ক্রেডিট কার্ড ঠিকভাবে ব্যবহার করলে আপনার অনেক খরচ বাঁচিয়ে দিতে পারে। ভালো ক্রেডিট কার্ড হলে আপনি বিভিন্ন রকম সুবিধা, উপহারও পেতে পারেন। বিভিন্ন স্টোরে বিভিন্ন ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের জন্য আলাদা করে ছাড়ও পাওয়া যায়। ব্যাংক হতে লোন নেয়ার ক্ষেত্রে আপনার গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতেও সাহায্য করতে পারে ক্রেডিট কার্ড। তবে এমন নয় যে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে কোন ঝুঁকি নেই, ক্রেডিট কার্ড হয়ে উঠতে পারে আপনার মাথা ব্যাথার কারণ। তাই ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু বিষয়ে লক্ষ্য রাখা জরুরী।
যদি আপনি আপনার ক্রেডিট কার্ডের বিল দিতে দেরি করে ফেলেন তবে আপনাকে আলাদা ফি ও ইন্টারেস্ট দিতে হতে পারে যা আপনার খরচকে বাড়িয়ে দিতে পারে। বর্তমান মূল্যস্ফীতি ও অর্থনৈতিক অবস্থায় এই বাড়তি খরচ আপনাকে বেশ ঝামেলায় ফেলে দিতে পারে। আজকের এই পোস্ট হতে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের ক্ষেত্রে সবথেকে বড় ভুলগুলো নিয়ে জানতে পারবেন এবং কীভাবে সহজে সঠিকভাবে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতে পারবেন সে বিষয়ে একটি ধারণা পেয়ে যাবেন। তাই আপনি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারী হয়ে থাকলে এই বিষয়গুলো সম্পর্কে ভালোভাবে ধারণা রাখা প্রয়োজন।
ক্রেডিট কার্ডের বিল দেরিতে পরিশোধ করা
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের ক্ষেত্রে এটি সবথেকে বড় ভুল। ক্রেডিট কার্ডের পেমেন্ট বা বকেয়া বিল দেরিতে পরিশোধ করা হতে সবসময় বিরত থাকা উচিত। সাধারণ ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারীরা এই ভুলটি সবথেকে বেশি করে থাকেন। ফলে ক্রেডিট কার্ডে বেশি বিল গুণতে হয় এবং খরচ বেশি করে ফেলেন বেশিরভাগ ব্যবহারকারী। এর ফলে বিভিন্ন ব্যাংক লোন পেতে আপনার গ্রহণযোগ্যতাও ক্রমেই কমতে থাকে। দেরি করে ক্রেডিট কার্ডের বিল পরিশোধ করার ফলে আপনি ধারের মধ্যে আটকা পরে যেতে পারেন সহজেই।
তাই এই দেরি করে বিল দেয়া হতে বিরত থাকতে আপনি মাসিক রিমাইন্ডার সেট করে রাখতে পারেন যাতে সময়মত অন্তত মিনিমাম পেমেন্ট পরিশোধ করে ফেলতে পারেন। বেশিরভাগ ব্যাংক আপনাকে প্রতি মাসে অটো পেমেন্ট কেটে নেয়ার সুবিধাও দিয়ে থাকে যাতে আপনাকে এটা নিয়ে কখনও চিন্তা করতে না হয়। অনেক ব্যাংক কিছু দিন বাড়তি সময় দিয়ে থাকে ফি ছাড়াই ধার পরিশোধ করার। তবে বেশিরভাগ ব্যাংকই আপনাকে চার্জ করবে বিল পেমেন্টের সময় শেষ হবার সঙ্গে সঙ্গেই। এছাড়া আপনি যদি নিয়মিত ক্রেডিট কার্ডের বিল সময়মতো পরিশোধ করে থাকেন এবং কোন মাসে ভুলে তা দিতে দেরি করে ফেলেন তবে আপনি আপনার ব্যাংকে কল করে এই বিষয়ে কথা বলতে পারেন। কিছু ব্যাংক এরকম ভুলে একবার সুযোগ দিয়ে থাকে।
