দূর-দূরান্তে ভ্রমণের ক্ষেত্রে সবথেকে সহজ ও দ্রুততম মাধ্যম হচ্ছে বিমান বা প্লেন। বাইরের বিভিন্ন দেশে ভ্রমণের ক্ষেত্রে অনেক সময়ই বিমান ছাড়া আর কোনো বিকল্প থাকে না। তাই বিমানের টিকেট কেনা অনেকের জন্যই বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। ব্যক্তিগত ও ব্যবসার কাজে নিয়মিত বিমান ভ্রমণের দরকার হয় অনেকেরই। তবে বিমান ভ্রমণের অন্যতম অসুবিধা হচ্ছে তা অন্যান্য বেশিরভাগ ভ্রমণ মাধ্যম থেকে ব্যয়বহুল। বিমান টিকেট কিনবার ক্ষেত্রে অনেকেই একটু সাশ্রয় করতে চান। তবে সঠিক পদ্ধতি না জানার কারণে সবথেকে কমদামে বিমান টিকেট পাওয়া সম্ভব হয় না অনেক সময়েই।
বিমান টিকেটের দাম একদম নির্ধারিত নয় অধিকাংশ সময়েই। টিকেটের মূল্য অবস্থাভেদে পরিবর্তিত হয়ে থাকে। মূলত চাহিদার সাথে তাল মিলিয়ে বিমান টিকেটের দাম উঠানামা করে থাকে। তবে শুধু যে চাহিদাই এখানে একমাত্র ব্যাপার সেটি নয়। আরো বিভিন্ন কারণেই বিমান টিকেটের মূল্য কমবেশি হতে পারে। নতুন যারা বিমান ভ্রমণ করে থাকেন তারা সঠিক তথ্য না জানায় অনেক সময়েই বেশি ভাড়া দিয়ে টিকেট কেটে ফেলেন। আজকের পোস্ট থেকে জেনে নিতে পারবেন তুলনামূলক কম খরচে বিমান টিকেট কেনার কিছু কৌশল। এখানে বেশ কিছু পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পারবেন যার মাধ্যমে আপনি সবথেকে কম মূল্যে প্লেনের টিকেট বুকিং করতে পারবেন।
কার্যদিবসে ভ্রমণ
বিমানে ভ্রমণের ক্ষেত্রে বন্ধের দিনগুলো এড়িয়ে কার্যদিবসগুলোতে ভ্রমণ করা গেলে টিকেট কম মূল্যে পাওয়া সম্ভব। বন্ধের দিনগুলোতে বিমান টিকেটের আলাদা একটি চাহিদা থাকে। ফলে টিকেটের দাম বেড়ে যায়। দেশের মধ্যে ভ্রমণের ক্ষেত্রে শুক্র ও শনিবার এবং বিদেশে ভ্রমণের ক্ষেত্রে শুক্র, শনিবার ছাড়াও রবিবার এড়িয়ে চলতে পারেন। মূলত এই দিনগুলো অফিস ছুটির দিন হওয়ায় এসব দিনে বিমান ভ্রমণের পরিমাণ বেড়ে যায়। সাধারণত মঙ্গলবার এবং বুধবারের বিমান টিকেট সবথেকে কমে পাওয়া যায় কেননা এই দিনগুলোতে সারা বিশ্বেই ভ্রমণের পরিমাণ কমে যায়।
এয়ারলাইন্স বা বিমান সংস্থার ওয়েবসাইটে নিয়মিত নজর রাখা
আপনি যে এয়ারলাইন্স বা বিমান সংস্থায় ভ্রমণ করতে চান তাদের অফিসিয়াম ওয়েবসাইটের দিকে নিয়মিত নজর রাখুন। কেননা তাদের ওয়েবসাইটে অনেক সময় বিশেষ ছাড় বা ডিস্কাউন্ট পাওয়া যেতে পারে। তাছাড়া থার্ড পার্টি ওয়েবসাইট থেকে এয়ারলাইন্স ওয়েবসাইটগুলো তাদের সবথেকে সাশ্রয়ী ফ্লাইটের সন্ধান দিতে পারে। কাজেই ওয়েবসাইটে লক্ষ্য রেখে আপনি সবথেকে কম দামে টিকেট বুক করে ফেলার সুযোগ পেতে পারেন।
সকালবেলার বিমানের টিকেট বুক করা
দিনের ব্যস্ততম সময়গুলোর থেকে একদম সকালের দিকে যাত্রা করা বিমানের টিকেটের মূল্য তুলনামূলক কম হয়ে থাকে। কাজেই সকাল ৬ টা বা তার আগের বিমানের টিকিট দেখতে পারেন সাশ্রয়ী মূল্যে ভ্রমণের জন্য। এরপরের সময়ে টিকেটের চাহিদা বেড়ে যায় বলে টিকেটের মূল্যও বেশি হয়ে থাকে। তবে এক্ষেত্রে এয়ারপোর্টে সহজে পৌঁছানোর ব্যাপারটি মাথায় রাখতে হবে। কেননা খুব সকালে এয়ারপোর্টে পৌঁছানোর জন্য গাড়ি পাওয়া কঠিন হয়ে যেতে পারে।
