ইমেইল বা ইলেকট্রনিক মেইল হচ্ছে দ্রুত বিভিন্ন চিঠি ডিজিটালভাবে ইন্টারনেটের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেয়ার মাধ্যম। ইমেইল ব্যবহার করে বর্তমানে অফিস-আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি সবখানেই দৈনন্দিন কাজগুলো চলছে। তাই ইমেইলের গুরুত্ব নিয়ে নতুন করে কিছু বলার থাকে না। বর্তমান প্রযুক্তির যুগে সকলেরই ইমেইল থাকা প্রয়োজন।
ইমেইল একাউন্ট খোলা খুবই সহজ। ইমেইল কীভাবে ব্যবহার করে তা অনেকের কাছেই কিছুটা জটিল মনে হতে পারে, বিশেষ করে যারা প্রযুক্তির সাথে নতুন পরিচিত হয়েছেন। এই পোস্টের মাধ্যমে আমরা ইমেইল কীভাবে দেখা যায় এবং ব্যবহার করা যায় সেটি নিয়েই জানবো।
ইমেইল কিভাবে তৈরি করবেন
ইমেইল পাঠানো বা পাওয়ার জন্য নিজের একটি ইমেইল ঠিকানা থাকতে হয়। ইমেইল ঠিকানাকে কিছুটা আপনার মোবাইল নাম্বারের সাথে তুলনা করা যায় যা প্রত্যেকের জন্য আলাদা। সাধারন চিঠি পাঠাতে যেমন আপনার বাসার ঠিকানা ব্যবহার করতে হয়, ইমেইলের জন্য সেভাবেই নিজের একটি ঠিকানা তৈরি করে নিতে হয়। এই ঠিকানা অনলাইনে আপনি খুব সহজেই ফ্রিতে তৈরি করে নিতে পারবেন। গুগল, মাইক্রোসফট, ইয়াহু ইত্যাদি বিভিন্ন বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানি ফ্রিতেই তাদের ইমেইল সেবা দিয়ে থাকে।
আজকে আমরা সবথেকে জনপ্রিয় ইমেইল গুগলের জিমেইলের মাধ্যমে ইমেইলের ব্যবহার জানবো। গুগলের জিমেইল সবথেকে সহজ ও জনপ্রিয় ফ্রি ইমেইল সেবা। জিমেইলের এই সেবা ব্যবহার করতে প্রথমেই এখানে আপনাকে একটি ফ্রি গুগল অ্যাকাউন্ট তৈরির মাধ্যমে ইমেইল ঠিকানা তৈরি করতে হবে।
এটা করতে আপনি www.gmail.com এই ওয়েবসাইটে যেতে পারেন। অথবা আপনার স্মার্টফোনে জিমেইল অ্যাপ ব্যবহার করেও এই কাজটি করতে পারেন। অ্যান্ড্রয়েডের জন্য এই অ্যাপ ইন্সটল করতে পারেন প্লেস্টোর হতে, আইফোনেও অ্যাপ স্টোরে এই অ্যাপ পেয়ে যাবেন। জিমেইল থেকে কীভাবে ইমেইল ঠিকানা তৈরি করবেন সেটি নিয়ে বিস্তারিত জানতে আমাদের এই গাইডটি দেখতে পারেন।
ইমেইল কীভাবে চেক করবেন?
