
কম্পিউটার কী?
কম্পিউটার হলো একটি বৈদ্যুতিন যন্ত্র, যা তথ্য প্রক্রিয়াকরণ, সঞ্চয়, এবং বিশ্লেষণের জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি বিভিন্ন ইনপুট গ্রহণ করে, সেই তথ্য প্রক্রিয়া করে এবং আউটপুট দেয়। কম্পিউটার মেশিন বিভিন্ন কাজ করতে পারে, যেমন গণনা, তথ্য সংগ্রহ, ইন্টারনেট ব্রাউজিং, গেম খেলা, গ্রাফিক ডিজাইন, লেখালেখি ইত্যাদি।
কম্পিউটারের মূল উপাদানসমূহ:
- হার্ডওয়্যার: এটি কম্পিউটারের শারীরিক অংশ, যেমন প্রক্রিয়াকরণ ইউনিট (CPU), মনিটর, কীবোর্ড, মাউস, হার্ড ডিস্ক ইত্যাদি।
- সফটওয়্যার: এটি কম্পিউটার পরিচালনার জন্য প্রোগ্রাম বা অ্যাপ্লিকেশন, যেমন অপারেটিং সিস্টেম (উইন্ডোজ, ম্যাক, লিনাক্স) বা অন্যান্য অ্যাপ্লিকেশন (মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, এক্সেল)।
কম্পিউটারের ইতিহাস:
কম্পিউটারের ইতিহাস অনেক পুরনো এবং এটি কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে অগ্রসর হয়েছে। এর কিছু মূল পদক্ষেপ নিচে উল্লেখ করা হলো:
1. আর্কাইভিক যুগ (আদি প্রাচীন যুগ):
- কম্পিউটারের ধারণা বহু পুরনো। প্রাচীন যুগে গণনার জন্য অ্যাবাকাস বা নিউমেরিক্যাল টেবিল ব্যবহৃত হতো। এটি একটি হাতে ব্যবহারযোগ্য গণনা সরঞ্জাম।
2. চার্লস ব্যাবেজ এবং “অ্যানালিটিকাল ইঞ্জিন” (১৮৩০-এর দশক):
- চার্লস ব্যাবেজ নামে একজন ব্রিটিশ গণিতবিদ কম্পিউটারের মূল ধারণা প্রবর্তন করেন। তিনি একটি যন্ত্র তৈরি করার পরিকল্পনা করেন, যাকে অ্যানালিটিকাল ইঞ্জিন বলা হয়, যা জটিল গণনা করতে সক্ষম।
- এটি ছিল আধুনিক কম্পিউটারের প্রথম রূপরেখা, কিন্তু এটি সম্পূর্ণভাবে তৈরি হয়নি।
3. প্রথম ও দ্বিতীয় জেনারেশনের কম্পিউটার (১৯৪০-১৯৬০):
- প্রথম কম্পিউটারটি তৈরি হয় ১৯৪০-এর দশকে, এটি ছিল ENIAC (Electronic Numerical Integrator and Computer)। এটি বড় আকারের, বৈদ্যুতিন যন্ত্র ছিল এবং মূলত গণনা করতে ব্যবহৃত হত।
- UNIVAC ছিল প্রথম বাণিজ্যিক কম্পিউটার, যা ১৯৫১ সালে উৎপাদিত হয়।
৪. তৃতীয় জেনারেশনের কম্পিউটার (১৯৬০-১৯৭০):
- এই সময়ে ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট (IC) প্রযুক্তির উন্নতি হয়, যার ফলে কম্পিউটার ছোট, দ্রুত এবং শক্তিশালী হতে শুরু করে।
- কম্পিউটারগুলি আরও বেশী ব্যবহারিক হয়ে ওঠে এবং একাধিক ব্যবহারকারীর জন্য ডিজাইন করা হয়।
৫. চতুর্থ জেনারেশনের কম্পিউটার (১৯৭০-বর্তমান):
- মাইক্রোপ্রসেসর প্রযুক্তির উদ্ভাবন ঘটে, যা কম্পিউটারের আকার আরও ছোট এবং কার্যক্ষম করে তোলে। এই যুগে পার্সোনাল কম্পিউটার (PC)-এর প্রচলন শুরু হয়।
- আইবিএম-এর পার্সোনাল কম্পিউটার (১৯৮১) এবং এপল এর ম্যাকিনটোশ কম্পিউটার ১৯৮০-এর দশকে বাজারে আসে।
- এটি কম্পিউটার প্রযুক্তির বৃহত্তম বিপ্লবের সময় ছিল।
৬. পঞ্চম জেনারেশন (বর্তমান সময়):
- কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এবং নির্ভুল গাণিতিক মডেল নিয়ে গবেষণার মাধ্যমে আধুনিক কম্পিউটারের উন্নতি হচ্ছে।
- ক্লাউড কম্পিউটিং, ন্যানোটেকনোলজি, এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI)-এর ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে।
- এর পাশাপাশি, কোয়ান্টাম কম্পিউটার নিয়ে গবেষণা চলছে, যা ভবিষ্যতের কম্পিউটার প্রযুক্তির একটি বড় ধাপ হতে পারে।
কম্পিউটারের বিবর্তন:
কম্পিউটার প্রযুক্তি ক্রমাগত পরিবর্তিত হয়েছে এবং এটি এখন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ। প্রথমে যেসব কম্পিউটার ছিল বড় আকারের, সেটি আজকে সেগুলো আরও শক্তিশালী এবং বহনযোগ্য হয়ে উঠেছে। আজকের স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট ইত্যাদি সবই আধুনিক কম্পিউটার প্রযুক্তির উদাহরণ।
0 responses on "কম্পিউটার কি ? কম্পিউটারের ইতিহাস ? (what is computer ? history of computer in Bengali)"