লগার হিসেবে, প্রত্যেকেই কোনো না কোনো সময় “Google adsense” এর জন্য এপ্লাই করেই থাকেন।
তবে, এই ক্ষেত্রে অনেক কম সংখক ব্লগ বা ওয়েবসাইট গুলিকে এডসেন্স দ্বারা এপ্রুভাল দেওয়া হয়।
কারণ, অনেক কম সংখক ওয়েবসাইট রয়েছে, যেগুলি শুরু থেকেই এডসেন্সের নিয়ম মেনে কাজ করেন।
এমনিতে ব্লগের ক্ষেত্রে, দ্রুত গতিতে এডসেন্স এপ্রুভাল পাওয়ার নিয়ম গুলি আমি আগেই আপনাদের বলেছি।
তাছাড়া নিচে আমি কিছু নিয়ম বলে দিচ্ছি যেগুলি মেনে থাকলে সহজেই এডসেন্স একাউন্ট এপ্রুভাল পেয়ে যাবেন।
Point to remember before applying for adsense
মনে রাখবেন, এডসেন্স এপ্রুভাল পাওয়ার জন্য নিচে যেগুলি টিপস বা নিয়ম আমি বলবো, সেগুলি আমি আমার ৬ বছরের ব্লগিং এক্সপেরিয়েন্স থেকে বলেছি।
অফিসিয়ালি (officially), Google adsense এর দ্বারা এই প্রত্যেক তথ্য গুলি দেওয়া হয়নি।
- একটি প্রিমিয়াম domain extension যেমন, .in, .com, .info, .org, .co.in নিজের ব্লগের ক্ষেত্রে ব্যবহার করবেন।
- নিজের blog বা website এ, privacy policy, contact us, about us এবং disclaimer পেজ অবশই তৈরি করে রাখবেন।
- ব্লগের privacy policy পেজে আপনার উল্লেখ করতে হবে যে, আপনি আপনার ব্লগে 3rd party advertisement network যেমন “Google adsense” ব্যবহার করছেন।
- Privacy policy পেজে এটাও উল্লেখ করতে হবে যে, Third party vendors, যেমন Google, বিজ্ঞাপন প্রচারের উদ্দেশ্যে cookies ব্যবহার করছে।
- আপনার ওয়েবসাইট এর লোডিং স্পিড দ্রুত হতে হবে এবং ওয়েবসাইট বা ব্লগটি clean থাকতে হবে। অধিক ঘিচিমিচি করে ওয়েবসাইট ডিজাইন করবেননা।
- আপনার ব্লগ সাইটে কমেও ২৫ টি ভালো ভালো হাই কোয়ালিটি এবং ইউনিক আর্টিকেল পাবলিশ করা থাকতে হবে। এমনিতে, এডসেন্স অফিসিয়ালি এই কথা বলেনি যদিও এতে দ্রুত এপ্রুভাল পাওয়া যাচ্ছে।
- নিজের ব্লগের আর্টিকেলে copyright images বা অন্য ওয়েবসাইট থেকে content কপি করে ব্যবহার করবেননা।
- যদি গুগল এডসেন্স এর জন্য এপ্লাই করছেন, তাহলে অন্য কোনো advertisement network ব্যবহার করবেননা।
- চেষ্টা করবেন যাতে, আপনার ব্লগে লেখা আর্টিকেল গুলি কমেও ১৫০০ শব্দের (word) ভেতরে লেখা থাকে।
তাহলে, ওপরে বলা নিয়ম গুলি ব্যবহার করে গুগল এডসেন্সের জন্য এপ্লাই করুন।
যারা সহজেই গুগল এডসেন্স পাওয়ার উপায় খুঁজছেন তাদের জন্য এই টিপস গুলি অনেক কাজের বলে প্রমাণিত হবে।
কারণ এতে, অনেক সহজে কেবল কিছু দিনের মধ্যেই আপনার এডসেন্স একাউন্ট এপ্রুভ হয়ে যাবে।
Google adsense publishers policies গুলি কি কি ?