জিমেইল থেকে ইমেইল ঠিকানা তৈরির পর আপনি একটি ইমেইল এড্রেস পাবেন যার শেষে @gmail.com থাকবে। এটিই আপনার ইমেইল ঠিকানা। কেউ যদি আপনাকে ইমেইল পাঠাতে চায় তাহলে এই ঠিকানাটি তাকে দিতে হবে। কেউ আপনাকে ইমেইল করলে সেটি এসে আপনার জিমেইল ইনবক্সে জমা হবে। আপনি লগইন করে এই ইনবক্স যে কোনো ডিভাইস হতে চেক করতে পারবেন।
কম্পিউটারে ইমেইল চেক করতে আপনাকে ব্রাউজার হতে www.gmail.com এ যেতে হবে। আর মোবাইলের জন্য জিমেইল অ্যাপ রয়েছে। মোবাইলে জিমেইল অ্যাপ ব্যবহারের নিয়ম নিয়ে আমাদের আলাদা একটি পোস্ট রয়েছে যেটা দেখলে অ্যাপ ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে আরও ভাল ধারণা পাবেন। মোবাইল এবং পিসি উভয়ের জন্যই ইমেইলের অপশনগুলো একই রকম। বাম পাশে একটি অংশ পাবেন যেখানে ইমেইলের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বিষয় পেয়ে যাবেন। এক এক করে প্রতিটি অংশের কাজগুলো এখানে আলোচনা করা যাক।
১. ইনবক্স: সকল পাঠানো ইমেইল জমা হয় ইনবক্সের মধ্যে। তবে জিমেইল ইমেইলগুলোকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভাগ করে ফেলে এআই এর সাহায্য নিয়ে। প্রাইমারি ইনবক্সে সাধারণ সকল ইমেইল জমা হয়। প্রমোশনস ইনবক্সে সেসব মেইল জমা হবে যা অ্যাড দিতে বা আপনাকে কোনো প্রোডাক্ট সম্পর্কে জানাতে পাঠানো হয়। সোশ্যাল ইনবক্সে সোশ্যাল মিডিয়া যেমন: ফেসবুক, টুইটার, লিংকডইন ইত্যাদি হতে পাঠানো ইমেইল জমা হয়।
আর আপডেট ইনবক্সে অনলাইনে আপনার বিভিন্ন অ্যাকাউন্টের আপডেট, পাসওয়ার্ড পরিবর্তন, লগইন আপডেট ইত্যাদি ইমেইল জমা হয়। ইমেইলের ধরণ অনুযায়ী তাই খুঁজে পাওয়া সহজ হয়ে যায়। তবে আপনি চাইলে ইনবক্স সেটিংস থেকে বাড়তি ক্যাটেগরি না রেখে একটি মাত্র লিস্টের মধ্যে সকল ইমেইল পেতে পারেন।
২. কম্পোজ: এই অপশন থেকে আপনি কাউকে ইমেইল পাঠাতে পারবেন। অর্থাৎ ইমেইল লেখার জন্য এই অপশনটি ব্যবহার করা হয়। ‘To’ অংশে আপনি যাকে ইমেইল পাঠাতে চান তার ইমেইল ঠিকানা দিতে হয় এবং ‘Subject’ অংশে ইমেইলের বিষয়টি সংক্ষেপে লিখতে হয়। সাবজেক্ট অনেকটা আর্টিকেল টাইটেলের মত। ‘Compose email’ এর জায়গায় ইমেইলের পুরো বিস্তারিত লিখতে হবে আপনাকে।
‘Attachment’ অপশন থেকে এই ইমেইলের সাথে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ফাইল সংযুক্ত করে দিতে পারেন। তবে জিমেইলে ইমেইলের মাধ্যমে ২৫ মেগাবাইট পর্যন্ত ফাইল সংযোগ করা যায়। এছাড়া আপনি গুগল ড্রাইভ বা ড্রপবক্সে ফাইল আপলোড করে সেই লিংক শেয়ার করতে পারবেন। এরপর ‘Send’ অপশনের মাধ্যমে ইমেইল পাঠিয়ে দেয়া যায়।
৩. স্টারড: এখানে আপনি সেসব ইমেইল খুঁজে পাবেন যা আপনি নিজেই পছন্দ করে রেখেছেন। অর্থাৎ একটি ইমেইল দরকারী হলে পরে সহজে খুঁজে পাবার জন্য তাকে স্টার চিন্হ দিয়ে রাখতে পারেন। সেই ইমেইলগুলো এখানে জমা থাকবে।
