স্মার্টফোন বাজারে আসার পর থেকে অনেক সীমাবদ্ধতাই কাটিয়ে উঠেছে অপারেটিং সিস্টেমগুলো। বর্তমানে বাজারে গুগলের অ্যান্ড্রয়েড চালিত স্মার্টফোন এবং অ্যাপলের আইওএস চালিত আইফোন ছাড়া আর কোন স্মার্টফোন দেখা যায় না। এই দুটি অপারেটিং সিস্টেমই একদম আধুনিক সব সুবিধা প্রদান করে এর ব্যবহারকারীদের। স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের দৈনন্দিন কাজগুলোকে সহজ করে ফেলতে এই দুই কোম্পানিই প্রতিনিয়ত তাদের সফটওয়্যারকে আপডেট করছে। কিন্তু ২০২৩ সালের শুরুতে এসেও আইফোনের আইওএসে বেশ কিছু অদ্ভুত সীমাবদ্ধতা আছে যা আপনাকে অবাক করে দেবে।
অ্যান্ড্রয়েডের মতো ব্যবহারকারীর আইওএসের উপর তেমনটা নিয়ন্ত্রন থাকে না। অ্যাপল তার স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের কী সুবিধা দেবে এবং কী সুবিধা দেবে না তা সম্পূর্ণ নিজেরাই নিয়ন্ত্রন করে। অ্যান্ড্রয়েডে আপনি চাইলেই বিভিন্ন উপায়ে বিভিন্ন সুবিধা পেতে পারেন নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী। এমনকি আপনার ডিভাইস রুট করার মাধ্যমে চাইলে অ্যান্ড্রয়েডের কোডকেও পরিবর্তন করে ফেলা সম্ভব। তবে আইওএসে এই সুবিধা পাবেন না।
বর্তমানে আইওএস ১৬ তম ভার্সনে আছে। তবুও বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা এখনও রয়ে গেছে এই জনপ্রিয় অপারেটিং সিস্টেমে। এই পোস্টে আমরা আইফোনে ২০২২-২০২৩ সালে এসেও যে কাজগুলো করতে পারবেন না বা যে সীমাবদ্ধতাগুলো পাবেন সেরকম ১০টি কাজ নিয়ে আলোচনা করবো।
১। কল হিস্টোরির সীমাবদ্ধতা
অদ্ভুত লাগলেও সত্যি আইফোনে আপনি ১০০ টির বেশি কল হিস্টোরি দেখতে পারবেন না। আপনি যদি একই দিনে ১০০ এর বেশি কল দেন বা রিসিভ করে থাকেন তবে আপনি গতদিনের হিস্টোরি দেখতে পাবেন না আইফোনে। তাছাড়া হোয়াটসঅ্যাপ বা মাইক্রোসফট টিমের মতো এপগুলোর কল হিস্টোরি এখানেই দেখা যায়। সুতরাং এসব অ্যাপ ব্যবহারকারীরা আরও বেশি সমস্যায় পড়ে যেতে পারেন। এই সময়ে এসে যখন ফোনের স্টোরেজ ১ টেরাবাইট পর্যন্ত চলে যাচ্ছে তখন আইফোনের এই সীমাবদ্ধতা বেশ অদ্ভুত মনে হবে আপনার কাছে। তবে এই সীমাবদ্ধতা কেন আইফোন এখনও ঠিক করছে না তার কোন ব্যাখ্যা নেই।
২। ভিডিও রেকর্ডিং পজ
আইফোনে আপনি ভিডিও রেকর্ড করবার সময় ভিডিও পজ করতে পারবেন না। আপনাকে ভিডিওটি রেকর্ড শেষ করতে হবে। অ্যান্ড্রয়েডে এই অপশনটি অনেক আগে থেকেই রয়েছে। কিন্তু আইফোনের ক্যামেরা অ্যাপে আপনাকে ভিডিও রেকর্ড শুরু করবার পরে যতক্ষণ দরকার এবং যেদিকে দরকার ভিডিও করতে পারবেন। তবে একবারেই আপনাকে এই ভিডিও রেকর্ড শেষ করতে হবে যেটা বিরক্তিকর একটি ব্যাপার। আইফোন ব্যবহারকারীরা এই সীমাবদ্ধতা নিয়ে অনেকদিন ধরেই অভিযোগ জানিয়ে আসছে।
৩। কল রেকর্ডিং
কল রেকর্ডিং সম্ভবত আইফোন ব্যবহারকারীদের সবথেকে অনুরোধ করা ফিচার। তবে প্রাইভেসি রক্ষার জন্য অ্যাপল এই ফিচার এখনও দেয় নি তাদের ফোনে। অ্যান্ড্রয়েডে ফিচারটি অনেক আগে থেকে আছে। যদিও প্রাইভেসির ব্যাপারটি গুগল নিজেও আমলে নিয়েছে। এখন কেউ কল রেকর্ড করলে অপর প্রান্তে কলের মধ্যেই জানিয়ে দেয়া হচ্ছে যে কলটি রেকর্ড করা হচ্ছে। তবে মনে হচ্ছে আইফোনে এই ফিচার নিয়ে আসার আপাতত কোন পরিকল্পনা নেই অ্যাপলের।
