আকাশে উড়োজাহাজের শব্দ শুনে আপনি কি এখনো ছোটবেলার মত উপরের দিকে তাকান? অনেকেই হয়ত নিজের অজান্তেই কাজটি করে থাকেন। আকাশে ভেসে বেড়ানো প্লেনগুলো কিন্তু একদিনেই এত উচ্চতায় ওঠেনি! দিনের পর দিন গবেষণার ফলে উড়োজাহাজ আজকের পর্যায়ে পৌঁছেছে। প্রাথমিক সময়ের আর আজকের উড়োজাহাজের মাঝে অনেক তফাত। এ যুগের উড়োজাহাজ এমন সব কাজ করতে পারে যা আগে মানুষের কল্পনাতেও ছিল না। তো চলুন জেনে নিই উড়োজাহাজ নিয়ে ১০টি চমকপ্রদ তথ্য।
১. উড়োজাহাজগুলো বজ্রপাত থেকে অনেকটাই নিরাপদ
কখনো চিন্তা করেছেন কি যে উড়োজাহাজগুলো আকাশে বজ্রপাতের সম্মুখীন হয় কি-না? তবে জেনে নিন, পরিসংখ্যান বলে, প্রতিটি প্লেন বছরে অন্তত একবার অথবা প্রতি ১০০০ ঘণ্টা উড্ডয়নের মধ্যে একবার বজ্রের শিকার হয়। কিন্তু তার পরেও বর্তমান সময়ের প্লেনগুলোর কোন ক্ষতি হয় না কারণ এগুলো বজ্রপাতরোধী হিসেবেই তৈরি করা হয়েছে।
২. প্লেনে একদম নিরাপদ বলতে কোন আসন নেই
আপনি যদি মনে করে থাকেন যে প্লেনে নির্দিষ্ট সারিতে বা আসনে বসলে বিদ্ধস্ত হওয়ার সময় ক্ষতি হবেনা তবে এতদিন আপনি ভুল ছিলেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্লেনে কোনো সিট-ই ক্র্যাশ এর সময় আপনাকে সম্পূর্ণ নিরাপদ রাখতে পারবে না। এক গবেষণায় দেখা যায় বিদ্ধস্ত প্লেনের সামনের অংশ ও মাঝের অংশের আসনগুলো ধ্বংসের হার দুই ক্ষেত্রেই প্রায় ৪০ ভাগের মত। পেছনের অংশে ক্ষতির পরিমাণ ৩২ শতাংশের কাছাকাছি। যদিও এসব ক্ষেত্রে আরও অনেক বিষয় কাজ করে। অবশ্য, প্লেন দুর্ঘটনার হার খুবই কম।
৩. প্লেনে কেবিন ক্রুদের জন্য বেডরুম থাকে
অবাক হয়ে গেলেন? অবাক হওয়ার কিছু নেই। লম্বা ফ্লাইটগুলোতে এবং ব্যস্ত শিডিউলে অনেকসময় কেবিন ক্রুদের দিনে প্রায় ১৬ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। তাই আধুনিক বড় উড়োজাহাজগুলো যেমন বোয়িং এর ৭৭৭ অথবা ৭৮৭ প্লেনগুলোতে অনেক সময় কেবিন ক্ৰুদের জন্য ছোট বেডরুম ও বাথরুম থাকে বিশ্রাম কিংবা অল্প সময় ঘুমিয়ে নেয়ার জন্য।
৪. প্লেনের টায়ারগুলো এমনভাবে তৈরি যেন ল্যান্ডিংয়ের সময় না ফাটে
প্লেনের টায়ারগুলোকে প্রায় ৩৮ টন পর্যন্ত লোড নিতে হয়। পাশাপাশি প্লেনের চাকাগুলো প্রায় ১৭০ মাইল/ঘন্টা বেগে ল্যান্ডিং এর সময় মাটিতে আঘাত করে। আর সব চাকার মত হলে প্রতিবারই ফেটে যাওয়ার মত ঘটনা ঘটতো। কিন্তু এগুলো এমনভাবেই তৈরি করা যেন না ফেটে যায়। একটি গাড়ির তুলনায় প্রায় ৬ গুণ চাপে প্লেনের চাকায় বাতাস ঢুকানো হয়।
৫. রাতে ল্যান্ডিংয়ের সময় কেবিন ক্রু আলো মৃদু করে দেন
প্লেনে চড়ে থাকলে এই ব্যাপারটি হয়ত খেয়াল করবেন যে রাতে ল্যান্ডিংয়ের সময় কেবিন ক্রু ইনডোর লাইট মৃদু করে দেন। এর পেছনে যুক্তি হল প্লেনটি যদি ল্যান্ডিংয়ের সময় দুর্ভাগ্যবশতঃ ক্র্যাশ করে তাহলে আপনার চোখ যেন আগে থেকেই অন্ধকারে অভ্যস্ত হয়ে যায়। যাতে করে আপনি বাইরের পরিবেশের আলোতে অভ্যস্ত হয়ে দ্রুত ইমারজেন্সি এক্সিট নিতে পারেন।