৪. ইম্পর্ট্যান্ট: কোন কোন ঠিকানা থেকে আসা ইমেইল আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সেটা জিমেইল নিজেই এআই-এর সাহায্য নিয়ে বুঝতে পারে। এছাড়া আপনি নিজেও সেটি সিলেক্ট করে দিতে পারেন। সেসব ইমেইল এখানে এসে জমা হবে। তাই গুরুত্বপূর্ণ ইমেইলগুলো সহজেই খুঁজে পেতে পারবেন এখান থেকে।
৫. স্নুজড: কিছু ঠিকানা থেকে আসা ইমেইল বিরক্তিকর হয়ে উঠতে পারে। তখন জিমেইল এই ফিচার ব্যবহার করে কিছু সময়ের জন্য সেই ইমেইলগুলো এখানে পাঠিয়ে দিতে পারেন। এতে যখন ইচ্ছা এই বিরক্তিকর ইমেইল দেখে নিতে পারেন এই স্থান থেকে।
৬. সেন্ট: এখানে আপনি যেসব ইমেইল পাঠিয়েছেন সেই ইমেইলগুলো দেখতে পাবেন। আপনার পাঠানো ইমেইলের সম্পূর্ণ তালিকা এখানেই জমা হয়।
৭. শিডিউলড: আপনি চাইলে একটি ইমেইল কখন যাবে সেটা সময় নির্ধারণ করে দিতে পারেন। এতে করে সেই সময়ে ইমেইলটি একাই সেন্ড হয়ে যাবে। সুবিধামতো সময়ে ইমেইল পাঠাতে আপনাকে অনলাইন হতে হবে এমন নয়। এই স্থান থেকে আপনি যদি কোনো ইমেইল সিডিউল করে থাকেন সেগুলো দেখতে পাবেন। চাইলে সিডিউল বাতিল বা ইমেইল পরিবর্তন করতে পারেন এখান থেকেই।
৮. আউটবক্স: আপনি কোনো ইমেইল পাঠিয়ে দিলেও অনেকসময় বিভিন্ন সমস্যার কারণে তা নাও যেতে পারে। সমস্যার সমাধান হলেই সেটি সাথে সাথে চলে যাবে। এরকম ইমেইলগুলো এই স্থানে জমা থাকবে। তবে সেন্ড হয়ে গেলেই তা সেন্টবক্সে চলে যাবে।
৯. ড্রাফটস: একটি ইমেইল লিখে ফেলে পরবর্তীতে আরো সংশোধন করার প্রয়োজন হতে পারে। ড্রাফট অংশে আপনি একটি ইমেইল পাঠানোর জন্য সম্পাদনা করে জমা রেখে দিতে পারেন। সেটি সম্পূর্ণভাবে এখানে জমা থাকবে এবং যখন ইচ্ছা তখন পুনরায় আপনি সম্পাদন, পরিমার্জন বা পরিবর্ধন করে পাঠিয়ে দিতে পারবেন।
১০. স্প্যাম: এটিকে অনেকে জাঙ্ক মেইলবক্স বলে থাকে। ইমেইল থাকলে সেখানে বিজ্ঞাপন মেইল ও অন্যান্য বিভিন্ন ধরণের অযাচিত ইমেইল আসতে পারে। এসব ইমেইলগুলো গুগল তাদের অ্যালগরিদম ব্যবহার করে একাই ধরে ফেলে এই স্থানে পাঠিয়ে দেয়। কোনো গুরুত্বপূর্ণ ইমেইল যদি ইনবক্সে খুঁজে না পান তবে স্প্যাম চেক করে দেখতে পারেন। অনেক সময় ভুল করে এখানে গুরত্বপূর্ণ ইমেইল চলে আসে। তবে আপনি অযাচিত ইমেইল হতে বেঁচে যাবেন অনেকাংশেই এই স্প্যাম ইনবক্সের জন্য।
১১. ট্র্যাশ: এই অংশে আপনি কোনো ইমেইল মুছে দিলে ৩০ দিন পর্যন্ত জমা থাকে। কোনো ইমেইল মুছে দেবার পরও প্রয়োজন হতে পারে। তাই ট্র্যাশ থেকে সেই ইমেইল উদ্ধার করা সম্ভব হয়। তবে ৩০ দিনের পুরনো মুছে দেয়া ইমেইল উদ্ধার করা যায় না।
এই বিভিন্ন অপশন আপনি জিমেইলের অ্যাপ বা ওয়েবসাইট সবখানেই পেয়ে যাবেন। এছাড়া বিভিন্ন থার্ড পার্টি ক্লায়েন্ট ব্যবহার করেও আপনি জিমেইল ব্যবহার করতে পারেন। যেমন মাইক্রোসফটের আউটলুক মেইল সফটওয়্যার দিয়েই জিমেইল ইনবক্স দেখে নিতে পারেন। এতেও আপনি স্বাভাবিকভাবে উপরের অপশনগুলো পাবেন। তবে ক্লায়েন্টভেদে সেটা কিছুটা আলাদা হতে পারে। একইভাবে সবখানেই ইমেইল চেক করে নিতে পারবেন সহজেই।
0 responses on "ইমেইল চেক করার উপায়"