মাইক্রোসফট উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম বা সংক্ষেপে উইন্ডোজ ওএস টেক দুনিয়ায় খুব পরিচিত একটি নাম। বর্তমানে সারা বিশ্বের অধিকাংশ ব্যক্তিগত কম্পিউটারে ব্যবহার করা হচ্ছে উইন্ডোজ। উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম পুরো কম্পিউটার জগতেই পরিবর্তন এনেছে ব্যাপকভাবে। বর্তমান আধুনিক কম্পিউটারের উন্নতিতে উইন্ডোজ একটি বড় ভূমিকা রেখেছে। অনেক ইতিহাসের সাক্ষী এই অপারেটিং সিস্টেম সম্পর্কে তাই বিস্তারিত জেনে নেয়া উচিত সকল প্রযুক্তিপ্রেমীদের। উইন্ডোজ আসলে কী এবং এটি কী কাজে লাগে সে ব্যাপারে অনেক নতুন প্রযুক্তিপ্রেমীরাই সঠিকভাবে জানেন না। আজকের এই পোস্টের মাধ্যমে আমরা উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম নিয়ে বিস্তারিত জানবো।
উইন্ডোজ কী এটি বুঝতে হলে আমাদের প্রথমে কম্পিউটার কি সে ব্যাপারে জানতে হবে। কম্পিউটারের আত্মা হচ্ছে অপারেটিং সিস্টেম। অপারেটিং সিস্টেম সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখলেই কেবল উইন্ডোজের গুরুত্ব বোঝা যাবে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে। উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম নামের এই অপারেটিং সিস্টেম প্রায় ৩৭ বছর ধরে সেবা দিয়ে যাচ্ছে কোটি কোটি গ্রাহকদের। আমাদের দেশে কম্পিউটার চালাতে শিখলে বর্তমানে সবাই প্রথমে উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম চালানো শেখে। কেননা প্রায় সবখানেই উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম দ্বারাই কম্পিউটার চালানো হয়। কাজেই উইন্ডোজকে বলা যায় আমাদের কম্পিউটার শেখার প্রথম ধাপ। তো চলুন জেনে নেই উইন্ডোজ কী।
উইন্ডোজ কি? উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম বিস্তারিত
আগেই বলা হয়েছে যে উইন্ডোজ হচ্ছে একটি অপারেটিং সিস্টেম। অপারেটিং সিস্টেম যে কোনো কম্পিউটার ডিভাইসের আত্মা। কম্পিউটার মূলত দুটি ভাগে বিভক্ত। হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার। আমরা বাইরে থেকে একটি কম্পিউটারের যেসব যন্ত্রাংশ দেখি সেগুলোই হচ্ছে হার্ডওয়্যার। আর সফটওয়্যার এই যন্ত্রাংশকে জীবন দেয়।
যন্ত্র মানুষের স্বাভাবিক ভাষাকে বুঝতে পারে না। আর তাই যন্ত্রের রয়েছে আলাদা ভাষা। সেই ভাষা দিয়েই কথা বলা যায় কম্পিউটারের সাথে। কিন্তু প্রোগ্রামার ব্যতীত সাধারণ ব্যবহারকারীর পক্ষে এই ভাষা শেখা অনেক জটিল ব্যাপার। আর তাই এমন একটি প্রোগ্রামেবল অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করা হয় যাতে সহজেই মানুষ কম্পিউটারকে কমান্ড বা ইনস্ট্রাকশন দিতে পারে। কম্পিউটারে নির্দেশনা দেয়া সহজ করে দিতেই আছে কম্পিউটার অপারেটিং সিস্টেম। গ্রাহকদের জন্য তৈরি অপারেটিং সিস্টেমের ক্ষেত্রে উইন্ডোজ অন্যতম পুরনো একটি অপারেটিং সিস্টেম।
উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করে মাইক্রোসফট নামের একটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান। সর্বপ্রথম ১৯৮৫ সালে মাইক্রোসফট গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেসসহ উইন্ডোজ নিয়ে আসে। স্ট্যাটকাউন্টারের মতে বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় ৭৫ ভাগ পিসিতেই এই অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করা হয়। এটি একটি ক্লোজড সোর্স অপারেটিং সিস্টেম যা মাইক্রোসফটের তৈরি। এই অপারেটিং সিস্টেমের অসংখ্য ভার্সন বাজারে এসেছে। সর্বশেষ ২০২২ সালে মাইক্রোসফট বাজারে আনে উইন্ডোজ ১১ নামে তাদের লেটেস্ট অপারেটিং সিস্টেম।
উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের এতো জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ নতুন ব্যবহারকারীরা সহজেই এই অপারেটিং সিস্টেমে অভ্যস্ত হতে পারেন। গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেস বা জিইউআই এর মাধ্যমে উইন্ডোজ থেকে সহজেই কম্পিউটারে বিভিন্ন কাজ করে ফেলা যায়। মাইক্রোসফট যুগের সাথে তাল মিলিয়ে উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমকে আরও উন্নত করছে।
উইন্ডোজ ছাড়াও বর্তমানে আরও বেশ কিছু ওপেন ও ক্লোজড সোর্স অপারেটিং সিস্টেম রয়েছে। অ্যাপলের ম্যাকওএস অন্যতম জনপ্রিয় একটি ক্লোজড সোর্স অপারেটিং সিস্টেম যা শুধু অ্যাপলের তৈরি কম্পিউটার যেমন ম্যাকবুক, আইম্যাক প্রভৃতিতে ব্যবহার করা যায়। অপরদিকে লনাক্স বেজড অপারেটিং সিস্টেম ওপেন সোর্স অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে অনেক জনপ্রিয়। তবে উইন্ডোজের মতো সহজে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে অন্যান্য অপারেটিং সিস্টেম কিছুটা হলেও পিছিয়ে আছে। যদিও অনেক দিক থেকে ম্যাকওএস সহজে কাজ করে। লিনাক্স ভিত্তিক ওএসগুলো সাধারণত অ্যাডভান্সড ইউজাররা ব্যবহার করেন। এছাড়া সফটওয়্যার ও অ্যাপের সহজলভ্যতাও উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের জনপ্রিয়তার অন্যতম একটি কারণ।
উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম ক্লোজড সোর্স বলে এটি ফ্রি কোনো অপারেটিং সিস্টেম নয়। উইন্ডোজ ব্যবহার করতে হলে লাইসেন্স ক্রয় করতে হয়। তবে আজকাল নতুন বিভিন্ন ল্যাপটপের সাথে ফ্রিতেই কোম্পানিগুলো এই অপারেটিং সিস্টেম দিয়ে থাকে। উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম প্রায় সকল ধরণের পিসিতেই ইনস্টল করা যায়। ফলে এটি সবার প্রথম পছন্দের অপারেটিং সিস্টেম হয়ে উঠেছে।
উইন্ডোজ ওএস কেন গুরুত্বপূর্ণ?
উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের গুরুত্ব ব্যাপক। কেননা এটি বর্তমানে বিশ্বের অধিকাংশ ব্যক্তিগত কম্পিউটারের প্রধান অপারেটিং সিস্টেম। এর কারণ এটি সহজেই যে কোনো পিসিতে ইনস্টল করে ফেলা সম্ভব। বর্তমান যুগে এসে কম্পিউটার পরিচালনায় দক্ষ হয়ে ওঠা সকলের জন্যই প্রয়োজনীয়। শিক্ষা কিংবা পেশা সবক্ষেত্রেই কম্পিউটার অবিচ্ছেদ্য হয়ে উঠেছে। আর বেশিরভাগ স্কুল, কলেজ কিংবা প্রতিষ্ঠানে ব্যক্তিগত কম্পিউটারে অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে রয়েছে উইন্ডোজ। ফলে বর্তমানে কম্পিউটার চালনায় দক্ষ হয়ে ওঠা উইন্ডোজ চালনায় দক্ষ হয়ে ওঠারই সমার্থক।
অর্থাৎ কম্পিউটার দক্ষতা অর্জন করতে হলে উইন্ডোজ চালনায় দক্ষতার কোনো বিকল্প নেই। উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম দীর্ঘদিন ধরে তাদের নিজস্ব একটি জিইউআই তৈরি করেছে। আপনি উইন্ডোজের যে ভার্সনেই থাকুন না কেন এই ইন্টারফেস আপনি সহজে চিনে নিতে পারবেন। ফলে একবার উইন্ডোজ ইন্টারফেস ও এ সম্পর্কে দক্ষ হয়ে উঠলে আপনি সহজেই পৃথিবীর বেশিরভাগ কম্পিউটার চালানোর ক্ষেত্রে দক্ষ হয়ে উঠবেন। ফলে উইন্ডোজ সকলের জন্যই এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