৪। টি৯ ডায়ালিং
টি৯ ডায়ালিং খুব কাজের একটি ফিচার যার মাধ্যমে আপনি কোনো কন্টাক্ট নামের অক্ষরগুলোর ক্রম অনুযায়ী নাম্বার টাইপ করলেই সেই কন্টাক্ট আপনার সামনে চলে আসবে। টি৯ সিস্টেম আগেরদিনের ব্যাসিক মোবাইল ফোনগুলো হতে এসেছে যেখানে ১ হতে ৯ এবং ০ প্রতিটি বাটনে ৩টি হতে ৪টি করে ইংরেজি অক্ষর যুক্ত থাকতো।
এই নম্বরগুলো টাইপ করলেই শব্দটি বুঝে যেত ফোন, সহজেই দ্রুত টাইপ করা যেত। কল করবার ক্ষেত্রে এই ফিচারটি খুব দ্রুত আপনাকে কন্টাক্ট নাম খুঁজে পেতে সাহায্য করতে পারে। কিন্তু আইফোনে ডায়াল প্যাডে এই ফিচারটি নেই। তাই যারা টি৯ ব্যবহারে অভ্যস্ত তাদের বেশ সমস্যায় পড়তে হবে আইফোনে।
৫। ফাইল ট্রান্সফার ও এক্সচেঞ্জে সীমাবদ্ধতা
আইফোন হতে অন্য কোন ব্র্যান্ডের ডিভাইসে ফাইল ট্রান্সফার করা সহজ নয়। অ্যান্ড্রয়েড ফোনে আপনি চাইলেই যে কোন পিসিতে ইউএসবি ক্যাবলের মাধ্যমে কানেক্ট করে ফাইল ট্রান্সফার করে নিতে পারবেন। এছাড়া বিভিন্ন অ্যাপ দিয়েও এন্ড্রয়েডের মধ্যে ফাইল আদানপ্রদান করা যায়। পুরো ব্যাপারটি খুবই সহজ এবং কার্যকরী। কিন্তু আইফোনে আপনি এভাবে ফাইল ট্রান্সফার করতে পারবেন না।
আইফোনে ফাইল ট্রান্সফার করতে আছে এয়ারড্রপ নামের একটি সার্ভিস। কিন্তু এয়ারড্রপ শুধুমাত্র অন্য অ্যাপল ডিভাইসে কাজ করে। যেমনঃ আইফোন হতে ম্যাকবুক, আইপ্যাড বা অন্য যে কোন আইফোনে খুব সহজে আর দ্রুত ফাইল ট্রান্সফার করতে পারবেন। তবে অন্য কোন ডিভাইসে এই পদ্ধতি কাজ করবে না। তাই যাদের নিয়মিত ফোন থেকে ফাইল ট্রান্সফার করতে হয় তাদের জন্য আইফোন বেশ সমস্যার সৃষ্টি করে।
৬। ট্রুকলার সমস্যা
ট্রুকলার একটি জনপ্রিয় কলার আইডি অ্যাপ যা আপনাকে অপরিচিত কেউ কল করলে আগেই জানিয়ে দিতে পারে কে কল করেছে। ট্রুকলার এই কাজটি করে তাদের অসংখ্য ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে নিজেদের একটি ডাটাবেস তৈরির মাধ্যমে। ট্রুকলার ব্যবহার করে সহজেই ফ্রড কল বা স্প্যাম কল নিয়ে সতর্ক হওয়া যায়।
এটি খুবই কার্যকরী একটি অ্যাপ। কিন্তু অ্যান্ড্রয়েডের মতো সহজ ও সুন্দরভাবে এই অ্যাপটি আইফোনে ব্যবহার করা যায় না। আইফোনে এটি কখনও কাজ করে, আবার কখনও করে না। এই সমস্যাটি হয় মূলত আইফোনের বেশ কিছু প্রাইভেসি সম্পর্কিত সীমাবদ্ধতা থাকায়। তাই যারা এই অ্যাপ বা এই ধরনের অন্যান্য অ্যাপ ব্যবহার করে অভ্যস্ত তাদের জন্য এটি একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে।
৭। ফাইল ও ছবি শেয়ারিং সমস্যা
সাধারনত অ্যান্ড্রয়েড এবং অন্য সকল ডিভাইসেই একটি ছবি মানে একটি ফাইল যা .jpg, .jpeg, .png ইত্যাদি এক্সটেনশনের হতে পারে। অ্যান্ড্রয়েডে আপনি একটি ছবি তুললেই সেটা একটা .jpg ফাইল হয়ে সেভ হয়ে থাকে স্টোরেজে। তবে আইফোনে ব্যাপারটি তেমন নয়।