থার্ড পার্টি বুকিং ওয়েবসাইটেও দৃষ্টি রাখা
থার্ড পার্টি বিভিন্ন বুকিং ওয়েবসাইটেও চোখ রাখতে পারেন। কেননা এই ওয়েবসাইটগুলো সকল এয়ারলাইন্সের ওয়েবসাইট হতে সেরা ডিল আপনার সামনে নিয়ে আসতে চেষ্টা করে। এছাড়া তাদের নিজস্ব ডিস্কাউন্ট বা অফারও পাওয়া যেতে পারে। থার্ড পার্টি ওয়েবসাইটের মধ্যে আপনি গোজায়ান, ফ্লাইট এক্সপার্ট, ট্রিপ.কম ইত্যাদি দেখতে পারেন।
আগে আগে টিকেট বুকিং
কোন ফ্লাইট বুকিং করতে চাইলে সেটি যত আগে সম্ভব বুকিং করে ফেলুন। কেননা ফ্লাইট যত আগে বুক করবেন তত কমে টিকেট কিনতে পারবেন। ফ্লাইট বুকিং কতো আগে করা যাবে এটা সাধারণত এয়ারলাইন্সের উপর নির্ভর করে থাকে। কাজেই আপনার কাঙ্ক্ষিত এয়ারলাইন্সের বুকিংয়ের তথ্য আগেভাগেই জেনে নিন। এরপর সবার আগে টিকেট বুক করে ফেলতে চেষ্টা করুন। যত সময় পার হবে টিকেটের মূল্য বাড়তে থাকে।
তবে ফ্লাইটের সময় এসে গেলে এবং চাহিদা কম থাকলে তা আবার কমতেও পারে। তবে সেটি সবসময় হবে এমন নয়। কাজেই সবথেকে কম মূল্যে টিকেট নিশ্চিত করতে চাইলে সবার আগে টিকেট বুক করে ফেলাই বুদ্ধিমানের কাজ। যদি যাত্রার সময় বা দিনের ব্যাপারে আগে থেকে নিশ্চিত না হওয়া সম্ভব হয় তবে যাত্রার ঠিক আগে আগে টিকেটের মূল্য কমার জন্য অপেক্ষা করতে পারেন। টিকেটের খুব বেশি চাহিদা না থাকলে এবং আসন খালি থাকলে টিকেট কম মূল্যে কেনার সুযোগ দেয়া হয়। কাজেই সম্ভব হলে আগেই টিকেট কিনে ফেলুন কিংবা যাত্রার আগে পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। তবে অনেক ক্ষেত্রেই যাত্রার আগে আগে টিকেটের দাম বেড়ে যায়। এমনকি টিকেট না-ও পেতে পারেন।
ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে টিকেট বুকিং
অনেক ক্রেডিট কার্ড কোম্পানি ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে টিকেট কেনার ক্ষেত্রে বাড়তি বিভিন্ন সুবিধা দিয়ে থাকে। ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে টিকেট কেনার জন্য ছাড় থেকে শুরু করে এয়ার মাইল উপহার পাওয়া যেতে পারে। তাছাড়া ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে টিকেট বুক করলে ভালো রিফান্ড পলিসি পাওয়া যায় অনেক এয়ারলাইন্সে। কাজেই ক্রেডিট কার্ড থাকলে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে টিকেট বুক করাই উত্তম।
কানেক্টিং ফ্লাইট টিকেট খোঁজা