ক্রেডিট কার্ডের পুরো সীমা ব্যবহার করে ফেলা
আপনার আয় অনুযায়ী ব্যাংক ক্রেডিট কার্ডের ক্ষেত্রে সীমা নির্ধারণ করে থাকে যে ক্রেডিট কার্ড থেকে কতটুকু পর্যন্ত আপনি খরচ করতে পারবেন। ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহারের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় ভুলটি হল ক্রেডিট কার্ডের পুরো সীমা পর্যন্ত খরচ করে ফেলা। এতে করে আপনার পক্ষে তা শোধ করা কঠিন হয়ে যাবে এবং আপনাকে অতিরিক্ত বিলের ফাঁদে ফেলে দিতে পারে। সবথেকে ভালো হল সবসময় আপনার ক্রেডিট কার্ডের সীমার ৩০ শতাংশের মধ্যে থাকা। যেমন আপনার ক্রেডিট কার্ডের সীমা যদি ৫ লাখ টাকা হয়ে থাকে তবে আপনার ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার বেশি খরচ করা উচিত নয়। সবথেকে ভালো যদি আপনার খরচ ১০ শতাংশের মধ্যে রাখতে পারেন। অর্থাৎ ৫০ হাজার টাকা বা তার কম সবথেকে সুবিধাজনক।
আপনার ক্রেডিট কার্ডের সীমার যত বেশি অংশ আপনি খরচ করবেন ততই আপনি ঝুঁকিতে থেকে যাবেন। আপনার কার্ডের আউটস্ট্যান্ডিং ব্যালান্স বা আপনি যত টাকা ব্যাংকের কাছে ঋণী তার পরিমাণ যতটা বেশি হবে তত বেশি ইন্টারেস্ট আপনাকে দিতে হবে। এর ফলে আপনার পক্ষে এই ধার শোধ করা বেশ কঠিন হয়ে যেতে পারে।
সবসময় সবথেকে কম অংশ পেমেন্ট করা
আপনার ব্যাংক আপনার ক্রেডিট কার্ডের খরচের ক্ষেত্রে একটি সর্বনিম্ন অংশ পেমেন্ট চেয়ে থাকে যা পেমেন্ট করার মাধ্যমে আপনি বাড়তি ফি ও ইন্টারেস্ট হতে বাঁচতে পারেন। এই সর্বনিম্ন অংশ নির্ধারিত হয় আপনার ক্রেডিট কার্ডের ব্যালেন্স অনুযায়ী। তবে সবসময় শুধু এই সর্বনিম্ন বিল পেমেন্ট করার মাধ্যমে আপনি বড় একটি ভুল করে ফেলতে পারেন।
বারবার সর্বনিম্ন অংশ পেমেন্ট করার মাধ্যমে আপনার ইন্টারেস্ট রেট ও ধারের পরিমাণ বাড়তে থাকে এবং একসময় আপনি বড় ঋণের ফাঁদে পড়ে যেতে পারেন। তাই সবসময় পরিপূর্ণ বিল পরিশোধ করে ফেলা উচিত। তবে কোনো এক মাসে সেটা সম্ভব না হলে মিনিমাম বিল পে করার মাধ্যমে বাড়তি খরচ থেকে বাঁচতে পারেন। তবে এটি অভ্যাস বানিয়ে ফেলা ঠিক নয়।
তাই আপনার কার্ডের পুরো বিল পরিশোধ করে দেয়া উচিত। সেটি যদি সম্ভব না হয় তবে কার্ডের ব্যবহার কিছুদিনের জন্য বন্ধ করে রাখা উচিত যতদিন না আপনি তা পুরোটা পরিশোধ করতে পারছেন। এভাবে আপনি ঋণের বোঝার হাত থেকে বাঁচতে পারবেন।