৬. প্লেনে দুটি ইঞ্জিন থাকলেও চলার জন্য একটিই যথেষ্ট
কমার্শিয়াল বড় প্লেনগুলোতে সাধারণত দুটি ইঞ্জিন থাকে। দুটি ইঞ্জিন প্লেনের রেঞ্জ আর ফুয়েল এফিশিয়েনসি অনেক বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু সত্যি বলতে প্লেনগুলো শুধুমাত্র একটা ইঞ্জিন দিয়েও খুব ভালোভাবেই চলতে পারে। একেকটা বোয়িং ড্রিমলাইনার একটি ইঞ্জিন ব্যবহার করে প্রায় সাড়ে ৫ ঘণ্টা টানা উড়তে পারে। আরেকটা মজার ব্যাপার হলো, চলন্ত অবস্থায় দুটি ইঞ্জিনই বিকল হয় গেলেও একটি বোয়িং ৭৪৭ প্লেন অনেক লম্বা দূরত্ব যেতে পারে যা জরুরি নিরাপদ অবতরণের জন্য যথেষ্ট। একে গ্লাইডিং বলে।
৭. প্লেনের বাথরুমে অ্যাশ ট্রে’ও থাকে
প্লেনে অনেক আগে থেকেই অগ্নিজনিত নিরাপত্তার খাতিরে ধূমপান নিষিদ্ধ। কিন্তু তার পরেও অনেক চতুর প্যাসেঞ্জার-ই বাথরুমে গিয়ে সিগারেট জ্বালায়। তারা সিগারেট যদি গোপনে খেয়েও ফেলে অন্তত অবশিষ্টাংশ যেন ময়লার ঝুড়িতে না ফেলে নিরাপদ ছাইদানিতে ফেলতে পারে সে জন্যই এই ব্যবস্থা। তবে প্লেনের বাথরুমে লুকিয়ে সিগারেট খেলেও আপনার জরিমানা হতে পারে।
৮. বিমানের খাবার খেতে এতো বিস্বাদ কেন?
অনেকেই অভিযোগ করেন বিমানের খাবার নাকি খেতে অত্যন্ত বিস্বাদ লাগে। আসলে এতে দোষটা খাবার কিংবা এয়ারলাইন্সের না। সমস্যা হলো বিমানের পরিবেশ। বিমানের ভিতরের কৃত্রিম বাতাসের অনার্দ্র পরিবেশ আপনার ব্রেনের স্বাদ গ্রহণ করার ক্ষমতা সাময়িকভাবে দুর্বল করে দেয়। এজন্য খাবারটা বিস্বাদ লাগে।
৯. বিমানের অক্সিজেন মাস্ক আপনাকে মাত্র ১৫ মিনিট শ্বাস নিতে দিবে
এত কম সময় দেখে ভয় পেয়ে গেলেন? আসলে প্লেনে কৃত্রিমভাবে অক্সিজেন দিয়ে মানুষের জন্য স্বাভাবিক অবস্থা বজায় রাখা হয় যেন যাত্রীরা শ্বাস নিতে পারেন। কোন কারণে যদি এই সিস্টেম লস বা লিক করে তাহলেই অক্সিজেন মাস্ক লাগে। কিন্তু এর ব্যাকাপ দেওয়ার সময় মাত্র ১৫ মিনিট। তবুও এটা যথেষ্ট কারণ এই ১৫ মিনিটের মধ্যে প্লেন প্রায় ১০০০০ ফিট উচ্চতায় নেমে আসে যেখানে আপনি স্বাভাবিক বাইরের বায়ু থেকেই শ্বাস নিতে পারবেন।
১০. বিমান চলার সময় পেছন দিকে ধোঁয়ার মত দেখা যায় কেন?
বিমানে জ্বালানির বিক্রিয়ার ফলে পিছন দিক দিয়ে জলীয় বাষ্প উপজাত হিসেবে বের হয়। এই জলীয় বাষ্প বাইরের ঠান্ডা বায়ুর সাথে মিশে এক ধরনের ফাঁপা ধোঁয়ার মত পুরু সাদা আস্তরণ তৈরি করে। এটাকে কন্ট্রেইল বলে। শীতের দিনে শ্বাস ছাড়লে যে ধোঁয়ার মত দেখা যায়, এটা অনেকটা সেরকম। আপনি কি ছোটবেলায় আকাশে প্লেনের পেছনে এরকম সাদা ধোঁয়ার মত দেখলে ‘রকেট’ মনে করতেন? তাহলে আজ সঠিকটা জেনে নিন 🙂
আশা করি এই পোস্টটি আপনাকে নতুন কিছু তথ্য দিয়েছে। পরবর্তী পোস্ট পাওয়ার জন্য সাথেই থাকুন!
0 responses on "উড়োজাহাজ নিয়ে ১০টি অবিশ্বাস্য তথ্য"