আমরা সকলেই চাই যে আমাদের কম্পিউটার সবসময় ঠিকঠাকভাবে কাজ করুক। কিন্তু প্রযুক্তির ব্যাপারটি আসলে কখনই এমন নয়। আপনার পিসি যে সবসময় একদম আপনি ঠিক যেমন চাইবেন তেমনভাবে কাজ করবে তা নয়। হঠাৎ করে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখিন হবেন আপনি। আর এজন্যই মাইক্রোসফট তাদের উইন্ডোজ ব্যবহারকারীদের জন্য বিভিন্ন টুলসের ব্যবস্থা রেখেছে কম্পিউটারের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতে এবং যত্ন নিতে।
আজকে এই পোস্টে আমরা এমন আটটি উইন্ডোজ টুল নিয়ে কথা বলবো যেগুলো পিসির বিভিন্ন সমস্যায় কাজে লাগতে পারে। আবার কিছু টুল আছে যা আপনার এখনই পিসির যত্নে ব্যবহার শুরু করা প্রয়োজন। তাই জেনে নিন এসব ফিচারের ব্যাপারে।
১। ট্রাবলশুটিং
আপনার পিসির কোন কম্পোনেন্ট বা অন্য কোন কিছু (যেমনঃ প্রিন্টার, ইন্টারনেট, ইউএসবি ড্রাইভ ইত্যাদি) যদি ঠিকঠাক কাজ না করে তবে ট্রাবলশুটিং প্রথম টুল যা আপনার এই সমস্যা সমাধানে সাহায্য করতে পারে। আপনি পিসির এই টুল খুঁজে পাবেন কন্ট্রোল প্যানেল অথবা উইন্ডোজ সেটিংস থেকে।
কন্ট্রোল প্যানেলে প্রবেশ করে “troubleshooting” লিখে সার্চ করলে প্রথমেই এটি চলে আসবে “Troubleshoot computer problems” নামে। ট্রাবলশুটে বিভিন্ন সাধারণ সমস্যার জন্য আলাদা আলাদা সেকশন রয়েছে। আপনি যে বিষয়ে সমস্যা পাচ্ছেন সেই সেকশনে ক্লিক করে ট্রাবলশুট শুরু করে দিতে পারবেন। একা একাই এই টুল সমস্যা খুঁজে তা সমাধানের চেষ্টা করবে। আপনাকে ধাপে ধাপে নির্দেশনা দেবার মাধ্যমে এটি সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবে।
কী কী বিষয়ে আপনি ট্রাবলশুট করতে পারবেন সেটি নিয়ে বিস্তারিত জানতে আপনি উইন্ডোজ সেটিংসে যেতে পারেন। যেসব বিষয়ে আপনি ট্রাবলশুট করতে পারেন Update & Security > Troubleshoot > Additional troubleshooter -এই স্থান থেকে আপনি তার একটি বিস্তারিত তালিকা পেয়ে যাবেন। এখান থেকে যেকোনো বিষয়ে ট্রাবলশুট চালুও করতে পারবেন।
২। ডিস্ক ডিফ্রাগমেন্টার
আধুনিক হার্ড ডিস্কগুলোতে এই টুলের কার্যকরীতা অনেকাংশে কমে গেলেও এটা এখনও আপনার সিস্টেমকে কিছুটা দ্রুত করতে সাহায্য করতে পারে। ডিস্ক ডিফ্রাগমেন্টিংয়ের জন্য অনেক থার্ড পার্টি সফটওয়্যার থাকলেও মাইক্রোসফটের ডিফ্রাগমেন্টার ব্যাসিক কাজের জন্য যথেষ্ট।
সার্চবক্সের মাধ্যমে সার্চ করে সহজেই এই টুল বের করে ওপেন করে নিন। সব ড্রাইভের একটি তালিকা দেখতে পাবেন। এবার Analyze বা Optimize বাটনে ক্লিক করে সব কাজ করতে পারবেন। কোনটি ডিফ্রাগমেন্টের দরকার হলে এই টুল নিজেই আপনাকে জানাবে Analyze বাটনে ক্লিক করলে। এছাড়া আপনি চাইলে শিডিউল সেট করে দিতে পারেন ডিফ্রাগমেন্টিংয়ের জন্য যাতে পরবর্তীতে আপনাকে আর এ নিয়ে চিন্তা করতে না হয়।
৩। সিস্টেম রিস্টোর
এই টুলটি সবসময় অনেকটা আড়ালেই থেকে যায়। তবে এটি খুব কার্যকরী একটি টুল। কোন প্রোগ্রাম বা ড্রাইভার ইন্সটলে আপনার পুরো সিস্টেম যদি উলটপালট হয়ে যায় তবে এই টুল আবার পূর্বের অবস্থায় আপনাকে ফিরিয়ে নিতে পারে। এই টুলের মাধ্যমে আপনার পুরো সিস্টেম একটি নির্দিষ্ট সময়ে যে অবস্থায় ছিল সেটি সংরক্ষন করে রাখা যায় যাতে পরবর্তীতে কোন সমস্যায় পড়লে আপনি এই অবস্থায় আবার ফিরে আসতে পারেন।
উইন্ডোজ ১০ হতে এটা আপনাকে ম্যানুয়ালি এনাবল করে নিতে হবে। এছাড়া আরও একটি দরকারি ফিচার হচ্ছে সিস্টেম ইমেজ ব্যাকআপ ও রিস্টোর। আমাদের পোস্ট থেকে দেখে নিতে পারেন এই বিষয়ে বিস্তারিত। এছাড়া মাইক্রোসফটের নির্দেশনা অনুসরণ করে এটি করে নিতে পারেন সহজেই।