ক্রেডিট কার্ড থেকে সরাসরি ক্যাশ বের করা
ক্রেডিট কার্ড থেকে সরাসরি ক্যাশ বা নগদ টাকা পকেটে নিয়ে কোন কিছু কেনা একটি বড় ভুল। এটা যে কোন কিছুর পেমেন্ট করার ক্ষেত্রে সবথেকে খরুচে উপায়। তাই ক্রেডিট কার্ড থেকে এটিএম ব্যবহার করে টাকা তোলা হতে বিরত থাকা উচিত।
সাধারণত এভাবে টাকা তুললে ইন্টারেস্টের পরিমাণ স্বাভাবিকের থেকে অনেক বেশি হয়ে থাকে। এছাড়া অনেক কার্ডেই আলাদা ট্রান্সেকশন ফিও থাকে। তাই এই পদ্ধতিতে টাকা তোলার খরচ অনেক বেশি। তাই কোন পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে সরাসরি ক্রেডিট কার্ড দিয়ে পেমেন্ট করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
ক্রেডিট কার্ড বন্ধ করে ফেলা
ক্রেডিট কার্ডগুলো একসঙ্গে বন্ধ করে ফেলা ভুল একটি কাজ। এতে আপনার ভবিষ্যতে নতুন ক্রেডিট কার্ড পাওয়া বা সীমা বাড়ানোর ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে। ক্রেডিট কার্ড সবসময় নিজের দরকার অনুযায়ী নেয়া উচিত এবং সকল ধার শোধ করবার পরেই শুধুমাত্র বন্ধ করা উচিত।
যদি আপনাকে কোন ক্রেডিট কার্ড বন্ধ করতেই হয় তবে সকল বিল পরিশোধ করে বন্ধ করুন। সবসময় সবথেকে বেশি সীমাযুক্ত কার্ডটি এবং পুরানো কার্ডটি ব্যবহার করুন। চাইলে কম সীমা থাকা কার্ড বন্ধ করে ফেলুন। এতে করে আপনার ক্রেডিট ইতিহাসে কম প্রভাব পড়বে।
অতিরিক্ত ক্রেডিট কার্ডের জন্য আবেদন
অতিরিক্ত ক্রেডিট কার্ডের জন্য আবেদন করা কখনই ঠিক নয়। এতে করে আপনার পক্ষে হিসাব রাখা কঠিন হয়ে যায় এবং কার্ড ব্যবহারের ক্ষেত্রেও হিসাবি হওয়া কঠিন হয়ে যায়। সবসময় দরকার অনুযায়ী ক্রেডিট কার্ডের জন্য আবেদন করা উচিত। অতিরিক্ত ক্রেডিট কার্ডের জন্য আবেদন করলে আপনার খরচ অনেক পরিমানে বেড়ে যেতে পারে। তাই একটি প্রাথমিক ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করাই শ্রেয়।
নিয়মিত বিলিং স্টেটমেন্ট চেক না করা
আপনার ক্রেডিট কার্ডের বিলিং স্টেটমেন্ট নিয়মিত চেক করা উচিত। কেননা এতে আপনি আপনার খরচ সম্পর্কে ধারণা পাবেন এবং বুঝতে পারবেন যে কোন খাতে আপনার খরচ বেশি হচ্ছে। ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের স্টেটমেন্ট দেখে যেখানে সাশ্রয় হবে সেই অনুযায়ী খরচ করা উচিত। এতে করে আপনি বাড়তি খরচ যেমন এড়িয়ে চলতে পারবেন তেমনি আপনার কার্ডে ভুল কোন চার্জ এলে সে ব্যাপারেও দ্রুত পদক্ষেপ নিতে পারবেন। তাই প্রতি মাসে আপনার বিলিং স্টেটমেন্ট চেক করার মাধ্যমে আপনার খরচের হিসাব রাখুন।
0 responses on "ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের ক্ষেত্রে যে ভুলগুলো আপনার করা উচিত নয়"