এখন আপনাদের মধ্যে অনেকেই হয় ভাবতে পারেন যে, একবার গুগল এডসেন্স এপ্রুভাল পাওয়ার পর আর কোনো চিন্তা বা ভয় নেই।
মনে রাখবেন, আপনার ওয়েবসাইট যদি “Webmaster quality guidelines“, “adsense publisher policies” এবং “adsense program policies” গুলি ভবিষ্যতে সঠিক ভাবে না মেনে কাজ করে, তাহলে আপনার adsence account এ “ad serving limit” এবং “সম্পূর্ণ account suspension” এর ভয় থাকবে।
ফলে, এডসেন্স বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আর টাকা আয় করতে পারবেননা।
তবে, যদি আপনার এডসেন্স একাউন্টে “এড লিমিট (ad-limit)” দেখানো হচ্ছে, তাহলে এর মানে হলো,
“ব্লগ বা ওয়েবসাইটে policy violation অথবা নিয়ম উলংঘনের ফলে অধিক কম বিজ্ঞাপন দেখানো হবে”।
কিন্তু, যদি আপনি আপনার ভুল শুধরিয়ে নিতে পারেন, তাহলে কিছু দিনের মধ্যেই আপনার account থেকে ad-limit সরিয়ে দেওয়া হয়।
তবে, যদি নিয়ম policy violation অথবা নিয়ম উলংঘনের ফলে, সম্পূর্ণ account suspend বা disable করা হয়েছে, তাহলে সেই একাউন্ট আর ঘুরিয়ে পাবেননা।
তাই, এডসেন্স ব্যবহার করে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে নিজের ব্লগ ও ওয়েবসাইট থেকে ইনকাম করাটা যতটা লাভজনক ততটাই জরুরি এর প্রত্যেক পলিসি, নিয়ম ও শর্তাবলী গুলি মেনে থাকা।
Google adsense publisher policies in Bengali
এই publisher policies গুলি আমি বাংলাতে নিজের মতো করে আপনাদের বলে দিচ্ছি।
তবে, আপনারা চাইলে Google এ সার্চ করে এর English version অবশই পেয়ে যাবেন।
- যেকোনো ধরণের অবৈধ (illegal) কনটেন্ট বা অবৈধ কার্যকলাপের প্রচার বা অন্যের legal rights কে লঙ্ঘন (infringes) করা কন্টেন google অনুমতি দেয়না। এই ক্ষেত্রে, আপনার এই ধরণের অবৈধ কনটেন্ট থেকে দূরে থাকতেই হবে।
- Copyright infringes, মানে যেকোনো ধরণের কপি করা কনটেন্ট ব্যবহার করতে পারবেননা। যেরকম ধরুন, অন্যের লিখা কনটেন্ট আপনি আপনার ব্লগে পাবলিশ করছেন। এছাড়া, অন্যের ছবি (images)নিজের ব্লগে অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করবেননা।
- Endangered বা threatened species এর সাথে জড়িত product selling এর প্রচার করতে পারবেননা। উদাহরণ স্বরূপে, Sale of tigers, shark fins, elephant ivory, tiger skins, rhino horn, dolphin oil ইত্যাদি।
- মিথ্যা দাবি, জালবাজি এবং ধোকাধারীর সাথে জড়িত কনটেন্ট গ্রহণ করা হবেনা।
- বিপজ্জনক, ক্ষতিকারক বা হানিকর কনটেন্ট গ্রহণ করা হবেনা।
- অসাধু আচরণ (dishonest behavior) থাকা কনটেন্ট গুলি এডসেন্সের দ্বারা গ্রহণ করা হবেনা। যেমন, জালি ডকুমেন্ট তৈরি করা বা অবৈধ ভাবে software hacking ও cracking করার তথ্য দেওয়া।
- মিথ্যা বা ভুল তথ্য ব্যবহার করে কনটেন্ট তৈরি করে লোকেদের ভুল ভাল বুঝিয়ে যেকোনো জিনিসের জন্য আগ্রহী করা কনটেন্ট গ্রহণ হবেনা। যেমন, ভুল বা মিথ্যা দাবি করে, যেকোনো product, service বা content প্রচার করা।
- Malicious এবং অপ্রয়োজনীয় software এর প্রচার বা ওয়েবসাইটে তাদের ব্যবহার করলে, সেটা গ্রহণ করা হবেনা।
- যেকোনো ধরণের Sexually explicit content যেমন, graphic sexual text, image, audio, video, বা adult games থাকলে সেই content গ্রহণ হবেনা।
তাহলে, google publisher policy র মধ্যে এগুলি কিছু জরুরি বিষয় ও নিয়ম রয়েছে যেগুলি সম্পূর্ণ ভাবে মেনে কাজ করতে হবে।
তাহলেই, আপনি google adsense approval পাবেন এবং ভবিষ্যতেও আপনার account disable হওয়ার ভয় থাকবেনা।
Adsense program policies in Bengali
এখন এডসেন্স এর যেগুলি পলিসি ও নিয়ম গুলি বলবো, সেগুলি অনেক ভালো করে বোঝার চেষ্টা করবেন এবং যতটা সম্ভব ভালো করে মেন ব্লগিং করবেন।
এনাহলে, google যেকোনো সময় আপনার ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপন এর প্রচার বন্ধ করে এডসেন্স একাউন্ট ডিজেবল করে দিতে পারবে।
আর, ডিজেবল এডসেন্স একাউন্ট ঘুরিয়ে পাওয়ার কিন্তু সম্ভব না।
তাই, নিজের গুগল এডসেন্স একাউন্ট ডিজেবল হওয়ার থেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য, এই পলিসি গুলি মেনে চলতে হবে।
- Publisher রা নিজের ওয়েবসাইটের বিজ্ঞাপন নিজে ক্লিক করা চলবেনা।
- আপনি নিজের বন্ধু বা চেনা পরিচিত লোকেদের নিজের ব্লগে বিজ্ঞাপন গুলি click বা view করার জন্য উৎসাহিত করবেননা। তাছাড়া, অবৈধ ভাবে বিজ্ঞাপনে click বা view পাওয়ার যেকোনো প্রক্রিয়া মেনে নেওয়া হবেনা।
- আপনি আপনার adsense এর ads এমন কোনো blog page বা content এ দেখাতে পারবেননা, যেগুলি ওপরে বলা “Google publisher policy” গুলিকে মানছেনা ও ভঙ্গ (violates) করছে।
- এমন কোনো ধরণের সাইট, পেজে বা কন্টেন্টে, এডসেন্স এর বিজ্ঞাপন যোগ করবেননা যেখানে “abusive experiences” এর ভয় রয়েছে। Abusive experiences কে বাংলাতে বলা যেতে পারে “আপত্তিজনক অভিজ্ঞতা”.