অনেক সময় কোন গন্তব্যের জন্য ডিরেক্ট বা সরাসরি ফ্লাইটগুলোর খরচ বেশি হয়ে থাকে। এসব ক্ষেত্রে আপনার গন্তব্যের জন্য কানেক্টিং ফ্লাইট খুঁজতে পারেন। কানেক্টিং ফ্লাইট বলতে আপনাকে মাঝে কোন এয়ারপোর্টে থেমে কিছুক্ষন অপেক্ষা করে বিমান পরিবর্তন করতে হবে। কানেক্টিং ফ্লাইটে অনেক সময় সময় বেশি লাগলেও টিকেটের মূল্য অনেকটাই কমে আসতে পারে। কাজেই যখন আপনি কোন গন্তব্যের জন্য ফ্লাইট সার্চ করবেন তখন ফিল্টারে ‘ডিরেক্ট ফ্লাইটস অনলি’ অপশন থেকে টিক উঠিয়ে দেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। যদি বেশি সময়ের ফ্লাইটে আপনার অসুবিধা না থাকে তবে কানেক্টিং ফ্লাইট সাশ্রয়ের সেরা উপায় হতে পারে।
এছাড়া বড় বড় এয়ারপোর্ট এবং জনপ্রিয় গন্তব্যের ফ্লাইটগুলোর খরচ সবসময় বেশি। যদি কম জনপ্রিয় কোন এয়ারপোর্ট আপনার গন্তব্যের কাছাকাছি হয়ে থাকে তবে সেই এয়ারপোর্টের জন্য ফ্লাইট বুক করলে অনেক সময় টাকা সাশ্রয় হতে পারে। কাজেই ফ্লাইট খুঁজবার সময় এসব দিকে বাড়তি নজর দিতে পারেন। তবে মনে রাখবেন, কানেক্টিং ফ্লাইটের ক্ষেত্রে যে দেশে মাঝপথে অবতরন করবেন সেখানে আবার বাড়তি ভিসা দরকার হবে কিনা তা জেনে নেওয়া জরুরী।
ইনকগনিটো মোডে ফ্লাইট সার্চ করা
আপনি যখন বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের ওয়েবসাইটে ফ্লাইট সার্চ করেন তখন ওয়েবসাইটগুলো আপনার সার্চ ডাটা সংগ্রহ করতে থাকে। ফলে যখন ওয়েবসাইট বুঝতে পারে যে আপনি নির্দিষ্ট গন্তব্যের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়ে ফ্লাইট বুক করতে চাচ্ছেন তখন অনেক সময় সেই ফ্লাইটের টিকেট মূল্য বাড়িয়ে দেখানো হয়। কাজেই ফ্লাইট সার্চের সময় ইনকগনিটো মোডে থেকে সার্চ করা উচিত। এতে করে আপনার সার্চ ডাটা ওয়েবসাইট সংগ্রহ করতে পারে না এবং এর ফলে টিকেটের মূল্য বাড়িয়ে দেখানোর সুযোগও থাকে না। ফলে টিকেট সার্চ করবার ক্ষেত্রে সবসময় ইনকগনিটো মোডে থাকুন। পরে কেনার সময় আপনার স্বাভাবিক ব্রাউজার ব্যবহার করতে পারেন।
প্যাকেজের মাধ্যমে ভ্রমণ করা
বিভিন্ন ট্র্যাভেল এজেন্সিগুলো ভ্রমণের ক্ষেত্রে প্যাকেজ দিয়ে থাকে নির্দিষ্ট মূল্যে। এসব প্যাকেজে বিমান ভাড়াসহ ভ্রমণের সকল খরচই অন্তর্ভুক্ত থাকে। ফলে জনপ্রিয় কোন স্থানে ভ্রমণের ক্ষেত্রে এসব প্যাকেজ আপনার বিমান টিকের বুকিং খরচ অনেকটাই কমিয়ে দেয়। কাজেই এসব প্যাকেজের দিকে বাড়তি লক্ষ্য রাখতে পারেন।
লুকানো চার্জ সম্পর্কে খেয়াল রাখা
অনেক সময় কম দামী বিভিন্ন ফ্লাইটে টিকেট বুকিংয়ে লুকানো চার্জ থাকতে পারে। কাজেই টিকেট বুকিংয়ের প্রতিটি ধাপে বাড়তি চার্জের ব্যাপারে নজর রাখুন। এসব চার্জের মধ্যে এয়ার ট্যাক্স, ব্যাগেজ ফি, সিট সিলেকশন, ট্রাভেল ইনস্যুরেন্স চার্জ ইত্যাদি দিকে খেয়াল রাখুন। যত কম ব্যাগেজ নিয়ে ভ্রমণ করবেন ততই সেটা আপনার জন্য ভালো।
উপরের ব্যাপারগুলো সম্পর্কে বাড়তি নজর রাখলে টিকেট বুকিংয়ের সময় আপনি সবথেকে কম মূল্যে বুকিং করতে পারবেন। কাজেই বিমান ভ্রমণে সাশ্রয় করতে চাইলে এসব ব্যাপারে বাড়তি নজর রাখা খুবই জরুরি।
0 responses on "কম দামে বিমানের টিকিট কেনার কৌশল | সস্তায় প্লেনের টিকেট কাটুন এভাবে"