বর্তমান সময়ে ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার দিন দিন বেড়ে চলেছে। ডেবিট কার্ড বা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে অনলাইন বা ফোনে কেনাকাটার সময় তিন বা চার অক্ষরের একটি গোপন নাম্বার ব্যবহার করা হয়। এর নাম কার্ড নেটয়ার্কভেদে আলাদা হয়। আমরা এই পোস্টে বোঝার সুবিধার্থে শুধুমাত্র সিভিভি শব্দটিই ব্যবহার করব। এটা কার্ডের এটিএম পিন থেকে আলাদা হয়। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা এই সিভিভি বা সমতুল্য গোপনীয় নাম্বার সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিবো।
CVV নাম্বার কি?
CVV এর পূর্ণ রুপ হলো কার্ড ভেরিফিকেশন ভ্যালু। CVV হলো আপনার কার্ডের তিন বা চার অঙ্কের নম্বর যা অনলাইনে বা ফোনে কেনাকাটা করার সময় নিরাপত্তার একটি অতিরিক্ত স্তর যোগ করে। ভিসা, মাস্টার কার্ড CVV নাম্বারের জন্য তিন অক্ষর ব্যবহার করা হয় অন্যদিকে আমেরিকান এক্সপ্রেসের ক্ষেত্রে চার অক্ষরের নাম্বার ব্যবহার করা হয়। আগেই বলা হয়েছে নেটওয়ার্কভেদে একে আলাদা আলাদা নামে ডাকা হতে পারে।
যখন সশরীরে কার্ড ব্যবহার করা হয় তখন লেনদেন যাচাই করার জন্য একটি পিন ব্যবহার করা হয়। কিন্তু অনলাইন কিংবা মোবাইল ফোনে কেনাকাটা করার সময় সঠিক মালিক যাচাই করার সরাসরি সুবিধা থাকেনা। সেজন্য অতিরিক্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ডের সাথে একটি নাম্বার দেওয়া থাকে। এতে করে অনলাইন জালিয়াতির হাত থেকে গ্রাহক রক্ষা পেতে পারে।
CVV নাম্বার কার্ডের কোথায় পাওয়া যাবে?
কার্ড ক্যারিয়াররা তাদের কার্ডের বিভিন্ন অংশে CVV নাম্বার প্রিন্ট করে রাখতে পারে। আপনি যদি ক্রেডিট কার্ড বা ডেবিট কার্ড ব্যবহার করে থাকেন তাহলে আপনার কার্ডে কোথায় CVV নাম্বার প্রিন্ট করা থাকে সেটি জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি ছাড়া অনলাইন বা ফোনে কেনাকাটা করার সুবিধা পাওয়া যায় না। আপনার যদি ভিসা কার্ড, মাস্টার কার্ড কিংবা ডিসকভার কার্ড থাকে তাহলে আপনি আপনার কার্ডের পিছনে সিগনেচার স্ট্রিপের ডান দিকে তিন অক্ষরের CVV নাম্বার পেয়ে যাবেন। নম্বরটি আপনার সম্পূর্ণ ক্রেডিট কার্ড নম্বর বা এর শেষ চারটি সংখ্যার পাশেও হতে পারে। তবে আপনি যদি আমেরিকান এক্সপ্রেসের কার্ড হোল্ডার হয়ে থাকেন তাহলে আপনার কার্ডের সামনে ডান দিকে CVV নাম্বার পেয়ে যাবেন।
ক্রেডিট কার্ডগুলোতে CVV নাম্বার কেন থাকে?