- অবশই নিজের ওয়েবসাইটের সার্ভারের root section এ “ads.txt” ফাইল আপলোড করে রাখবেন। Ads.txt guide পড়ুন।
- মনে রাখবেন, google adsense কেবল organic search engine ট্রাফিক পছন্দ করে। তাই, চেষ্টা রাখবেন যাতে আপনার ওয়েবসাইটে অধিক পরিমানের ট্রাফিক ও ভিসিটর্স সার্চ ইঞ্জিন থেকেই আসছে। তবে, social media থেকে traffic আসলেও সমস্যা নেই। কিন্তু, এমন কোনো পেজ বা কনটেন্ট যেখানে বিভিন্ন traffic sources থেকে visitors আসছে, সেখানে বিজ্ঞাপন যোগ করবেননা। Bot traffic, automatic software traffic এবং traffic exchange services ব্যবহার করে ওয়েবসাইটে ট্রাফিক আনবেননা।
- নিজের adsense ad codes গুলি অনুপযুক্ত জায়গা যেমন popups, e-mail বা software গুলিতে যোগ করবেননা।
- আপনার ওয়েবসাইটের আচরণ (behavior) স্বাভাবিক থাকতে হবে এবং ওয়েবসাইটে কোনো রকমের অস্বাভাবিক আচরণ যেমন, user দের অপ্রয়োজনীয় ওয়েবসাইটে redirect করা, নিজে নিজে browser এর ফাইল ডাউনলোড হওয়া, malware, popup বা pop-under যোগ করা।
মনে রাখবেন, গুগল এডসেন্স একাউন্ট এপ্রুভাল পাওয়ার পরেও কিন্তু আপনার ওপরে বলা বিষয় গুলি নিয়ে ধ্যান দিতে হবে।
নাহলে, আপনার এডসেন্স একাউন্ট সাসপেন্ড বা ডিজেবল হওয়ার ভয় সব সময় থাকবে।
ইউটিউব এডসেন্স এর নিয়ম কানুন (monetization rules)
এমনিতে দেখতে গেলে ওয়েবসাইট এবং ইউটিউবের ক্ষেত্রে এডসেন্সের নিয়ম-কানুন, পলিসি এবং শর্তাবলী গুলি প্রায় এক।
তবে, যিহেতু ইউটিউব হলো একটি ভিডিও পোর্টাল (video portal), তাই এই ক্ষেত্রে গুগল এডসেন্সের জন্য এপ্রুভাল পাওয়ার নিয়ম ও কিছু আলাদা।
তাছাড়া, আমি আগেই “ইউটিউবের নতুন নিয়ম কানুন” গুলি আমার আগের আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদের বলেছি।
আমাদের শেষ কথা,
তাহলে বন্ধুরা, আপনারা হয়তো অবশই বুঝতে পারলেন যে গুগল এডসেন্সের জন্য এপ্রুভাল পাওয়ার জন্য গুগলের কোন কোন পলিসি নিয়ম-কানুন ও শর্তাবলী গুলি মেনে চলে হবে।
তবে, আমি আবার ও বলছি যে, এডসেন্স এর নিয়ম ও পলিসি গুলি কিন্তু চিরকাল মেনেই ক্যলটে হবে।
এনাহলে, আপনার এডসেন্স একাউন্ট যেকোনো সময় ডিজেবল (account disable) হয়ে যেতে পারে।
মনে রাখবেন, গুগলের এই পলিসি (policy) এবং নিয়ম গুলি প্রত্যেকের ভালোর জন্যই তৈরি করা হয়েছে।
তাই, সঠিক এবং কোনো অসুবিধে ছাড়া নিজের ব্লগ এডসেন্সের মাধ্যমে থেকে টাকা আয় করার জন্য এই নিয়ম গুলি অবশই মেনে চলুন।
এছাড়া, কোনো প্রশ্ন বা সমস্যা থাকলে, নিচে কমেন্ট অবশই করবেন।
আপনার সাহায্যের জন্য আমি অবশই রয়েছি।
0 responses on "গুগল এডসেন্স পলিসি, নিয়ম কানুন ও শর্তাবলী : (Adsense policy in Bengali)"