কম্পিউটার বা পিসির জন্য বিভিন্ন বিশেষ সফটওয়্যার ও অ্যাপ রয়েছে যা ডেভলপাররা নির্দিষ্ট কাজের জন্য তৈরি করে থাকেন। যে কোনো সফটওয়্যার বা অ্যাপ ডিজাইনের ক্ষেত্রে আগে প্রাধান্য দেয়া হয়ে থাকে উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমকে। ফলে উইন্ডোজের জন্য বিভিন্ন কাজের অ্যাপ সহজেই পাওয়া যায়। ফলে উইন্ডোজ থাকলে আপনাকে বিশেষ কোনো কাজ নিয়ে আলাদা করে চিন্তা করতে হবে না। ব্যক্তিগত কাজগুলো করবার ক্ষেত্রে উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমই সেরা। এছাড়া অফিসিয়াল সকল কাজেও উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম চমৎকার কাজ করে। অফিসিয়াল বিভিন্ন ডকুমেন্ট ও প্রেজেন্টেশন তৈরিতে মাইক্রোসফটের বিশেষ সফটওয়্যার উইন্ডোজ অফিস সারা বিশ্বেই প্রচলিত। উইন্ডোজ মাইক্রোসফটের তৈরি বলে উইন্ডোজ অফিস এই অপারেটিং সিস্টেমেই সবথেকে ভালো কাজ করে। ফলে অফিসিয়াল কাজেও আজকাল উইন্ডোজের জয়জয়কার।
বড় বড় সার্ভার ও অন্যান্য বিভিন্ন টেকনিক্যাল ক্ষেত্রে লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম বেশ জনপ্রিয় হলেও ব্যক্তিগত ও ছোটখাটো অফিসিয়াল কাজের ক্ষেত্রে উইন্ডোজই বেশ জনপ্রিয় অপারেটিং সিস্টেম। ব্যক্তিগত কাজে অনেকের কাছে ম্যাকওএস খুবই জনপ্রিয় হলেও ম্যাক ওএস শুধুমাত্র অ্যাপলের তৈরি কম্পিউটারে ব্যবহার করা যায় যা অনেক ব্যয়বহুল। ফলে অধিকাংশ গ্রাহকের কাছে উইন্ডোজই একমাত্র কার্যকর অপারেটিং সিস্টেম।
উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের অন্যতম বড় সুবিধা এর প্লাগ অ্যান্ড প্লে ফিচার। প্রচলিত হার্ডওয়্যার প্রতিষ্ঠানগুলো উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের কথা মাথায় রেখেই মূলত তাদের হার্ডওয়্যার ডিজাইন করে থাকে। ফলে উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের সাথে যে কোনো পেরিফেরাল খুব ভালো কাজ করে। এজন্য আপনাকে বাড়তি করে কোনো ড্রাইভার ইনস্টল করতে হয় না। উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের সাথে এসব ড্রাইভার আগে থেকেই ইনস্টল করা থাকে বেশিরভাগ সময়ে।
গেমারদের জন্যও উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের বিকল্প নেই। পিসি গেমস খেলতে চাইলে উইন্ডোজ আপনাকে সবথেকে বেশি সুবিধা দিতে পারে। বিভিন্ন গেমস উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের জন্য সবার আগে প্রকাশিত হয়। এছাড়া গেমগুলো উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমে যাতে ভালোভাবে কাজ করে সেজন্য অপটিমাইজড থাকে।
পিসির বিভিন্ন ধরণের সমস্যায় উইন্ডোজের জন্য সহজেই সমাধান পাওয়া যায়। কেননা উইন্ডোজের কমিউনিটি সবথেকে বড়। এছাড়া যে কোনো বাগ খুব দ্রুত ফিক্স করে ফেলতে পারে মাইক্রোসফট। ফলে স্ট্যাবল ও স্মুথ অভিজ্ঞতা দেয় উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম।
অর্থাৎ সাধারণ কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের জন্য উইন্ডোজের বিকল্প এখনও তৈরি হয় নি। আর একারণেই উইন্ডোজ সারা বিশ্বের কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের কাছে এতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আধুনিক যুগে এসে উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের বিকল্প উইন্ডোজ নিজেই। তাই উইন্ডোজ সম্পর্কে জানা এবং এটি ব্যবহারে দক্ষ হয়ে ওঠা সকলের জন্যই দরকারী। উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করতে হলে আপনার দরকার হবে আধুনিক যে কোনো ডেস্কটপ বা ল্যাপটপ কম্পিউটার। আসুস, তোশিবা, স্যামসাং, এইচপি ইত্যাদি অসংখ্য ব্র্যান্ডের উইন্ডোজ ল্যাপটপ পাওয়া যায় বাজারে।
0 responses on "উইন্ডোজ কী? এর সুবিধা এবং গুরুত্ব জানুন"