আপনি যখন বিক্রেতার সামনে সশরীরে কোনো লেনদেন করবেন না তখন নিরাপত্তার স্বার্থে এই নাম্বার ব্যবহার করা হয়। যেহেতু অনলাইন ব্যবসায়ীরা আপনার স্বাক্ষর পরীক্ষা করতে পারে না, তাই অনেকেই আপনার CVV কোডটি যাচাই করতে বলে যে আপনি ক্রেডিট কার্ডের সঠিক মালিক।
যদি কোনো হ্যাকার বা চোর আপনার ক্রেডিট কার্ড নাম্বার চুরিও করে ফেলে সে শুধু মাত্র ওই নাম্বার দিয়ে অনলাইনে কেনাকাটা করতে পারবে না। আপনি মনে করতে পারেন যে যদি হ্যাকাররা ক্রেডিট কার্ড নাম্বার জানতে পারে তাহলে তারা CVV নাম্বার কেন জানতে পারবে না। আসলে হ্যাকাররা মূলত কোনো প্রতিষ্ঠানের ডেটাবেজ হ্যাক করে ক্রেডিট কার্ড নাম্বার সংগ্রহ করে। কিন্তু আর্থিক নীতিমালা অনুযায়ী কোনো প্রতিষ্ঠান CVV নাম্বার তাদের ডেটাবেজে সংরক্ষণ করে রাখতে পারবে না।
এর ফলে আপনি যখন কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে অনলাইন কিংবা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কেনাকাটা করবেন তখন আপনি আপনার ক্রেডিট কার্ড নাম্বার সেভ করতে পারলেও প্রতিবার CVV কোড টাইপ করতে হবে (অবশ্য এরও ব্যতিক্রম আছে, অনেক সেবায় আজকাল একবার সিভিভি যাচাই করে কার্ড সেভ করে রাখা যায়)। এতে করে কার্ডের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়।
বিভিন্ন ব্যাংকের কার্ডের CVV নাম্বারের সীমাবদ্ধতা
CVV নাম্বারের সুবিধা যেমন আছে তেমনি এর কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। CVV নাম্বার ব্যবহার করে যেহেতু অনলাইনে কেনাকাটা করা সম্ভব তাই অপরাধীরা ফিশিং এর মাধ্যমে খুব সহজেই গ্রাহকের কাছ থেকে CVV নাম্বার সংগ্রহ করে ফেলতে পারে। CVV নাম্বার সংগ্রহ করে ফেলতে পারলে যে কেউই একাউট নাম্বার ব্যবহার করে অনলাইনে গ্রাহকের অজান্তে কেনা কাটা করে ফেলতে পারে।
এছাড়া CVV কার্ড মূলত ক্রেডিট কিংবা ডেবিট কার্ডের মধ্যে লেখা থাকে বিধায় যদি কিনা কার্ডটি গ্রাহকের কাছ থেকে চুরি হয়ে যায় সেক্ষেত্রে গ্রাহকের একাউন্টে থাকা অর্থ বিপদের মুখে পড়ে যেতে পারে। এজন্য CVV নাম্বার কার্ডে সরাসরি থাকাটা গ্রাহকদের জন্য বিপজ্জনক বলা চলে। যদি কোনো গ্রাহক মনে করে তার একাউন্টে অনিয়ন্ত্রিত লেনদেন সম্পন্ন হচ্ছে তাহলে অতি দ্রুত গ্রাহকের একাউন্ট বন্ধ করে দেওয়াটাই সুবিধাজনক।
একবার কার্ড হারিয়ে গেলে একাউন্ট বন্ধ না করলে সিভিভি নাম্বার কোনো অসাধু ব্যাক্তির হাতে পড়ে যাবার সম্ভাবনা থেকে যায়। যেহেতু একটি ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ডের সিভিভি নাম্বার একটিই থাকে তাই এটি পরিবর্তন করার কোনো উপায় থাকে না। সেজন্য এই একাউন্ট বন্ধ করার মতো ঝামেলার সম্মুখীন হতে হয়।
সিভিভি নাম্বার অনলাইনে কেনাকাটা করার জন্য বাড়তি নিরাপত্তা প্রদান করলেও ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড হারিয়ে গেলে এটি একাউন্টে থাকা অর্থের জন্য ঝুকিপূর্ণ হতে পারে। তাই ক্রেডিট কার্ড বা ডেবিট কার্ড ব্যবহার করার সময় এটিকে সযত্নে নিজের কাছে রাখা উচিত। ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ডের সিভিভি নাম্বার সম্পর্কে আমাদের এই আর্টিকেলটি আপনাদের কেমন লেগেছে তা আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারবেন। এছাড়া নিত্য নতুন টেকনোলজি বিষয়ক তথ্য ও টিপস পেতে চোখ রাখুন আমাদের ওয়েবসাইটে।
0 responses on "ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ডের CVV নাম্বার কি? সিভিভি নম্বরের ব্যবহার জানুন"