৪। ফাইল হিস্টোরি ব্যাকাপ
এটা পুরো ফিচারযুক্ত একটা এডভান্সড ব্যাকাপ টুল যা উইন্ডোজ ১০ থেকে মাইক্রোসফট দিচ্ছে। এটার মাধ্যমে আপনি যে কোন ফোল্ডার বা ড্রাইভ এক্সটারনাল কোন ড্রাইভে ব্যাকাপ করে রাখতে পারেন এবং কতক্ষন পরপর ব্যাকাপ করতে চান সেটিও সিলেক্ট করে দিতে পারেন।
উইন্ডোজে আপনি Start > Settings > Update & Security > Backup > Back up using File History এই স্থানে গিয়ে এই ব্যাকাপ চালু করতে পারেন। ডিফল্ট ফোল্ডারগুলো একাই ব্যাকাপ হবে, তাছাড়া আপনি ফোল্ডার ঠিক করেও দিতে পারবেন কোনটি ব্যাকাপ করবেন বা কোনটি করবেন না।
এছাড়া আপনি সময় নির্ধারণ করার অপশনও পাবেন। প্রথম ব্যাকাপ করতে কিছুটা সময় লাগবে, তবে পরবর্তীতে খুব দ্রুত হবে ব্যাকাপ। ব্যাকাপ হবার পরে যেকোন সময়ের ব্যাকাপে ফিরে যেতে পারবেন আপনি।
৫। উইন্ডোজ রিলায়েবিলিটি মনিটর
আপনি বুঝতে না পারলেও উইন্ডোজ সকল রকমের হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করছে নিয়মিত। এই পরিবর্তনগুলো সেভ হয়ে থাকে উইন্ডোজ রিলায়েবিলিটি মনিটরে। আপনি এই টুলের মাধ্যমে কয়েক মাস পরপর আপনার সিস্টেমকে চেক করে নিতে পারেন। এতে করে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার পিসি কেমন পারফর্ম করছে এবং কোন সমস্যা দেখা দিয়েছে কিনা।
কন্ট্রোল প্যানেলে গিয়ে Security and Maintenance লিখে সার্চ করার মাধ্যমে আপনি এই টুলটিতে প্রবেশ করতে পারবেন। এখানে Maintenance সেকশন হতে View reliability history তে প্রবেশ করে আপনার পুরো সিস্টেমের রিপোর্ট তৈরি করে নিতে পারবেন। একটি চার্ট দেখতে পাবেন যেটি নিজের ইচ্ছামতো কাস্টোমাইজ করে আপনি বিভিন্ন টেকনিক্যাল তথ্য দেখে নিতে পারবেন।
৬। উইন্ডোজ সিস্টেম ইমেজ
সিস্টেম ইমেজ আপনার উইন্ডোজের একটি কপি যেখানে আপনার সকল প্রোগ্রাম, ফাইল, সিস্টেম সেটিংস সবকিছু সংরক্ষিত থাকে। আপনি এই কপি একটি ডিভিডি বা এক্সটারনাল ড্রাইভে সংরক্ষন করে রাখতে পারেন এবং পরবর্তীতে আপনার পিসিতে বড় কোন সমস্যা হলে সবকিছু আবার ফিরে পেতে পারেন সহজেই।
প্রতিটি উইন্ডোজের ক্ষেত্রে এই ফিচারটি কিছুটা আলাদা। আমাদের এই বিষয়ে বিস্তারিত পোস্টটি দেখে নিতে পারেন।
৭। উইন্ডোজ মেমরি ডায়াগনস্টিকস টুল
আপনার পিসির মেমরিতে কোন সমস্যা দেখা গেলে এই টুলটি একাই কাজ করে। যদি আপনি মনে করেন আপনার মেমরি বা র্যামে কোন সমস্যা রয়েছে তবে টুলটি আপনি ম্যানুয়ালি চালু করতে পারেন।
এটি ওপেন করতে Win + R কী চেপে প্রথমে রানে প্রবেশ করুন এবং mdsched টাইপ করে এন্টার চাপুন। এরপর আপনি সিলেক্ট করতে পারবেন এই টুলটি এখনই চালু করতে চান কিনা বা পরবর্তী রিস্টার্টের সময় চালু করতে চান।
এই টুল কোন ধরণের সমস্যা খুঁজে পেলে আপনার ম্যানুফ্যাকচারারের সাথে যোগাযোগ করুন কেননা এটি একটি হার্ডওয়্যারের সমস্যা হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই সেটি পরিবর্তন করতে হতে পারে।
৮। রিসোর্স মনিটর
রিসোর্স মনিটর উইন্ডোজের টাস্ক ম্যানেজারের থেকেও বেশি তথ্য দেখাতে পারে। এই টুল অনেক বছর ধরে উইন্ডোজের সাথে আছে।
উইন্ডোজ সার্চবক্সে Resource monitor লিখে সার্চ দিলেই এই টুলটি পেয়ে যাবেন। এই টুলে আপনি রিয়েল টাইমে আপনার পিসির সকল রিসোর্স দেখে নিতে পারবেন। সিপিইউ, র্যাম, ডিস্ক, নেটওয়ার্ক ইত্যাদির গ্রাফ এখানে দেখতে পাবেন এবং সিস্টেম রিসোর্স কোন প্রোগ্রাম বেশি ব্যবহার করলে সেটিও সহজে বুঝতে পারবেন। ফলে সেই প্রোগ্রাম সহজে এখান থেকে ডিজাবল করে দিতে পারবেন।