আইফোনে ছবি তুললে সেটি গ্যালারিতে ছবি হিসেবে দেখা যায়, স্টোরেজে ফাইল হিসেবে সেভ হয় না। তাই ছবিটি আপনি হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রাম বা অন্য কোন মাধ্যমে কম্প্রেস না করেই ফাইল বা ডকুমেন্ট হিসেবে পাঠাতে চাইলে আপনাকে আগে ছবিতে ঢুকে ছবিটিকে একটি ফাইলে কনভার্ট করে নিতে হবে। এরপরই শুধু আপনি আনকম্প্রেসড ফাইল হিসেবে সেটি শেয়ার করতে পারবেন। ব্যবহারকারীদের জন্য এটি বাড়তি একটি ঝামেলা।
৮। কার্সর সমস্যা
আইফোনে টেক্সট লিখবার সময় লিখে ফেলা শব্দ এডিট করার প্রয়োজন পড়লে দুইবার আপনাকে ট্যাপ বা টাচ করতে হবে। কেননা আইফোনে এক টাচে শব্দের অক্ষরের মাঝে কার্সর নেয়া যায় না। আপনি কোন শব্দ এডিট করতে চাইলে ওই শব্দ আগে ট্যাপ করবেন, কার্সরটি তখন শব্দের আগে বা পড়ে আসবে।
এরপর আরেকবার শব্দের মাঝে যে অক্ষর এডিট করতে চান সেখানে ট্যাপ করলে কার্সরটি সেখানে যাবে। এতে করে সময় যেমন বেশি লাগে তেমনি বিষয়টি বিরক্তিকর। একইভাবে কোন ভিডিও বা অডিও ফাইল চলতে থাকলে আপনি প্রগ্রেসবারের মাঝে ট্যাপ করলে একবারে সেখান হতে প্লে হবে না। আপনাকে সোয়াইপ করার মাধ্যমে মিডিয়া ফাইলে এগোতে বা পিছাতে হবে। আইফোনে এই কাজগুলো কিছুটা ঝামেলাপূর্ণ।
৯। হোয়াটসঅ্যাপ মাইগ্রেসন
হোয়াটসঅ্যাপের সকল তথ্য ও চ্যাটগুলো যদি অ্যান্ড্রয়েড হতে আপনি আইফোনে নিতে চান তবে সেটা বেশ ঝামেলাপূর্ণ। বর্তমানে দুই পদ্ধতিতে আপনি কাজটি করতে পারেন। একটি হচ্ছে ফ্রি পদ্ধতি ‘মুভ টু আইওএস’ নামক অ্যাপের মাধ্যমে। তবে এই পদ্ধতিতে কাজটি করতে আপনাকে আপনার আইফোন রিসেট করতে হবে এবং পুনরায় সেটআপ করে নিতে হবে যা বেশ বিরক্তিকর। অন্য পদ্ধতিগুলো দিচ্ছে বিভিন্ন থার্ড পার্টি সফটওয়্যার। তবে এসকল পদ্ধতিগুলো বেশ খরচের।
অপরদিকে আপনি যদি আইফোন হতে অ্যান্ড্রয়েড বা অ্যান্ড্রয়েড হতে অ্যান্ড্রয়েডে মাইগ্রেসন করতে চান তা সহজ এবং ফ্রি, এই পদ্ধতিতে বাড়তি কোন ঝামেলাই নেই।
১০। স্প্লিট স্ক্রিনের অনুপস্থিতি
যদিও স্প্লিট স্ক্রিন ফিচারটি স্মার্টফোন হতে ট্যাব ডিভাইসগুলোতে বেশি দরকারি একটি ফিচার তবুও এটি ফোনেও কার্যকরী। অনেকেই বিভিন্ন আর্টিকেল হতে ফোনেই নোট করতে এই ফিচার ব্যবহার করে স্ক্রিনে দুটি ভিন্ন অ্যাপ ওপেন রাখেন। তবে আইফোনে এই ফিচার না থাকায় তা সম্ভব নয়। এই যুগে এসে এই ফিচার এখন প্রায় সকল অ্যান্ড্রয়েড ফোনেই রয়েছে। তাই যারা এই ফিচারে অভ্যস্ত তাদের জন্য আইফোন নয়। এই ফিচারের জন্যও অ্যাপলের কাছে অসংখ্য অনুরোধ রয়েছে ব্যবহারকারীদের।
যদিও আইফোন অনেক ক্ষেত্রেই অ্যান্ড্রয়েড হতে এগিয়ে আছে, তবুও এরকম অনেক কাজের ফিচার আইফোনে এখনও অনুপস্থিত। তাই আইফোনকে অনেকের পছন্দ নাও হতে পারে, বিশেষ করে যারা নিজের ফোনকে কাস্টোমাইজ করতে পছন্দ করেন তাদের আইফোনে অনেকটাই নিজেকে বন্দি মনে হতে পারে। তাই উপরে বলা সীমাবদ্ধতাগুলো দেখে নিন আইফোন কেনার আগে।
0 responses on "আইফোনে যে কাজগুলো করা যায়না, কিন্তু এন্ড্রয়েডে সহজেই সম্ভব!"